আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
105 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (13 points)
আসসালামু আলাইকুম।

বিপদে সবর করার অনেক ফযিলত আমরা জানি। আমার প্রশ্ন হলো-
১. কেউ অনেক কষ্ট পেল কারো কাছ থেকে। এক্ষেত্রে সবর কিভাবে করবে? সে কি কান্নাকাটি করতে পারবে না? কারো কাছে কষ্টের কথা বলতে পারবেনা? কষ্টদাতা কে কথা শুনাতে পারবে না? এমন করলে কি সবরের সওয়াব পাবে না? না কি চুপচাপ থাকতে হবে? কাউকে কিছু বলা যাবে না এমনকি কষ্টদাতাকে ও না? আসলে কষ্ট বা আঘাত পেলে সবর কিভাবে করবে একজন মানুষ?

২. মানুষ ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করতে হয়। কিন্তু যদি যাকে ক্ষমা করা হয় তাকে পরবর্তী তে খোঁটা দেয় বা অতীত নিয়ে কথা শুনায় তাইলে কি এটাকে ক্ষমা ধরা যায় যেমন স্বামী স্ত্রী তে অনেক ঝামেলা হল। স্বামী বা স্ত্রী ক্ষমা চাইলো, মুখে বললো মাফ করেছি কিন্তু মন থেকে ঘটনা টা ভুলতে পারছেনা কিছুতেই। অনবরত সেই ঘটনাটা মনে হতেই থাকে। তাহলে কি ধরা হবে যে আসলে ঐ মানুষ টা অপরপক্ষ কে মাফই করেনি?

৩. কেউ যদি বারবার একই অন্যায় করে আর বারবার মাফ চায় তাকে কি মাফ করা উচিত?

1 Answer

0 votes
by (63,440 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

সবর আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম। সবর বা ধৈর্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নেয়ামতের ঘোষণা করেছেন। ইসলামে প্রতিশোধ গ্রহণ জায়েয তবে সবরে রয়েছে সর্বোত্তম কল্যাণ। তবে প্রতিশোধের ক্ষেত্রে অবশ্যই জুলুমের মাত্রাকে ছাড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এটাই ইসলামের চূড়ান্ত ঘোষণা।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

عن أنس بن مالك رضي الله عنه، قال: مر النبي صلى الله عليه وسلم بامرأة تبكي عند قبر، فقال: «اتقي الله واصبري» قالت: إليك عني، فإنك لم تصب بمصيبتي، ولم تعرفه، فقيل لها: إنه النبي صلى الله عليه وسلم، فأتت باب النبي صلى الله عليه وسلم، فلم تجد عنده بوابين، فقالت: لم أعرفك، فقال: «إنما الصبر عند الصدمة الأولى»

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যিনি কবরের পাশে কাঁদছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি আল্লা্হকে ভয় কর এবং সবর কর। মহিলাটি বললেন, আমার কাছ থেকে চলে যান। আপনার উপর তো আমার মত মুসিবত আসেনি। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চিনতে পারেননি। পরে তাকে বলা হল, তিনি তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুয়ারে হাযির হলেন, তাঁর কাছে কোন পাহারাদার পেলেন না। তিনি আরয করলেন, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। তিনি বললেনঃ সবর তো বিপদের প্রথম অবস্থাতেই। (সহীহ-বোখারী-১২৮৩)

 মোল্লা আলী কারী রাহ বলেন,

أما إذا لم يصر الصبر طبعا ثم تذكر المصيبة ثم صبر ولو طال العهد فيثاب، كما سيأتي في الحديث، ولكن الدرجة الأعلى عند الصدمة الأولى

যদি কেউ প্রথমে ধর্য্য ধরতে না পারে,পরবর্তীতে তার ধর্য্যর কথা স্বরণে আসে,এবং অতঃপর সে ধর্য্যধারণ করে, তাহলে সেও সওয়াব পাবে,যদিও দীর্ঘকাল পরেও সে সবর করে থাকুক না কেন? যেমন সামনের হাদীসে আসতেছে।তবে মসিবতের প্রথম মুহূর্তে সবর করাই উত্তম বলে বিবেচিত হবে। (মিশকাত হাদীস নং- ১৭২৮ এর ব্যখ্যা দ্রষ্টব্য)

