আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
69 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ,  আমি এমন এক পরিবারের সদস্য যেখানে, সম্পর্কে অনেক টানাপোড়ন চলে।আমার বড় ভাই আছেন একজন, বর্তমানে সে চাকরীও করতেছে আলহামদুলিল্লাহ,  ভাই বিয়ের জন্য বাড়িতে অনেকবার বলেছিলেন চাকরিতে জয়েন হওয়ার পরে। আব্বু চাচ্চুরা বলতেন ৩০ বছরের আগেই বিয়ে করতে হবে কেন।চাকরি করো আরো কয়েক বছর তারপর বিয়ে।সমস্যাগুলো আরো প্রকট হয়েছে যখন ভাই না জানিয়ে মেয়ের পরিবার কে রাজি করিয়ে বিয়ে করে নেয়, এতে করে বাবা ভাইএর সাথে সম্পর্ক এখন বলতে গেলে নেইই। আম্মুর উপরও অনেক টর্চার করেন আব্বু। আমি ভাই থেকে বয়সে ছোট।  আমার বয়স ও অনেক হয়েছে ২৪ বছর। মাস্টার্স অধ্যয়নরত। অনার্স পড়াকালীন সময় থেকেই বাড়িতে বিয়ের কথা বলতাম, ওনারা বলতেন অনার্স শেষ করো তারপর,এই সময় বিয়ে হলে পড়াবে না শ্বশুর বাড়ির মানুষ হেন তেন অনেক কিছু। এভাবেই অনার্স শেষ হওয়ার পরে যখন বলি আপনারা বিয়ের চেষ্টা করেন। ওনাদের এখন কথা আগে চাকরী করো তারপরে বিয়ে। আমি চাকরী করতে চাইনা। আমি চাকরী করতে চাইনা সেটা অনেক আগেই জানিয়েছিলাম ও আমার অভিভাবকদের। এটা নিয়েও আব্বু অসন্তুষ্ট।  কিছু বলতে গেলেই এমন কথা শুনতে হয় পর্দা করেও তো চাকরি করা যায়।  আমার পরিবারের এমন অবস্থা এখন যেকোনো সময় আমার বাবা মার মধ্যে বিচ্ছেদ ও হয়ে যেতে পারে। আমার কি করা উচিত আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার কি চাকরির প্রিপারেশন নেয়া উচিত নাকি সবর করা উচিত।

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। আবাদি জমি বসতবাড়ী সহ ৫ বিঘা প্রায়।আব্বু ছোট খাটো ব্যবসা ও করেন।  ভাইয়ের বিয়ের পর প্রায় ৩ বছর যাবত বাড়িতেও আসেনি আব্বুর ভয়ে। ভয় টা এমন আসলে এমন কিছু কথা বলবেন যা অসহনীয়। আমাকে ও আমার মা কে ও প্রায়ই বলেন বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা। আব্বু অনেক জেদি আর রাগী। আমার চাচারা ও কিছু বলতে পারেন না। বলতে গেলে আব্বু কারো কথাই শোনেন ও না।

1 Answer

0 votes
by (62,670 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/5338/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

প্রয়োজন, অপরাগতা কিংবা ঠেকায় পড়ার পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ অবস্থায় নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শরীয়ত তাদের ওপর এমন দায়িত্ব আরোপ করে নি, যার কারণে তাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়।


আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)


রাসূলুল্লাহ বলেন,

الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا

‘নারী গোপন জিনিস, যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে তাড়া করে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)

নারী মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ বলেন, وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّতাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম।’ (আবু দাউদ ৫৬৭)

 

নারী চাকরির খাতিরে ঘর থেকে বের হতে পারবে। তবে এর জন্য কিছু নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। নিয়ম ও শর্তগুলো মেনে চললে নারীর জন্য ঘর থেকে বের হওয়া জায়েয হবে; অন্যথায় নয়।


যেমন,

যদি সত্যিকারে তার চাকরি করার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তার জন্য চাকরি করা জায়েয হবে।

চাকরিটা তার দৈহিক, মানসিক স্বভাব ও রুচির সঙ্গে সামন্জস্যশীল হতে হবে। যেমন, ডাক্তারি, নার্সিং, শিক্ষা, সেলাই কিংবা এ জাতীয় পেশা হতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে পর্দার পরিপূর্ণ পরিবেশ থাকতে হবে। অন্যথায় জায়েয হবে না।

চাকরির কারণে যাতে পরপুরুষের সঙ্গে সফর করতে না হয়।

কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে যাতে কোন হারাম কাজ করতে না হয়। যেমন, ড্রাইভারের সঙ্গে একাকী যাওয়া, পারফিউম ব্যবহার করা ইত্যাদি।

নারীর প্রধান কাজ ও দায়িত্ব হচ্ছে স্বামীর খেদমত করা, তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা ও মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করা। যদি চাকরি করতে গিয়ে এসব দায়িত্ব পালনে ব্যাপক অসুবিধা হয় তাহলে তার জন্য চাকরি করা জায়েয হবে না। (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৯৮১ ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৫৯)


মহিলাদের জন্য পর্দা রক্ষা করে ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকুরী করা জায়েজ আছে। তবে এক্ষেত্রে যেন পর্দা লঙ্ঘণ না হয়, সেই সাথে শরয়ী অন্য কোন বিধান লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

হ্যাঁ, যদি উপার্জনক্ষম কোন মাহরাম আত্মীয় থাকে, বা অভিভাবক থাকে, তাহলে মহিলাদের জন্য ব্যবসা ও চাকরীর জন্য বাহিরে যাওয়া উচিত নয়।

শরয়ী পর্দা ও বিধান অনুসরণ করে মহিলাদের ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকুরী করাতে কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি। তা’ই শরয়ী কোন কারণ ছাড়া মহিলাদের ব্যবসা করা ও চাকুরী করাকে হারাম বলার সুযোগ নেই। -তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১১৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮, ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৫৯)


তবে যদি পর্দা লঙ্ঘণ হয়, পুরুষদের মিলে একসাথে কাজ করতে হয়, সেই সাথে ফিতনার আশংকা হয়, তাহলে জায়েজ নেই।

ولها ان تقوم بالتدريس والبيع والشراء والصناعة من نسيج وصيغ وغزل وخياطة ونحو ذلك إذا لم يفض إلى مالا يجوز شرعا من خلوتها بأجنبى، أو اختلاطها برجال غير محارم اختلاطا تحدث منه فتنة أو يؤدى إلى فوات ما يجب عليها نحو اسرتها دون أن تقيم مقامها من يقوم بالواجب عنها ودون رضاهم (فقه النوازل-3/359

যার সারমর্ম হলো শরয়ী সীমারেখার থেকে প্রয়োজনে মহিলাদের জন্য শিক্ষাদান, ব্যবসা বানিজ্য,,,,ইত্যাদি করা জায়েজ আছে।


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!


উপরে উল্লেখিত শর্ত মেনে মহিলাদের জন্য চাকুরী করা জায়েজ আছে। আর আমাদের পরামর্শ হলো, আপনি আপনার পিতাকে আরো বুঝানোর চেষ্টা করবেন। আল্লাহ তায়ালার কাছে দুআ করতে থাকবেন। 

দ্রুত বিবাহের আমল জানুনঃ- https://ifatwa.info/5258/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...