আসসালামু আলাইকুম ওস্তাদ।
আমি আপনার কাছে কিছু নছিহত এবং ফতোয়া চাচ্ছি।
আমার বয়স ২৬ বছর।জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করেছি। এখন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পন্থায় জীবনযাপন করার চেষ্টা করছি। আল্লাহ কবুল করুন। আমি বিবাহিত। আমার বাবা-মা আলহামদুলিল্লাহ বেচে আছেন। আমার আর কোন ভাই বোন নেই। এক ছোট ভাই ছিলো, সে আল্লাহর হুকুমে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। আমি ইসলামিক অনলাইন মাদ্রাসার কোন এক ব্যাচের ছাত্র আলহামদুলিল্লাহ।
আমি একটা সংস্থায় চাকরি করি। সংগত কারণে সংস্থার নাম বলছি না।এখানে অনেক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়, যা আমার কাছে গুনাহের কারন মনে হয়। কিছু কিছু কাজ তো ঈমানের পরিপন্থী মনে হয়। আমি চাকরি ছেড়ে দিতে চাই ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আসলেই কি ছাড়া উচিত হবে অথবা কি করবো তা বুঝতে পারছি না। নিচে কিছু কাজের উদাহরণ দিলাম।
১। আমি দাড়ি রাখতে চাই। দাড়ি রাখতে এই সংস্থা থেকে অনুমতি নিতে হবে। আমি অনুমতি চেয়ে পাইনি। এখন আবার নতুন নিয়ম করেছে যে, যাদের বয়স চল্লিশ উর্ধ্বে শুধু তারা দাড়ি রাখার অনুমতি চাইলে তাদের বিশেষ বিবেচনায় দেয়া হতে পারে। কিন্তু গোফ রাখতে অনুমতি লাগে না।
এখন যদি আমি নিয়ম না মেনে দাড়ি রাখি, তারা বিভিন্ন শান্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, এমনকি এদের যে কয়েদখানা আছে সেখানে আটক করে রাখতে পারে। তারপর আবার আমি কেন ইসলাম পালনে এত আগ্রহী তা খোঁজ করবে। সংগ্রহে থাকা ইসলামিক বই বাজেয়াপ্ত করতে পারে। এর আগে এমন হয়েছে। বই বাজেয়াপ্ত করে জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে অন্য মানুষের।
কিন্তু মানুষের শাস্তির চেয়ে আল্লাহর শাস্তি কঠিন। আর আল্লাহ তায়ালা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। তিনি তার বান্দাকে অনুগ্রহ করেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কি করব।
২। এখানে চাকরি করা মানে ২৪ ঘন্টা এদের দিয়ে দেয়া। যখন ডাকবে, তখন আসতে হবে। আমি এই চাকরির বাহিরে ফাকা সময়ে অন্য কোন উৎস থেকে আয় করবো অথবা দ্বীনের কাজে সময় লাগাবো বা ইসলাম জানার জন্য পড়াশোনা করবো তার সুযোগ বা অনুমতি নাই। ইসলামি বই পর্যন্ত রাখার নিয়ম নেই। তাও অনেকে লুকিয়ে রেখে পড়ার চেষ্টা করে। আমার কাছে মনে হয়, ইসলামের জ্ঞান অর্জনের পথে এই চাকরি অন্তরায়।
৩। এখানে যারা চাকরি করে তাদের সবাইকে ইসলাম বিষয়ে দাওয়াত দেওয়া বা কথা বলা যাবে না। আর ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহী লোক অনেক কম। অনেকের কাছে শুধু পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ইসলাম মানা শেষ। তারপর যদি কোন গুনাহের কাজ করতে বলে, বেতন আর প্রমোশনের জন্য সেই কাজ করবে। মুখে বলে যে এই কাজ করা ঠিক না, কিন্তু তারপর ঠিকই তার অধিনস্তকে সেই কাজ করতেও বলে।
৪। এখানে সাংস্কৃতিক অনেক অনুষ্ঠান, কোন বিশেষ ব্যক্তির জন্মদিন বা মৃত্যুদিন পালনের আয়োজন করে। সেসব জায়গায় উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। সেখানে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবস্থা থাকে। তারপর বেগানা মহিলাদের পারফরম্যান্সের ব্যবস্থা থাকে। যা আমি মনে প্রাণে ঘৃণা করি।
