দুদিন যাবত ফেসবুকে একটি স্বনামধন্য রেস্টুরেন্ট brand নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
একজন ভদ্রলোক ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছেন উনি ওই রেস্টুরেন্টে থেকে কাচ্চি অর্ডার করেছিলেন (পার্সেল হিসেবে) এবং মাংসের ধরণ যাচাই করে ধারণা করছেন ওনাকে খাসির মাংসের বদলে বিড়াল বা কুকুরের মাংস দেয়া হয়েছে। কারণ, খাসির মাংসের হাড় কিছুটা মোটা হয় কিন্তু ওনার কাছে যে কাচ্চি পাঠানো হয়্রছে সেটার মাংস গুলো নরম। উপরোক্ত ঘটনায়, অভিযোগের প্রেক্ষিতে রেস্টুরেন্টেটে কর্তৃপক্ষ ভোক্তার সাথে যোগাযোগ করে সুরাহার চেস্টা করে এবং এটা নিয়ে বাদানুবাদ সৃষ্টি হয়।
উনার এপোস্টের সাথে বিভিন্ন ছবি/ভিডিও সংযুক্ত ছিল যা দিয়ে প্রমাণ হয়না ওনার ধারণা সঠিক। এ পোস্ট নিয়ে একশ্রেণির মানুষ সমালোচনায় মেতে উঠেছে এবং এই পোস্ট ছড়িয়ে দিচ্ছে বা বিশ্বাস করছে। এবং এ পোস্টের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে বিদ্রুপ ও সমালোচনা করছে।
পোস্টদাতা আইডি ডিএক্টিভ করেছে। অপরদিকে নেগেটিভ ভাইরাল প্রচারণা গুলো মুছে দেয়া হচ্ছে। যেকারণে আমার প্রশ্নের রেফারেন্স হিসেবে লিংক দিতে পারছিনা।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, আমি একটি পোস্ট করি ফেসবুকে। যা নিচে তুলে ধরা হল :
প্রসঙ্গ: অমুক রেস্টুরেন্ট এ খাসির মাংসের বদলে বিড়াল/কুকুরের মাংস বিক্রি করা প্রসঙ্গে
ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে অমুক রেস্টুরেন্টে খাসির মাংসের বদলে বিড়াল/কুকুরের মাংস নাকি দেয়া হচ্ছে।
একজন ব্যক্তি পোস্ট করেছেন এ ব্যাপারে। তিনি মাংসের ধরণ দেখেই সন্দেহ করেছেন এটা খাসির মাংস নয়। অথচ তিনি এটা প্রমাণ করে দেখাতে পারেননি। যদিও তিনি প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন ছবি/ভিডিও দিয়েছেন যা দিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়না ভিডিওতে দেখানো মাংস কুকুর/বিড়ালের মাংস। এটা নিশ্চিত হতে হলে ল্যাব টেস্ট প্রয়োজন। যা এখন পর্যন্ত করা হয়েছে বলে জানা যায় নি।
কে না কে একটা পোস্ট করেছে যাকে আপনি চেনেন না, জানেন না, তার দেয়া তথ্যকে যাচাই না করে বা নিশ্চিত না হয়ে কিভাবে আপনি প্রচার করেন? এটা স্পষ্টতই মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই না। কেননা, হাদিসে এসেছে : আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কোন কথা শোনামাত্রই (যাচাই না করে) বলে বেড়ায়।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৯২)
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
তাছাড়া আল কুরানে এসেছে:
হে মুমিনগণ, কোনো ফাসেক যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না বস। ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়। (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৬)
এখানে ফাসেকের খবর ভালোভাবে যাচাই করতে বলা হয়েছে। কারণ সে অসত্য খবরও দিতে পারে। তা যাচাই না করা হলে মিথ্যা খবরের ফাঁদে পড়ে কারো ক্ষতি করা হয়ে যেতে পারে। ফলে কৃতকর্মের জন্য নিজেকেই অনুতপ্ত হতে হবে। অনলাইনে যারা বিভিন্ন খবর প্রচার করে, এদের বেশির ভাগ মানুষকেই আমরা চিনি না, ফলে তাদের খবরের ব্যাপারে তো আরো বেশি সতর্ক থাকা উচিত।
যাই হোক, একটি ঘটনা দিয়ে শেষ করছি। বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।
