বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহাম।
জবাবঃ-
জাযাকাল্লাহ পুরুষকে বলা হয়।
জাযাকিল্লাহ মহিলাকে বলা হয়।
খাইরান অর্থ উত্তম।
জাযাকাল্লাহ অর্থ,আল্লাহ তোমাকে বিনিময় দান করুক।
শুধুমাত্র জাযাকাল্লাহ বা জাযাকিল্লাহ দ্বারাও দু'আ হয়।তবে জাযাকাল্লাহু/জাযাকিল্লাহু খাইরান বললে অর্থে আরেকটু উত্তমতা আসে।তাই সময় সুযোগ থাকলে পূর্ণ দু'আ বলাই উত্তম।কেউ শুধুমাত্র জাযাকাল্লাহ/জাযাকিল্লাহ বললেও হবে।
আল-কাউসারে প্রকাশিত একটি লিখা
সেদিন আদীব হুজুরের ‘বাইতুল্লাহর ছায়ায়’ পড়ছিলাম। একটি কথা খুব ভালো লাগল। হুজুর লিখেছেন-মানুষমাত্রেরই ভুল হতে পারে, কিন্তু আমাদের উচিত ভুল প্রকাশ পাওয়ামাত্র আন্তরিকভাবে মাফ চেয়ে নেওয়া। অন্তত দুঃখ প্রকাশ করা। ‘সরি’ শব্দটি ইংরেজ জাতি এমনভাবে রপ্ত করেছে যে, এটি তাদের জীবন ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। এটা খুব ভালো, এটা ইসলামের শিক্ষা। আমরা ফেলে দিয়েছি। তারা তুলে নিয়েছে। আমরা পিছিয়ে পড়েছি, তারা এগিয়ে গিয়েছে।
বলাবাহুল্য যে, এখানে ‘সরি’ শব্দটিই মূল উদ্দেশ্য নয়; আসল উদ্দেশ্য হল অনুতাপ ও ক্ষমা প্রার্থনা। আর এ উদ্দেশ্যেই আরবী ‘আফওয়ান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
এই কথাগুলো পড়ে মনে হল, এমন অনেক কিছুই তো আমরা ছেড়ে দিয়েছি, আর অন্যরা তা গ্রহণ করে উন্নত হয়েছে। যেমন উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। এ বিষয়ে কত সুন্দর শিক্ষা হাদীস শরীফে আছে। কত তাকীদের সাথে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শিখিয়েছেন ।
হযরত উসামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তখন যদি তুমি তাকে জাযাকাল্লাহ খাইরান (আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) বল তাহলেই তুমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করলে।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২০৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৪১৩
অন্য হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন,. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি তোমাদের সাথে কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তাহলে তোমরাও তার সাথে কৃতজ্ঞতার আচরণ কর। (তাকে কিছু হাদিয়া দাও।) যদি কিছু দিতে না পার অন্তত তার জন্য দুআ কর। যাতে সে বুঝতে পারে যে, তুমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।-সুনানে আবু দাউদ ; আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারী ২১৬
জাযাকাল্লাহু খায়রান অর্থ আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। শুকরানও আরবী শব্দ। এর অর্থ তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ধন্যবাদ বাংলা শব্দ। এটি প্রশংসাবাদ, সাধুবাদ বা কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপক উক্তি। আর থ্যাংক ইউ ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ তোমাকে ধন্যবাদ, তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এ শব্দগুলোর মধ্যে কোনটা আরবী, বাংলা বা ইংরেজি-এদিকে না তাকিয়ে শুধু এগুলোর অর্থের দিকে লক্ষ্য করলে দেখব, জাযাকাল্লাহু খায়রান বাক্যটি সবচেয়ে সারগর্ভ। কারণ এতে শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ নয়, উপকারীর জন্য কল্যাণের প্রার্থনাও আছে। আর যদি বলা হয়, জাযাকাল্লাহু খায়রান ফিদ দারাইন (আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
কেউ জাযাকাল্লাহ বললে উত্তরে ওয়া ইয়্যাকা বা ওয়া ইয়্যাকুম বলা যায়। অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকেও দান করুন।
চিন্তা করে দেখুন, কত সুন্দর শিক্ষা আমাদের ছিল, কিন্তু আমরা শুধু অবহেলা করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
কখনো এমন হতে পারে যে, যাকে জাযাকাল্লাহ বলা হল তিনি তা বুঝলেন না। সেক্ষেত্রে আমরা জাযাকাল্লাহর সাথে ধন্যবাদও বলতে পারি।
সর্বশেষ কথা এই যে, আমরা মুসলিম জাতি। আমাদের আছে একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। অথচ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে আস্তে আস্তে আমরা তা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এমনকি জাতীয় জীবনেও এখন বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ হচ্ছে। এটা খুবই ভয়ানক বিষয়। এটা একদিন আকীদা-বিশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলবে; বরং প্রভাব ফেলছে।
আল্লাহ আমাদেরকে সতর্ক হওয়ার তাওফীক দান করুন এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের আদব-কায়েদা রপ্ত করার তাওফীক দান করুন। আমীন।