৫। এখানে মহিলারা ও চাকরি করে। এবং এই চাকরির নিয়মে সবাই বেপর্দা হয়ে চলাচল করে। এমন নয় যে, অল্প মহিলা কাজ করে। বরং অনেক মহিলা কাজ করে। নিজের দৃষ্টি হেফাজত করতে পারছি না। আমি যে তাদের এড়িয়ে যাব, সেই সুযোগ ও নেই।
৬। এখানে মাঝে মাঝেই সবাই মিলে সমাবেশ করে। আর সেখানে বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। এত উচ্চ শব্দে তা করা হয়, যেন কানের ভেতর ও ব্যাথা করে।
৭। এখানে বিভিন্ন সময় কাজের জন্য মিথ্যা কথা বলতে হয়, মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে হয় বাধ্য হয়ে। তথ্য গোপন করা হয়।
৮। এই সংস্থায় উর্ধতনদের হাতের ইসারায় সালাম দেয়া বাধ্যতামূলক। হাতের ইসারায় সালাম দেয়া আদৌ কি বৈধ।
৯। এখানে চাকুরিরত যারা আছে, তাদের স্ত্রীদের বিভিন্ন মহিলা প্রোগ্রামে ডাকে। যেখানে শাড়ি পরে যেতে তাগিদ দেয়।
১০। এখানে রেষারেষি খুব বেশি। একজনের ক্ষতি করে পদোন্নতি পাওয়ার খুব প্রচলন আছে।
১১। কিছু কাজ করতে বলে, যা করলে গুনাহ হতে পারে তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এতে কি চাকরির দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন অথবা চাকরি হালাল হচ্ছে ওস্তাদ?
১২। এখানে আগুনের একটি স্মৃতি মিনার আছে। যেখানে ফুল দেয়া হয়। অনেক উর্ধতন আমাদের মত অনেক জুনিয়রকে সাথে নিয়ে আগুনে ফুল দেয়। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আমাকে ওইসব জুনিয়র হওয়া থেকে হেফাজত করেছেন আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু এইসব উর্ধতনরাই আবার উপরের কাজগুলোর মত কাজ করতে বলে যারা কিনা আগুনে ফুল দেয়। এই পরিবেশে চাকরি করা নিয়ে আমি ভীত। আল্লাহ সাহায্য করুন।
১২। আমি স্মার্টফোনের ব্যবহার কমিয়ে দিতে চাচ্ছি। কিন্তু চাকরির জন্য পারছি না। স্মার্টফোনের কারণে গুনাহ এ পতিত হতে হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা মাফ করুন আর হেফাজত করুন।
ওস্তাদ, আমি চাকরি ছেড়ে দিতে চাই। কিন্তু চাকরি ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি নাই। যদি আবেদনে ধর্মীয় কারণ দেখায়, তাহলে তো অনুমতি দিবেই না, উল্টো তদন্ত শুরু করবে। ইচ্ছে হলে, বিশেষ কক্ষে অনেকদিনের জন্য আটকে রাখবে। আল্লাহ হেফাজত করুন।
আমি যদি পালিয়ে যাই, তাহলে আমার নামে পুলিশ ওয়ারেন্ট জারী করবে। পালিয়ে থাকতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে পেলে আবার আমার সংস্থার কাছে আমাকে বুঝিয়ে দেবে আর এখানে আটকে রেখে তদন্ত করবে।
আমি যখন চাকরিতে যোগ দেই তখন আমার বয়স ১৬ এর মত। জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করেছি আর বয়স কমের দরুন তখন বুঝতে পারিনি কি করা ঠিক হবে আর কি হবেনা। তবে একটা কথা হল যখন এখানে যোগ দেই, তারা তাদের নিয়মকানুন পরিষ্কার ভাবে জানায়নি আর যদি কোন টার্মস এন্ড কন্ডিশন কোথাও লেখা থাকে - তা তখন পড়া হয়নি।
আমার ইচ্ছে আছে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার, হজ্জের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত অংশ নেয়ার। কিন্তু ওয়ারেন্ট জারী হলে ভিসা পাসপোর্ট পাওয়া যাবে না। অনেকদিন পালিয়ে থেকে আবার ধরা দিলে আটকে রেখে হয়তো, চাকরি থেকে ছেড়ে দিতে পারে। কিন্তু আমার বাবা মা সাপোর্ট দিবে না, কোথায় তাহলে লুকিয়ে থাকবো?
