আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
37 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (5 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ

মনের মধ্যে শিরকি চিন্তা আসলে আমি সেটা বুঝতে না পেরে চিন্তা করে ফেললে, পরে সাথে সাথেই যখন বুঝতে পারি খারাপ চিন্তা সাথে সাথে ইগনোর করি।এখন এইযে কিছুসময় চিন্তা করে ফেলছি, এর জন্য কি আমার ইমান চলে যাবে এবং নতুন করে ইমান আনতে হবে?আমি ইতোপূর্বে অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যতে অজ্ঞাতসারে বা অনিচ্ছাকৃত করে ফেলা সকল শিরকের জন্য মাফ চেয়ে নিয়েছি।কেননা,আমি শিরকের ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত,বার বার মাফ চাইলে ওয়াসওয়াসার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।আমি ইমান ভঙ্গের কারণ, শিরক ইত্যাদি সম্পর্কে আমারা জানামতে ব্যাসিক টা জানি।অনেক সময় আমার মনে হয় প্রত্যেকটা কথাতেই যেন শিরক হয়ে যাচ্ছে। আবার, কিছুক্ষণ পর পরই কোনো কারণে আমার মনে হচ্ছে যেনো ঈমান চলে যাচ্ছে।বার বার কালেমা পড়ে ইমান আনছি। অনেক নরমাল কাজকে আমার মনে হচ্ছে শিরক হয়ে যাচ্ছে।(১)এখন এই অবস্থা থেকে সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন কাজে, কথায়, চিন্তায় শিরক হয়ে যাচ্ছে, বা শিরক হয়ে গেলো কিনা এরূপ চিন্তা থেকে বিরত থাকতে পারব?কিন্তু আমার ভয় হয় এর ফলে  যদি শিরক হয়ে যায়।

আমি এই পদ্ধতি অনুসরণ করে দেখেছি সমস্যা প্রায় নেই বললেই চলে।কিন্তু আবার যদি চিন্তা করি তাহলেই আবার শুরু হয়ে যায়।(আমি ওয়াসওয়াসা কোর্সের ব্যাপারটি জানি এবং সেখানে এনরোলও করেছি। আমার এই প্রশ্নের উত্তরটি দরকার। দয়া করে আমার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিবেন, মিন ফাদ্বলিক,ইনশাআল্লাহ)( ২)আমার নামাজ বিষয়ক ভুল মাসয়ালা বা না জানার কারণে অনেক সময় এমন হয়েছে যে নামাজ বাতিল হয়ে গেছে বা সাহু সিজদাহ দিতে হবে কিন্তু আমি না জানার কারণে দেইনি।এখন এরকম নামাজের সংখ্যা, ওয়াক্ত কোনো কিছুই আমার মনে নেই। এখন,আমার না জানার কারণে কি এই নামাজ গুলো আদায় হয়ে যাবে?এক্ষেত্রে করণীয় কি?

(৩)প্রতারণা কী?কখন হয়?

(৪)নামাজের মাঝে ওযু ছুটে গেলে বাথরুমে ওযু করতে যাওয়ার সময় কি বাথরুমের দোয়া পড়া যাবে?(৫) আর লাইট অন করা ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক কাজ করা যাবে?( ৬)আর ভুলে নিজের সাথে নিজে কথা বলে ফেললে এবং রুমে আলো থাকার পরও অভ্যাস বশত ভুলে লাইট অন,অফ বা এজাতীয় কাজ করলে নামাজ ভেঙে যাবে?

1 Answer

0 votes
by (547,020 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
এটি ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্ন,আইফাতওয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেয়া হবেনা।

(০২)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
যে নামাজ গুলি বাতিল হয়েছে,প্রবল ধারনার ভিত্তিতে সেগুলোর আনুমানিক একটি হিসেব কষে সেই নামাজ গুলির কাজা আদায় করবেন।
অন্যান্য নামাজের কাজা আদায় না করলেও হবে।

(০৩)
প্রতারণা হল অসত্য তথ্যের এক বা একাধিক প্রাপককে বোঝানোর কাজ। 

প্রতারণা অর্থ ঠকানো ফাঁকি দেওয়া ধোঁকা দেওয়া বিশ্বাস ভঙ্গ করা৷ এটি মিথ্যাচারের একটি বিশেষ রূপ৷ 

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ ٥ الَّذِيْنَ اِذَا اكْتَالُوْا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْ فُوْنَ٥ وَاِذَا كَالُوْهُمْ اَوْوَّزَنُوْ هُمْ يُخْسِرُوْنَ٥

অর্থঃ ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকের নিকট থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তারা মেপে বা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়৷ (সূরা আল মুতাফফিফিন আয়াত ১-৩)।

নিজ স্বার্থের বিরোধী হলেও মুমিন ব্যক্তি সততা ও সত্যবাদিতার উপর অটল থাকেন৷ আমাদের প্রিয়নবি (ন.) বলেছেন যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে সে আমার উম্মত নয়৷ আর যে কারও সাথে প্রতারণা করে সে মুসলিম দলভুক্ত নয়৷ (মুসলিম)। রাসুলুল্লাহ (স.) অন্য হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেনঃ
مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنَّا

অর্থঃ যে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়৷ (তিরমিযি)।

ইসলামি শরিয়তে প্রতারণা করা ধোঁকা দেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম৷ ব্যবসায় বাণিজ্য লেনদেন আচার ব্যবহার ও আর্থ সামাজিক নানা কর্মকান্ডে কোন অবস্থাতেই প্রতারণা জয়েজ নয়৷ কোন কাজেই প্রতারণা করা যাবে না সত্য মিথ্যার মিশ্রণ কো যাবে না এবং সত্য ও প্রকৃত অবস্থা গোপন করা যাবে না৷ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ٥

