ওয়া আলাইকুমুস-সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাব,
https://www.ifatwa.info/4541/ নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি ,
যে, বিয়ের আগে পাত্রপাত্রীর যে বিষয়গুলো গুরুত্বের
সাথে বিবেচনা করতে হবে তার মধ্যে ‘কুফু’ অন্যতম। আরবি ‘কুফু’ শব্দের অর্থ সমতা,
সমান, সাদৃশ্য, সমকক্ষ,
সমতুল্য ইত্যাদি।
বিয়ের ক্ষেত্রে
বর-কনের দ্বীনদারি, সম্পদ,
বংশ, সৌন্দর্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি
হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় কুফু বলে।
স্বামী-স্ত্রী
পরস্পরের রুচি, চাহিদা,
অর্থনৈতিক অবস্থান খুব বেশি ভিন্ন হলে সেখানে সুখী দাম্পত্যজীবন প্রতিষ্ঠা
কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একজন উচ্চ শ্রেণীর ছেলেমেয়ের চাহিদা-রুচির সাথে একজন দরিদ্র বা
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের রুচিবোধের মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক।
আবার একজন
দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে
পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের
আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে
না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।
আল্লাহ বলেন, ‘দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য;
দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা
নারী সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযুক্ত।’
(সূরা নূর : ২৬)।
অন্য আয়াতে
আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী
পুরুষ যেন ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। আবার ব্যভিচারিণী নারী
যেন ব্যভিচারী পুরুষ বা মুশরিক পুরুষ ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। মুমিনদের জন্য এ ধরনের
চরিত্রের নারী-পুরুষকে হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা নূর : ৩)।
কুরআনের পাশাপাশি
রাসূল সা:-এর পবিত্র হাদিস শরিফেও ‘কুফু’ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। রাসূল
সা: ‘কুফু’র বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
আবূ হুরাইরাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি
বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলে, যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে
তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা
যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃংখলা ছড়িয়ে
পড়বে। (ইবনে মাজাহ ১৯৬৭,তিরমিযী ১০৮৪, ইরওয়াহ
১৮৬৮, সহীহাহ ১০২২।)
حَدَّثَنَا
عَبْدُ اللهِ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا الْحَارِثُ بْنُ عِمْرَانَ الْجَعْفَرِيُّ
عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم تَخَيَّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَانْكِحُوا الْأَكْفَاءَ
وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের
স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবচেনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো। (ইবনে মাজাহ ১৯৬৮)
وَعَنْ
أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ
لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ
بِذَاتِ الدَّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ»
আবূ হুরায়রাহ্
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মূলত) চারটি গুণের কারণে
নারীকে বিবাহ করা হয়- নারীর ধন-সম্পদ, অথবা বংশ-মর্যাদা,
অথবা রূপ-সৌন্দর্য, অথবা তার ধর্মভীরুর কারণে।
(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) সুতরাং ধর্মভীরুকে প্রাধান্য দিয়ে
বিবাহ করে সফল হও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার দু’ হাত ধূলায় ধূসরিত হোক (ধর্মভীরু
মহিলাকে প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অবধারিত)! সহীহ : বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ
দাঊদ ২০৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯৫২১,
ইরওয়া ১৭৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০০৩।)
কুফু সম্পর্কে
বিস্তারিত জানুনঃ https://www.ifatwa.info/4541/
ইস্তেখারার
নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/14451/
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!
যদি আপনার প্রবল ধারণা হয় যে, ছেলেটি তার প্রত্যাশানুরূপ নিজেকে পরিবর্তন করবে এবং একজন পূর্ণ প্র্যাকটিসিং
মুসলিম হবে, সে ও তার পরিবার আপনাকে পর্দার সাথে দ্বীন মেনে চলার ক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতা
করবে, তাহলে আপনি পারিবারিকভাবে পরামর্শ করে বিবাহের দিকে অগ্রসর হতে পারেন ইনশাল্লাহ।
কিন্তু আপনার কাছে যদি মনে হয় যে, ছেলের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসবে না এবং তার পরিবারও দ্বীনদারিতার ক্ষেত্রে এবং পর্দা
মেনে চলার ক্ষেত্রে আপনাকে সাপোর্ট করবে না, সেক্ষেত্রে আপনার অগ্রসর না হওয়াই উচিত।
কারণ, ছেলে ও ছেলের পরিবার যদি আপনার ও আপনার পরিবারের
মত দ্বীনদার না হয়ে এবং আপনার ও আপনার পরিবারের কুফু এবং তার ও তার পরিবারের কুফুর
সাথে মিল না থাকে তাহলে বিয়ের জন্য সামনে অগ্রসর না হওয়াই আমরা পরামর্শ দিবো। কারণ,
একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর
জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দ্বীনহীন
চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের
ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে
গুরুত্বারোপ করেছে। তবে আপনি ইস্তেখারাহ করে ও আপনার পরিবারের সাথে পরামর্শ করে চূড়ান্ত
কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
২. আপাত দৃষ্টিতে আপনার স্বপ্নের বিবরণ থেকে মনে হচ্ছে
যে ওই ছেলের সাথে আপনার বিবাহ সংঘটিত হবে।
কিন্তু এর বিকল্প যে হবে না তা নয়। বরংআপনার জীবন সঙ্গী হতে পারে উত্তম দ্বীনদার কোন
পাত্র । তবে সর্বোপরি আপনাকে ইস্তিখারা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পরামর্শ
থাকবে।