আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
638 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (765 points)
closed by
আসসালামু আলাইকুম। হযরত আমাদের অনলাইন মাদ্রাসায় যেসব ক্লাস পুরুষ শিক্ষকরা নিয়ে থাকেন। উস্তাদের সামনে ক্লাস নোট ওপেন থাকে আবার এক সাইডে ওস্তাদের ভিডিও দেখা যায়। একদিকে ছাত্রদের জন্য ওস্তাদের ভিডিও না দেখলে তারা ক্লাসে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারেন না। অন্যদিকে বোনেরা চাইলে ওস্তাদের শেয়ার করা শুধু নোট দেখতে পারেন অথবা চাইলে ওস্তাদের ভিডিও দেখতে পারেন। অন্যদিকে কোরআনের তাজবীদ ক্লাসে ওস্তাদের মুখ না দেখলে তো তাজবীদ বোঝাটা একটু কঠিন।

এরকম  ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে ওস্তাদের ভিডিও দেখা সম্পর্কে শরীয়তের মাসালা একটু বিস্তারিত জানতে চাই।

আরেকটা বিষয় অনেক সময় ওস্তাদরা বিভিন্ন ভাইয়ের পড়া সরাসরি ভয়েজ এর মাধ্যমে শুনেন । তখন ওই ভাইয়ের কন্ঠ সমস্ত বোনেরাও শুনতে পান।এই ভাইয়ের কন্ঠে বোনেরা শুনতে পেলে কি কোন সমস্যা হবে। যদিও বোনদের ভয়েস ক্লাসের সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
closed

1 Answer

+1 vote
by (707,840 points)
 
Best answer

বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ

সহসাই আমাদের সামনে একটি প্রশ্ন আসে যে,

পুরুষ কর্তৃক নন মাহরামকে দেখা এবং নারী কর্তৃক নন মাহরাম কে দেখা কি সমান?

উত্তরে বলা হবে, না,সমান নয়।বরং উভয়ের বিধি-বিধানের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।

পুরুষের জন্য নন মাহরাম মহিলার সবকিছুই পর্দার অন্তর্ভুক্ত।বিনা প্রয়োজনে কোনো পরুষ নন মাহরাম কোনো মহিলার চেহরার দিকে থাকাতে পারবে না। এমনকি নন মাহরাম কোনো মহিলার আওয়াজও শুনতে পারবে না।

কিন্তু ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে মহিলা জন্য নন মাহরাম পুরুষের নাভী থেকে নিয়ে হাটু পর্যন্ত ব্যতীত শরীরের অন্যান্য অংশ দেখার অনুমোদন রয়েছে।তবে ফিতনার আশঙ্কা থাকলে মহিলা তার চক্ষুকে অবশ্যই নিচু করে রাখবেন।

কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃ হযরত আয়েশা রাযি কে হাবলী গোলামদের খেলাধুলা দেখার সুযোগ দিয়েছিলেন।

যেমন বর্ণিত রয়েছে,

হযরত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত,

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ الحَبَشُ يَلْعَبُونَ بِحِرَابِهِمْ، فَسَتَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا أَنْظُرُ، فَمَا زِلْتُ أَنْظُرُ حَتَّى كُنْتُ أَنَا أَنْصَرِفُ»، فَاقْدُرُوا قَدْرَ الجَارِيَةِ الحَدِيثَةِ السِّنِّ، تَسْمَع ُاللَّهْوَ

একদিন হাবশীরা তাদের বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিয়ে পর্দা করে তার পেছনে দাঁড় করিয়ে ছিলেন এবং আমি সেই খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ আমার ভাল লাগছিল ততক্ষণ আমি দেখছিলাম। এরপর আমি স্বেচ্ছায় সে স্থান ত্যাগ করলাম। সুতরাং তোমরা অনুমান করতে পার কোন বয়সের মেয়েরা আমোদ-প্রমোদ পছন্দ করে।

সহীহ-বুখারী-

(শামেলা নুসখা-৫১৯০)

(আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮০৮,)

(ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১১)

এবং রাসূলুল্লাহ সাঃ ও খুলাফায়ে রাশিদিনদের যামানায় মহিলারা মসজিদে আসতেন,এবং নামাযে শরীক হতেন।যেমন বর্ণিত রয়েছে,

উম্মু সালামাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত।

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ قَامَ النِّسَاءُ حِينَ يَقْضِي تَسْلِيمَهُ، وَيَمْكُثُ هُوَ فِي مَقَامِهِ يَسِيرًا قَبْلَ أَنْ يَقُومَ»، قَالَ: نَرَى - وَاللَّهُ أَعْلَمُ - أَنَّ ذَلِكَ كَانَ لِكَيْ يَنْصَرِفَ النِّسَاءُ، قَبْلَ أَنْ يُدْرِكَهُنَّ أَحَدٌ مِنَ الرِّجَالِ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন, তখন মহিলারা তাঁর সালাম শেষ করার পর উঠে যেতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ানোর পূর্বে স্বীয় স্থানে কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন। রাবী যুহরী (রহ.) বলেন, আমাদের মনে হয়, তা এজন্য যে, অবশ্য আল্লাহ্ ভাল জানেন, যাতে পুরুষদের যাবার পূর্বেই নারীরা চলে যেতে পারে।

