আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
588 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (6 points)
edited by

আসসালামু আলাইকুম,

মুহতারাম মুফতি সাহেব,

আমার সমস্যার কথা যতটা সম্ভব সঠিকভাবে উপস্হাপন করার জন্য অনেক বেশি বিস্তারিতভাবে আমাকে লিখতে হয়েছে  ৷ সংক্ষেপে লিখলে হয়ত পুরো ব্যাপারটি ঠিকমত বুঝাতে পারতাম না ৷ অনুগ্রহপূর্বক কষ্ট করে পড়ে উত্তর জানিয়ে আমাকে বাধিত করবেন ৷

আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি গুছিয়ে লেখার জন্য ৷ ৬-৭ দিন ধরে অনেক ভেবে চিন্তে লিখেছি ৷

আমার সমস্যাগুলোকে - (ক) ওয়াসওয়াসা, (খ) পারিবারিক সমস্যা ও (গ) মূল ঘটনা যার সাপেক্ষে মাসআলা জানা প্রয়োজন -  এ তিনটি অংশে বর্ণনা করেছি ৷
 

(ক) ওয়াসওয়াসা:

প্রথমেই বলে নিচ্ছি যে আমি বেশ কিছু বিষয়ে ওয়াসওয়াসায় ভুগি ৷ সেগুলোর মধ্যে তালা* আর শিরকের ওয়াসওয়াসা বেশি আসে, প্রতিনিয়তই আসে ৷

ওয়াসওয়াসার কয়েকটি নমুনা না বললে বিষয়টি পরিষ্কার নাও হতে পারে ৷ এ কারণে সেগুলো উল্লেখ করছি ৷

তা*াকের ওয়াসওয়াসা:

আমার বিয়ে হয় ২০১৫ এর ডিসেম্বরে ৷ ২০১৬ এর জানুয়ারির শেষ দিকে হঠাৎ করেই তা*াকের ওয়াসওয়াসা আসতে শুরু করে মনের মধ্যে ৷ আমি তখন থেকে আজ পর্যন্ত তা*াক শব্দটা লিখতে পারিনা, উচ্চারণও করতে পারি না ৷ কারণ, লিখতে গেলে আর শব্দটি বলতে গেলে  আমার স্ত্রীর কথা মনের মধ্যে চলে আসে ৷ মনে হয় তাকে উদ্দেশ্য করে লিখছি বা বলছি ৷ মনে হয় যে তা*াক হয়ে গেল এভাবে ৷ এখনো কুরআন মাজীদের ৬৫ নম্বর সুরাহকে কোন আলোচনা করার সময়ে আমি আমার স্ত্রীর সামনে  ৬৫ নম্বর সুরাহ বলেই অভিহিত করি, সুরাহর নাম বলতে পারি না তা*াকের ভয়ে ৷
২০১৬ এর মার্চ মাস থেকে খাবার চিবানোর সময়ে আমি শুনতে পেতাম যে
তা*াক তা*াক শোনা যাচ্ছে ৷ খুব দুর্বিসহ জীবন পার করেছি তখন ৷ জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়ার মুফতি তৌহিদুল ইসলাম সাহেবকে আমার মানসিক সমস্যাসহ ফোনে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন যে ওভাবে তা*াক হয়নি ৷ এর পর অবশ্য খাবার সময়ের সমস্যাটা দূর হয়ে যায় ৷ এখন মাঝে মধ্যে তখনকার  বিষয়টা মনে হলে সেটা ভুলে থাকার জন্য মনের সাথে লড়াই করে থাকি ৷

২০১৬ এর এপ্রিলে একজন  মনোরোগ ও যৌনরোগবিশেষজ্ঞ ডাক্তার জনাব শামসুল আহসান মাকসুদকে  দেখাই ৷ তবে তাকে তা*াকের বিষয়টি ভয়ে বলিনি উপরে বর্ণিত কারণে ৷ আমার অন্যান্য সমস্যা শুনে তিনি প্রেসক্রিপশনে OCD লিখেন ৷ OCD বা Obcessive Compulsive Disorder সম্পর্কে এ লিংকে কিছু তথ্য আছে ৷ https://www.webmd.com/mental-health/obsessive-compulsive-disorder . এটা একটা মানসিক অসুস্হতা ৷ আমাকে Stress এবং Anxiety প্রতিরোধী কিছু ওষুধ দেয়া হয় ৷ কিন্তু আমার বাবা এগুলো খাওয়া পছন্দ করতেন না, বলতেন যে এগুলো খেয়ে সমস্যা ঠিক হয় না ৷ আর ওষুধগুলোর মধ্যে জেলাটিন শেল ক্যাপসুল ছিল ৷ যেহেতু পৃথিবীর অধিকাংশ জেলাটিন শুকরের দেহ থেকে আসে এ কারণে আমিও নাপাকীর কথা চিন্তা করে ওষুধ আর খাইনি ৷

আমি যেহেতু জেনারেল লাইনের একজন শিক্ষক ৷ ক্লাসে বিভিন্ন মাছ নিয়ে আলোচনা করতে হয় ৷ তো বাইম মাছকে তো আমাদের সমাজে বা*ন মাছও বলা হয় ৷ তখন খুবই মানসিক যন্ত্রণায় পড়ে গিয়েছিলাম ৷ কারণ, বাইম বলেছি না কী বা*ন বলেছি বুঝতে পারছিলাম না ৷ আমার ভয় হচ্ছিল যে বাইন শব্দটি বায়েন
তা*াকের বায়ে* এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ৷ তখন জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়ার মুফতি তৌহিদুল ইসলাম সাহেবকে আবারো ফোন করলে তিনি বলেন যে,  কোন সমস্যা নেই, তা*াক হবে না ৷ তিনি আরও বলেছিলেন যে, আমি তা*াক উচ্চারণ করলেও ( অথবা বলেছিলেন আমি তা*াক বলে ফেললেও) তা*াক হবে না ৷ তখন আমি আশ্বস্ত হই ৷ এর আগে আয়াতুল কুরসিতে আর সুরাহ বাকারার ২৮৫ নম্বর আয়াতে 'বাইনা' শব্দটি থাকার কারণে দীর্ঘদিন এ আয়াতসমূহ পাঠ করা থেকে বিরত ছিলাম (আল্লাহ মাফ করুন আমাকে) ৷