অর্থঃ তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ করো না এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করো না৷ (সূরা আল বাকারা আয়াত ৪২)।

ব্যবসায় বাণিজ্য পণ্যদ্রব্য সঠিকভাবে লেনদেন করতে হবে৷ পণ্যের দোষ ক্রটি ক্রেতার নিকট পরিস্কারভাবে বর্ণনা করতে হবে৷ পণ্যের সঠিক অবস্থা না জানিয়ে লেনদেন করা প্রতারণা এটা হারাম বা অবৈধ৷ একটি হাদিসে বর্ণিত আছে একদা রাসুলুল্লাহ (স.) একটি খাদ্যদ্রব্যের স্তূপের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন৷ এসময় তিনি স্তূপের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন৷ তিনি দেখতে পেলেন যে স্তূপের ভিতরের দ্রব্য ভিজা ও বাইরেরগুলো শুকনো৷ 

তিনি বললেন হে খাদ্যের মালিক এটা কী লোকটি বলল হে আল্লাহর রাসুল বৃষ্টির দরুন এগুলো ভিজে গেছে৷ অতঃপর রাসুল (স.) বললেন তবে তুমি ভিজা খাদ্যশস্য কেন উপরে রাখলে না? তাহলে ক্রেতারা এর প্রকৃত অবস্থা জানতে পারত (ফলে প্রতারিত হতো না৷)।  বস্তুত যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য হবে না। (মুসলিম)।

প্রতারণা একটি সমাজদ্রোহী অপরাধ৷ এর দ্বারা পরস্পরের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়৷ সমাজে শক্রতা জন্ম নেয়৷ প্রতারণাকারীকে কেউ পছন্দ করে না৷ সে যেমন মানবসমাজে ঘৃণিত তেমনি আল্লাহ তায়ালার নিকটও ঘৃণিত৷ মহানবি(স.) বলেছেন যে ব্যক্তি দোষযুক্ত পণ্য বিক্রি করে এবং ক্রেতাকে দোষের কথা জানায় না এমন ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার নিকট ঘৃণিত৷ ফেরেশতাগণ সর্বদা তাকে অভিশাপ দিতে থাকেন৷ (ইবনে মাজাহ)

ইসলামি পরিভাষায় প্রকৃত অবস্থা গোপন রেখে ফাঁকি বা ধোঁকার উপর ভিত্তি করে নিজ স্বার্থ হাসিল করাকে প্রতারণা বলা হয়৷ প্রতারণার মাধ্যমে অন্যকে ভুল বুঝিয়ে ঠকানো হয়৷ প্রতারণা নানাভাবে হতে পারে৷ সাধারণত আর্থিক লেনদেন ও ব্যবসায় বাণিজ্যে প্রতারণার দৃষ্টান্ত বেশি পরিলক্ষিত হয়৷ 

যেমন ওজন কম দেওয়া জাল মুদ্রা চালিয়ে দেওয়া পণ্যদ্রব্যের দোষ গোপন করা ভালো জিনিস দেখিয়ে বিক্রিয়া সময় খারাপ জিনিস দিয়ে দেওয়া বেশি দামের দ্রব্যের সাথে কম দামের দ্রব্য মিশিয়ে বিক্রি করা ভেজাল মেশানো ফলে ও মাছে রাসায়নিক দ্রব্য দেওয়া পণ্যদ্রব্যের মিথ্যা প্রচারণা চালানো ইত্যাদি৷

এছাড়াও মানবজীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রতারণা হতে পারে৷ যেমন পরীক্ষায় নকল করা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে অন্যের হক নষ্ট করা বিশ্বাস ভঙ্গ করা ভুল ও মিথ্যা তথ্য দেওয়া পথচারীকে ভুল রাস্তা বলে দেওয়া সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ এমনকি নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করাও প্রতারণার শামিল৷

প্রতারণা অত্যন্ত গর্হিত ও ঘৃণিত কাহ৷ এটি মিথ্যাচারের শামিল৷ এমনকি অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণা মিথ্যা অপেক্ষাও জঘন্য৷ কেননা প্রতারণা করার দ্বারা দুটো পাপ হয়৷ একটি মিথ্যা বলা ও অপরটি বিশ্বাস ভঙ্গ করা৷ সুতরাং সর্বাবস্থায় প্রতারণা বর্জন করা আবশ্যক৷ যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে প্রকৃতি মুমিন নয়৷ কেননা ইমান ও প্রতারণা এক ব্যক্তির মধ্যে একত্রে থাকতে পারে না৷ প্রকৃত মুমিন কখনোই প্রতারণার আশ্রয় নেন না৷ 

(০৪)
হ্যাঁ,পড়া যাবে।
তবে ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে ইস্তেঞ্জা খানার দোয়া না পড়ারই পরামর্শ থাকবে। 

(০৫)
হ্যাঁ, করা যাবে।

(০৬)
ভুলে নিজের সাথে নিজে কথা বলে ফেললে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
পুনরায় নতুন করে নামাজ আদায় করতে হবে। 
রুমে আলো থাকার পরও অভ্যাস বশত ভুলে প্রয়োজন বশত লাইট অন অফ বা এজাতীয় কাজ করলে নামাজ ভেঙ্গে যাবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
উত্তর পড়তে অসুবিধা হয় নি ; তারপরও , যদিছেদ চিন্হগুলোর ব্যাপারে আরেকটু খেয়াল কামনা করছি উত্তরদাতা জনাবের কাছ থেকে । আল্লাহ আপনাকে কল্যাণ দান করুক ।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...