ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
বিধবা নারীর বিয়ে শরিয়ত অনুমোদিত বিষয়। ক্ষেত্রবিশেষে
সামাজিক, জাতীয় ও ধর্মীয় প্রয়োজনে
বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করা শ্রেয় এবং তা অগ্রাধিকারের দাবি রাখে। এ ক্ষেত্রে
সবার চিন্তা করা প্রয়োজন যে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর স্ত্রীদের মধ্যে হযরত আয়েশা (রা.)
ব্যতিত অন্য সব স্ত্রী ছিলেন বিধবা কিংবা তালাকপ্রাপ্তা।
রাসূলে কারীম (সা.) প্রথম বিয়ে করেন রাসূল (সা.)
থেকে প্রায় অধের্ক বয়স বেশি ৪০বছর বয়স্কা বিধবা নারী আম্মাজান হযরত খাদিজাতুল কুবরা
(রা.) কে। খাদিজা (রা.) এর ইন্তেকালের পর ক্রমান্বয়ে দশজন নারীকে বিবাহ করেন। যাদের
আটজনই ছিলেন বিধবা নারী। যথা-
১. হযরত হাফসা (রা.) ২. হযরত সওদা (রা.)। ৩. উম্মুল
মাসাকীন হযরত জয়নব (রা.) ৪. হযরত উম্মে সালমা রাঃ ৫. হযরত জুআইরিয়া (রা.) ৬. হযরত উম্মে
হাবীবা (রা.) ৭. হযরত মাইমুনা (রা.) ৮. হযরত সফিয়্যা (রা.)।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা, মানবিক কারণ, ধর্মীয় শিক্ষার প্রচার-প্রসার
ও বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে তৎকালীন আরবের কুসংস্কার উচ্ছেদ করার জন্য এসব বিয়ে
করেছিলেন।
বিধবা বিয়ে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কারীমে নানাভাবে
উপদেশ ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
ইসলাম বলে, বিধবা নারী দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারবে।
ইসলাম কোনো বিধবাকে ঘৃণা বা অবজ্ঞার চোখে দেখে না। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারীমে ইরশাদ
হয়েছে,
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ
وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ
وَعَشْرًا فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ
فِي أَنْفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
‘আর
তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং তাদের নিজেদের স্ত্রীদের রেখে যাবে, সে স্ত্রীদের কর্তব্য
হলো নিজেরা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা (ইদ্দত পালন) করবে। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ
করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত
ব্যবস্থা নিলে কোনো পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে।’
{সূরা আল বাকারা : ২৩৪}
যে নারীটির সমগ্র নির্ভরশীলতার জায়গা ছিল তার স্বামী, সেই স্বামীর পৃথিবী ছেড়ে
চলে যাওয়া তাকে যেন অথৈ সাগরে ফেলে দেয়। স্ত্রী খড়কুটো আঁকড়ে ধরে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখেন।
হাল ধরেন সংসারের। সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে পার করে দেন বছরের পর বছর। যেখানে একজন
পুরুষের স্ত্রী মারা গেলে পরিবার ও সমাজের লোকদের আফসোস-সহানুভূতির সীমা থাকে না। বছর
না ঘুরতেই তাকে বিয়ে করানোর তোড়জোড় চলে, তিনি যে বয়সেরই হোন না কেন। তাকে বিয়ে
করায় পরিবার। একটু বয়স কম হলে তো কথাই নেই। সারাজীবন লোকটা থাকবে কী করে একা একা? সহানুভূতি সবার। পুরুষের
একা থাকার কষ্টের চিন্তা সবার। কিন্তু কোনো নারীর স্বামী মারা গেলে তার একা থাকা নিয়ে
ছিটেফোঁটা চিন্তা নেই অনেকের। চিরন্তন ভাবনা: একা থাকায় নারীর আবার কষ্ট কিসের? ছেলেমেয়ে আছে না! ওদের
মানুষ করতে সময় কোথা দিয়ে পার হবে, টেরও পাবে না। একটু বয়স হওয়া, সন্তান বড় হয়ে যাওয়া মায়েদের
পুনর্বিবাহের কথা ভাবাতো রীতিমতো অপরাধ।
বিধবা নারীর বিয়ের ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজনেরই বেশি
আপত্তি লক্ষ্য করা যায়। বলা হয়, সন্তানরা বড় হয়ে যাচ্ছে, এখন এটা কীভাবে মানা যায়? আসলে এটা কোনো যুক্তিযুক্ত
কথা নয়। বিধবা নারী তার জীবনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তিনি যদি
বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন,
তাহলে
তা পূরণ করাই হবে যথার্থ কাজ। এখানে দেখতে হবে প্রয়োজন ও চাহিদা। বস্তুত প্রয়োজন ও
চাহিদার কারণে এমন অনেক কাজই করতে হয়, যা আপাতদৃষ্টিতে অনেকের কাছে সামাজিক
রীতিনীতি ও ভালোবাসা-বিরুদ্ধ মনে হতে পারে। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে কাজটিকে সামাজিক
রীতি ও ভালোবাসার সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে হবে না। প্রয়োজনের সঙ্গে ভালোবাসা ও সামাজিক
রীতির কিসের সংঘাত?
