আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
75 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

এক ব্যক্তি একজনের বাসা ভাড়া নিতে চায়।

বাড়ির মালিকের আর্থিক প্রয়োজন আছে।

তাই সেই ব্যক্তি বাড়ির মালিককে অফার করে; যদি আপনি বাসা ভাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিয়ে দেন, তাহলে আমি আপনাকে এক লাখ টাকা ঋণ জোগাড় করে দিব।

" উল্লেখ্য পরবর্তীতে পূর্ন ১ লাখই ঋণ পরিশোধ করতে হবে"

এমতাবস্থায় কি সেই ব্যক্তির 'ভাড়া কমানোর বাড়তি সুবিধা' সুদ হবে?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

সুদ হারাম। ঋণ দিয়ে সুদ গ্রহণ করা হারাম। তবে যদি ঋণ গ্রহিতা নিজ ইচ্ছায় পরিশোধের সময় কিছু দিয়ে দেয়,তা হলে সেটা হারাম হবে না। ঋণ দেওয়ার পর তার ওপর কিছু অতিরিক্ত আদান-প্রদান শরিয়তের আলোকে সুদের অন্তর্ভুক্ত।

ঋণদাতার পক্ষ থেকে ঋণগ্রহীতার কাছে ঋণ প্রদানের কোনো বিনিময় দাবি করা, আশা করা বা কৌশলে চাপ দিয়ে আদায় করা নাজায়েজ। এটা সুদের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে সুদ খাওয়া অত্যন্ত ঘৃণিত অপরাধ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا

আল্লাহ ব্যবসা হালাল করেছেন, সুদ হারাম করেছেন। (সুরা বাকারা: ২৭৫)

ঋণগ্রহীতা যদি ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর জন্য ঋণদাতাকে কোনো উপহার দিতে চায়, তা গ্রহণ করাও জায়েজ নেই। তবে যদি তাদের মধ্যে আগে থেকেই হৃদ্যতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে, উপহার আদান-প্রদানের প্রচলন থাকে এবং ওই উপহার ঋণের বিনিময়ে বা ঋণ প্রদানে ছাড় পাওয়ার জন্য দেওয়া হচ্ছে না তাও স্পষ্ট থাকে, তাহলে ওই হাদিয়া গ্রহণ করা যেতে পারে।

ইহয়াহইয়া ইবনে আবু ইসহাক আল-হানাঈ (রা.) বলেন, আমি আনাস ইবনে মালেককে (রা.) জিজ্ঞাসা করলাম, আমাদের মধ্যে কেউ যদি তার কোনো ভাইকে দেয়, তারপর ঋণগ্রহীতা তাকে কোনো উপহার দেয় এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী? তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

إِذَا أَقْرَضَ أَحَدُكُمْ قَرْضًا فَأَهْدَى لَهُ أَوْ حَمَلَهُ عَلَى الدَّابَّةِ فَلاَ يَرْكَبْهَا وَلاَ يَقْبَلْهُ إِلاَّ أَنْ يَكُونَ جَرَى بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ قَبْلَ ذَلِكَ

তোমাদের কেউ ঋণ দেয়ার পর ঋণগ্রহীতা তাকে কিছু উপহার দিলে বা তার সওয়ারিতে আরোহণ করাতে চাইলে সে যেন উপহার গ্রহণ না করে এবং তার সওয়ারিতেও আরোহণ না করে। তবে তাদের মধ্যে আগে থেকেই এরকম সৌজন্যমূলক বিনিময়ের প্রচলন থাকলে আপত্তি নেই। (সুনানে ইবনে মাজা: ২৪৩২)

এ হাদিস থেকে এ বিষয়ে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়ার জন্য উপহার দেওয়া হলে তা গ্রহণ করা যাবে না। ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মাঝে যদি ঋণ দেওয়ার আগে উপহার আদান-প্রদানের প্রচলন না থাকে এবং ওই উপহার ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়ার উদ্দেশ্যে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে এ রকম উপহার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

যেমন এক হাদীসে এসেছে,হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত

عن ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﻟِﺮَﺟُﻞٍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺳِﻦٌّ ﻣِﻦْ ﺍﻹِﺑِﻞِ ﻓَﺠَﺎﺀَﻩُ ﻳَﺘَﻘَﺎﺿَﺎﻩُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺃَﻋْﻄُﻮﻩُ ، ﻓَﻄَﻠَﺒُﻮﺍ ﺳِﻨَّﻪُ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍ ﻟَﻪُ ﺇِﻻ ﺳِﻨًّﺎ ﻓَﻮْﻗَﻬَﺎ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ( ﺃَﻋْﻄُﻮﻩُ ، ﺇِﻥَّ ﺧِﻴَﺎﺭَﻛُﻢْ ﺃَﺣْﺴَﻨُﻜُﻢْ ﻗَﻀَﺎﺀً )

রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে জনৈক ব্যক্তির একটি বাচ্ছা বয়সী উট পাওনা ছিলো,অতঃপর যখন সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে এসে তা চাইলো।তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ উনার পাওনা উনাকে বুঝিয়ে দাও।সাহাবায়ে কেরাম (সদকার মালের মধ্যে খুজে)উক্ত ব্যক্তির পাওনা কমবয়সী উট পেলেন না।বরং তার থেকে একটু বেশী বয়সী উট পেলেন।তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেনঃ তোমরা তা তাকে দিয়ে দাও,কেননা তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে ঋণ পরিশোধের সময় উদারতা প্রদর্শন করে।তথা অতিরিক্ত দিয়ে দেয়।(সহীহ বুখারী-২৩৯৩,সহীহ মুসলিম-১৬০০)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,

মুনাফার শর্তে ঋণ দিলে তা রিবার অন্তর্ভুক্ত। তবে শর্ত ব্যতীত যদি ঋণদার ঋণ পরিশোধের সময় কিছুটা বেশী দিয়ে দিলে তা রিবার অন্তর্ভুক্ত হবে না। বরং তা বৈধ-ই হবে। সুতরাং ঋণ দেওয়ার পর তার ওপর কিছু অতিরিক্ত আদান-প্রদান শরিয়তের আলোকে সুদের অন্তর্ভুক্ত।

অতএব প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে বাড়ি ভাড়া কমানোর শর্তে প্রশ্নোক্ত লেনদেন করা জায়েয হবে না। বরং এটি সুদের অন্তর্ভূক্ত হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...