কোরআন মহান আল্লাহর কালাম বা বাণী।
হাদীস রাসুলুল্লাহ সাঃ এর বানী।
এটি প্রদর্শনের বস্তু নয়। তাই শুধু প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কোরআন-হাদিস লিখিত বা ক্যালিগ্রাফি করা ওয়ালম্যাট বা শোপিস ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে কেউ যদি এ উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহার করে যে এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার কথা স্মরণ হবে, এতে লিখিত বাণীর হিদায়াত ও শিক্ষা গ্রহণ করা যাবে, তাহলে শর্ত সাপেক্ষে তা করা যেতে পারে।
,
সেই শর্তগুলো হলো—
আয়াত ও হাদিসের মর্যাদার প্রতি খেয়াল রাখা, যেন তা নিচে পড়ে না যায় বা নাপাক কিছুর সঙ্গে স্পর্শ না হয়, আর ধুলাবালি থেকে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। কোরআন-হাদিস লিখিত ক্যালেন্ডারের ক্ষেত্রেও একই বিধান। কোরআন-হাদিসের মর্যাদার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। বাতাসে যাতে ওড়াউড়ি না করে, সে ব্যবস্থাও করা প্রয়োজন।
তবে ক্যালেন্ডারে কোরআনের আয়াত বা হাদিস না লেখাই উত্তম। কারণ মানুষ এটি সেভাবে মর্যাদা দিয়ে ব্যবহার করে না এবং মাস ও বছর শেষে তা হেফাজত করে না; যেখানে-সেখানে তা ফেলে দেয়।
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهٰذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِه اٰخَرِينَ
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাব কুরআনের মাধ্যমে কোন কোন জাতিকে উন্নতি দান করেন। আবার অন্যদেরকে করেন অবনত।
(মুসলিম ৮১৭, ইবনু মাজাহ ২১৮, আহমাদ ২৩২, দারিমী ৩৪০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫১২৫, শু‘আবূল ঈমান ২৪২৮, সহীহাহ্ ২২৩৯।)
,
কোরআন-হাদিস লিখিত ক্যালেন্ডার দ্বারা কিতাব বা বই-পুস্তক বাঁধাই করা মাকরুহ। এটা কোরআন-হাদিসের মর্যাদার পরিপন্থী। এ ধরনের ক্যালেন্ডার প্রয়োজন শেষে হেফাজত করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে পুড়িয়ে ছাইগুলো কোনো পবিত্র স্থানে দাফন করে দেবে। (ফতোয়ায়ে খানিয়া : ৩/৪২৪; আল বাহরুর রায়েক : ২/৩৭; ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ১৮/৬৭, ৬৯; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১০৯, ৫/৩২২; দুররুল মুখতার : ৪/১৩০)
,
ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে আছে
وَيُكْرَهُ أَنْ يَجْعَلَ شَيْئًا فِي كَاغِدَةٍ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ تَعَالَى كَانَتْ الْكِتَابَةُ عَلَى ظَاهِرِهَا أَوْ بَاطِنِهَا، (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الباب الخمس-5/322)
يكره كتابة قرآن أو إسم الله تعالى على ما يفرش لما فيه من ترك التعظيم وكذا على درهم ومحراب وجدار لما يخاف من سقوط الكتابة (طحطاوى على مراقى الفلاح، باب الحيض، مصرى-118)
যার সারমর্ম হলো কুরআনের আয়াত বা আল্লাহর নাম এমন জায়গায় লেখা যাবেনা,যেটার দ্বারা সম্মান হানী হয়।
এরকমটি হলে এটি নাজায়েয।
,
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেলো যে
পদপৃষ্ঠ সম্ভাবনাময় স্থানে কুরআন লিখা মাকরুহ।
যদি দেয়ালে এমনভাবে লিখা হয় যা কখনো পড়ে গিয়ে পদপৃষ্ঠ হওয়া বা অসম্মানিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে তা নাজায়েয হবে না।
আরো জানুন
গ্রাফিক্স ডিজাইনে খুলে রাখা কুরআনের ছবি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মাসয়ালা হলো যদি এক্ষেত্রে কুরআনের আয়াত বুঝা যায়,সেক্ষেত্রে এটির বিধান উপরে উল্লেখিত বিধানের ন্যায় হবে।
অর্থাৎ উক্ত ডিজাইন সম্বলিত বস্তু যদি কখনো পড়ে গিয়ে পদপৃষ্ঠ হওয়া বা অসম্মানিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে তা নাজায়েয হবে না।
আর যদি এক্ষেত্রে কুরআনের আয়াত বুঝা যায়,সেক্ষেত্রে যেহেতু বুঝা যাচ্ছে যে এটি কুরআনের আয়াতের ছবি,তাই উক্ত ডিজাইন সম্বলিত বস্তু যদি কখনো পড়ে গিয়ে পদপৃষ্ঠ হওয়া বা অসম্মানিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,তবে এটি আদবের খেলাফ হবে।