জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
নামাযে যেকোনো ভুলের কারণে সেজদা সাহু ওয়াজিব হয়ে যায় না। বরং ভুলে নামাযের কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে কিংবা কোনো ফরয বা ওয়াজিব বিলম্বিত হলে ওয়াজিব হয়। আর যদি ভুলে কোনো ফরয ছুটে যায়, তবে সেজদা সাহু করা যথেষ্ট নয়, বরং পুনরায় নামায আদায় করতে হবে। আর কোনো সুন্নত বা মুস্তাহাব ছুটে গেলে সেজদা সাহু করার বিধান নেই।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حدثنا عبد الله بن يوسف، أخبرنا مالك بن أنس، عن ابن شهاب، عن عبد الرحمن الأعرج، عن عبد الله بن بحينة رضي الله عنه، أنه قال: صلى لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ركعتين من بعض الصلوات، ثم قام فلم يجلس، فقام الناس معه، فلما قضى صلاته ونظرنا تسليمه كبر قبل التسليم، فسجد سجدتين وهو جالس، ثم سلم.
আবদুল্লাহ ইবনে বুহায়না রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নামায আমাদের দুই রাকাত পড়ান। তারপর না বসে দাঁড়িয়ে যান। মুকতাদীরাও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে যায়। যখন তিনি নামায পূর্ণ করলেন এবং আমরা তাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম তখন সালাম ফিরানোর আগে তাকবীর দিলেন এবং বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৪ সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৭০)
.
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,আস্তে নামাযের কেরাতের ক্ষেত্রে একা একা পড়ার সময় ভুলে জোরে কিরাত পড়লে সাহু সিজদাহ দেওয়া সব ছুরতে নয়।
বরং সে যদি যতটুকু দ্বারা নামাজের কেরাত আদায় হয়,সেই পরিমান জোড়ে পড়ে,অর্থাৎ
ছোট আয়াত হলে তিন আয়াত,বড় আয়াত হলে এক আয়াত সমপরিমাণ আস্তে পড়লে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
,
এর চেয়ে কম জোড়ে আওয়াজে পড়লে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা।
,
ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (2/ 81):
"(والجهر فيما يخافت فيه) للإمام، (وعكسه) لكل مصل في الأصح، والأصح تقديره (بقدر ما تجوز به الصلاة في الفصلين. وقيل:) قائله قاضي خان، يجب السهو (بهما) أي بالجهر والمخافتة (مطلقاً) أي قل أو كثر.
(قوله: والجهر فيما يخافت فيه للإمام إلخ) في العبارة قلب، وصوابها: والجهر فيما يخافت لكل مصل، وعكسه للإمام، ح وهذا ما صححه في البدائع والدرر، ومال إليه في الفتح وشرح المنية والبحر والنهر والحلية على خلاف ما في الهداية والزيلعي وغيرهما، من أن وجوب الجهر والمخافتة من خصائص الإمام دون المنفرد.
والحاصل: أن الجهر في الجهرية لا يجب على المنفرد اتفاقاً؛ وإنما الخلاف في وجوب الإخفاء عليه في السرية، وظاهر الرواية عدم الوجوب، كما صرح بذلك في التتارخانية عن المحيط، وكذا في الذخيرة وشروح الهداية كالنهاية والكفاية والعناية ومعراج الدراية. وصرحوا بأن وجوب السهو عليه إذا جهر فيما يخافت رواية النوادر اهـ فعلى ظاهر الرواية لا سهو على المنفرد إذا جهر فيما يخافت فيه، وإنما هو على الإمام فقط.
