আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
46 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (16 points)
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته


এক বোনের প্রশ্ন -
১) আমার বিবাহিত জীবনের বয়েস আলহামদুলিল্লাহ সাতবছর। এখনও অব্দি আল্লহ আমাদেরকে সন্তান দেননি, আলহামদুলিল্লাহ আ'লা কুল্লি হাল। এর মাঝে বেশ কয়েকবার শ্বশুর বাড়ি থেকে বাচ্চা এডপ্ট করার কথা তুললেও আমার জাওয খুব একটা গায়ে মাখেনি। বলেছেন আল্লহ আমাদেরকেই ইনশাআল্লহ দেবেন। এখন আমার বাসার কাছের হসপিটালে এক দম্পত্তি তাদের বাচ্চা মেয়েটা এডপ্ট দিবে। মেয়েটার বয়স দু/তিন দিন মেইবি। পাশের ফ্লাটের ভাবী এসে জিজ্ঞেস করলো আমাদের এরকম কোনো ইচ্ছে আছে কি-না। মেয়ে বাবু শুনে আমার খানিকটা ইচ্ছে করছে আনতে। ফ্যামিলির সবাই রাজি। শ্বশুর বাড়ি, বাপের বাড়ি সবাই একমত। আমার শ্বাশুড়ি ভীষণভাবে বলছেন বাচ্চাটা এডপ্ট নিতে। আমার ভয় লাগে যে অন্যের সন্তান এনে আমি মনে হয় ঠিকমতোন যত্ন-আত্মি করতে পারবো না। আবার ভয় লাগে যদি আল্লহ আমার নিজেরই সন্তান দেন তখন বোধহয় ওদের মাঝে ইনসাফ করতে পারবো না। ভীষণ দ্বিধাদ্বন্দে আছি আমি।
এদিকে ফ্যামিলির সবাই বাচ্চাটা নিতে বলছে। শাশুড়ী বলছেন উনি উনার ছেলেকে বুঝিয়ে ম্যানেজড করবে যেনো রাজি হয়।আরো বলেছেন নিয়ে এসো, তোমরা পালতে না পারলে আমাকে দিয়ে যাও আমি পেলে দেবো। কী করবো বুঝতে পারছি না। আমাকে কাইন্ডলি একটু ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরামর্শ দিবেন।


২) মেয়েদের বিয়ের সময় যে গয়না গাটি দেওয়া লাগে এটা কি ছেলের পরিবার দেয় নাকি মেয়ের পরিবার? মেয়ের পরিবার থেকে এটা দেয়াটা কি জরুরী? মেয়ের বাবার বাড়ি থেকে এসব গয়না দিয়ে সাজিয়ে পাঠানো । যদি না করা হয়, শশুর বাড়ি থেকে খোঁটা দেয় কিংবা কথা শুনায়। বিয়ের এই রসমটা ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে বলবেন।

1 Answer

0 votes
by (547,020 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
সন্তান দত্তক নেওয়া মানে কোনো সন্তানের লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করা, অভিবাবকত্ব গ্রহণ করা ও জিম্মাদারি নেওয়া।তা ইসলামে সমর্থিত একটি বিষয়।

ইসলামে অন্য কারো সন্তান লালন-পালন ও তার অভিভাবকত্ব নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। যদি কোনো এতিম, গৃহহীন বা অবহেলিত শিশুকে নিজের সন্তানের ন্যায় অন্ন-বস্ত্র ও সব ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে লালন-পালন করে অথবা নিঃসন্তান দম্পতি কোনো শিশুকে স্নেহ করে লালন-পালন করে তাকে স্বেচ্ছায় কিছু দান করে, তাহলে শরিয়তে তা নিষিদ্ধ নয়। এতিম-অনাথ ও গরিব শিশুর অভিভাবকত্ব নিয়ে তার দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করে তাকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাকে ইসলাম উত্সাহিত করে। ইসলাম এ ধরনের কাজকে অনেক বেশি সওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছে। 

হাদীস শরীফে এসেছে
নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি ও এতিমের অভিভাবক জান্নাতে দুই আঙুলের ন্যায় অতি কাছাকাছি থাকব।’ (বুখারি : ৬০০৫)
নবী করিম (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি এতিমের খোরপোশ ও লালন-পালনের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাত দান করবেন।’ (তিরমিজি : ১৯১৭)

পালিত সন্তান কখনো নিজ সন্তান হবে না, পালিত সন্তান ওরাছতের মালিক ও হবে না।
সুতরাং পালিত মেয়ে সন্তান উক্ত ব্যক্তির গায়রে মাহরাম থাকবে।যাকে উক্ত ব্যক্তি প্রয়োজনে বিবাহ ও করতে পারবে।ঠিকতেমনিভাবে পালিত পুত্র সন্তান উক্ত ব্যক্তির স্ত্রী বা মেয়ের গায়রে মাহরাম।যাদের মধ্যকার বিবাহ বৈধ।সুতরাংতাদের মধ্যকার শরয়ী পর্দার বিধান আপতিত হবে।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