আমি এখন কিছুদিন যাবত শারীরিকভাবে অসুস্থ। এখন যদি আবেদন করি অব্যাহতির, তাহলে অব্যাহতি দিতেও পারে। অব্যাহতি না দেয়ার সম্ভাবনা বেশি। আল্লাহ যা করবেন বান্দার ভালোর জন্যই ইনশাআল্লাহ। আবার আমার চাকরি ১০ বছর হয়নি। কয়েক মাস বাকি আছে। ১০ বছর পর শারীরিক অসুস্থতার কারনে চাকরি থেকে অব্যাহতি পেলে কিছু অর্থ সহযোগিতা পেতে পারি। কিন্তু তার আগে দিবে না অথবা কম দিবে।মহান আল্লাহ তায়ালা তার অনুগ্রহ দান করুন।
আমার অন্য কোন আয়ের উৎস নেই এখনও যা থেকে আমি চাকরি ছাড়ার পর উপার্জন করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা রিজিকের ব্যবস্থা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
এই সংস্থায় এখানের কাজ ব্যতীত অন্য কোন কাজ করা বৈধ না আর এখনো কোন আয়ের উৎস তৈরি করতে পারিনি । আমার চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্তে আমার স্ত্রী সহমত। কিন্তু বাবা আর মা সহমত না। বাড়িতে টাকা দিতে হয়। আমার আর কোন ভাই বোন নেই যারা বাবা-মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিবে ।বাবার বয়স হয়েছে। এই বয়সেও সে কিছু অসুস্থতা নিয়ে তিনি আয় করার চেষ্টা করে। কষ্ট বা ব্যাথার কথা বলেনা বা প্রকাশ করতে জানে না। তাদের সেবা যত্ন করা সন্তান হিসেবে আমার দায়িত্ব। আমি যতটুকু পারি, চেষ্টা করি তাদের যত্ন করার আলহামদুলিল্লাহ। বাবা মা দুইজনই এই সংস্থার কাজ ছাড়তে নিষেধ করছে, কারন অনেক সু্যোগ সুবিধা আছে এই চাকরিতে।
কিন্তু আমি চাকরি কিভাবে ছেড়ে দিতে পারি, আর ছাড়লে পরবর্তী সমস্যা কিভাবে অতিক্রম করব ইনশাআল্লাহ?
আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না কি করব। এই চাকরির কারণে ইসলামের জ্ঞান অর্জন এর সময় ও পাই না ঠিকমত।
আমি কি করতে পারি, কুরআন ও হাদিসের আলোকে বলে দিলে খুব উপকৃত হব ইনশাআল্লাহ। আমি সত্যিই অনেক কষ্টে ভুগছি।
আল্লাহ তায়ালা তুমিই তো দুশ্চিন্তাকে সহজ করতে পারো। তুমি আমার দুশ্চিন্তা সহজ করে দাও।
"আমি তো রবের পথে চললাম। এবং তিনি আমাকে পথ দেখাবেন।''
আল্লাহ তুমি আমাকে মাফ করে দাও। আমি জ্ঞানকে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত করে দাও আর অনুগত বান্দা হিসেবে আমার মৃত্যু দান কর।
প্রিয় ওস্তাদ, আমি প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর ধরে এই সমস্যায় আটকে আছি। ২ বছর আগে একজন সম্মানিত শায়েখ কে প্রশ্ন পাঠিয়েছিলাম মেইল এ, কিন্তু সেখান থেকে কোন উত্তর পাইনি।
আপনি যদি কিছু নছিহত করতেন আর পরামর্শ এবং ফতোয়া দিতেন ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহ তায়ালা আপনাকে, আমাকে আমাদের সবাইকে তার অনুগ্রহ দান করুন। তার প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করুন। বিশুদ্ধ ঈমানের সহিত মৃত্যু দান করুন।।