আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
104 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (8 points)
আসসালামু আলাইকুম, আমরা দুইজন নিজেদের পরিবারকে না জানিয়ে দেনমোহরে উল্লেখ করা ছাড়া নিজেরা দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে করি।এই যে,আমার স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী হাত কেটে আমাকে ছবি পাঠিয়ে জোরাজোরি করে আমার থেকে তালাক দাবি করে। আমি তালাক দিতে না চাইলে আমার স্ত্রী 'আমাকে হুমকি দেয় যে,তাকে আমি তালাক না দিলে সে তার হাতের রগ কেটেফেলবে।আমি আমার স্ত্রীকে শান্ত করার জন্যে বলি যে,আমি আমার বন্ধুদের সামনে বলে দিবো।তালাক হয়ে যাবে এ ভয়ে আমি তালাক শব্দটি মুখ দিয়ে উচ্চারণ করিনি ।আমি উত্তেজিত ছিলাম দেখে আমার বন্ধু আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি যে, ডিভোর্স দিয়ে ফেলছি। কিন্তু আমার মনের মধ্যে তালাকের কোনো নিয়ত ছিল না এবং কাকে ডিভোর্স দিয়েছি তা উল্লেখ করিনি, আমার জানা ছিল না যে,ডিভোর্স দিয়ে ফেলছি বললে তালাক হতে পারে। আমার বন্ধু যখন জিজ্ঞাসা করে তালাক দিয়ে ফেলছি কিনা, উত্তরে আমি তালাকের নিয়ত ছাড়া ও তাদের থেকে লুকানোর জন্যে বলি, হ্যা। আমাকে আমার স্ত্রী সেহেতু অতিরিক্ত মানসিক চাপ দিয়েছিল পরবর্তীতে আমার মনে পড়ে না যে,আমি আমার বন্ধুকে কী বলেছিলাম।
প্রশ্ন-যেহেতু নিজের ইচ্ছা ছাড়া ও তালাকের নিয়ত ছাড়া মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়ে ডিভোর্স দিয়ে ফেলছি বলেছি এবং জানতাম না যে, ডিভোর্স দিয়ে ফেলছি বললে তালাক হয়ে যায় ও পরবর্তীতে আমার নিজের-ই মনে পড়ে না যে, আমি আমার বন্ধুকে কী বলেছি, এ অবস্থায় কী আমাদের তালাক হয়েছিল?

ঘটনা ২: আমার স্ত্রী আবার আমার সাথে নানা বিষয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে তালাক চাই, আর আমি আমার স্ত্রীকে রাগ নিয়ে তালাক দিয়ে ফেলি।

ঘটনা ৩ঃ তারপর আমরা আবার দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ৫০,০০০ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করি! স্ত্রী পুনরায় স্বামীকে তালাকের জন্যে স্বামীকে অনেক জোরাজোরি করে। জোরাজোরির এক পর্যায়ে প্রচন্ড ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রাণনাশের হুমকিস্বরূপ স্ত্রী স্বামীকে একথা বলতে বাধ্য হয় যে-আমাকে তালাক না দিলে আমি অনেকগুলো ঔষধ খেয়ে মরে যাবো। আর আমার মৃত্যুর জন্যে দায়ী হবে তুমি, আমি তোমাকে আমার মৃত্যুর জন্যে তোমাকে দায়ী করে যাবো।আমার 'স্ত্রী 'আমাকে এতো জোরাজোরি করে, এতো মানসিক চাপ দেয়, এতো মানসিক টর্চার করে, এতো মানসিক যন্ত্রণা দেয় যে, এবং এতগুলো হুমকি দেই যে,আমি ক্ষণিকের জন্যে আমার ভালো-মন্দ নির্বাচন করার শক্তি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে কোনো উপায় না পেয়ে নিজের জীবন বাঁচানোর ভয়ে এ জন্যে তাকে তালাক দিতে বাধ্য হই, কিন্তু তাকে তালাক দেওয়ার কোনো নিয়ত বা ইচ্ছা ছিল না।

প্রশ্ন-যেহেতু আমার তালাক দেওয়ার কোনো নিয়ত ছিল না ও আমি আমার স্ত্রীর মানসিক চাপে ভালো-মন্দ নির্বাচনের শক্তি ক্ষণিকের জন্যে হারিয়ে তালাক দিই, এই তালাক কী হয়েছে?

ঘটনাঃ-পরবর্তীতে স্ত্রী আমাকে সেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা ভেঙে ফেলে এবং আমি রাগারাগি করলে সে আমার সাথে থাকতে চাই না, তখন আমি রাগ নিয়ে তালাক দিয়ে ফেলি।

প্রশ্ন-এখন আমার স্ত্রী নিজের ভুল নিজে বুঝতে পেরেছে এবং সে ভুলগুলো শুধরিয়ে সে আমার সাথে থাকতে চাই এবং আমিও আমার স্ত্রীর সাথে থাকতে চাই ।যেহেতু আমি ইচ্ছাকৃত দুইবার তালাক দিয়েছি এবং অনিচ্ছাকৃত মানসিক চাপে, মৃত্যুর হুমকি এড়াতে, নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যে,আমার নিজের-ই মনে পরে না যে আমি আমার বন্ধুকে কী বলেছি , ভালো-মন্দ নির্বাচন শক্তি হারিয়ে  দুইবার তালাক দিয়েছি। এরপর আমাদের কী একসাথে থাকার কোনো সুযোগ আছে?আর  আমাদের কী তিন তালাক সম্পন্ন হয়েছে?