আরো ওয়াসওয়াসা আছে আমার ৷ আমি  'যাও', ছাড় (মানে disciunt), 'শেষ', 'খোলা' (যেমন খোলা জানালা বলার সময়ে), 'খালি' (যেমন খালি পেট বলার সময়ে), 'প্রাক্তন',  নাই, পরিস্কার, স্বাধীন,  মুক্ত (যেমন- মুক্তবাতাস, মুক্তিযুদ্ধ, উন্মুক্ত), বিভাগ ( কোন বিভাগের নাম বলার সময়ে), ছিন্ন, বিচ্ছিন্ন, বিরহ, free, freedom, independendent, ترجعون  সহ আরো অনেক শব্দকে কেনায়া শব্দ ভেবে বলতে পারি না, বলতে  বা লিখতে গেলেই স্ত্রীকে তা*াকের কথা মনের মধ্যে চলে আসে আর আমি মনের চিন্তার সাথে লড়াই করি ৷ যেই উদ্দেশ্যেই বা প্রেক্ষাপটেই শব্দগুলো আলোচনা হোক না কেন আমার ঐ শব্দ বা শব্দাংশগুলো বলার সময়ে আমার স্ত্রীর কথা বা চেহারা মনে ভেসে উঠে ৷ এই যে, এখন এ শব্দগুলো লিখলাম, এখনো মনের চিন্তাকে দমন করে/ অন্য দিকে নিয়ে লিখেছি, অনেকবার ভেবেছি যে আমি নিয়ত করি নি, আমি নিয়ত করিনি  ৷ এভাবে অনেক কষ্ট হয় আমার ৷ সুরাহ ইয়াসিনের ৮৩ নম্বর আয়াত পড়ার সময়ও মনকে ঠিক করতে হয় কারণ ঐ আয়াতে ترجعون শব্দটি আছে ৷
আর উপরে যেগুলো কথা বললাম সেগুলো আমার স্ত্রী আমার সামনে বা দৃষ্টিসীমা যতদূর পৌঁছায় তার মধ্যে থাকলে বেশি ঘটে, দৃষ্টিসীমার বাইরে বা অন্য মহল্লায় থাকলে কখনো কম-বেশি ওয়াসওয়াসা হয় ৷ আর তা*াকের নিয়ত কীভাবে করে আর ওয়াসওয়াসাটাই নিয়ত কী না বা আমার জন্য এটাই নিয়ত হিসেবে ধর্তব্য কী না তা আমি জানি না ৷
আরেকটা বিষয়, বিপদগ্রস্হ কাউকে দেখে পড়ার একটি দোয়াতে ".....মিম্মাবতালা কা বিহী ....." অংশটি আছে ৷  আমি বুঝতে পারছি যে এই দোয়াতে কোন তা*াকের কথাই বলা হয়নি,  তবুও আমি আমার স্ত্রীর সামনে ফিসফিস করেও এ দোয়া পড়ার সাহস পাই না তা*াক আপতিত হবার ভয়ে ৷

আমি দুআ কুনুত পড়ার সময়েও ২০১৮ সাল থেকে একটা ওয়াসওয়াসায় ভুগছি ৷ আমরা যে কুনুত পাঠ করি সেখানে "...ওয়া নাখলা'উ ওয়া ......ইয়াফজুরুকা ... " এ অংশটি আছে ৷ এখানে তো পাপাচার করে যারা তাদের সাথে সম্পর্ক না রাখার কথা বলা আছে ৷ আমার স্ত্রী খাস পর্দা করে না (তবে চেষ্টা করে),  আবার সালাতেও বেশ অনিয়মিত ৷ তাকে আমি ফরজ পালনে উৎসাহ দিই, সেও সায় দেয় কিন্তু খাসভাবে পালন করে না ৷  সেও তো তাহলে পাপাচারী  ৷ এখন কেনায়া অর্থে তা*াক হবার কথা নয় কী? দুআ কুনুত পড়ার সময়ে আমার তা*াকের কথা মনে পড়ে যায় উপরের কারণে ৷ মনেও যেমন হঠাৎ ওয়াসওয়াসা  চলে আসে, তেমনি তা*াকের ওয়াসওয়াসা আমার মধ্যে এমন পর্যায়ে রয়েছে যে ঐ অংশটুকু পড়ার সময় আমিই ভাবতে শুরু করি যে আমার তো এখন এরকম এরকম চিন্তা মনের মধ্যে আসবে ৷ এমন অবস্হা দাঁড়িয়েছে যে, যেটা ভাবা উচিৎ নয়, সেটাই মনে পড়ছে আগে ৷ অভ্যাসটাও এমন হয়ে গেছে যে কোন্ অবস্হায় কোন্ ওয়াসওয়াসা আসবে তার চিন্তাই আমি করতে শুরু করে দিই ৷ তা*াক হবার ভয়ে আমি তো এ পর্যন্ত "আল্লাহুম্মাহদ্বিনী ফি মান হাদাইত্ ....." দ্বারা কুনুত পড়ছি ৷

আর সালাত আদায় করার সময়ে তিলাওয়াত, মাখরাজ ইত্যাদি ঠিক হচ্ছে না মনে হলে কোন কোন আয়াত বা দুআ-র অংশ দুই তিনবার করে পড়াটা আমার অনেকদিনের অভ্যাস ৷

