আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
102 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (18 points)
হজরত জুলাইবিব রা.  এর ঘটনা, উনি কুৎসিত ছিলেন এবং বিবাহের যে ঘটনা এবং শহীদ হওয়ার পরের যে ঘটনা প্রচলিত আছে সেগুলো কি সঠিক?........................................................................………………..............

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

নবীজির প্রিয় সাহাবী জুলাইবিব (রা.)। জুলাইবিব শব্দের অর্থ ‘ক্ষুদ্র পূর্ণতাপ্রাপ্ত’ এই নাম দিয়ে মূলত জুলাইবিবের বামনতাকে বোঝানো হতোকেননা তিনি ছিলেন উচ্চতায় অনেক ছোট।

এছাড়া তাকে অনেকে ‘দামিম’ বলেও ডাকতযার অর্থ কুশ্রীবিকৃত অথবা দেখতে বিরক্তিকর। এমনকি তিনি যে সমাজে বাস করতেনসেখানে তার বংশ পরিচয় কেউ জানত না। তিনি যে কোন গোত্রের ছিলেনতাও সবার অজানা ছিল। তৎকালীন সমাজে এটা ছিল এক চরম অসম্মানের বিষয়। তিনি কোনো বিপদে কারও সাহায্য পাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারতেন নাকেননা সেই সমাজে কাউকে গুরুত্ব দেওয়া হতো তার বংশ পরিচয়ের ভিত্তিতে।

এমন অবস্থায়মহানবী (সা.) এর নবুয়্যতের শুরুর দিকে তিনি ছিলেন একজন আনসারযার একমাত্র পরিচয় ছিল তিনি একজন আরব। খুব সম্ভবত তিনি ছিলেন মদিনা সীমান্ত এলাকার কোনো ক্ষুদ্র গোত্রের সদস্যযিনি কিনা আনসারদের শহরে স্থানান্তরিত হয়েছেনঅথবা তিনি আনসারদেরই একজন।

সেই সমাজে অনেকেই তাকে নিয়ে হাসি তামাশা করতএমনকি আসলাম গোত্রের আবু বারযাহ নামে এক ব্যক্তি তার বাড়িতে জুলাইবিবের প্রবেশ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছিলেন।

কোনো মেয়ে জুলাইবিবকে বিয়ে করার কথা চিন্তাও করত না। সেই সমাজের মানুষের কাছে তিনি সামান্য সাহায্যসহানুভূতিও পেতেন না।

কিন্তু মহানবী (সা.) এর দৃষ্টিতে জুলাইবিবের অবস্থান ছিল অনেক ওপরে। তিনি তার এই অনুগত সাহাবীর প্রয়োজনআবেগভাললাগা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।

তিনি জুলাইবিবের কথা চিন্তা করে একদিন এক আনসারের কাছে গিয়ে বললেন, “আমি তোমার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাই। ” আনসার লোকটা খুবই খুশি হলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল (সা.)এতো খুবই বিস্ময়কর”।   রাসুল (সা.) বললেন, “আমি ওকে নিজের জন্য চাই না”। ওই লোকটি কিছুটা হতাশ হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল (সা.)তাহলে কার জন্য?” “জুলাইবিবের জন্য”রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। এ কথা শুনে আনসার মনে একটা ধাক্কা খেলেন এবং নিচু গলায় বললেন, “আমি এ ব্যাপারে মেয়ের মায়ের সাথে আলোচনা করব” এই বলে লোকটি তার স্ত্রীর কাছে চলে গেলেন এবং সব খুলে বললেন। তার স্ত্রীও তার মতই জুলাইবিবের সাথে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব শুনে স্তব্ধ হয়ে বললেন, “জুলাইবিবের সাথে?! নাকখনোই জুলাইবিবের সাথে না! নাহআল্লাহর শপথআমরা তাকে (নিজ মেয়েকে) তার (জুলাইবিব) সাথে বিয়ে দেব না”। তখন সেই আনসার তার স্ত্রীর অমতের কথা রাসুলকে (সা.) জানাতে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলেনকিন্তু তার মেয়ে যিনি কিনা আড়াল থেকে সব শুনছিলেনএসে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের কে আমাকে বিয়ে দিতে বলেছেন?” উত্তরে তার মা তাকে বললেনরাসুল (সা.) তাকে জুলাইবিবের সাথে বিয়ে দিতে অনুরোধ করেছেন।

যখন মেয়েটি শুনলেন যে প্রস্তাবটি রাসুল (সা.) এর কাছ থেকে এসেছে এবং তার মা সেটা প্রত্যাখ্যান করছেনতিনি অবিচল হয়ে বললেন, “তোমরা কি আল্লাহর রাসুল (সা.) এর অনুরোধ অমান্য করছআমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাওতিনি নিশ্চয়ই আমার জন্য ধ্বংস ডেকে আনবেন না”।

এভাবেই তিনি উত্তর দিয়েছিলেন কারণ তার ছিল ইলসামের সত্যিকারের জ্ঞানতিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে একজন মুসলিম হিসেবে তার কি করা উচিত ছিল। তিনি তার মা-বাবাকে কুরানের এই আয়াতটি শুনালেন,¬¬আর একজন মুমিনের পক্ষে উচিত নয় বা একজন মুমিন নারীরও উচিত নয় যে যখন আল্লাহ ও তার রাসুল কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন সে ব্যাপারে তাদের কোনো মতামত থাকে। আর যে কেউ আল্লাহকে ও তার রাসুলকে অমান্য করেসে নিশ্চয়ই বিপথে গেছেস্পষ্ট বিপথ গমনে। ”(সুরাহ- আল আহযাবআয়াত ৩৬)