সহিহ বুখারির ২৪৬৮ নং হাদিসে একটি ঘটনার উল্লেখ আছে। মূল ঘটনা ছিল, নবীজি (সা.) কোনো এক কারণে এক মাস স্ত্রীদের কাছে না যাওয়ার শপথ করেছিলেন এবং সে সময় তাঁর পা মচকে গিয়েছিল। তাই তিনি একটি কোঠায় অবস্থান করছিলেন। একেই কেউ কেউ তালাক মনে করে প্রচার করেছেন। ওমর (রা.) এই খবরে উদ্বিগ্ন হলেও প্রচার করেননি। অথচ খবরদাতা ছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গী এবং মিম্বরের কাছে গিয়ে তিনি কতক সাহাবিকে কাঁদতেও দেখেছেন। উপরন্তু স্বয়ং নবীজিকেও উদ্বিগ্ন দেখা গেছে। তার পরও তিনি নবীজিকে সরাসরি জিজ্ঞেস না করে তথ্যটির প্রচারে নামেননি। যদি তিনি সেদিন নবীজির কাছে বিষয়টি স্পষ্ট না হয়ে শুধু পরিস্থিতির ওপর অনুমান করে খবরটি প্রচার করতেন বা বিশ্বাস করতেন, তাহলে তিনি অবশ্যই ভুলের সাগরে ডুব দিতেন। মহান আল্লাহ সবাইকে আরো সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন।
এই পোস্টে আমার এক বন্ধু কমেন্ট করেছে:
আমি আজকে নাজিরা বাজার গিয়ে খাসির তেহারি খাওয়ার পর মাথায় অনেক কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে। বর্তমান বাজারে খাসির যে দাম তারপরও তারা মাত্র ১৩০ টাকার প্লেটে যথেষ্ট মাংস দিয়েছিলো।মাংসে খাসির কোনো স্মেল তো ছিলোইনা। সত্যি বলতে দ্রব্যমূল্যের যে দাম তাতে সবাই যার যার ব্যাবসা বাঁচাতে কি সব করছে আল্লাহই ভালো জানে। তুমিও যেহেতু থলের ভিতরের গল্পগুলা শিওর জানোনা সুতরাং এটা নিয়ে এতো পজিটিভ হওয়ারও কিছু নাই। এই দেশের মানুষ সবই পারে। এগুলা আমাদের এখন আর অবাক করেনা।
আমি রিপ্লাই করেছি: হইতে পারে তারা খাসির ঘ্রাণ না আসার জন্য কিছু দিয়েছে বা রান্নার প্রসেস টা অন্যরকম ছিল। পজিটিভ মানুষের পজিটিভ ভাবাই উচিত। এর জন্য থলের বেড়ালের প্রয়োজন নাই। অহেতুক, প্রমাণবিহীন নেগেটিভ চিন্তাভাবনা তো টক্সিক আর ফ্রাস্ট্রেটেড মানুষজনের ই শোভা পায়।
উপরোক্ত ব্যাপারটি নিয়ে আমাদের মাঝে বেশ বিতর্ক হয়।
আমার আকিদা হল, অমুক রেস্টুরেন্ট কেবল অভিযুক্ত। প্রমাণিত দোষী নয়। প্রমাণ ছাড়া কারো সুনামক্ষন্ন হতে পারে এমন ব্যাপার ফেসবুকে প্রচার করা উচিত নয়। প্রমাণ হলে ভিন্ন বিষয়। এর সপক্ষে হাদিস ও প্রাসংগিক ঘটনা পোস্টেই উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া পূর্বেও আশুলিয়ার এক বিরিয়ানির দোকান নিয়ে অনুরূপ গুজব রটেছিল। পরে প্রমাণ হয় তা ভুয়া আর এতে ওই প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। তাছাড়া এক ঘটনার ভিত্তিতে সব ব্যাবসায়ীকে দোষারোপ করে, মনে নেতিবাচক ধারণা আনা উচিত নয়। সবসময় উত্তম ভাবাই উচিত।
আমার বন্ধু এখন যেকোন দোকানেই মাটন খেতে অস্বস্তি করছে। যদি খাসির মাংসের বদলে কুকুর বিড়াল খাওয়ায়। চারপাশের নেগেটিভ পরিবেশ তাকে নেগেটিভ ভাবতে বাধ্য করছে। তার কাছে প্রমাণ ছাড়া রেস্টুরেন্টে নিয়ে এমন নেগেটিভ কথাবার্তা মিথ্যাচার হবেনা বরং এটা মানুষকে সতর্কতার জন্য বলা। তাছাড়া এর পেছনে তার ও যুক্তি আছে অনেক। তার ধারণা, দেশের প্রশাসন টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায় তাই এসব প্রমাণ করাও সম্ভব না।
এখানে, আমার কথা হল, প্রশাসন না হয় খারাপ কিন্তু দেশে কি একজন সৎ মানুষ ও নাই যিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে এগুলো প্রমাণ করতে পারবেন?
উপরোক্ত পরিস্থিতিতে আমার প্রশ্ন:
১। আমাদের মধ্যে কে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে?
২। আমার আকিদার সাথে কি হাদিসগুলোর বর্ণাসমূহ কি সাংঘর্ষিক?
৩। এই ঘটনার জন্য ঢালাওভাবে সব ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে নেতিবাফক চিন্তা করা উচিত? আমার জানামতে, আল্লাহ সর্বদা উত্তম ধারণা করতে বলেছেন।
৪। ফুড রিভিউ দেয়ার সময় সত্যিকার ভাবে খাবারের যে জিনিসগুলো খারাপ লাগে সেগুলো হলা যাবে?