কুফরি আর শিরকের ওয়াসওয়াসা:

এ ওয়াসওয়াসায় আমি ১৯৯৯ সাল থেকেই আক্রান্ত - বালেগ হবার পর থেকেই ৷
আমি সালাতের সিজদাতে গেলে মনে হয় যে সামনের ব্যক্তিকে/ সুতরাহকে সিজদা দিচ্ছি ( নাউজুবিল্লাহ) ৷ সিজদাহর স্হানের সামনে কোন পিঁপড়া বা পোকামাকড় চলে এলেও একই অবস্হা ৷
আমি যদি মনে মনে এ বাক্যটি ভাবতে চাই যে, "আল্লাহ ব্যতীত কোন হক্ব ইলাহ নেই " তবে  'নেই' এর জায়গায় 'আছে' শব্দটি স্বাভাবিকভাবেই মনে চলে আসে ৷ যেটা সম্পূর্ণ একটা শিরকী বাক্য হয়ে যায় ৷ এরকম করে মনে মনে যদি কাউকে দুআ করে বলতে চাই যে,  "তার উপর আল্লাহর রহমত নাজিল হোক ৷" তবে 'রহমত' এর জায়গায় 'লানত' বা অন্য কোন বাজে শব্দ চলে আসে মনে, একেবারেই স্বাভাবিকভাবে মনে আসে ৷ মনে হয় যেন আমি তাই-ই ভাবতে চাইছি ৷ এভাবে মনের মধ্যে অশান্তি চলতেই থাকে প্রতিদিনই, প্রতি বেলায়, এমন কী সামান্য সময়ের ব্যবধানেও  এরকম ঘটে  ৷ 
এগুলোকে পাত্তা না দিতে চাইলে মনে হয় যে, মনে আসা কথাগুলোকে আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি, তখন নিজেকে কাফির বা মুশরিক মনে হয় (নাউজুবিল্লাহ) ৷ আর প্রতিহত করতে চাইলে সেই ওয়াসওয়াসার পেছনেই লেগে থাকতে হয় ৷ কী করব তাহলে আমি?
আরো এক রকম  উদ্ভট ওয়াসওয়াসা আমার মধ্যে প্রকট ৷ সেটা হল কোন দুআ-কালাম পড়ার সময়ে কোন জুতা, কুকুর,  ডাস্টবিন কিংবা ঝাঁটা ইত্যাদির দিকে চোখ পড়লে মনে যে অনুভূতি/ কথাটা আসে সেটা হল আমি ঐ জুতা বা ঝাঁটা দিয়ে দুআকে মারছি অথবা ডাস্টবিনের ময়লায়, কুকুরের গায়ে দুআ, আয়াত এগুলো লাগিয়ে দিচ্ছি ৷ (নাউজুবিল্লাহ) ৷  আমি জুতা স্যান্ডেলের দোকানে ঢুকে কোন দুআ দুরুদ পড়তে পারি না, দুরুদ পড়লে তখন গোস্তাখে রসুল -এ পরিণত হবার ভয় জাগে, মনে হয়  জুতা দ্বারা দুরুদকে অবমাননা করা হচ্ছে (নাউজুবিল্লাহ)   ৷ এরকম কথা মনের মধ্যে যেন না আসে এজন্য মনের উপরে অনেক চাপ প্রয়োগ করে চিন্তাটা পরিবর্তন করার চেষ্টা করি ৷ এসময় আমার স্ত্রী আমাকে কখনো দেখে ফেললে বলে যে পাগলের মত চোখ মুখ কর কেন মাঝে মাঝে? আবার কখনো কখনো চিন্তা পরিবর্তনের জন্য নিজের গায়ে জোরে চিমটি দিই যেন ব্যথার কারণে চিন্তাটা সরে যায় ৷ এরকম সমস্যা চলছে, কখনো বেশি হয়, কখনো একটু কম ৷ এভাবে আজও চলছে ৷ এরকম আরো চিন্তা আছে ...সেগুলো বলে আর দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছে নেই ৷ 

(খ) পারিবারিক সমস্যা:

বিয়ের রাতের পর থেকেই যৌন দুর্বলতায় ভুগছি ৷ যদিও এ কারণে কখনেই আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে দিতে চায়নি ৷ সে আমাকে সত্যিই অনেক ভালবাসে মাশা আল্লাহ ৷ আমরা ২০১৯ সালে একজন মনোরোগ ও যৌনরোগবিশেষজ্ঞ মুসলিম ডাক্তার (জনাব শামসুল আহসান মাকসুদ, প্রাগুক্ত)- কে  দেখাই যিনি কিছু টেস্টের রিপোর্ট  দেখে ও রোগের ইতিহাস শুনে প্রেসকিপশনে লিখেন যে এটা Psychological Erectyle Disfunction অর্থাৎ, শারীরিকভাবে অক্ষম না হলেও মানসিক কারণে যৌন দুর্বলতায় ভুগছি ৷ তিনি কিছু ওষুধ দিয়েছিলেন যেগুলোর মধ্যে একটি ওষুধ ভুলভাবে খেয়ে ফেলি এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ঐ চিকিৎসা আর চালিয়ে যাওয়া হয়নি ৷

