ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
কোরআন-হাদীসে যে সমস্ত হুরের আলোচনা
এসেছে, তারা মহিলা জাতীয় অর্থ্যাৎ স্ত্রী লিংগ, তবে কেউ কেউ
বলে থাকেন হুর পুরুষ মহিলা উভয়-ই হতে পারে,উক্ত মতানুসারে ফলাফল
এই হবে যে পুরুষকে মহিলা হুর দেওয়া হবে, এবং মহিলাকে পুরুষ হুর দেওয়া হবে,আসলে বক্তবটা
এমন নয় যেমন তারা ভেবেছেন,বরং জান্নাতি হুর বলতে মহিলা জামিয়া হুর-ই , কেননা আল্লাহ
তা'আলা যেখানেই হুর সম্পর্কে আলোচনা এনেছেন, সেখানেই স্ত্রী
লিংগের শব্দ ব্যবহার করেছেন,এবং যেসব স্থানে
পুঃলিঙ্গ এসেছে সেখানে উলামায়ে কেরাম তার তাবীল বা মাননসই ব্যখ্যা প্রদান করেছেন। শুনুন
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার শাশ্বত
বানী সমূহ.....
ﺇِﻧَّﺎ
ﺃَﻧﺸَﺄْﻧَﺎﻫُﻦَّ ﺇِﻧﺸَﺎﺀً ، ﻓَﺠَﻌَﻠْﻨَﺎﻫُﻦَّ ﺃَﺑْﻜَﺎﺭًﺍ ، ﻋُﺮُﺑًﺎ ﺃَﺗْﺮَﺍﺑًﺎ
"আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে
সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। কামিনী, সমবয়স্কা।"
(সূরা ওয়াকেয়া-৩৫)
ﺇِﻥَّ
ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﻣَﻔَﺎﺯًﺍ ، ﺣَﺪَﺍﺋِﻖَ ﻭَﺃَﻋْﻨَﺎﺑًﺎ ، ﻭَﻛَﻮَﺍﻋِﺐَ ﺃَﺗْﺮَﺍﺑًﺎ
পরহেযগারদের জন্যে রয়েছে সাফল্য।
উদ্যান, আঙ্গুর,
সমবয়স্কা,
পূর্ণযৌবনা তরুণী। (সূরা নাবা ৩১-৩৩)
https://ifatwa.info/34105/
নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
کَذٰلِکَ
۟ وَ زَوَّجۡنٰهُمۡ بِحُوۡرٍ عِیۡنٍ
এরূপই ঘটবে, আর আমি তাদেরকে বিয়ে দেব ডাগর নয়না হূরদের সাথে।(আদ-দোখান-৫৩)
مُتَّکِئِیۡنَ
عَلٰی سُرُرٍ مَّصۡفُوۡفَۃٍ ۚ وَ زَوَّجۡنٰهُمۡ بِحُوۡرٍ عِیۡنٍ
সারিবদ্ধ পালঙ্কে তারা হেলান দিয়ে বসবে; আর আমি তাদেরকে মিলায়ে দেব
ডাগরচোখা হূর-এর সাথে।(আত-তুর-২০)
আল্লাহ
তায়ালা আরো বলেন-
فِیۡهِنَّ
خَیۡرٰتٌ حِسَانٌ
সেই জান্নাতসমূহে থাকবে উত্তম চরিত্রবতী অনিন্দ্য সুন্দরীগণ।
(আর রাহমান-৭০)
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/8778
দুনিয়ার স্ত্রী ও জান্নাতী হুরদের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠানঃ
হুরদের অহঙ্কার।
عن
علی رضی اللّٰہ عنہ قال قال رسول اللّٰہ ﷺ فی الجنۃ لمجتمعا للحور العین۔ یرتفعن
باصوات لم تسع الخلائن بمثلا، قال یقلن نحن الخالدات فلا نبیذ ونحن الناعمات فلا
نبأس ۔ ونحن الراضیات فلا نسخط۔ طوبی لمن کان لنا وکنا لہ ۔
অর্থঃ হযরত আলী (রাঃ) বলেন- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- “জান্নাতের মধ্যে ডাগর চোখ বিশিষ্ট হুরদের মিলনমেলা বসবে। তাঁরা
এত উচ্চ আওয়াজ করবে- যা সৃষ্টির কেউ শুনেনি। হুযুর (ﷺ) বলেন- “তাঁরা উচ্চ আওয়াজে বলতে থাকবে-
“আমরা জান্নাতে এমন চিরস্থায়ী যে- নষ্ট হবো না। আমরা এমন নেয়ামত প্রাপ্তা যে- তা কখনও
পুরাতন এবং নষ্ট হবেনা। আমরা স্বামীদের প্রতি এমন রাযী যে- কোনদিন গোস্বা হবোনা। আমরা
যাদের জন্য এবং যারা আমাদের জন্য- সবারই ভাগ্য সুপ্রসন্ন” (তিরমিযি শরীফ)।
দুনিয়ার স্ত্রীদের জবাব
قالت
عائشۃ رضی اللّٰہ عھا ان الحور العین اذا قلن ھذہ المقالۃ ۔ اجابھن ۔ المؤمنات من
اھل الدنیا ۔ نحن المصلیات وما صلیتن ۔ ونحن الصائمات ۔ وما صمتن ،ونحن المتوضات
وما توضائن ونحن المتصدقات وما تصدقتن ۔ قالت عائشۃ فلغبنھن۔
অর্থঃ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন- “জান্নাতী হুরেরা যখন ঐসব বড়াই করবে- তার জবাবে দুনিয়ার মুমিন স্ত্রীগণ বলবে-“আমরা
ছিলাম নামাযী- তোমরা নামাযী নও। আমরা ছিলাম রোযাদার- তোমরা তো রোযা রাখনি। আমরা ছিলাম
ওযু সম্পাদনকারিনী- তোমরা তো তা ছিলেনা। আমরা ছিলাম সাদ্কাকারিনী- তোমরা তো তা ছিলেনা”।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন- দুনিয়ার মহিলারাই এই বিতর্কে জিতে যাবে”। (আত-তাযকিরাহ্)।
ব্যাখ্যাঃ বুঝা গেলো- হুরেরা হলো ভোগের, আর দুনিয়ার স্ত্রীরা হলো ত্যাগের।
হুরেরা আমল শুন্য- আর মোমেন নারীরা হবে আমলে পূন্য। শুন্যের উপর পূন্যের প্রাধান্য
সর্বজন স্বীকৃত। কাজেই দুনিয়ার স্ত্রীর সম্মান হবে বেশী। ইহাই হাদীসের মূল কথা। আল্লাহ্
যেন আমাদেরকে জান্নাতে দুনিয়ার পূন্যবতী স্ত্রী নসীব করেন। আমীন!
বিঃ দ্রঃ ঐসব মা বোনদের জন্য সুসংবাদ- যারা দুনিয়াতে নামায রোযা, অযু গোসল, পাক পবিত্রতা ও সাদকা খয়রাতে
ত্রুটি করেন না। তাঁরাই হবেন সেরা ও মর্যাদার অধিকারিনী। তাঁদের মূল্য জান্নাতী হুরের
চেয়েও অধিক।
সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
হুর সম্পর্কে কুরআন হাদীসে অসংখ্য আলোচনা এসেছে। শুধুমাত্র হাদীস
নয়, বরং কুরআন দ্বারাও প্রমাণিত রয়েছে। সুতরাং হুর জান্নাতে থাকবে এবং এটা
জান্নাতীদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে একটি নিয়ামত।