আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
253 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)
দেখা যাচ্ছে কেমন এমন কিছু অবস্থায় আমি বললাম যে আমাকে অনবরত মিথ্যা কসম দিতে হচ্ছে এবং কারো চাপে পড়ে আমাকে অনবরত মিথ্যা কসম দিতে হচ্ছে তাছাড়াও অফিসে নিজের চাকরি রক্ষার্থে অথবা অন্য কোন পরিস্থিতি দেখান আর জীবন চলে যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে আল্লাহ অথবা কোরআনের কসম খেয়ে ফেললে কি করনীয় ?


এর দ্বারা কি সে কাফের হয়ে যাবে ?


মিথ্যা কসম যদি কোন আল্লাহর সৃষ্টির ক্ষেত্রে হয় সে ক্ষেত্রে কি হবে ?

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


প্রথমেই আমরা কিছু মাসআলা জেনে নেইঃ
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ   

لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ [٥:٨٩

আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা,তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা,একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না,সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের,যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। {সূরা মায়িদা-৮৯}
,
কাফফারা আদায় পদ্ধতি
ব্যক্তি তার পরিবারকে নিয়ে মধ্যম ধরণের যে খাবার গ্রহণ করে এমন খাবার দশজন মিসকিনকে দুই বেলা খাইয়ে দিবে। অথবা দুই জোড়া কাপড় দিয়ে দিবে।
সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকাকে একদিনের খরচ ধরা হবে। সেই হিসেবে সদকায়ে ফিতর পরিমাণকে দশ দিয়ে গুণ দিলে যত টাকা হয়,তাই হবে কসমের কাফফারা।

যেমন  সদকায়ে ফিতির যদি সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা হয়। তাহলে সেই হিসেবে ৬৫০[ ছয় শত পঞ্চাশ টাকা] হবে কসমের কাফফারা। 

যদি টাকা দিয়ে কাফফারা আদায় করতে সক্ষম না হন। তাহলেই কেবল তিনটি রোযা রাখার মাধ্যমে কাফফারা আদায় করতে হবে।

قسم (কসম) এর আরবী প্রতিশব্দ حلف বা يمين আর বহুবচন أحلاف বা أيمان যা শপথ অর্থে ব্যবহার হয়। এই কসম বা শপথ তিন ভাগে বিভক্ত; 
(ক) لغو
 (খ)  غموس 
(গ) مُعقَّدة 
,

(ক) لغو (নিরর্থক বা নিরুদ্দেশ) এমন কসম, যা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এবং কথায় কথায় ইচ্ছা, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবহার করে। (এমন কসম খাওয়া তার মুদ্রাদোষে পরিণত হয়।) এই ধরনের কসমের কোন কাফফারা বা ধর-পাকড় নেই।

 (খ) غموس (মিথ্যা কসম) যা মানুষ ধোঁকা দেওয়া ও প্রতারণা করার জন্য করে থাকে। এটা মহাপাপ; বরং অতি মহাপাপ। কিন্তু এ ধরনের কসমের কোন কাফফারা নেই।

 (গ) معقَّدة ঐ কসমকে বলা হয়, যা মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নিয়ত সহকারে নিজের কথার সত্যতার তাকীদ ও তা পাকা করার জন্য ব্যবহার করে। যদি কেউ এ ধরনের কসম ভঙ্গ করে, তাহলে তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে। 
,
সারকথা হলো, শপথ তিন প্রকার। 
★এক. যদি অতীত ঘটনা সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা শপথ করা হয়, তাকে 'ইয়ামিনে গুমুস' বা পাপে নিমজ্জিত শপথ বলা হয়। উদাহরণত, কেউ কোনো কাজ করে জেনেশুনে শপথ করে বলল যে সে কাজটি করেনি। এ মিথ্যা শপথ কবিরা গুনাহ। তবে এর জন্য কাফফারা ওয়াজিব হবে না।

★দুই. নিজ ধারণায় সত্য মনে করে কোনো অতীত ঘটনা সম্পর্কে শপথ করা। অথচ বাস্তবে তা অসত্য। যেমন- কোনো অসমর্থিত সূত্রে জানা গেল, অমুক ব্যক্তি এসে গেছে। এর ওপর নির্ভর করে কেউ আল্লাহর নামে শপথ করে বলল, 'অমুক ব্যক্তি এসে গেছে।' এরপর দেখা গেল, এটি বাস্তবের বিপরীত। এ ধরনের শপথকে 'ইয়ামিনে লগভ' বলা হয়। 

 এ ছাড়া অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখে শপথবাক্য উচ্চারিত হলে একেও 'ইয়ামিনে লগভ' বা অহেতুক শপথ বলা হয়। এ-জাতীয় শপথে কোনো গুনাহ নেই। কাফফারাও দিতে হয় না।
,
★তিন. আল্লাহর নাম নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো কাজ করা বা না করার শপথ করা। এ রকম শপথকে 'ইয়ামিনে মুনআকিদ' বা কার্যকর শপথ বলা হয়। এ শপথ ভঙ্গ করলে কাফফারা ওয়াজিব হবে। এমনকি কোনো কোনো অবস্থায় গুনাহও হয়।
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নিয়ত সহকারে কসম না খেয়ে থাকেন,বা আপনার কসম উল্লেখিত তিন প্রকারের মধ্যে প্রথম বা ২য় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে, 
তাহলে আপনার গুনাহ হবে ঠিকই,তবে কোনো কাফফারা ওয়াজিব হবেনা।
,
গুনাহ জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।
,
আর যদি আপনার কসম ৩য় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হয়,তথা আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নিয়ত সহকারে আল্লাহর নাম নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো কাজ করা বা না করার শপথ করে থাকেন,সেটি যদি না করেন,তাহলে আপনাকে কাফফারা দিতে হবে।
,
★ব্যাক্তি কোনোছুরতেই কাফের হবেনা।
,
(০২)
কসম হবে কেবল আল্লাহর নামে অথবা তার কোন গুনের নাম নিয়ে অথবা কুরআন স্পর্শ করে হোক বা স্পর্শ না করেই হোক, কুরআনের কসম করতেছি বলে কসম করে।
অন্যথায় তাহা জায়েজ নয়। 

গায়রুল্লাহ এর নামে কসম সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...