বিসমিহি তা'আলা
জবাবঃ-
রাসূলুল্লাহ এর নিশানি/চিন্থ যেমন- দাড়ি-চুল ইত্যাদি বর্তমানে সংরক্ষিত আছে কি?বা যে গুলো রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নামে প্রচলিত রয়েছে, সেগুলো কি সত্যিই রাসূলুল্লাহ সাঃ এর?
বলতে গেলে এ ব্যাপারে যথেষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।
বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ আহমদ পাশা তাইমূর লিখেন-
" ﻓﻤﺎ ﺻﺢ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻌﺮﺍﺕ ﺍﻟﺘﻲ ﺗﺪﺍﻭﻟﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﻌﺪ ﺫﻟﻚ ، ﻓﺈﻧﻤﺎ ﻭﺻﻞ ﺇﻟﻴﻬﻢ ﻣﻤﺎ ﻗﺴﻢ ﺑﻴﻦ ﺍﻷﺻﺤﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ ، ﻏﻴﺮ ﺃﻥ ﺍﻟﺼﻌﻮﺑﺔ ﻓﻲ ﻣﻌﺮﻓﺔ ﺻﺤﻴﺤﻬﺎ ﻣﻦ ﺯﺍﺋﻔﻬﺎ "
বর্তমান যমানায় মানুষের নিকট 'রাসূলুল্লাহ সাঃ এর চুল ইত্যাদি' নামে যে কিছু পাওয়া যায়,এটা মূলত রাসূলুল্লাহ সাঃ কর্তৃক সাহাবাদের মাঝে ভন্ঠিত চুলের একাংশ।(বর্তমানে অনেকেই দাবী করে যে তার নিকট রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিশানি রয়েছে)
সে জন্য কোনটা সঠিক আর কোনটি জাল! সেটা নির্ধারণ করা অত্যন্ত জটিল ও কঠিন বিষয়।
(আছারুন-নাবাওয়ীয়্যাহ-৯১)
এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে,ক্রুসেডারদের আক্রমণের ভয়ে উসমানী ৯তম খলিফা প্রথম সালিম, অতঃপর ৩৪ তম খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল হামীদ, তারা উভয়েই কিছু কিছু করে রাসূলুল্লাহ সাঃ এ সব নিশানি মক্কা মদিনার বিভিন্ন জায়গা এমনকি কা'বা গৃহর ভিতর থেকেও হস্তগত করে ইস্তাম্বুল স্থানান্তরিত করেন।যা বর্তমানে তুর্কি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
কিন্তু এ বর্ণনা কতটুকু সত্য তা উপরের আহমদ পাশার বক্তব্য থেকে সহজেই অনুমান করা গেছে।
যাক যদি ধরেই নেই যে,এগুলা বাস্তবেই রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিশানি।
তাহলে কি এগুলো দ্বারা বরকত নেয়া যাবে?
এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে,
ফুকাহায়ে কিরাম বরকত গ্রহণের দুইটি পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন-
(১)রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জীবদ্দশায়।
(২)রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মৃত্যুর পর।
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জীবদ্দশায় বরকত গ্রহণ জায়েয।এতে কারো দ্বিমত নেই।
যেমন চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ
"আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যা (১০/৭০)" এ বর্ণিত রয়েছে,
" ﺍﺗَّﻔَﻖَ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀُ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺸْﺮُﻭﻋِﻴَّﺔِ ﺍﻟﺘَّﺒَﺮُّﻙِ ﺑِﺂﺛَﺎﺭِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ، ﻭَﺃَﻭْﺭَﺩَ ﻋُﻠَﻤَﺎﺀُ ﺍﻟﺴِّﻴﺮَﺓِ ﻭَﺍﻟﺸَّﻤَﺎﺋِﻞ ﻭَﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺃَﺧْﺒَﺎﺭًﺍ ﻛَﺜِﻴﺮَﺓً ﺗُﻤَﺜِّﻞ ﺗَﺒَﺮُّﻙَ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ ﺍﻟْﻜِﺮَﺍﻡِ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ﺑِﺄَﻧْﻮَﺍﻉٍ ﻣُﺘَﻌَﺪِّﺩَﺓٍ ﻣِﻦْ ﺁﺛَﺎﺭِﻩِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ " ﺍﻧﺘﻬﻰ
উলামাগণ এ ব্যাপারে একমত যে,রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিশানা/চিন্থ দ্বারা বরকত হাসিল করা যায়।রাসূলুল্লাহ সাঃ এর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে হাদীস বর্ণনাকারী উলামাগণ অনেক হাদীস এমন উল্লেখ করেন, যেখানে সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্নভাবে রাসূলুল্লাহ এর নিশানি/চিন্থ দ্বারা বরকত গ্রহণের ঘটনা বর্ণিত রয়েছে।
আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যা (১০/৭০)
কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মৃত্যুর পর এসব নিশানি দ্বারা বরকত গ্রহণ করা সম্পর্কে দু'রকম মতামত পাওয়া যায়।
(১)
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মৃত্যুর পরও উনার নিশানি দ্বারা বরকত নেয়া যাবে।
https://www.islamweb.net/ar/fatwa/73981
(২)
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জীবদ্দশায় উনার বিভিন্ন নিশানি দ্বারা বরকত নেয়া বৈধ হলেও মৃত্যুর পর আর বরকত নেয়া যাবে না। কেননা মৃত্যু পরবর্তী সাহাবাদের কেউ এমনটা করেছেন বলে কোথাও প্রমাণিত নয়।
https://islamqa.info/ar/answers/224579
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিশানি বা নিশানি সমূহের ফটো দ্বারা বরকত হাসিল করা মূলত নিষেধ নয়।বরং এটা একটা উত্তম কাজ।এবং মহব্বতের বহির প্রকাশ।তবে যেহেতু জনসাধারণ এটাকে পৃথক একটি ইবাদত বুঝে নিবে,অথচ এটার কোনো শরয়ী দলীল নেই। তাই এ সম্পর্কে নিরুৎসাহিত করাই উলামাদের উচিৎ।
(ফাতাওয়ায়ে উসমানি-১/৪৭)
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।