"
ব্যাংকে চাকুরী করা।
ব্যাংকে চাকরি করা হারাম হওয়ার মূলত কারণ দু’টি। যথা-
১-হারাম কাজে সহায়তা করা হয়।
২-হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকা।
হারাম কাজের সহায়তার বিভিন্ন স্তর আছে। শরীয়তে সর্ব ধরণের সহায়তা হারাম নয়। বরং সেসব সহায়তা হারাম যাতে সরাসরি হারাম কাজে জড়িত হওয়া হয়। যেমন সুদী লেনদেন করা। সুদী লেনদেন লেখা। সুদী টাকা উসুল করা ইত্যাদি।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং-৪৯৮১)
তবে যদি সুদী কাজে জড়িত না হতে হয়, বরং তার কাজের ধরণ এমন হয় যেমন ড্রাইভার, ঝাড়ুদার, দারোয়ান, জায়েজ কারবারে বিনিয়োগ ইত্যাদি হয় তাহলে যেহেতু এসবে সরাসরি সুদের সহায়তা নেই তাই এমনটি করার সুযোগ আছে।
আর হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার বিষয়ের ক্ষেত্রে শরয়ী মূলনীতি হল-যদি বেতনটি হালাল ও হারাম মালের সাথে মিশ্রিত হয়, আর হারাম মাল বেশি হয়, তাহলে তা নেয়া জায়েজ নয়। তবে যদি হারাম মাল কম হয় তাহলে বেতন নেয়া জায়েজ হবে।
জালেম বাদশাহর হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ নয়। কেননা তার অধিকাংশ মাল হয় হারাম। তবে যদি জানা যায় যে, তার অধিকাংশ মাল হালাল, এ হিসেবে যে সে ব্যাবসায়ী বা জমিদার, তাহলে তার থেকে হাদিয়া গ্রহণ করাতে সমস্যা নেই। কেননা সাধারণত মানুষের মাল অল্প হারাম থেকে মুক্ত নয়। তাই এতে আধিক্যের বিষয়টি বিবেচিত হবে। { ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৪২}
ব্যাংকের অবস্থা এই যে, তার পূর্ণ সম্পদ কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা-
১-মূলধন।
২-সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত টাকা।
৩-জায়েজ ব্যবসার আমদানী।
৪-সুদ এবং হারাম ব্যাবসার আমদানী।
এ চারটি বিষয়ের মাঝে কেবল ৪র্থ সুরতটি হারাম। বাকিগুলো যদি কোন হারাম কাজ না হয় তাহলে মূলত জায়েজ। যেসব ব্যাংকে প্রথম ৩টি বিষয়ের লেনদেন অধিক। আর ৪র্থ বিষয়টি তথা হারাম লেনদেনের লভ্যাংশ কম সেসব ব্যাংকে সেসব ডিপার্টমেন্টে চাকরী করা যাতে হারাম কাজ করতে না হয় তাহলে তা জায়েজ হবে। এবং বেতন নেওয়াও জায়েজ হবে। তবে উত্তম হল এ চাকরীও ছেড়ে দেয়া। কিন্তু যদি হারাম আমদানী বেশি হয় হালালের তুলনায়, বা হারাম কাজে জড়িত হতে হয় তাহলে উক্ত ব্যাংকে চাকরী করা জায়েজ নয়। এ থেকে বেতন নেওয়াও জায়েজ নয়। বেতন নিলে তা হারাম হিসেবে গণ্য হবে।
{ফাতওয়ায়ে উসমানী-৩/৩৯৪-৩৯৬}
বিসমিহি তা'আলা
সমাধানঃ-
এ সম্পর্কে দুটি মতামত আমাদের সামনে আছে।
বিশ্বের অধিকাংশ দারুল ইফতার সিদ্ধান্ত হল,
ব্যংকের যেকোনো ডিপার্টমেন্টে চাকুরী করা হারাম।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সাবেক চিপ জাস্টিস আল্লামা তাকী উসমানী দাঃ বাঃ মনে করেন,
ব্যংকের সুদী সেক্টর ব্যতীত অন্যান্য সেক্টরে চাকুরী করার অনুমতি দেয়া যেতে পারে।
যেমন সিকিউরিটি ইত্যাদি সেক্টরে।
দ্বিতীয় মতানুযানী চাকুরীর ভিন্ন কোনো হালাল সুযোগ থাকলে অবশ্যই এ পথে আসা কখনো উচিৎ হবে না।
ব্যংকে টাকা জমা রাখা ও ব্যংকের মাধ্যমে টাকা প্রেরণ সম্পর্কে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন,
বর্তমান সময়ে নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যংকে টাকা জমা রাখা ও ব্যংকের মাধ্যমে টাকা প্রেরণ জায়েয।
ব্যংকে ব্যতীত ভিন্ন কোনো নিরাপধ স্থান বাবা পদ্ধতি থাকলে ব্যংকে টাকা জমা ও ব্যংক মারফত প্রেরণ কোনোটিই জায়েয হবে না।
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, iom
ও
পরিচালক
ইসলামিক রিচার্স কাউন্সিল বাংলাদেশ