আরো কিছু কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি ৷
বিয়ের পর থেকেই আমার স্ত্রীর সাথে আমার মা ও বোনের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে ৷ আমার শ্বশুর -শ্বাশুড়ীর সাথেও দুনিয়াবী বিভিন্ন কারণে তাদের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে ৷ একটা পর্যায়ে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকে অবস্হা এমন হয় যে আমার বোনের সাথে আমার স্ত্রীর তিক্ততা খুবই বেড়ে যায় ৷ আমার স্ত্রী যতই মানিয়ে চলার চেষ্টা করুক আর যতই তার উপকার করার চেষ্টা করুক না কেন কখনোই আমার মা - বোনের মন জয় করতে পারেনি সে ৷ বিশেষত আমার বোন তাকে কখনোই মন থেকে এক মূহুর্তের জন্যও আপন ভেবেছেন কী না তা আল্লাহই ভাল জানেন ৷ তার আগে ২০১৮ সালের মাঝের দিকে আমার বোন দুলাভাই আমাদের বাসায় এসেছিলেন ৷ দুই দিন-রাত থেকে  তারা চলে যাবার কয়েকদিন পরে আমি ও আমার স্ত্রী খেয়াল করি যে আমার একটা লুঙ্গিতে লাল সুতা দিয়ে সেলাই করা আর তার একটা জামাতে কালো সুতা দিয়ে সেলাই দেয়া - যেগুলো আগে থেকে ছিল না ৷ আমরা আরেকটা বিষয় খেয়াল করি যে আমাদের গ্যাসের চুলার ডান দিকের পেছনের কর্ণারের টাইলসের উপরে ক্রস / কাটা চিহ্ন দেয়া - এটাও না কী আমাদের ঐ বাসায় ওঠার শুরু থেকে ছিল না  ৷ তবে বোন দুলাভাই বাসায় আসার আগে থেকেই না কি দাগটা আমার স্ত্রীর চোখে পড়েছিল ৷ এরপরে যেটা হল,  আমার স্ত্রী আমার বোনের ক্রমাগত খারাপ আচরণ, আমার অসুস্হতা আর লুঙ্গিতে সেলাই - সব ঘটনা থেকে এ সিদ্ধান্তে চলে এল যে আমার বোন যাদুটোনা করে আমাকে অসুস্হ করে ফেলেছে ৷
যদিও নিশ্চিতভাবে কে জাদু করেছে তা না জানতে পারার কারণে আমি আমি আমার মা - বোনকে দায়ী করতে পারি না ৷

আমার স্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করেছে সংসারে ভাল অবদান রাখার, আমার সেবাযত্ন করার ৷ সেও ২০২০ সাল থেকে ক্রমাগত অসুস্হ হতে লাগল ৷ চুলার পাশে কাটা দাগ দেখতে পাবার পর থেকে  আমাদের সুখের সংসারে তীব্র ঝগড়া লাগতে শুরু করে ৷ প্রথমে মাসে দুই তিনবার, তারপরে সপ্তাহে দুই তিনবার, তারপরে বলতে গেলে  প্রায় প্রতিদিনই তীব্র মাত্রার ঝগড়া হতে শুরু করল ৷ এরমধ্যে IOM এর রুকইয়াহ শারীআহ কোর্স করার পরে একদিন যাদু নষ্ট করার নিয়তে পানি প্রস্তুত করি ৷ এটি সম্ভবত ২০২১ এর ঘটনা মাঝের দিকের ঘটনা ৷  উদ্দেশ্য ছিল চুলার পাশের কাটা দাগে রুকইয়াহর পানি ঢেলে সংশ্লিষ্ট জাদু নষ্ট করে দেয়া ৷ পানি রেডি করার সাথে সাথেই রান্নাঘরে রাখা দুটি কাঁচের প্লেট উপর থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙে যায় ৷ আমার স্ত্রী রান্নাঘরেই ছিল আর আমি রান্নাঘরের দরজার পাশেই দুআ পড়ছিলাম  ৷ আমি বললাম যে তুমি প্লেটগুলো ফেলে দিয়েছ না কী? সে বলল যে -  না, সে ফেলে নি ৷ প্লেটগুলো ভালভাবেই রাখা ছিল, তবু অদ্ভুতভাবে পড়ে গেছে ৷
এরপরে কাটা দাগে পানি ঢেলে দিই ৷
তারপর ঐ রাতেই স্বপ্নে আমাকে ২-৩ বার খাওয়ানো হয় (স্বপ্নের মধ্যেই আমি খাওয়া দাওয়া করেছি) ৷ IOM এর রুকইয়াহ বিষয়ক ক্লাস চলার সময়ে উস্তাদ আব্দুল্লাহ আলমাহমুদ এরকম কিছু বলেছিলেন যে, স্বপ্নে খাওয়ানোর মাধ্যমে যাদুকররা যাদু নবায়ন করতে পারে ৷ যাই হোক,
এরপর থেকে ঝগড়ার  সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে আসে ৷ কিন্ত, ২০২১ সালের আনুমানিক শেষের দিক থেকে আবারো আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সামান্য বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি, হাতাহাতির উপক্রম, অল্পতেই পারস্পরিক চরম বিদ্বেষ, হঠাৎ করেই স্ত্রীর উপরে মেজাজ খারাপ হয়ে তা*াক দেয়ার চিন্তা মাথায় চলে আসা (ওয়াসওয়াসা তো আগে থেকে আছেই), আত্মীয়দের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, বোনের সাথে সম্পর্কের আরো অবনতি - এগুলো ঘটতেই থাকে ৷
আর ২০২২ এর আগস্ট মাসে রান্নাঘরের অনেক উপরের শেল্ফ থেকে একজোড়া আধা পোড়া স্যান্ডেল অনেকগুলো ছাইসহ মোড়ানো অবস্হায় পাওয়া যায় ৷ এগুলো আমার স্ত্রী আর বাসার বুয়া পেয়েছিল , আমাকে তখনই না জানিয়ে ফেলেও দিয়েছিল ৷ পরে আমি বাসায় এসে ঘটনাটি জেনেছিলাম ৷

