আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
187 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (41 points)
আসসালামু আলাইকুম , "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ " এর সঠিক অনুবাদ কোনটি "??
বিকল্প (১) আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই
বিকল্প (২) আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রকৃত ইলাহ নেই

যারা (১ম ) বিকল্পটির অনুবাদ সঠিক বলে তারা বলে, "যে প্রকৃত বা অপ্রকৃত / হক্ব বা বেহক্ব এর কিছু নেই , যারা প্রকৃত ইলাহ অনুবাদ করেন তাদের ইমানে সমস্যা হতে পারে ।কেননা মুশরিকরা যাদের ইলাহ বলে তারা তো আসলেই কোনো ইলাহই না , ঐগুলো শুধু মাটি ।আল্লাহই একমাত্র ইলাহ যিনি মূর্তিপূজার প্রচলনের আগেও ছিলেন , পরেও আছেন "
যারা ২য় বিকল্পটিকে সঠিক অনুবাদ মনে করেন তারা বলেন যে , "আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এটি ভুল অনুবাদ । কেননা এর অর্থ দাড়ায় যে সত্য মিথ্যা হক্ব বেহক্ব ইলাহ কেবল আল্লাহই "
বিষয়টি পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ , মূল ধারা ইমামদের ক্বওল জানালে ভালো হয় । জাযাকাল্লাহু খাইরন ।

1 Answer

0 votes
by (573,960 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ, আল্লাহ ব্যতীত কোনো বস্তু ও সত্তা ইলাহ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। 
আল্লাহই একমাত্র ইলাহ,তিনি ব্যাতিত অন্য কেহ মা'বুদ নেই।
তিনি ব্যতীত সকল বস্তুর উপাসনা পথভ্রষ্টতা, বড় যুলুম ও চূড়ান্ত পর্যায়ের গোমরাহী। 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّن يَدۡعُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَن لَّا يَسۡتَجِيبُ لَهُۥٓ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَهُمۡ عَن دُعَآئِهِمۡ غَٰفِلُونَ ٥ وَإِذَا حُشِرَ ٱلنَّاسُ كَانُواْ لَهُمۡ أَعۡدَآءٗ وَكَانُواْ بِعِبَادَتِهِمۡ كَٰفِرِينَ ٦﴾ [الاحقاف: ٥، ٦]
“তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না? আর তারা তাদের আহ্বান সম্পর্কে উদাসীন। আর যখন মানুষকে একত্র করা হবে, তখন এ উপাস্যগুলো তাদের শত্রু হবে এবং তারা তাদের ইবাদাত অস্বীকার করবে”। [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ৫-৬]

অপর আয়াতে তিনি বলেন,
﴿ ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ هُوَ ٱلۡبَٰطِلُ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡكَبِيرُ ٦٢ ﴾ [الحج : ٦٢]
“আর এটা এ জন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তার পরিবর্তে যাকে তারা ডাকে, অবশ্যই তা বাতিল। আর নিশ্চয় আল্লাহ তো সমুচ্চ, সুমহান”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৬২]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ، لَا يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا، إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি তার রাসূল। যে কোনো বান্দা এ দু’টি বিষয় সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করা ব্যতীত আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে সে জান্নাতে যাবে”।
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭

ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ জানা অবস্থায় মারা গেল সে জান্নাতে যাবে”
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইমাম মুসলিম আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هذا الْحَائِطِ يَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ، فَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ»
“এ দেয়ালের পশ্চাতে তুমি যাকে পাবে, সে যদি নিজের অন্তর থেকে দৃঢ় বিশ্বাসসহ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্য প্রদান করে, তাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান কর”।
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১

কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে,  
لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ " এর অর্থ হচ্ছে : সত্য এবং হক মাবুদ বলতে যে ইলাহকে বুঝায় তিনি হলেন একমাত্র আল্লাহ যার কোন শরীক নেই এবং তিনিই ইবাদতের অধিকারী। তিনি ব্যতীত যত মাবুদ আছে সব মিথ্যা ও বাতিল। তাই তারা কোন ধরনের ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয়। এজন্য অধিকাংশ সময় আল্লাহ তাআলার ইবাদতের আদেশের সাথে সাথে তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা আল্লাহর ইবাদতের সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করা হলে ঐ ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, 
{وَاعْبُدُواْ اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا} অর্থাৎ, ‘‘এবং তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর আর তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করো না’’। (আন নিসা-৩৬) আল্লাহ আরো বলেন, 
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىَ لاَ انفِصَامَ لَهَا وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ 
‘‘অতঃপর যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনবে সে ব্যক্তি সুদৃঢ় হাতল ধারণ করল যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।’’(সূরা আল বাকারাহ-২৫৬) 

তিনি আরো বলেন, 
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ 
‘‘আর নিশ্চয়ই আমরা প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি এজন্য যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর।’’ (আন্ নাহাল-৩৬) 

কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেন যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ: এক ইলাহ ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা‘বুদ নেই, তিনি এক তার কোনো শরীক নেই। অভিধানগত ইলাহ অর্থ: মা‘বুদ। আর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থ আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো মা‘বুদ নেই।
,
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই!
প্রশ্নে উল্লেখিত উভয় অর্থই ছহীহ আছে।
যারা বলেছেন যে "আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই"
এটা একদম স্পষ্ট অর্থ।
যারা বলেছেন যে "আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রকৃত ইলাহ নেই"
এটার দ্বারা মুশরিকদের ভ্রান্ত ধারণা তুলে দেওয়া হয়েছে।
আসলে এর অর্থ দাড়ায় যে তিনি ছাড়া প্রকৃত ইলাহ নেই,বাকি যারা আছে,যাদের মুশরিকরা উপাসনা করে,তারা সবই অপ্রকৃত,ভ্রান্ত,মিথ্যা।
,
এগুলো আসলে ইলাহ নয়।  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...