আমরা সাধারণত বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবতে বিচলিত না হওয়াকেই ধৈর্য বলে মনে করি। মূলত ধৈর্য অনেক ব্যাপক অর্থ ধারণ করে। ধৈর্য তিন প্রকার। যথা:

 ১. الصبر عن المعصية  অর্থাৎ অন্যায়অপরাধ হতে বিরত থাকা।

২. الصبر علي الطا عة  অর্থাৎ ইবাদত আল্লাহর আনুগত্য ও সৎকর্মে কষ্ট স্বীকার করা।

৩. الصبر علي المصيبة  অর্থাৎ বিপদে অধীর না হওয়া। (তাফসিরে বায়জাবি)।

কোনো ব্যক্তি যদি উপরিউক্ত অর্থে ধৈর্য অবলম্বন করে, তবে তার জীবনে পূর্ণতা ও সফলতা অনস্বীকার্য। কারণ প্রথমত, অন্যায়অপরাধ তথা পাপকার্য থেকে বিরত থাকা সকল প্রকার অকল্যাণ ও গ্লানি থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়। দ্বিতীয়ত, ইবাদত ও সৎকর্ম সম্পাদন করা সফলতার একমাত্র সোপান। তৃতীয়ত, প্রতিকূলতায় দৃঢ়পদ থাকা লক্ষ্যে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম। সুতরাং ‘ছবর কামিল’ বা পরিপূর্ণ ধৈর্যই মানবজীবনকে পূর্ণতা দিতে পারে। আমাদের উচিত সকল অনভিপ্রেত অবস্থায়, যেকোনো অযাচিত পরিবেশে ও অনাহূত পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাওয়া। তবেই আল্লাহর সাহায্য আমাদের সাথি হবে, আল্লাহ আমাদের সঙ্গী হবেন।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

(১) কারো থেকে কষ্ট পেলে তার থেকে প্রতিশোধ না নিয়ে তাকে ক্ষমাসূলভ দৃষ্টিতে দেখা এবং ঐ পরিস্থিতে সবর করা উচিত । যে আপনাকে কষ্ট দিয়েছে তাকে প্রতি উত্তর করলে তর্কবিতর্ক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিধায় কোন মানুষের কাছে নিজের দুঃখ কষ্ট শেয়ার না করে আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজের মনের কথা বললে তিনি সমাধানের পথ বের করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। সাথে সাথে কষ্টদাতার জন্য বদদোয়া না করে তার হেদায়াত বা সংশোধনের জন্য দোয়া করা উচিত ।

২. মানুষকে ক্ষমা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত । যে মানুষকে ক্ষমা করে দেয় আল্লাহ তায়ালাও কেয়ামতের দিন তার ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কাউকে ক্ষমা করার পর ঐ বিষয়ে পরবর্তিতে খোটা দিয়ে কিছু বলা অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ, যা পরিহার করা আবশ্যক। তবে কেউ যদি কোন ভুল ক্ষমা করে দেয় সে বিষয়ে মনে কোন সন্দেহ বা সংশয় পোষন করা যাবে না। বরং এটি শয়তানের ওয়াসওয়াসা। সুতরাং ঐ পরিস্থিতি থেকে বাচার জন্য বেশী বেশী ইস্তেগফার পড়বে।

৩. এটি ব্যক্তির উপর নির্ভর করবে। যদি কারো পক্ষে সবর করতঃ বারংবার ক্ষমা করা সম্ভব হয় তাহলে সে ক্ষমা করবে এবং অন্যকে ক্ষমা করার সাওয়াবও সে পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ । তবে কেউ যদি তা করতে না পারে তাহলে সে কোন শর্ত বা সাময়িক কোন কাজের উপর বাধা নিষেধ আরোপ করে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করতে পারে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...