সহীহ বুখারী(শামেলা নুসখা-৮৭০)

(আধুনিক প্রকাশনীঃ৮২১)

(ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮২৮)

আনাস (ইবনু মালিক) (রাযি.) হতে বর্ণিত।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِ أُمِّ سُلَيْمٍ، فَقُمْتُ وَيَتِيمٌ خَلْفَهُ وَأُمّ سُلَيْمٍ خَلْفَنَا»

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সুলাইম (রাযি.)-এর ঘরে সালাত আদায় করেন। আমি এবং একটি ইয়াতীম তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম আর উম্মু সুলাইম (রাযি.) আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন।

সহীহ বুখারী(শামেলা নুসখা-৮৭১)

(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮২২)

(ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮২৯)

উক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে,যখন মহিলারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে এবং তৎপরবর্তী সময়ে মসজিদে উপস্থিত হতেন,তখন অবশ্যই মহিলাদের দৃষ্টি পুরুষদের উপর নিবিষ্ট হতো।কেননা চক্ষু খোলা রাখা ব্যতীত তো রাস্তায় চলাচল করা যাবে না।{কিতাবুল ফাতাওয়া-৬/১০১}

শিক্ষার স্বার্থে মহিলার জন্য পুরুষ শিক্ষককে দেখার অনুমোদন রয়েছে। তবে এটা জরুরত পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। {ফাতাওয়ায়ে উসমানি-১/১৬৯}

মহিলাদের জন্য দ্বীনী শিক্ষার ব্যবস্থা করা অতীব জরুরী বিষয়।যেমন রাসূলুল্লাহ সাঃ এর যামানায়ও মহিলাদের দ্বীনী শিক্ষার মজলিস হতো।

যেমন হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,

سُفْيَانُ بْنُ، عُيَيْنَةَ حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، قَالَ سَمِعْتُ عَطَاءً، قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ، يَقُولُ أَشْهَدُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَصَلَّى قَبْلَ الْخُطْبَةِ - قَالَ - ثُمَّ خَطَبَ فَرَأَى أَنَّهُ لَمْ يُسْمِعِ النِّسَاءَ فَأَتَاهُنَّ فَذَكَّرَهُنَّ وَوَعَظَهُنَّ وَأَمَرَهُنَّ بِالصَّدَقَةِ وَبِلاَلٌ قَائِلٌ بِثَوْبِهِ فَجَعَلَتِ الْمَرْأَةُ تُلْقِي الْخَاتَمَ وَالْخُرْصَ وَالشَّىْءَ

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবার পূর্বে সালাত আদায় করতেন। তারপর খুতবা দিতেন। একবার তার মনে হল যে, মহিলারা (খুতবা) শুনতে পায়নি। তাই তিনি তাদের নিকট গেলেন। অতঃপর তাদের উদ্দেশ্যে ওয়ায-নসীহত করলেন এবং সাদাকা করতে আদেশ দিলেন। আর বিলাল (রাঃ) তার কাপড় পেতে রাখলেন এবং মহিলাগণ আংটি, কানের দুল ইত্যাদি অলংকার ফেলতে লাগল।{সহীহ-মুসলিম-১৯১৮}

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

উপরোক্ত আলোচনা থেকে অনায়াসে এ কথা বুঝা যায় যে, দ্বীন শিক্ষার জন্য মহিলারা পুরুষদের আওয়াজ শুনতে পারবে এবং প্রয়োজনে দেখতেও পারবে,তবে শর্ত হল ফিতনার আশঙ্কা না থাকা চাই।বিশেষ করে এমন পরিস্থিতি তৈরী করে ক্লাস নেয়া নিরাপদ মনে হচ্ছে যে,যাতে কোনো কন্ট্রাক্ট নাম্বার বা যোগাযোগ মাধ্যম থাকবে না।

বিশেষকরে ভবিষ্যতে ফিৎনার উৎসকে মূলৎপাঠন পূর্বক ক্লাসের ব্যবসা নেয়াই কাম্য এবং উচিৎ।

উপস্থিত সময়ে দ্বীন শিক্ষার স্বার্থে নারীদের জন্য পুরুষকে দেখার যদিও অনুমোদন রয়েছে তথাপি ফিৎনার দিকটি বিবেচনায় রাখা অতীব জরুরী বিষয়।

আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

উত্তর লিখনে

মুফতী ইমদাদুল হক

ইফতা বিভাগ, IOM.

পরিচালক

ইসলামিক রিচার্স কাউন্সিল বাংলাদেশ


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...