তিনি আরও বললেন, “আমি খুবই খুশি মনে নিজেকে নিবেদন করব তাতেযাতে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমার জন্য ভালো মনে করেন”।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বিয়ের ব্যাপারে মেয়েটির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে শুনলেন এবং তার সহজ ও সুন্দর জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন।

বলা হয়ে থাকেতখন আনসারদের স্ত্রীদের মধ্যে তার (ওই মেয়ে) চেয়ে বেশি উপযুক্ত স্ত্রী আর কেউ ছিল না। জুলাইবিবের ও তার বিয়ের পর জুলাইবিবের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা এক সাথেই ছিলেন।

জুলাইবিব (রা.) সমাজের চোখে ছিলেন খুবই অবহেলিত ও নিম্ন শ্রেণিরকিন্তু তাঁর সততানিষ্ঠাইমান-আমল ও আনুগত্যের কারণে মহানবী (সা.) এর কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। ইসলামের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন অনেক মর্যাদার অধিকারী।

ইসলামে মানুষের মর্যাদা জন্মসূত্রে অথবা দেহবল্লবে নির্ধারিত হয় নাবরং তার কাজের মাধ্যমে হয়। যার উদাহরণ আমরা জুলাইবিব (রা.) এর জীবনী থেকে জানতে পারি। জুলাইবিব (রা.) এর প্রতি মহানবী (সা.) ভালবাসা ও মনোযোগের নিদর্শন সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য অনেক বড় প্রেরণা স্বরূপ।

হাদীসে বর্নিত আছে যে,

عَنْ أَبِي بَرْزَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ فِي مَغْزًى لَهُ فَأَفَاءَ اللَّهُ عَلَيْهِ فَقَالَ لأَصْحَابِهِ " هَلْ تَفْقِدُونَ مِنْ أَحَدٍ " . قَالُوا نَعَمْ فُلاَنًا وَفُلاَنًا وَفُلاَنًا . ثُمَّ قَالَ " هَلْ تَفْقِدُونَ مِنْ أَحَدٍ " . قَالُوا نَعَمْ فُلاَنًا وَفُلاَنًا وَفُلاَنًا . ثُمَّ قَالَ " هَلْ تَفْقِدُونَ مِنْ أَحَدٍ " . قَالُوا لاَ . قَالَ " لَكِنِّي أَفْقِدُ جُلَيْبِيبًا فَاطْلُبُوهُ " . فَطُلِبَ فِي الْقَتْلَى فَوَجَدُوهُ إِلَى جَنْبِ سَبْعَةٍ قَدْ قَتَلَهُمْ ثُمَّ قَتَلُوهُ فَأَتَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَوَقَفَ عَلَيْهِ فَقَالَ " قَتَلَ سَبْعَةً ثُمَّ قَتَلُوهُ هَذَا مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ هَذَا مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ " . قَالَ فَوَضَعَهُ عَلَى سَاعِدَيْهِ لَيْسَ لَهُ إِلاَّ سَاعِدَا النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَحُفِرَ لَهُ وَوُضِعَ فِي قَبْرِهِ . وَلَمْ يَذْكُرْ غَسْلاً .

ইসহাক ইবনু আমর ইবনু সালীত (রহঃ) ... আবূ বারযাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জিহাদে ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে গনীমতের সম্পদ দিলেন। তিনি তার সাহাবাদের বললেনতোমরা কি কাউকে হারিয়েছলোকেরা বললোহ্যাঁঅমুকঅমুক ও অমুককে। তিনি বললেনতোমরা কি কাউকে হারিয়েছলোকেরা বললোহ্যাঁঅমুকঅমুক এবং অমুককে। তিনি আবার বললেনতোমরা কি কাউকে হারিয়েছলোকেরা বললোজি-না। তিনি বললেনকিন্তু আমি জুলায়বীবকে হারিয়েছি। তোমরা তাঁকে খোঁজ কর। তখন নিহতদের মধ্যে তাকে খোঁজ করা হল। এরপর তারা সাতটা লাশের পাশে তাকে পেলো। তিনি এই সাতজনকে হত্যা করেছিলেন। এরপর দুশমনরা তাকে হত্যা করে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে এলেন এবং ওখানে দাঁড়িয়ে বললেনসে সাতজন হত্যা করেছেএরপর দুশমনরা তাঁকে হত্যা করে। সে আমার আর আমিও তার। সে আমার আর আমি তাঁর। অতঃপর তিনি তাঁকে দুঁবাহুর উপর তুলে ধরলেন। একমাত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাহুই তাঁকে বহন করছিল। তাঁর কবর খোঁড়া হল এবং তাকে তার কবরে রাখলেন। বর্ণনাকারী তাঁর গোসলের উল্লেখ করেননি।  (সহিহ মুসলিম-৬১৩৪)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

জুলাইবিব রা. সম্পর্কে  অনেকে বাড়াবাড়ি করে অনেক কথাই বলে থাকেন।  তবে  দালিলিকভাবে আমরা যতটুকু জানতে পারি তা উপরে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি উপরের আলোচনাটুকু  পড়লে  আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (18 points)
উপরে বর্ণিত শুধুমাত্র মুসলিমের হাদীসই কি সহীহ? নাকি উপরের পুরো ঘটনাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সহীহ?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...