বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আপনি যা উল্লেখ করেছেন,সেটার উচ্ছারণ হল,
লা ঈমানা লিমান লা হায়া'আ লাহ
অর্থ- যার লজ্জাশরম বলতে কিছু নেই,তার ঈমানও নেই।
হাদিস
عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ مَرَّ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الأنْصَار وَهُوَ يَعِظُ أخَاهُ في الحَيَاءِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « دَعْهُ، فَإنَّ الْحَيَاءَ مِنَ الإيمَانِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসার ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। যিনি তার ভাইকে লজ্জার ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। কেননা, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।’’ [বুখারি ২৪, ৬১১৮, মুসলিম ৩৬, তিরমিযি ২৬১৫, নাসায়ি ৫০৩৩, আবু দাউদ ৪৭৯৫, আহমদ ৪৫৪০, ৫১৬১, ৬৩০৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৭৯]
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সা. সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঈমানের শাখা সত্তরটিরও কিছু বেশি। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি শাখা। (মুসলিম: ৫৭)
শিকড় একটি গাছের মূল ভিত্তি হলেও গাছটির সৌন্দর্য নির্ভর করে সেটির শাখা প্রশাখার উপর। এমনকি ফলনের আধিক্যও। একটি গাছের ডাল পালা বা শাখা-প্রশাখা যত বেশি হবে সেটির শোভা ততই বৃদ্ধি পাবে। সাথে সাথে বৃদ্ধি পাবে তার ফলের পরিমাণও। পক্ষান্তরের ডালপালা বিহীন একটি গাছ জীবিত থাকলেও না থাকে তার কোনো শোভা, না থাকে ফলের বাহার।
এক সময় হয়তো গাছের জীবনটিই হুমকির মুখে পতিত হয়। তো ঈমানের সুন্দর সুন্দর সব গুণগুলো তুলনা করা হয়েছে ডালপালা বা শাখা প্রশাখার সাথে। আর মূল ঈমানের তুলনা দেওয়া হয়েছে মূল গাছের সাথে। যদি ওই সবগুণাগুণ বৃদ্ধি পায় তাহলে ঈমানের শোভা বাড়বে। সাথে বাড়বে ঈমানের ফল। পক্ষান্তরে যদি ঈমানের গুণাগুণ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে তাহলে ঈমান-ই এক সময় হুমকির সম্মুখীন হয়ে যায়। এই তুলনা করেই হাদিসে ঈমানের গুণাগুণকে শাখা আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
মানুষের তিরস্কার বা ভর্ৎসনার আশংকায় ব্যক্তির মধ্যে সৃষ্ট বিশেষ পরিবর্তনই লজ্জা। যে মানবীয় গুণ মানুষকে যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করে শরীয়াতের পরিভাষায় সেই গুণকে লজ্জা বলে। ইমাম রাগেব রহ. বলেন- কোনো অপসন্দনীয় কাজ করতে গেলে অন্তর যে বাধা আসে সেটিই মূলত লজ্জা। হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহ. বলেন- আল্লাহ তাআলার নেয়ামত রহমত ও নিজের নাফরমানী ও না-শোকরীর প্রতি নজর দিয়ে অন্তরে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় সেটাকেই লজ্জা বলে।
লজ্জা ঈমানের যাবতীয় শাখা প্রশাখার উৎসমূল স্বরূপ। এর দ্বারা মানুষ যাবতীয় গুনাহ থেকে বাঁচতে পারে। জনশ্রুতি আছে বেহায়া সব কিছু করতে পারে।
লজ্জা মূলত দুই প্রকার, এক. সামাজিক লজ্জা। দুই. শরয়ী লজ্জা। লজ্জা করে নিজের জন্য লাভ জনক কিছু বর্জন করা সামাজিক লজ্জা। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা‘আলার ভয়ে কোনো গুনাহ ছেড়ে দেওয়া হলো শরয়ী লজ্জা। লজ্জা মূলত ঈমান সম্পৃক্ত বিষয় না হলেও লজ্জা মানুষকে ঈমানের মতই অনেক গুনাহ থেকে রক্ষা করে। এ কারণে রূপকার্থে এবং উপমা স্বরূপ লজ্জাকে ঈমানের অংশ বলা হয়েছে।