বাচ্চা দত্তক নেয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু মাসয়ালা লক্ষ্য রাখতে হবে,তাহা হলোঃ-
 
★পিতৃপরিচয় ছিন্ন করা অবৈধ।
দত্তক নেওয়ার সময় স্মরণ রাখতে হবে, চুক্তিপত্রে সই করে সন্তানের পিতৃপরিচয়স্বত্ব ত্যাগ করে এমনভাবে দেওয়া যাবে না যে মা-বাবা আর কখনো ওই শিশুর মা-বাবা হিসেবে পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। ইসলাম এ কাজ কখনো সমর্থন করে না। কেননা ইসলাম সওয়াবের নিয়তে অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে বলেছে, কিন্তু সন্তান দখল করা কিংবা তার প্রকৃত পরিচয় বিলুপ্ত করার অনুমতি দেয়নি। অনেক সময় দেখা যায়, টাকার বিনিময়ে গরিব মা-বাবা সন্তান দত্তক দেন। এটাকে এক ধরনের সন্তান বেচাকেনাও বলা যেতে পারে। এটি কেবল অমানবিকই নয়, ঘৃণ্যও বটে। ইসলামে এ ধরনের স্বাধীন মানুষ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ হারাম। 
,
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব—এক. ওই ব্যক্তি, যে কোনো কাজে আমার নামে কারো সঙ্গে কসম করার পর তা ভঙ্গ করেছে। দুই. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন মানুষ বিক্রি করে সম্পদ অর্জন করেছে। তিন. আর যে ব্যক্তি কোনো লোক দিয়ে কাজ করিয়ে তার বিনিময় দেয়নি।’ (বুখারি : ২২২৭)
,
★লালন-পালনকারীর সঙ্গে পালিত সন্তান পর্দার ক্ষেত্রেও পুরোপুরি ইসলামের বিধান রক্ষা করে চলতে হবে। নিজ হাতে লালন-পালন করেছি বলে পর্দার বিধান লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। অর্থাত্ পালক নেওয়া শিশুটি ছেলে হলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাকে পালক নেওয়া মায়ের সঙ্গে পর্দা করতে হবে। অন্যদিকে পালক নেওয়া শিশুটি মেয়ে হলে তাকে পালক নেওয়া বাবার সঙ্গে পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে। কেননা ইসলামী শরিয়ত মতে, দত্তকসংক্রান্ত সম্পর্ক কখনো বংশীয় সম্পর্কে পরিণত হয় না। এমনকি তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কও অন্য সাধারণ মানুষের ন্যায়ই বৈধ। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। (তুহফাতুল ফুকাহা : ২/১২৩)

বিস্তারিত জানুনঃ   

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে শরীয়তের নিয়ম কানুন মেনে আপনারা চাইলে উক্ত বাচ্চাকে দত্তক নিতে চাইলে নিতে পারেন।

তবে সমাজে,জন্ম সনদে,ভোটার আইডি কার্ড সহ যাবতীয় কার্যক্রমে বাচ্চার পিতৃপরিচয় ছিন্ন করা যাবেনা।
তার আসল পিতৃপরিচয় দিতে হবে।
তার আসল পিতৃপরিচয় দিয়েই সমাজে তাকে পরিচিত করে তুলতে হবে।

তার সামনে পর্দার ক্ষেত্রেও পুরোপুরি ইসলামের বিধান রক্ষা করে চলতে হবে।
সে আপনাদের গায়রে মাহরাম, তাই সে বালেগ হয়ে গেলে তার সামনে পূর্ণ পর্দার বিধান রক্ষা করে চলতে হবে।

(০২)
ছেলেকে মূলত মোহরানা দিতে হয়।
আর মোহরানা হিসেবে সমাজে অনেক ক্ষেত্রে ছেলেরা গহনা দিয়ে থাকে।
তবে এই গহনা আবশ্যক নয়।

মূলত আবশ্যক হলো মোহরানা দেয়া,চাই তাহা টাকা দিয়েও দিতে পারে,চাই অলংকার ইত্যাদি দ্বারাও দিতে পারে।

★মেয়েদের বিবাহের সময় মেয়ের গহনা দেয়ার দায়িত্ব শরীয়ত মেয়ের বাবার উপর আবশ্যক করে দেয়নি।
চাইলে দিতে পারে,চাইলে নাও দিতে পারে,এটা একান্তই ব্যাক্তিগত ব্যপার। 

মেয়ের বাবা যদি গহনা না দেয়,আর তার প্রেক্ষিতে শশুর বাড়ি থেকে যদি খোঁটা দেয় কিংবা কথা শুনায়,তাহলে তাহা মারাত্মক অন্যায় ও গুনাহের কাজ বলে গন্য হবে।

এক্ষেত্রে পাত্রী ও পাত্রীর পরিবার মাজলুম বলে বিবেচিত হবে।

এ ধরনের কথা শোনানো শরীয়ত কোনোক্রমেই সাপোর্ট করেনা।
এটা স্পষ্ট জুলুম।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...