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/82846/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
তালাক এটি খুবই মারাত্মক একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যে,  আল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক।

(আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।) 

https://ifatwa.info/55211 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ-
তালাকের মিথ্যা স্বীকারোক্তি দ্বারা তালাক হবে কি না? এনিয়ে হানাফি দারুল ইফতা সমূহে মতপার্থক্য হয়েছে।কোনো কোনো দারুল ইফতা থেকে তালাক হওয়ার ফাতাওয়া দেয়া হয়েছে।আবার কোথাও তালাক না হওয়ার ফাতাওয়া দেয়া হয়েছে।

লোকদের সহজতার জন্য দিয়ানতকে মানদন্ড করে আমরাও তালাক না হওয়ার ফাতাওয়াতে একমত হয়েছি-

ولو أقر بالطلاق وہو کاذب وقع في القضاء …  (البحر الرائق ۳؍ ۲۴۶ کراچی، سکب الأنہر علی ہامش مجمع الأنہر ۲؍۸ بیروت)
সারমর্মঃ-
যদি কেহ তালাকের মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেয়,তাহলে কাজায়ান তালাক হবে,তবে দিয়ানাতান তালাক হবেনা। 

كَمَا  لَوْ أَقَرَّ بِالطَّلَاقِ هَازِلًا  أَوْ كَاذِبًا فَقَالَ فِي الْبَحْرِ، وَإِنَّ مُرَادَهُ لِعَدَمِ الْوُقُوعِ فِي الْمُشَبَّهِ بِهِ عَدَمُهُ دِيَانَةً، ثُمَّ نَقَلَ عَنْ الْبَزَّازِيَّةِ وَالْقُنْيَةِ لَوْ أَرَادَ بِهِ الْخَبَرَ عَنْ الْمَاضِي كَذِبًا لَا يَقَعُ دِيَانَةً، وَإِنْ أَشْهَدَ قَبْلَ ذَلِكَ لَا يَقَعُ قَضَاءً أَيْضًا. اهـ. 
অনুরুপ ভাবে যদি স্বামী মিথ্যা বা তামাশা মূলক তালাকের স্বীকারোক্তি দেয়,তাহলে বাহরুর রায়েক গ্রন্থে বলা হয়েছে যে এটি দিয়ানাতান তথা আল্লাহর নিকট তালাক বলে গন্য হবে না।
,
অতঃপর বাযযাযিয়া ও ক্বুনয়া কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, যদি এই মিথ্যা স্বীকারোক্তি দ্বারা অতীতের তালাকের খবর স্বামী দেয়,তাহলে দিয়ানাতান (আল্লাহর নিকট) তালাক হবে না। 
(কাযা'আন তালাক হবে।)

কিন্তু যদি তালাকের মিথ্যা স্বীকারোক্তির পূর্বে স্বামী এ ব্যাপারে সাক্ষী রাখে, তাহলে  কাযা'আনও (তথা কাযী সাহেবের নিকট তালাক নিয়ে স্বামী স্ত্রীর ঝগড়ার মূহুর্তেও) তালাক হবে না।(রদ্দুল মুহতার-৩/২৩৬)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত ১ম ছুরতে মিথ্যা স্বীকারোক্তির দরুন তালাক হবেনা। 

তবে এক্ষেত্রে পরবর্তী তালাক গুলো পতিত হয়েছে।
এখন জানার বিষয় হলো পরবর্তী তালাক গুলোর ক্ষেত্রে আপনি তালাকের কোনো সংখ্যা উল্লেখ করে তালাক দিয়েছিলেন? নাকি তালাকের সংখ্যা উল্লেখ ছাড়াই তালাক দিয়েছিলেন?

যদি তালাকের সংখ্যা উল্লেখ ছাড়াই তালাক দিয়ে থাকেন,সেক্ষেত্রে আপনার স্ত্রীর উপর ২ তালাক পতিত হয়েছে।

এক্ষেত্রে ইদ্দতকাল অতিবাহিত হওয়ার আগেই ফিরিয়ে নিতে চাইলে সেক্ষেত্রে রজ'আত করতে পারবেন।

আর যদি ইদ্দতকাল অতিবাহিত হয়ে যায়,সেক্ষেত্রে নতুন করে বিবাহ পড়িয়ে নিতে পারবেন।

উল্লেখ্য, আপনি যদি তালাকের কোনো সংখ্যা উল্লেখ করে তালাক দিয়ে থাকেন,সেক্ষেত্রে সব মিলে যদি যোগফল যদি ৩ হয়,সেক্ষেত্রে তিন তালাক পতিত হয়েছে।

শরয়ী হালালাহ ব্যাতিত তাকে আর ফিরিয়ে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...