জবাবঃ-
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
(০১)
অমুসলিম মেয়েদের সামনে মুসলিম নারীদের পর্দা করতে হবে কিনা,সেই ব্যপারে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ পাওয়া যায়।
কেহ কেহ বলেছেন যে যদিও তাদের সামনে মুসলিম নারীদের পর্দা করা ফরজ নয়,তবে কম আয কম মুসতাহাব অবশ্যই।
তাই তাদের সামনে পর্দা করাই উচিত।
কিতাবুন নাওয়াজেল ৬/৩৫
কেহ কেহ বলেছেন যে প্রত্যেক গাইরে মাহরাম পুরুষের প্রত্যেক গাইরে মাহরাম স্ত্রীলোকের সামনে যে পরিমাণ পর্দা করা ফরজ, কাফির-ফাসিক মেয়েলোক হতেও মুমিন মেয়েদের সে পরিমাণ পর্দা করা ওয়াজিব।
সুতরাং হিন্দু বা খৃষ্টান মেয়েলোক বা যেকোনো বেদ্বীন বা বেপর্দা মেয়ে হতেও পর্দানশীন নারীর পর্দা করা ওয়াজিব। তাদের সামনে কেবলমাত্র মুখমণ্ডল, হাতের পাতা ও পায়ের পাতা ব্যতীত শরীরের কোনো অংশ খোলা রাখা জায়েজ নয়।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক তথা নিজেদের (মুসলিম) মহিলাগন, অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩১}
لا یحل للمسلمۃ أن تنکشف بین یدي یہودیۃ أو نصرانیۃ أو مشرکۃ إلا أن تکون أمۃ لہا۔ (شامي ۹؍۵۳۴ زکریا)
কোনো মুসলিমা মহিলার জন্য অমুসলিম মহিলার সামনে বেপর্দা হওয়া জায়েয নেই।
وقال ابن حجرؒ: الأصح تحریم نظرہا إلی ما لا یبدو في المہنۃ من مسلمۃ غیر سیدتہا ومحرمہا ودخول الذمیات علی أمہات المؤمنین الوارد في الأحادیث الصحیحۃ دلیل لحل نظرہا منہا ما یبدو في المہنۃ، وقال الإمام الرازي: المذہب أنہا کالمسلمۃ والمراد بنسائہن جمیع النساء وقول السلف محمول علی الاستحباب وہٰذا القول أرفق بالناس الیوم فإنہ لا یکاد یمکن احتجاب المسلمات عن الذمیات۔ (روح المعاني ۱۸؍۲۱۱ أشرفیۃ، معارف القرآن ۶؍۴۰۴)
যথা সম্ভব এটাকে আমরা মুসতাহাব বলতে পারি।
তাই তাদের সামনে পর্দা করাই জরুরি।
বিস্তারিত জানুনঃ-
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কাফের বোনদেরকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য মুসলিম মেয়েদের পর্দা করাই উচিত ।
(উল্লেখ্য এক্ষেত্রে যেহেতু উলামায়ে কেরামদের মতবিরোধ রয়েছে, তাই এক্ষেত্রে পর্দা করাকে ফরজ বলার সুযোগ নেই। জরুরি বলা যায়। বিশেষ প্রয়োজনে তাদের সামনে চেহারা খুললে আশা করি গুনাহ হবেনা।)
তবে প্রশ্নের বিবরন মতে যদি কাফের বোন ৬০ বছর উর্ধ্বে হন,সেক্ষেত্রে তার সামনে পর্দা না করলে গুনাহ হবেনা।
(০২)
শালিন ও ঢিলেঢালা পোশাক পড়ে যাওয়া উত্তম হবে।
(০৩)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَات الدّين تربت يداك
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মূলত) চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয়- নারীর ধন-সম্পদ, অথবা বংশ-মর্যাদা, অথবা রূপ-সৌন্দর্য, অথবা তার ধর্মভীরুর কারণে। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) সুতরাং ধর্মভীরুকে প্রাধান্য দিয়ে বিবাহ করে সফল হও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার দু’ হাত ধূলায় ধূসরিত হোক (ধর্মভীরু মহিলাকে প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অবধারিত।)