এরপর থেকে আবারো প্রতি মাসে দুই  তিনটা  চরম বিদ্বেষপূর্ণ ঝগড় হত ৷

এই যে, ২০১৯  থেকে ২০২২ - এ সময়টার মধ্যে আমার স্ত্রী প্রায়ই ভয় পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠত, তারপর প্রায়ই দৌড় দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে চাইত ৷ মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠে ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে চেয়ে থাকত, মাঝে মধ্যে  জিজ্ঞাসাও করত "কে, কে তুমি?" প্রায় প্রতি সপ্তাহেই মাঝরাতে মাথা আর পায়ের ব্যথায় কাতরাতো ৷ বিছানা কাঁপার কথা বলত যদিও আমি তা টের পেতাম না ৷ আমি কখনো তাকে জাদু  করা হয়েছে কী না তা বুঝার নিয়তে রাতে রুকইয়াহ শুরু করলে সে ভয়াবহ ব্যথায় কাতরাতো ৷ ডাক্তারি টেস্টে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন সমস্যা ধরা পড়েনি ৷
আর আমার লিঙ্গ পূর্ণ উত্তেজিত থাকলেও আমি দিনের পর দিন জড়বস্তুর মত একই বিছানায় আমার স্ত্রীর পাশে থেকেছি ৷ তার প্রায় সব কথা আর কাজকেই বিরক্তিকর মনে হত মাঝে মাঝে  ৷ আমি যথাসম্ভব নজর হেফাজতের চেষ্টায় থাকি আর আমাদের বাসায় টেলিভিশন চলে না الحمد لله  .  তবুও নিজের স্ত্রীর প্রতি দৈহিক মিলনে চরম অনীহা কাজ করে ৷
একমাস আগে যৌনাঙ্গসহ আমার প্রায় পুরো শরীরের অনেকগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ৷ উল্লেখযোগ্য ধরনের তেমন কিছু ধরা পড়েনি ৷ ডাক্তার বলেছে  যে যেটুকু সমস্যা আছে তা চিকিৎসা করালেই ঠিক হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ ৷
এখন আমি সেই চিকিৎসার মধ্যে আছি ৷

 

(গ) যে প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা প্রয়োজন:

  আমাদের মধ্যে ঝগড়া অনেকগুলোই হয়েছে ৷ এর মধ্যে যেগুলোর কথা ও আমার মনের অবস্হা স্পষ্ট সেগুলোই নিচে লিখলাম ৷

১৷ ২০১৮ সালের দিকে একবার একটা ঝগড়া হয়েছিল আমাদের মাঝে ৷ আমার স্ত্রী এরকম বলেছিল  যে সে আমার সাথে কষ্টে আছে,  তার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে ৷ আমি রাগ করে বলেছিলাম, " আছো কেন? ভাল না লাগলে শরীয়তে তো বিধান আছেই ৷" এটা কী কেনায়া বাক্য?  আমি 'তা*াকের বিধান' কথাটি ইচ্ছে করেই উচ্চারণ করিনি তা*াক হবার ভয়ে ৷ 

২৷ ২০২১ সালের শেষের দিকে আমার কিডনি স্টোনের অপারেশন হয় ৷ ডাক্তার আমাকে প্রচুর পানি পান করতে বলেছিলেন ৷ পানি খুব বেশি খেলে বারবার প্রস্রাব করতে হয় আমাকে ৷ আর ওয়াশরুমে আমার সময় একটু বেশি লাগে ৷ আমাদের ওয়াশরুমে নোংরা পানি ছিটিয়ে গায়ে পড়ে ( এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সত্যিই ঘটে, মাঝে মাঝে ওয়াসওয়াসাও ঘটে ) ৷ শরীর ধুইতে সময় লাগত আমার ৷ আর আমার স্ত্রী রাগারাগি শুরু করত  ৷ সে বলত যে- "কীসের আশায় আমি এখানে আছি? কী পেলাম জীবনে? আমার আর এসব করতে ভাল লাগে না (মানে আমার সেবাযত্ন করতে ভাল লাগে না) ৷ শুধু শুধু সময় নষ্ট করতেছি সংসারে ৷" আমি এরকম কথা অনেক শুনেছি বছর দুয়েক ধরে ৷ ২০২১ থেকে ছোট বড় যে কোন ঝগড়াতে আমার মন মেজাজ খুব সহজেই চটে যেত আর মনে তার প্রতি খুবই বিদ্বেষভাব জাগত ৷ তো আমি রাগে ক্ষোভে বলে বসলাম, "দরকার নাই ৷ এখন থেকে আমার সেবা করবা না ৷"
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, দরকার নাই বলতে তোমাকে আর দরকার নাই মনে করিনি ৷ সেবা করার দরকার নাই বুঝাতে চেয়েছিলাম ৷ আর এটুকু জানা ছিল যে, ভবিষ্যৎবাচক কথায় তা*াক পড়ে না ৷ ঐ রাগের মাথাতেও আমি সেটা মাথায় রেখে বলেছি যে এখন থেকে আমার সেবা করবা না ৷ 'করবা না' নিয়ে আমার চিন্তা নাই, কিন্তু, বাক্যটিতে 'এখন থেকে' অংশটার জন্য আমি চিন্তিত ৷ আমার তো ঝগড়া না লাগলেও তা*াকের কথা মাথায় আসে ৷ সেখানে তো রাগের মাথায় আরো বেশি আসা স্বাভাবিক ৷  আমার এমন কথা দ্বারা কী তা*াক পতিত হয়েছে?