(قوله: والأصح إلخ) وصححه في الهداية والفتح والتبيين والمنية؛ لأن اليسير من الجهر والإخفاء لا يمكن الاحتراز عنه، وعن الكثير يمكن، وما تصح به الصلاة كثير، غير أن ذلك عنده آية واحدة، وعندهما ثلاث آيات هداية. (قوله: في الفصلين) أي في المسألتين مسألة الجهر والإخفاء"
সারমর্মঃ
যতটুকু কেরাত দ্বারা নামাজ ছহীহ হয়ে যায়,ততটুকু কেরাত জোড়ে পড়লে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
অন্যথায় সেজদায়ে সাহু দিতে হবেনা।
(০২)
ইমামের ক্ষেত্রেও একই বিধান।
অর্থাৎ আস্তে কেরাতের নামাজে তিনি যদি জোড়ে কিরাআত পড়েন,বা জোড়ে কিরাআতের নামাজে তিনি যদি আস্তে কিরাআত পড়েন,তাহলে দেখতে হবে যে কতটুকি কিরাআত তিনি এই ভাবে পড়েছেন,যদি পুরা কিরাআতই তিনি এই ভাবে পড়েন,বা ছোট তিন আয়াত/বড় এক আয়াত কিরাআত সেই ভাবে পড়ে,তাহলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
,
অন্যথায় সেজদায়ে সাহু দিতে হবেনা।
(০৩)
সফরে ৪ রাকআত বিশিষ্ট ফরয নামাযকে ২ রাকআত কসর (সংক্ষেপ) করে পড়বে।
,
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
(وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوْا مِنَ الصَّلاَةِ إِنْ خِفْتُمْ أَنْ يَّفْتِنَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا)
অর্থাৎ, যখন তোমরা ভূপৃষ্ঠে সফর কর, তখন তোমরা নামায সংক্ষেপ করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই; যদি তোমরা এই আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে বিব্রত করবে। (কুরআন মাজীদ ৪/১০১)
মুসাফির ইমামতি করতে পারে এবং এ অবস্থাতেও সে কসর করে নামায পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে গৃহ্বাসী অমুসাফির মুক্তাদীরা মুসাফির ইমামের সালাম ফিরার পর সালাম না ফিরে উঠে বাকী নামায পূরণ করতে বাধ্য হবে। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্, ইবনে উষাইমীন ৭/১৮)
★সুতরাং যদি ইমাম মুসাফির থাকেন,এবং মুক্তাদিরা মুকিম থাকেন,তাহলে ইমাম সাহেব কসর করে সালাম ফিরিয়ে নেবেন।এবং মুকিম মুক্তাদিরা চার রা'কাত একা একা সমাপ্ত করবেন।তথা অবশিষ্ট দুই রা'কাতকে মুক্তাদিরা একা একা পড়ে নিবেন।
এক্ষেত্রে সে কিরাআত পড়বেনা।
সেজদায়ে সাহু হলেও সেটা আদায় করবেনা।
কারন সে এক্ষেত্রে লাহেক ব্যাক্তির মতো।
,
(০৪)
শরীয়তের বিধান মতে গায়রে মাহরাম কোনো মহিলার সামনে পর্দা ছাড়া কথা বলা, সামনে যাওয়া জায়েজ নেই, অযথা, অপ্রয়োজনীয় কথা বলাও জায়েজ নেই।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।(সূরা আন-নূর-৩১)
আরো জানুনঃ
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে উক্ত গায়রে মাহরাম মহিলার সাথে কথা বলা যে হারাম,সেই হিসেবেই কথা থামানো যাবে।
,
তার সাথে বিশে প্রয়োজন ব্যাতিত কথা বলা জায়েজ নেই।
,
(০৫)
আপনি নিজে গিয়ে কথা বলবেন।
প্রথমেই তাকে সালাম দিবেন।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، يَلْتَقِيَانِ فَيُعْرِضُ هَذَا، وَيُعْرِضُ هَذَا، وَخَيْرُهُمَا الَّذِي يَبْدَأُ بِالسَّلَامِ
আবূ আইয়ূব আল-আনসারী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মুসলিমের জন্য তার কোনো ভাইয়ের সঙ্গে (ঝগড়া করে) তিন দিনের বেশী সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা বৈধ নয়। দু’ জন পথিমধ্যে মুখোমুখি হলে একজন এদিকে এবং অপরজন অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ দু’ জনের মধ্যে যে প্রথমে সালাম দেয় সে-ই উত্তম।।
(আবু দাউদ ৪৯১১)
আরো জানুনঃ