তাবেয়ী কুরাইব ইবনে আবী মুসলিম (৯৮ হি.)-কে উম্মুল ফযল বিনতুল হারিছ কোনো কাজে মুয়াবিয়া রা.-এর কাছে শামে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তাঁর কাজ সমাপ্ত করলেন। ইতিমধ্যে শামে রমযানের চাঁদ দেখা গেল এবং জুমার রাতে (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে) চাঁদ দেখা গেল এবং জুমাবার থেকে রোযা শুরু হল। কুরাইব মাসের শেষের দিকে মদীনায় পৌঁছলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা., যিনি ছিলেন কুরাইবের মাওলা, কথাপ্রসঙ্গে কুরাইবকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ?’ কুরাইব বললেন, ‘জুমা-রাতে।’ ইবনে আববাস রা. জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি নিজে দেখেছ?’ তিনি বললেন, ‘হাঁ, আমিও দেখেছি, অন্যরাও দেখেছেন। সবাই রোযা রেখেছেন। মুয়াবিয়া রা.-ও (ঐ সময়ের আমীরুল মুমিনীন) রোযা রেখেছেন।’ আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বললেন,
لكنا رأيناه ليلة السبت، فلا نزال نصوم حتى نكمل ثلاثين، أو نراه
‘কিন্তু আমরা তো শনিবার রাতে (শুক্রবার দিবাগত রাতে) চাঁদ দেখেছি। অতএব আমরা আমাদের হিসাবমত ত্রিশ রোযা পুরা করব, তবে যদি (২৯ তারিখ দিবাগত রাতে) চাঁদ দেখি সেটা আলাদা কথা।’
কুরাইব জিজ্ঞাসা করলেন-
أولا تكتفي برؤية معاوية وصيامه
‘আপনি কি মুয়াবিয়া রা.-এর চাঁদ দেখা ও রোযা রাখাকে যথেষ্ট মনে করবেন না?’
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বললেন-
لا، هكذا أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم
‘না, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ আদেশই করেছেন।’
(সহীহ মুসলিম ১০৮৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৭৮৯; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৩৩২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৬৯৩; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২১১১)
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন-
إني لأعجب من هؤلاء الذين يصومون قبل رمضان، إنما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إذا رأيتم الهلال فصوموا وإذا رأيتموه فأفطروا، فإن غُمَّ عليكم فعُدُّوا ثلاثين.
ঐ সকল লোকের উপর আমার আশ্চর্য হয়, যারা রমযান আসার আগেই রোযা রাখতে শুরু করে। আল্লাহর রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন, যখন তোমরা চাঁদ দেখবে তখন রোযা রাখবে এবং যখন (দ্বিতীয়) চাঁদ দেখবে তখন রোযা ছাড়বে। চাঁদ যদি আড়ালে থাকে তাহলে ত্রিশ সংখ্যা পূর্ণ করবে। (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৪/২০৭)
অন্যত্রে ইরশাদ হয়েছে
إن الله تبارك و تعالى جعل الأهلة مواقيت للناس، فصوموا لرؤيته، وأفطروا لرؤيته، فإن غم عليكم فعدوا له ثلاثين يوما.
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা হিলালকে মানুষের জন্য মীকাত (সময় নিরূপণের মাধ্যম) বানিয়েছেন। সুতরাং তোমরা হিলাল দেখে রোযা রাখ এবং হিলাল দেখে রোযা ছাড়। যদি হিলাল দেখা না যায় তাহলে (চলতি মাসের) ত্রিশ দিন গণনা কর! মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক বিন হাম্মাম
( আসসুনানুল কুবরা বাইহাকী, খ. ৪, পৃ. ২০৫; আলমুসতাদরাক, হাকেম আবু আব্দুল্লাহ, খ. ১, পৃ. ৪২২, হাদীস ১৫৭৯; আস সহীহ, ইমাম ইবনে খুযাইমা (২২২-৩১১হি.) খ. ৩, পৃ. ২০১, হাদীস ১৯০৬)
কোথাও চাদ দেখা গেলে নিকটবর্তী রা সেই চাদের ভিত্তিতে আ'মল করবেন,এতে কারো দ্বিমত নেই।তবে দূরবর্তীদের জন্য কি করতে হবে?
সে সম্পর্কে বিশদ ইখতেলাফ রয়েছে।চার মাযহাবের ইখতিলাফ তো আছেই এমনকি প্রত্যেক মাযহাবের ভিতরের উলামাদের মধ্যেও বিতর্ক রয়েছে।
আমাদের বাংলাদেশে হানাফি ফিকহ অনুযায়ী চাঁদ দেখে রোযা এবং চাদ দেখে রোযা ভঙ্গ করার নিয়ম চলে আসছে।তবে অন্যান্য কতিপয় দেশ সৌদিকে ফলো করে থাকে।
সারা বিশ্বে একই দিনে রোযা ও ঈদঃচার মাযহাব কি বলে? শীর্ষক একটি ফেকহী প্রবন্ধ লিখেছেন,বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ট ফকিহদের একজন,মাওলানা আব্দুল মালিক দাঃবাঃ।নেখানে তিনি এ বিষয়ের চুলছেড়া গবেষনা করছেন।সেই তাত্বিক আলোচনা পড়তে পারেনঃ