৩৷ এর পরে কোন একটা ঝগড়ায় অনেকটা এরকম বলেছিলাম যে, এত ঝামেলা আর দোষারোপ আর ভাল লাগে না ৷ তুমি আমার সাথে থাকতে চাও কী না বল? সে বলেছিল যে, "আমি থাকতে চাই না ৷" তারপরে আর এ বিষয়ে আর কোন কথা হয় নি ঐ দিন ৷ এরকম জিজ্ঞাসা করার দ্বারা কী তা*াক হয়েছে? অথবা তাকে ঐ মজলিসে তা*াকের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে? আমার স্ত্রী কী ঐ কথা দ্বারা নিজের উপর তা*াক আপতিত করতে পেরেছে? উল্লেখ্য, বিয়ের কাবিন নামায় স্ত্রীকে তা*াক প্রদানের ক্ষমতা দেয়া ছিল ৷ যদিও তাতে মন থেকে আমার সায় ছিল না ৷ এখন ঐ ক্ষমতা রহিত করার কী কোন উপায় আছে?

৪৷ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহে ঝগড়া খুব তিক্ততার পর্যায়ে পৌঁছায় ৷ কারণ, তার কয়েকদিন আগে থেকেই আমার স্ত্রী আমাকে মূর্খ, কাঙাল এগুলো বলেছে ৷ আমার মা বোন অকৃতজ্ঞ - এগুলোও বলেছে ৷ আমার ফ্যামিলি নিকৃষ্ট - এটাও বলেছে ৷ আমি মনে মনে খুবই বিরক্ত ও বিক্ষুব্ধ ছিলাম ৷ অতীতে আমার মা বোনের আচরণ আর বর্তমানে আমার ডাক্তারের কথা ঠিকমত না শোনা, আমার পুনরায় অসুস্হ হবার আশংকা - এগুলো বিভিন্ন কারণে দোষারোপের মাধ্যমে আমার স্ত্রী ঝগড়া শুরু করে ৷ আর বলতে থাকে যে, আমি চলে যাব বাবার বাসায় ইত্যাদি কথাবার্তা ৷ আমি আর ওসব কথাবার্তা সহ্য করতে পারছিলাম না ৷ এক পর্যায়ে আমি বলেছি, "আমি আর কিছুই বলব না ৷ তোমার যা ইচ্ছা তাই কর ৷ "   আমি তখন জানতাম না যে নিয়ত ছাড়াই "তোমার যা ইচ্ছা তাই কর" একটা কেনায়া বাক্য ৷ 
এখন এরকম কথার দ্বারা কী তা*াক হয়েছে?
যদিও এর আগে অনেকবার সে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলেও মনে রাগ দুঃখ থাকা সত্ত্বেও  তাকে আটকিয়েছি ৷ বাসা থেকে বের হতে দেইনি ৷ বরং, একদিন আমিই বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম ৷ বলেছিলাম যে, "আমি চলে যাচ্ছি ৷ তুমি ভাল থাকো ৷" এটাও কী কেনায়া বাক্য হয়েছে? 

৫৷ এই ঝগড়াটা ২০২২ এর ডিসেম্বরের ৩য় সপ্তাহে ঘটেছে ৷ এ ঝগড়ার কযেকদিন আগে আমার স্ত্রী বলে যে, "আমাদের স্বভাব কুকুরের মত ৷" এখানে কুকুর বলতে সে মূলত আমার বোন আর আমাকে ইঙ্গিত করেছে ৷ আমার মনটা তখন খুব খারাপ হয়, আমি রাগতে থাকি আর মনে মনে ভাবি যে সে যদি আর কখনো চলে যেতে চায় তবে তাকে আর আটকাবো না ৷ অনেক বেআদবী করছে ৷ এই ঝগড়ার প্রেক্ষাপট ও সূচনা প্রায় পুরোটাই ৩ নং এ বর্ণিত ঝগড়ার অনুরূপ ৷ তবে এই ঝগড়ার যে দিকটি নিয়ে চিন্তায় আছি তা হল- এ ঝগড়ার সময়ও আমি বলেছি যে - "আমি আর কিছুই বলব না ৷ তোমার যা ইচ্ছা তাই কর ৷ "   আমি তখনও জানতাম না যে নিয়ত ছাড়াই "তোমার যা ইচ্ছা তাই কর" একটা কেনায়া বাক্য ৷ যাই হোক, এটা বলার সময়ে আমি মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম এই ভেবে যে এ কথা দ্বারা সে হয়ত তা*াকের ক্ষমতা পেয়ে যেতে পারে ৷ আমার স্ত্রী আমাকে একেবারে অবাক করে দিয়ে বলে বসল যে, "আমি তোমার সাথে থাকতে চাই না (অথবা বলেছিল যে আমি তোমার সাথে আর থাকতে চাই না)৷ আমি বাবার বাসায়  চলে যাচ্ছি ৷ "  আমার এরকম বলার দ্বারা কী তা*াক হয়েছে? অথবা তাকে ঐ মজলিসে তা*াকের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে? আমার স্ত্রী কী ঐ কথা দ্বারা নিজের উপর তা*াক আপতিত করতে পেরেছে?
এই ঝগড়াটা চলার সময়ে সে আরো দুই বার বাসা থেকে চলে যেতে চেয়েছে, আমার সাথে থাকতে চায় না বলেছে আর প্রতিবারেই আমি কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বলেছি "আমি আর কিছুই বলব না ৷ তোমার যা ইচ্ছা তাই কর ৷ " ওভাবে বলার সময়ে হুবহু ঠিক কী ভেবে বলেছি তা বলতে পারছি না ৷ আপনাদেরকে সাথে সাথে জানাতে পারলে হয়ত আরো ভালোভাবে লিখতে পারতাম ৷ ঐ সময়ে মনের অবস্হা খুবই তিক্ত ছিল আর অনেকটা এরকম ভাবছিলাম যে, ঝামেলা আর ভাল লাগে না ৷ চলে গেলে চলে যাক ৷ আবার এটাও ভেবেছিলাম যে, যদি সত্যিই বাসা থেকে চলে যায় আর তা*াকের প্রসঙ্গ তার বাবার বাসায় গিয়ে তুলে তবে আমারও অনেক কিছু বলার আছে যেটা তখন বলা যাবে ৷
উল্লেখ্য, ঝগড়া আর কিছুক্ষণ চলার পরে তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসার বাইরে চলে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারি ৷
দুই একদিন পরে সে আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে - আমি যে ঝগড়ার সময়ে ঐ কথাগুলো বলি তখন আমার মনে তার প্রতি ভালবাসা থাকে কী না? আমি মিথ্যে করে হলেও বলেছিলাম যে, মনে তখন ভালবাসা থাকে ৷ (কারণ তাকে অসন্তুষ্ট করতে চাইনি) ৷ তখন আমি বলেছিলাম যে তোমার মনেও কী ভালবাসা থাকে ঝগড়ার সময়ে? সে বলেছিল যে - তার মনে ঝগড়ার সময়ও ভালবাসা থাকে ৷

