বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/101964/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
□
বর্তমান
সময়ে গ্রাফিক ডিজাইন একটি অতীব প্রয়োজনীয় ও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বভাবতই এটি অর্থ উপার্জনের এক বিশাল সম্ভাবনাময় পেশায় পরিণত হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ
নাই। নিম্নে এ সম্পর্কে শরিয়তের বিধান তুলে ধরা হল:
একজন ডিজাইনার বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন যেমন: ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, ইন ডিজাইন, পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে
কোন ছবি, টেক্সট, বিভিন্ন নকশা ইত্যাদির মাধ্যমে
মনের ধারণা বা হৃদয় পটে অঙ্কিত কল্পনাকে বাস্তবিক চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে। এটাকেই
বলা হয় গ্রাফিক ডিজাইন।মানুষের জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে এর ব্যবহার রয়েছে। যেমন: পণ্যের
সাইনবোর্ড, ব্যানার, বিলবোর্ড, ভিজিটিং কার্ড, বিয়ের কার্ড, বিজনেস কার্ড, হালখাতার কার্ড, মেমো, ভাউচার, স্কুল/কলেজ/মাদ্রাসা/ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের
বিভিন্ন প্রয়োজনে গ্রাফিক করতে হয়।
জামা-কাপড়, শাড়ি, টি-শার্ট, বইয়ের প্রচ্ছদ ইত্যাদির নকশা তৈরি
করতে গ্রাফিক ডিজাইনের প্রয়োজন। ওয়েব ডেভলোপ বা ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রেও ওয়েব সাইটের
লোগো, ব্যানার
ইত্যাদি তৈরিতে গ্রাফিক ডিজাইন করতে হয়।
এভাবে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রাফিক ডিজাইনের আশ্রয়
নিতে হয়। এগুলো সবই বর্তমান সময়ে মানুষের অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়। তাই ইসলামি শরিয়তের
কতিপয় মূলনীতি মেয়ে চলে গ্রাফিক ডিজাইন করতে এবং এটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে অর্থ
উপার্জন করতে কোন বাধা নেই।
যে সকল শর্ত সাপেক্ষে গ্রাফিক ডিজাইন করা বৈধ:
১. মানুষ, পশু-পাখি
ইত্যাদি জীব-জন্তুর ছবি ডিজাইন করা জায়েজ নয়। কেননা একাধিক হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর
শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। [অবশ্য শরিয়ত সম্মত বৈধ কাজে মানুষের ছবির দরকার হলে ভিন্ন
কথা: যেমন: পাসপোর্ট, আইডি
কার্ড, জরুরি
প্রমাণ বা ডকুমেন্ট ইত্যাদি]
এ ছাড়া গাছ-পালা, বাগান, ফল-ফুল, মসজিদ, ঘরবাড়ি, জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি প্রাকৃতিক
দৃশ্য ইত্যাদি ডিজাইন করতে কোন বাধা নেই।
ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻰ
ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ ﻗَﺎﻝَ ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺇِﻧِّﻰ ﺭَﺟُﻞٌ ﺃُﺻَﻮِّﺭُ
ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺼُّﻮَﺭَ ﻓَﺄَﻓْﺘِﻨِﻰ ﻓِﻴﻬَﺎ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺍﺩْﻥُ ﻣِﻨِّﻰ . ﻓَﺪَﻧَﺎ ﻣِﻨْﻪُ
ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﺍﺩْﻥُ ﻣِﻨِّﻰ . ﻓَﺪَﻧَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺃْﺳِﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺃُﻧَﺒِّﺌُﻚَ
ﺑِﻤَﺎ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ
– ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻳَﻘُﻮﻝُ « ﻛُﻞُّ ﻣُﺼَﻮِّﺭٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻟَﻪُ ﺑِﻜُﻞِّ
ﺻُﻮﺭَﺓٍ ﺻَﻮَّﺭَﻫَﺎ ﻧَﻔْﺴًﺎ ﻓَﺘُﻌَﺬِّﺑُﻪُ ﻓِﻰ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ » . ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﻻَ
ﺑُﺪَّ ﻓَﺎﻋِﻼً ﻓَﺎﺻْﻨَﻊِ ﺍﻟﺸَّﺠَﺮَ ﻭَﻣَﺎ ﻻَ ﻧَﻔْﺲَ ﻟَﻪُ .
অর্থ: সাঈদ বিন আবুল হাসান বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রা.
