ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
https://ifatwa.info/29244/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পরিপূর্ণ পর্দা করা ফরজ। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ
করেনঃ
قُلْ
لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ
أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠]
وَقُلْ
لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا
يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ
عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ
آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ
بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي
أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ
التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ
الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ
بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى
اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি
নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা
যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে
নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান,
তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না
বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা,
শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র,
ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র,
স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ,
ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ,
তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ,
তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা
সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
يَا
نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا
تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا
مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ
الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা
অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে
কথা বলনা, যাতে
যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল।
এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের
মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}
وَإِذَا
سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ
أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
অর্থ : আর তোমরা তাঁর
(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার
আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার
কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}
বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম
কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা
কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।
(তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা
বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে
হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।
প্রশ্ন হল নারীদের আওয়াজ
কি সতরের অন্তর্ভুক্ত?
এ সম্পর্কে উলামাদের মধ্যে
মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। এমনকি হানাফি মাযহাবের উলামাদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে-
হানাফি উলামাদের কিছুসংখ্যকের
গবেষকদের বর্ণননামতে নারীদের আওয়াজ সতরের অন্তর্ভুক্ত। তবে এ রেওয়াত মারজুহ(অগ্রগণ্য
নয়)।
অন্যদিকে কিছুসংখ্যক গবেষকদের
বর্ণনামতে নারী আওয়াজ সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়।এ রেওয়াত-ই রাজেহ(অগ্রগণ্য) । অর্থাৎ ফিৎনার
আশঙ্কা না থাকলে কোমলতা পরিহার করে প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে নারী কথা বলতে
পারবে।
নারীর প্রতি শরীয়তের নির্দেশনা
হল, সে যেন
প্রয়োজন ছাড়া এত জোরে কথা না বলে যে, তার আওয়াজ গাইরে মাহরাম
পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
এ জন্য ইবাদত বন্দেগীর
ক্ষেত্রেও তা লক্ষ রাখা হয়েছে। যেমন, আযান দেয়ার দায়িত্ব নারীদের দেয়া হয়নি। কারণ
আযান উচুঁ শব্দে দিতে হয়। নারীগণকে সকল নামাযের কেরাত নিম্নস্বরে পড়তে হয়। হজ্বের তালবিয়া
পুরুষগণ উচ্চ আওয়াজে পড়বে কিন্তু মহিলারা পড়বে নিম্ন আওয়াজে ইত্যাদি। আলবাহরুর রায়েক
১/২৭০; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৫৬৩; রদ্দুল
মুহতার ১/৪০৬)
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে
ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/1058
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
মহিলাগণ সাধারণ অবস্থায়
তাদের কথাবার্তা এমনভাবে বলার চেষ্টা করবে যেন তা নিজেদের পরিসর পর্যন্ত সীমিত থাকে।
নিজ ঘরেও এত জোর আওয়াজে কথা বলবে না, যাতে বাইরের লোকজন শুনতে পায়। আর নারীগণ বিশেষ
প্রয়োজন ছাড়া পর পুরুষের সাথে কথা বলবে না, সে যেই হোক না কেন।
কোন দরকারী কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকেই বলবে এবং কোমলতা পরিহার করে স্বাভাবিক স্বরে
বলবে। এভাবে কথা বললে পর্দা নষ্ট হবে না।
সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত
ছুরতেও পুরুষ উস্তাযের সাথে যতটুকু কথা বলা একান্ত প্রয়োজন, ঠিক ততোটুকু কন্ঠে
কোমলতা পরিহার করে স্বাভাবিক ভাবে বলার অনুমতি আছে।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী
দ্বীনী ভাই/বোন!
১. সাধারণত এই ধরনের কোর্সগুলোতে
নারী পুরুষের উপস্থিতির কারণে ফেতনার প্রবল আশঙ্কা থাকে। এবং কথা বলা যদি বাধ্যতামূলক
হয়, তাহলে সতর্কতামূলক এজাতীয় কোর্সে ভর্তি না হওয়ায় উচিত। আপনার জন্য উচিত হবে দ্বীনি চিন্তাধারা লালন করে এমন কোন প্লাটফর্মে
বোনদের মাধ্যমে ভাষা শিক্ষার কোর্স করা।
২. সাধারণত আইওএম এর মোকাররীরাহ বোনদের নিয়ে
বিশেষ মাশওয়ারায় জরুরতের ভিত্তিতে ফেতনামুক্ত থেকে মাশওয়ারা করার চেষ্টা করা হয়।
এতদা সত্বেও যদি কোন বোন কথা না বলে
চ্যাটবক্সে ম্যাসেজ করেন সেই সুযোগও
রয়েছে। বিধায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনের ভিত্তিতে উক্ত মিটিং করা
বৈধ। তবে আপনি সতর্কতামূলক কথা না বলে ম্যাসেজ করতে পারেন।