এই
প্রয়োজনের খাতিরেই তো হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পুনর্বিয়ে করেছিলেন এবং করেছিলেন তার
সাহাবিরাও। কাজেই এটা তাদের সুন্নত। এতে আপত্তির কোনো অবকাশ নেই। বরং সুন্নত হিসেবে
এ ব্যবস্থাকে সবার সাদরে গ্রহণ করা দরকার।
ইসলামে বিধবা নারীদের মর্যাদা
অনেক নারী এমন আছেন, যারা বিধবা হওয়ার পর দ্বিতীয়বার
স্বামী গ্রহণে আগ্রহী হন না। কষ্ট হলেও একাকী জীবন যাপন করার পথকেই বেছে নেন। তাদের
জন্য সান্ত¦না ও আখেরাতের খুশখবরী
জানিয়ে আশ্বস্ত করেছেন রাসূল (সা:)। হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ،
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَا وَامْرَأَةٌ
سَفْعَاءُ الْخَدَّيْنِ كَهَاتَيْنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» وَأَوْمَأَ يَزِيدُ
بِالْوُسْطَى وَالسَّبَّابَةِ امْرَأَةٌ آمَتْ مِنْ زَوْجِهَا ذَاتُ مَنْصِبٍ،
وَجَمَالٍ، حَبَسَتْ نَفْسَهَا عَلَى يَتَامَاهَا
হযরত আউফ বিন মালিক আশজায়ী (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল
সাঃ ইরশাদ করেছেন,
আমি
এবং কষ্ট ও মেহনতের কারণে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া মহিলা কিয়ামতের দিন দুই আঙ্গুলের মত নিকটবর্তী
হবো। রাসূল (সা:) তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলীদ্বয় পাশাপাশি করে দেখালেন। তথা বংশীয় কৌলিন্য
ও সৌন্দর্যের অধিকারিনী যে বিধবা নারী প্রয়োজন থাকা সত্বেও এতিম সন্তানদের লালন পালনের
উদ্দেশ্যে দ্বিতীয়বার স্বামী গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে।{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১৪৯}
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” أَنَا أَوَّلُ مَنْ يُفْتَحُ
لَهُ بَابُ الْجَنَّةِ، إِلَّا أَنَّهُ تَأْتِي امْرَأَةٌ تُبَادِرُنِي فَأَقُولُ
لَهَا: مَا لَكِ؟ وَمَا أَنْتِ؟ فَتَقُولُ: أَنَا امْرَأَةٌ قَعَدْتُ عَلَى
أَيْتَامٍ لِي
হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেছেন, আমিই ঐ ব্যক্তি যার জন্য
সর্ব প্রথম জান্নাতের দরজা খোলা হবে। কিন্তু এক মহিলা এসে আমার আগে জান্নাতে যেতে চাইবে।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করবো যে,
তোমার
কি হল? তুমি কে? তখন সে বলবে, আমি ঐ মহিলা যে স্বীয়
এতিম বাচ্চার লালন-পালনের জন্য নিজেকে আটকে রেখেছে [বিবাহ করা থেকে]। {মুসনাদে আবী ইয়ালা,হাদীস নং-৬৬৫১}
যেসব বিধবা বিয়ের যোগ্য বয়সের নয়, আবার তাদের কোন সন্তানও
নেই। সেসব বিধবাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়াকে অনেক বড় পূণ্যের কাজ বলে রাসূল
(সা:) ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّاعِي عَلَى الأَرْمَلَةِ
وَالمِسْكِينِ، كَالْمُجَاهِدِ فِي
سَبِيلِ اللَّهِ، أَوِ القَائِمِ اللَّيْلَ
الصَّائِمِ النَّهَارَ»
হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা:)
ইরশাদ করেছেন,
বিধবা
এবং মিসকিনের সহযোগিতাকারী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর ন্যায়, বা সর্বদা রাতে নামাযরত
ও দিনের বেলা রোযাদার ব্যক্তির মতো। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫০৩৮,৫৩৫৩}
এরকম আরো অসংখ্য হাদীস প্রমাণ করে প্রতিটি সামর্থবান
ব্যক্তি বিধবা নারীদের যথাযথ সম্মান ও প্রয়োজনে সহযোগিতা করা উচিত। এটাই ইসলামের দাবি
এবং মানবতার দাবি। আসলে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা নারীর শোকে কাতর হওয়া ছাড়া আর কোনো
পথ খোলা থাকে না। নিরাপদ আশ্রয় ও মানবিক মর্যাদা হারানোর কারণে সমাজ-সম্প্রদায়ে পরিপূর্ণ
অংশগ্রহণও তার পক্ষে আর সম্ভব হয় না। একজন বিধবা নারী তার উত্তরাধিকার সম্পত্তি, সন্তান, স্বামী, সংসার, দেনমোহর, নিরাপদে কাজ করা, সমাজের কাছে সাহায্য পাওয়া, সামাজিক মর্যাদাসহ সকল
সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু তারা এই অধিকারগুলো পাচ্ছেন না। একজন মানুষ হিসেবে
বেঁচে থাকার জন্য যে ধরনের মর্যাদা প্রয়োজন তা বিধবা হওয়ার মধ্য দিয়ে হারাতে হয় এবং
রাষ্ট্রীয় কোনো প্রচেষ্টাও তাদের জন্য পরিলক্ষিত হয় না। পরিবার এবং সমাজে তাদের প্রতি
যে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি সে কারণে তারা নিজেরাও নিজেদের গুরুত্বহীন বলে মনে করেন, ভাগ্যকে দায়ী করেন। এমতাবস্থায়
বিধবা নারীদের চাহিদা মোতাবেক তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের আর্থিক, সামাজিক এবং মানসিক দুরবস্থা
থেকে উত্তরণ ঘটানো প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, বিধবা মানেই অভিশাপ নয়। একথা আমাদের
সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। অসহায় বিধবাদের পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তির
জন্যই জরুরী। (সংগৃহীত।)
★★ সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
ইসলাম বিধবা
নারীকে বিয়ে করতে উৎসাহিত করেছে। এছাড়াও বিয়ে করা একজন বিধবা নারীর মানবিক অধিকার।
মহানবী (স.)
বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড়ে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর
মতো অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়ামকারীর মতো।’ (সহিহ বুখারি: ৫৩৫৩)
সুতরাং একজন
নারীর পবিত্র জীবন রক্ষার্থে এবং নিঃসঙ্গ জীবনে পুনরায় কোলাহল ফিরিয়ে আনতে সন্তানের
পক্ষ থেকে মাকে বিয়ে করানোর উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বিধবা,
তালাকপ্রাপ্ত বা স্ত্রীহারা যে কাউকে
বিয়ে করানোর উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। এটি ইসলামসম্মত। নবীজিও (স.) এটি
পছন্দ করতেন।
সুতরাং
হিকমাহ অবলম্বন করে আপনি আপনার মায়ের বিয়ের ফিকির করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।