ওয়া আলাইকুমুস-সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাব,
পবিত্রকরণ এর দিক দিয়ে নাজাসত দুই
প্রকারঃ যথা-
১.দৃশ্যমান নাজাসত
২.অদৃশ্যমান নাজাসত
দৃশ্যমান নাজাসতের বিধানঃ কাপড়ে প্রথম
প্রকার তথা দৃশ্যমান নাজাসত লাগলে সেই নাজাসতকে
দূর করে দিলেই কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে এক্ষেত্রে নাজাসত দূর করতে ধৌত করার কোনো
পরিমাণ নেই। যতবার ধৌত করলে নাজাসত দূর হবে ততবারই ধৌত করতে হবে। যদি একবার ধৌত করলে
তা চলে যায় তবে একবারই ধৌত করতে হবে।
অদৃশ্যমান নাজাসতের বিধানঃ কাপড়ে দ্বিতীয়
প্রকার তথা অদৃশ্যমান নাজাসত লাগলে,
কাপড়কে তিনবার ধৌত করে
তিনবারই নিংড়াতে হতে এবং শেষ বার একটু শক্তভাবে নিংড়ানো হবে যাতে করে পরবর্তীতে আর
কোনো পানি বাহির না হয়। (ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া;২/৫৭৪জা'মেউল ফাতাওয়া;৫/১৬৭)
নাজাসতকে ১০টি পদ্ধতিতে পবিত্র করা
যায় যথা-
১. ধৌত করা,যেমন কাপড় ইত্যাদি।
২. মোছা, যেমন আয়না,তলোয়ার ইত্যাদি।
৩. টোকা দিয়ে নাজাসত দূর করা,যেমন গাড় বীর্য কে টুকা দিয়ে কাপড় থেকে দূরে সরিয়ে ফেলা,ইত্যাদি।
৪. ঘর্ষণ, মর্দন, যেমন শরীর বিশিষ্ট নাজাসত
যাকে ঘর্ষণ-মর্দন করে দূর করা হলে তা পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।
৫. শুকিয়ে নাজাসতের আসর দূর হয়ে যাওয়া,যেমন জমিন,গাছ ইত্যাদি শুকিয়ে পবিত্র
হয়ে যায়,ইত্যাদি।
৬. জ্বালানো, যেমন গোবর ইত্যাদি জ্বলে ভস্ম হয়ে ছাই হয়, যা পবিত্র। ইত্যাদি।
৭. এক অবস্থা থেকে ভিন্নরূপ ধারণ করে
পবিত্র হওয়া। যেমনঃ মদ থেকে সিরকায় পরিণত হওয়া যা কিনা পবিত্র। ইত্যাদি।
৮. দেবাগত,যেমন মানুষ এবং খিনযির ব্যতীত সকল প্রকার প্রাণীর চামড়া কে লবন
মাখিয়ে রৌদ্রে রাখলে তা পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।
৯. যবেহ, প্রাণীকে যবেহ করার মাধ্যমে উক্ত প্রাণীর চামড়া পবিত্র হয়ে যায়।
যদি এমন প্রাণীও হয় যার গোস্ত ভক্ষণ করা হারাম,তবে তার চামড়াকে পবিত্র
করে দেয়,ইত্যাদি।
১০. নরখ,তথা যদি কোনো কূপে নাজসত পড়ে যায় তাহলে উক্ত কূপের মুনাসিব পরিমাণ
পানি বাহিরে নিক্ষেপ করলেই উক্ত কোপ পবিত্র হয়ে যায় ইত্যাদি।
এই মোট দশ ভাবে কোনো অপবিত্র জিনিষকে
পবিত্র করা যায়।
কাপড়ে মযী বা পেশাব লাগার পর যদি তা
শুকিয়ে যায়, তাহলে উক্ত কাপড় টেবিল বা অন্য শুকনা
কিছুতে লাগলে তা নাপাক হবে না। শুকিয়ে যাওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কোন কিছুতে তা লাগলে নাপাকের চিহ্ন পরিলক্ষিত না হওয়া। (নাসবুর
রায়া ১/২৭৭; ইলাউস সুনান ১/৩৯৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫;
খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪২)
পক্ষান্তরে উক্ত কাপড় যদি এতটা ভেজা
থাকে যে, টেবিল বা অন্য শুকনা কিছুতে লাগলে তার চিহ্ন দেখা যায়, তাহলে ওই চিহ্ন এক দেরহাম পরিমাণ হলে অসুবিধা নেই। কিন্তু যদি
এক দিরহাম থেকে অধিক হয় তাহলে যতটুকুতে লেগেছে ততটুকু নাপাক হয়ে যাবে।
عن علي وبن مسعود أنهما قدرا النجاسة بالدرهم وكفى بهما
حجة في الاقتداء
হযরত আলী রাযি. এবং ইবনে মাসউদ রাযি. নাপাক হওয়ার পরিমাণ নির্দিষ্ট
করেছেন এক দিরহাম। আর মানার জন্য দলিল হিসাবে এই দু’জনই যথেষ্ট। (উমদাতুল কারী ৩/১৪০)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
‘কাঠের তৈরি কোনো আসবাবে নাপাক লেগে শুকিয়ে গেলে
তা পাক হয়ে যাবে।’ এই কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, উক্ত বস্তুতে
শুকনো কিছু লাগলে তা নাপাক হবে না। কিন্তু যদি ভেজা হাত বা কাপড় লাগে ফলে কাঠ থেকে
নাপাকির চিহ্ন হাত বা কাপড়ে লেগে যায় তখন হাত বা কাপড় নাপাক হয়ে যাবে।
সুতরাং উক্ত ভেজা কাপড়ে যদি চেয়ারের নাপাকি
পরিলক্ষিত হয় এবং উহার পরিমাণ এক দেরহামের কম বা এক দেরহাম পরিমাণ হলে অসুবিধা নেই। কিন্তু যদি এক দিরহাম থেকে
অধিক হয় তাহলে যতটুকুতে লেগেছে ততটুকু নাপাক হয়ে যাবে। তবে সতর্কতা মূলক যদি পুরো
কাপড় ধৌত করা হয় তাহলে এটিই উত্তম হবে।