এর কাছে এসে বলল, আমি
চিত্রকর এবং চিত্র অংকন করি। অতএব এ সম্পর্কে আমাকে শরিয়তের বিধান বলে দিন।
ইবনে আব্বাস রা. বলেন: আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তাঁর
কাছে গেল।তিনি পুনরায় বললেন: আরও কাছে আস। সে ব্যক্তি আরও কাছে গেল।তখন ইবনে আব্বাস
রা. তাঁর মাথায় হাত রেখে বললেন: আমি তোমাকে এ সম্পর্কে এমন একটি হাদিস শুনাচ্ছি, যা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর কাছে শুনেছি।
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি
যে,
ﻛُﻞُّ ﻣُﺼَﻮِّﺭٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ
ﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻟَﻪُ ﺑِﻜُﻞِّ ﺻُﻮﺭَﺓٍ ﺻَﻮَّﺭَﻫَﺎ ﻧَﻔْﺴًﺎ ﻓَﺘُﻌَﺬِّﺑُﻪُ ﻓِﻰ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ
“সকল চিত্রকরই জাহান্নামে যাবে। আর প্রত্যেক চিত্রের পরিবর্তে
একজন মানুষ বানানো হবে, যা
জাহান্নামে তাকে শাস্তি দেবে। তিনি আরও বললেন, “যদি
তোমাকে তা করতেই হয়, তাহলে
গাছ-পালা বা এমন বস্তুর ছবি তৈরি কর যার আত্মা নাই।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৫৬৬২)
সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার ইমাম নওবি রহ. বলেন, এখানে ﺻُﻮﺭَﺓٍ ﺻَﻮَّﺭَﻫَﺎ ﻧَﻔْﺴًﺎ
ﻓَﺘُﻌَﺬِّﺑُﻪُ ﻓِﻰ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ এ কথা দু রকম অর্থ বলেছেন। তিনি
বলেন, এর
অর্থ হতে পারে:
ক. প্রত্যেক ছবি/চিত্রের পরিবর্তে একজন মানুষ বানানো হবে, যা তাকে জাহান্নামে শাস্তি দেবে।
খ. অথবা যে ছবিটি সে অঙ্কন করেছিলো তাতে প্রাণের সঞ্চার
ঘটানো হবে যা তাকে জাহান্নামে শাস্তি প্রদান করবে। (শরহে মুসলিম-ইমাম নওবি রহ.)
২. বেপর্দা নারী ছবি, অশ্লীল
দৃশ্য ইত্যাদি ডিজাইন করা বৈধ নয়। ইসলামে নারীর জন্য পর্দা করা ফরজ চাই তা বাস্তব জীবনে
হোক অথবা ছবি/ভিডিও ইত্যাদি ডিজিটাল ক্ষেত্রে হোক। অনুরূপভাবে ইসলামে অশ্লীলতা কঠোরভাবে
নিষিদ্ধ।
৩. কোন কপিরাইটকৃত ছবি সংগ্রহ করে ইডিটের মাধ্যমে তা পরিবর্তন
করা যাবে না। কারণ তা অন্যের অধিকার লঙ্ঘনের শামিল এবং প্রচলিত আইনেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
৪. ছবি ইডিটের মাধ্যমে শরিয়া বিরোধী বা দেশের প্রচলিত
আইন বিরোধী কোন কাজ করা যাবে না। কেননা মুসলিম হিসেবে আমরা যেমন শরিয়তের আদেশ-নিষেধ
পালনে বাধ্য তেমনি জনকল্যাণের প্রণীতে সরকারি আইন পালনেও বাধ্য। (যদি তাতে শরিয়া বিরোধী
কোন কিছু না থাকে)। কেননা, ইসলাম
সবসময় মানুষকে যে কোন উপকারী ও কল্যাণকর কাজের প্রতি উৎসাহিত করে। (আংশিক কপি)
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উত্তর দেওয়া হবে যে, কোন ব্যক্তি যদি উপরে উল্লেখিত
মূলনীতি ও শর্তসমূহ মেনে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করে এবং এটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে
তাহলে তার উপার্জিত সম্পদ হারাম হবে না। আর যদি উল্লেখিত শর্ত সমূহ না পাওয়া যায় তাহলে
তার জন্য উক্ত কাজ করা জায়েয হবে না।
আরো জানুন:
https://ifatwa.info/60735/
https://ifatwa.info/85872/