৬৷ এর দিন দশেক পরেই আবার একটা ঝগড়া হয়েছে ৷ তার কথা মন মত না হলে সহ্যই করতে পারছি না, প্রচন্ড বিরক্তি আর অশান্তি জাগছে মনে ৷ এবার বিরক্তি আর কষ্টের চোটে বলে ফেলেছি,  " তোমার যেটা ইচ্ছে কর ৷" মানে যা খুশি বল, আমি বিরক্ত হয়ে গেছি - এটা বুঝাতে বলেছি ৷ তাকে চলে যেতে বলিনি ৷ আর একটা কথাও খেয়াল করলাম যে, "তোমার যা ইচ্ছে কর" বাক্যটা আমার যেন অভ্যাসগত হয়ে যাচ্ছে ৷ বিরক্ত হবার কারণে মুখ দিয়ে বের হয়েছে ৷ আর বিরক্ত হলেই এটা বলতে ইচ্ছা করছে ৷  আমাদের ঝগড়া যে কারণেই শুরু হোক না কেন - আমার স্ত্রীর মুখ দিয়ে ঐ একই কথা - আমি থাকব না, চলে যাব একেবারে ইত্যাদি কথাবার্তা ৷ ঘন্টাখানেক পরে অবশ্য স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল ৷

৭৷  ৬ নং ঝগড়ার দিন দুয়েক পরে আবারো ঝগড়া শুরু হয় ৷ আমি কেন তাড়াহুড়ো করে গপগপ করে খাই - এটা নিয়ে ৷ আমি বুঝি যে ওভাবে খেতে হয় না, তবুও অনেক সময়ে নিজেকে বিরত রাখতে পারি না ৷ এটা নিয়ে ঝগড়ার শুরু ৷ দুনিয়ার এত মানুষের কথা সহ্য করতে পারলেও আমার স্ত্রীর কথা (ঝগড়ার সময়েও, আবার কখনে কখনো  স্বাভাবিক সময়ও) সহ্য করতে পারি না ৷ তো সে বলল যে আমাকে এতদিন যে 'সার্ভিস' দিয়েছে তা আমি জীবনে কোথাও না কী পাই নি ৷ আমি বললাম, "তুমি তো তাহলে বিজনেস করছ আমার সাথে ৷ শুধুই বিজনেস ৷  ....... উপকার করে খোটা দিচ্ছ .... ইত্যাদি ৷"  আমার এরকম কথা কী কেনায়া বাক্যের মধ্য পড়েছে?

আমার মানসিক অসহিষ্ণুতা আর বিরক্ত হবার বিষয়ে আরো একটা বিষয় উল্লেখ্য, (বিয়ের আগেও এরকম হত তবে কম হত) বিয়ের মাস কয়েক পর থেকে আমি অল্পতেই মূহুর্তের মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্হা থেকে খুবই বিদ্বেষপূর্ণ, রাগান্বিত, খুবই প্রতিশোধপরায়ণ অবস্হায় উপনিত হয়ে যেতাম মাঝে মাঝে ৷ যখন এমনটা হত তখন আমার অপছন্দনীয় কথা যে বলে তাকে যেন ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে ৷ এটা যখন ঘটে তখন মুখের কথা দিয়ে রাগারাগি, চেঁচামেচি , সামনের মানুষটাকে(স্ত্রীকে) কথা দিয়ে আঘাত করে শোধ না ওঠানো পর্যন্ত মন বিক্ষুব্ধই থাকে ৷  অবশ্য এ বিষয়টি নিয়ে কোন ডাক্তারকে বিস্তারিত বলা হয় নি ৷ আমার স্ত্রী আমার সাথেই ডাক্তারের কাছে উপস্হিত থাকে ৷ আপনাদের যেভাবে বিস্তারিতভাবে বলেছি  তার উপস্হিতির কারণে ওভাবে ডাক্তারের সামনে বলতে পারি না ৷ আমি চাই না যে আমার মন মানসিকতার এ নোংরা অবস্হার কথা সে জানতে পারুক ৷ ডাক্তারকে বিস্তারিত বললে হয়ত তারা আরো বিস্তারিতভাবে কোন রোগের নাম বলতে পারতেন ৷
যাই হোক, আমার মানসিক অবস্হার বিষয়ে  একজন ডাক্তারের মতামত তো উপরেই লিখেছি ৷

আরেকটা বিষয় দ্বারা উপরের প্যারার কথাটা পরিষ্কার করি ৷ মনে করুন,  একটা রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়ে হোঁচট খেলাম ৷ হতেই তো পারে ৷ কিন্তু, মূহুর্তের মধ্যে এর জন্য যত বিরক্তি আর ক্ষোভ তৈরি হয় আল্লাহর উপর (নাউজুবিল্লাহ) ৷ হঠাৎ মনের মধ্যে আসা বাজে কথার জন্য তওবাহ করি ৷ আর যদি চোখের সামনে আমার স্ত্রী থাকে তো কিছুক্ষণ তার সাথে খারাপ ব্যবহার করার পরে ঠিক হয়ে যাই ৷ পৃথিবীর আর অন্যসব মানুষের কাছে আমার আচরণ অনেক ভাল ৷ শুধু আমার স্ত্রীর কাছে ভাল হতে পারলাম না ৷

মুহতারাম,

(১)  আমি বুঝতে পারছি না কী করব? আমি কী শরীআতের দৃষ্টিতে ওয়াসওয়াসার রোগী হিসেবে বিবেচিত হব?