(সহীহ : বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাঊদ ২০৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯৫২১, ইরওয়া ১৭৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০০৩।)
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের বিশুদ্ধ অর্থ হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহের ক্ষেত্রে লোকজন যা করত তাই উল্লেখ করেছেন। লোকজন উল্লেখিত চারটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিত। আর এ সবগুলোর পর ছিল দীনদারিত্বের বিষয়, আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে সঠিক পথের সন্ধানী! তুমি দীন-দারিত্বকেই প্রাধান্য দাও। তবে এটি এ মর্মে নির্দেশ নয়।
‘আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেনঃ আলোচ্য হাদীসের অর্থে চারটি বৈশিষ্ট্য যা নারীর বিবাহের প্রতি আগ্রহ যোগায়, তা নির্দেশ বা ওয়াজিব নয়। বরং এ বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা বৈধ, তবে দীন-দারিত্ব দেখাটা অধিক অগ্রগণ্য। তিনি আরো বলেন যে, এ হাদীস থেকে এটা মনে করা যাবে না যে, নারী পুরুষের কুফু বা সমতা এ চারটির মধ্যে সীমাবদ্ধ। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫০৯০)
(০৪)
প্রশ্নের বিবরন মতে যেহেতু স্বামীরা নিজেই স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে,তাই এক্ষেত্রে স্ত্রীর ভরনপোষণ দেয়ার স্বামীর উপর কর্তব্য।
হ্যাঁ যদি স্ত্রীর পরিবার তাহা নিতে অসম্মতি জানায়,তাহলে তাহা ভিন্ন কথা।
★এক্ষেত্রে স্ত্রীর চিকিৎসার খরচের মাসয়ালাঃ-
শরীয়তের বিধান মতে স্বামীর উপর স্ত্রীর ভরণপোষণ এবং বাসস্থান ওয়াজিব।চিকিৎসা খরচ ভরণপোষণ বা বাসস্থানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বামীর নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেভাবে স্বামীর উপর স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ ওয়াজিব নয় ঠিক সেভাবে স্ত্রীর উপর স্বামীর রান্নাবান্নারও দায়িত্ব নেই।অন্যদিকে স্ত্রীকে রান্না করা খাবার পাঠিয়ে দেওয়া স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য।
সুতরাং যেহেতু আমাদের সমাজের স্ত্রীরা স্বামীকে বা স্বামীর বাড়ীর লোকজনকে রান্না করে খাওয়ান, তাই স্বামীরাও তাদের স্ত্রীদের চিকিৎসা খরচ বহন করবেন।
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্ত্রীর ওষুধ কিনে আনা ডাক্তার দেখানো,ইত্যাদি স্বামীর অনুমতিতে হলে স্বামীই এর খরচ বহন করবে।
বিস্তারিত জানুনঃ-
উল্লেখ্য, সমাজে যে প্রথাটি চালুর কথা প্রশ্নে উল্লেখ আছে,এটি যদি স্ত্রীর পরিবার সন্তুষ্টি চিত্তে মেনে নেয়,তারাই যদি আগ বাড়িয়ে তাদের বাসায় মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে,নিজ থেকেই সন্তুষ্টি চিত্তে সমস্ত খরচ বহনের কথা বলে,স্বামী টাকা দিলেও তাহা না নেয়,তাহলে সমস্যা নেই।
কিন্তু তারা বিষয়টি নিজ থেকে সন্তুষ্টি মেনে না নেয়,স্বামী যদি যাবতীয় খরচ দেয়ার কথা না বলে,বা তাদের উপর বিষয়টি জুলুম মনে হয়, তাহলে এটি কোনো ভাবেই শরীয়ত অনুমোদিত হবেনা।
(০৫)
আপনি যে কিছু ক্লিপ চুরি করেছিলেন,সেই ক্লিপ গুলো অথনা সমপরিমাণ টাকা আপনি ক্লিপের মালিকের ছওয়াবের নিয়তে গরিব মিসকিনকে দান করে দিবেন।