بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
১. কারিন ((قرين)) আরবি শব্দ। কারিন দ্বারা সঙ্গী, সাথী ও সহচর বুঝায়। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা
থেকে এ বিষয়টি প্রমাণিত সত্য যে, প্রত্যেক মানুষের সঙ্গেই একটি
জিন বা শয়তান থাকে। যে শয়তান মানুষকে গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতার দিকে পরিচালিত করে। মানুষ
তাতে প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জিন বা শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার উপায় এসেছে কোরআনের
বর্ণনায়-
رَّبِّ
أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ - وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن
يَحْضُرُونِ
উচ্চারণ : ‘রাব্বি আউজুবিকা
মিন হামাযাতিশ শায়াত্বিন। ওয়া আউজুবিকা রাব্বি আইঁ ইয়াহদুরুন।’
অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা!
আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আমার প্রভু! আমার নিকট তাদের
উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সুরা মুমিনূন : আয়াত ৯৭-৯৮)
আল্লাহ তাআলা মানুষকে জিন/শয়তানের
আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কোরআনুল কারিমে এ আয়াতটিকে প্রতিরক্ষামূলক দোয়া হিসেবে নাজিল
করেছেন। নিয়মিত এ দোয়ার আমলেই কারিন জিন থেকে নিরাপত্তা পাবে সব মানুষ।
কারিন জিন বা শয়তানের কুমন্ত্রণা
থেকে রক্ষা পেতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা
দিয়েছেন। সকাল-সন্ধ্যায় সব কাজে নিয়মিত আমল ও দোয়া করার কথা বলেছেন। এসব দোয়া ও আমলই
কারিন জিনের কুমন্ত্রণা বা প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট।
এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সময়ের আলোকে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে তাঁর উম্মতকে সকাল-সন্ধ্যার জিকির-দোয়াসহ
দৈনন্দিন জীবনে যেসব দোয়া, জিকির ও আমল
জরুরি তা শিক্ষা দিয়েছেন। তাহলো-
‘টয়লেটে প্রবেশ ও টয়লেট থেকে
বের হওয়ার পর দোয়া, বাড়ি থেকে
বের হওয়া ও বাড়িতে প্রবেশের দোয়া, কাপড় পরা ও কাপড় পরিবর্তন করার
দোয়া, খাবার খাওয়ার শুরু ও শেষের দোয়া, এমনকি স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশায়ও রয়েছে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও বদনজর থেকে হেফাজতের
দোয়া। আর এসব দোয়ার আমলেই মুমিন মুসলমান কারিন জিন তথা শয়তান থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
কারিন জিন/শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট
করে, অন্যায়-অশ্লীল কাজের দিকে
প্ররোচিত করে। কুকর্ম ছাড়া ভালোকাজে উৎসাহ দেয় না। এই জিনকে কারিন জিন বা সহচর শয়তান বলা হয়। হাদিসের একটি বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কোনো ব্যক্তি (অবশিষ্ট) নেই; যার সঙ্গে
তার সহচর (কারিন) জিন (শয়তান সহচর) নিযুক্ত করে দেওয়া হয়নি।
সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন-
‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সঙ্গেও কি?
তিনি বললেন- আমার সঙ্গেও।
তবে আল্লাহ তাআলা তার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করেছেন। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করেছে ( বা
আমার অনুগত হয়ে গেছে)। ফলে সে আমাকে শুধু ভাল কাজেরই পরামর্শ দেয়।
অন্য এক হাদিসে সুফিয়ানের
বর্ণনায় এসেছে-
وقد وكِّل به
قرينُه من الجنِّ وقرينُه من الملائكة
‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই
যার সঙ্গে তার সহচর জিন (শয়তান) এবং সহচর ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেওয়া হয়নি।’ (মুসলিম
২৮১৪, আহমাদ
৩৮০২, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৬৪১৭)
মানুষকে কুমন্ত্রণা দেওয়া
কিংবা প্ররোচনা প্রদানকারী জিন শয়তান মানুষের সঙ্গে থাকার বিষয়টি কোরআনুল কারিমেও সুস্পষ্ট।
কেয়ামতের দিন মানুষের সঙ্গী এ শয়তান বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
قَالَ قَرِیۡنُهٗ
رَبَّنَا مَاۤ اَطۡغَیۡتُهٗ وَ لٰکِنۡ کَانَ فِیۡ ضَلٰلٍۭ بَعِیۡدٍ - قَالَ لَا تَخۡتَصِمُوۡا لَدَیَّ وَ قَدۡ
قَدَّمۡتُ اِلَیۡکُمۡ بِالۡوَعِیۡدِ
`তার সহচর (শয়তান) বলবে,
‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি তাকে অবাধ্য হতে প্ররোচিত করিনি। বস্তুতঃ
সে নিজেই ছিল ঘোর বিভ্রান্ত। আল্লাহ বলবেন, তোমরা আমার কাছে বাক-বিতণ্ডা
করো না। অবশ্যই আমি আগেই তোমাদের সতর্ক করেছিলাম।' (সুরা কাফ
: আয়াত ২৭-২৮)
আয়াতের বিশ্লেষণে হজরত ইবনে
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- এটাই হলো নিয়োগকৃত শয়তান। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামাজ পড়ে, তখন সে যেন তার সামনে দিয়ে
কাউকে যেতে না দেয়। যদি সে অস্বীকার করে (বাধা মানতে না চায়) তবে সে যেন তার সঙ্গে
লড়াই করে। কেননা তার সঙ্গে তার সঙ্গী শয়তান রয়েছে।’ (মুসলিম)
উল্লেখ্য, মানুষের সঙ্গে থাকা এ ‘কারিন জিন/শয়তান’ মানুষের
মৃত্যুর পর ওই মৃত মানুষের রূপ ধরে অন্যদের ভয় দেখায় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এটি কি সত্য?
‘না’ এটি মোটেই সঠিক নয়; বরং এগুলো কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কথা। বরং এ
সঙ্গী জিন বা শয়তান তার জীবিত থাকাকালীন সময়ে তাকে বিপথগামী করার জন্য প্ররোচিত করার
পাশাপাশি যাবতীয় পাপাচার ও নানা অন্যায়-অপকর্মের রাস্তার দিকে ধাবিত করতে কঠোরভাবে
প্ররোচিত করে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে
সব সময় শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকতে সব কাজে দোয়া ও আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার
তাওফিক দান করন।
★★ ২.এব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে এতটুকু
জানা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা
কারিনের অনিষ্ট থেকে নবী ও রাসূলগনকে হেফাজত করেছেন।