(২)   গ - অংশের কোন ঘটনার কারণে কী কেনায়া বাক্য দ্বারা তা*াক সংঘটিত হয়েছে?

(৩)আমার ক্ষেত্রে ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার উপায় কী?

(৪) এটা আজ (২৬/০১/২০২৩) বিকালের ঘটনা ৷ আমাকে আকুপাংচারের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে হয় ৷ আজকেই শেষ সেশন ৷ এটা করতে বিভিন্ন কারণে আমার বিরক্ত লাগে ৷ আজকে আমার ক্লান্তিভাব দেখে আমার স্ত্রী বলল যে, "আজকে থাক, বিশ্রাম নাও "৷ আমি বললাম, " যাই, ঝামেলাটা শেষ করে আসি ৷" এখন, " যাই, ঝামেলাটা শেষ করে আসি ৷" বাক্যটা বলার আগে আমার মনে এসেছে যে,  "চিকিৎসা করা তো সুন্নাহ ৷ চিকিৎসা করাকে ঝামেলা বলো না ৷ " কিন্তু, আমি যদি আজকে না যাই তবে ঝগড়া লাগার আবারো সম্ভাবনা আছে ৷ এ কারণে আমি বললাম যে, " যাই, ঝামেলাটা শেষ করে আসি ৷"
এখন ভয় হচ্ছে যে, আমি কী কাফির হয়ে গেলাম? আমাকে কী ঈমান নবায়ন করতে হবে? আবারো বিয়ে করতে হবে?

উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম ৷





 

1 Answer

0 votes
by (589,140 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
চার মাযহাব সম্ভলিত সর্ববৃহৎ ফেকহি গ্রন্থ "আল-মাওসুআতুল ফেকহিয়্যা"গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে,
نَقَل ابْنُ عَابِدِينَ عَنِ اللَّيْثِ: فِي مَسْأَلَةِ طَلاَقِ الْمُوَسْوَسِ  أَنَّهُ لاَ يَجُوزُ طَلاَقُ  الْمُوَسْوَسِ  ، قَال: يَعْنِي الْمَغْلُوبَ فِي عَقْلِهِ
وَنَقَل ابْنُ الْقَيِّمِ: إِنَّ الْمُطْلِّقَ إِنْ كَانَ زَائِل الْعَقْل بِجُنُونٍ أَوْ إِغْمَاءٍ أَوْ وَسْوَسَةٍ لاَ يَقَعُ طَلاَقُهُ،  قَال: وَهَذَا الْمَخْلَصُ مُجْمَعٌ عَلَيْهِ بَيْنَ عُلَمَ ـ اءِ الأُْمَّةِ
- رِدَّةُ الْمُوَسْوَسِ:  
٢١ - إِنْ تَكَلَّمَ الْمُوَسْوَسُ  بِكَلاَمٍ يَقْتَضِي الرِّدَّةَ لَمْ يَكُنْ فِي حَقِّهِ رِدَّةٌ. صَرَّحَ بِذَلِكَ الْحَنَفِيَّةُ، يَعْنُونَ الْمَغْلُوبَ فِي عَقْلِهِ
ইবনে আবেদিন শামী রাহ বর্ণনা করেন,ওয়াসওয়াসা গ্রস্থ ব্যক্তি -যার বিবেকবুদ্ধি লোপ পেতে বসেছে-তার তালাক গ্রহণযোগ্য নয়।
ইবনুল কাইয়িম রাহ বলেন, যদি তালাক প্রদানকারী ব্যক্তির ওয়াসওয়াসা,বেহুশি বা পাগলামির দরুণ বিবেকবুদ্ধি লোপ পেতে থাকে, তাহলে তার তালাকও গ্রহণযোগ্য হবে না। এর উপর সমস্ত উলামাদের ঐক্যমত রয়েছে। বিবেক বুদ্ধি লোপ পেতে বসা ওয়াসওয়াসা রোগীর এমন কোনো কথা বার্তা যা মুরতাদ হওয়াকে লাযিম করে দেয়, সেই কথাবার্তার দরুণ উক্ত ওয়াসওয়াসার রোগী মুরতাদ হবে না।(আল-মাওসু'আতুল ফেকহিয়্যাতুল কোয়েতিয়্যাহ-৪৩/১৫৬) এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/835


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার ভুমিকার পর মূল প্রশ্ন হল ৪ টি।
(১)  জ্বী, আপনি শরীআতের দৃষ্টিতে ওয়াসওয়াসার রোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
(২)   গ - অংশের কোন ঘটনার কারণে কেনায়া বাক্য দ্বারা তালাক সংঘটিত হবে না।
(৩) ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে বলবো যে, আপনি তাবলীগে তিনটি চিল্লা লাগাবেন। অথবা নেককার কোনো আলেমের সাথে সর্বদা সুসম্পর্ক রাখবেন।

(৪) প্রশ্নের বিবরণমতে তালাক হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (589,140 points)
সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে।
by (6 points)
জাযাকাল্লাহু খইরান মুফতি সাহেব ৷ 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...