আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
140 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু।

আমার বিয়ে হয় জয়েন্ট ফ্যামিলিতে।রান্না করার সময় নিকাব পরে কাজ করি। কিন্তু খাবার খেতে বসলে কেউ না কেউ দেখে ফেলে। বেপর্দা হয়ে যায়। সারাদিন পর্দা করা অবস্থায় জ্বলে পুড়ে রান্না করি। দিনশেষে যদি কেউ যদি দেখে ফেলে এতে সব কষ্ট বৃথা গেলো।  আর আমরা যে খাবারগুলো খায় তার একাংশ খাবার হারামের। আমার হাসবেন্ড এর ভয় আলাদা হলে উনার মায়ের মন ভেঙে যাবে। মা কষ্ট পাবে। কিন্তু এইদিকে তো আমি জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমার শশুর বাড়ির লোক কেউই গুনাহ চিনে না। হালাল হারামের পার্থক্য বুঝে না শুধু আমার হাসবেন্ড ছাড়া। তাদের সবাইকে বুঝাতে গেলে হিতে বিপরীত হবে। এখন আমি চাইতেছি আমার শাশুড়ী মাকে সহ নিয়ে আলাদা হয়ে যেতে। কিন্তু আমার শাশুড়ী মা আলাদা হবে না। উনি যেহেতু আমাদের সাথে থাকবেন না। এক্ষেত্রে কি উনাকে মাসে মাসে টাকা দিয়ে দিলে কি হবে?

উনি যদি এর জন্য কষ্ট পান। এতে কি আমাদের গুনাহ হবে?
বিঃদ্রঃ আমার খাবার আমি রুমে নিয়ে গিয়েও খেতে পারি না। অনেক কথা বেড়ে যায়। জাদের সাথে খেতে হবে। কয়েকবার খেয়েছিলাম এই সমান্য ব্যাপার নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছিলো।

1 Answer

0 votes
by (59,970 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/46394/ নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি যে,

স্ত্রীর ভরণ-পোষণ স্বামীর উপর সর্বাবস্থায় ফরযস্ত্রীর নিজের সম্পদ থাকুক বা না থাকুক।

 আল্লাহ তাআলা বলেন-

 

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ ۚ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ ۚ

পুরুষেরা নারীদের অভিভাবকঐ (বিশেষত্বের) কারণেযার দ্বারা আল্লাহ তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং ঐ সম্পদের কারণেযা তারা ব্যয় করেছে। সুতরাং সৎ নারীরা হল অনুগত, (স্বামীর) অবর্তমানে (নিজের সতিত্ব ও স্বামীর সম্পদ) রক্ষাকারীআল্লাহ রক্ষা করার কারণে ... -সূরা নিসা : ৩৪

 

এখানে  قَوَّامُونَ  -এর তরজমা করা হয়েছে ‘অভিভাবক’ মুফাসসিরীনের ব্যাখ্যামতে তা হচ্ছে,

 

শাসন ও ব্যবস্থায়ন এবং রক্ষা ও নিরাপত্তাবিধানের মাধ্যমে নারীর দেখভাল করা এবং আদেশ ও নিষেধের মাধ্যমে তার অবস্থার সংশোধন করাযেমন শাসকগণ প্রজাসাধারণের দেখভাল করে। তো পুরুষ হচ্ছে নারীর প্রধান ও উপরস্থ;নারীর শাসক ও সংশোধকযদি সে বেঁকে যায়।-আহকামুল কুরআনজাসসাস ২/১৮৮আহকামুল কুরআন ইবনুল আরাবী ২/৪১৬তাফসীরে কাশশাফ ১/৫০৫তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/৪৯১

 

এই আয়াতে স্ত্রীর উপর স্বামীর অভিভাবকত্বের দুটো কারণ বলা হয়েছে : প্রথমত দৈহিক শক্তি-সামর্থ্য ও বিচার-বিচক্ষণতার মতো গুণাবলিদ্বিতীয়ত মোহরানা ও ভরণ-পোষণের জন্য ব্যয়বহন।

 

এই আয়াতে ‘পুরুষের ব্যয়কৃত সম্পদ’ মানে স্ত্রীর মোহরানাখোরপোষ ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচকুরআন ও সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী যা বহন করা অবশ্যকর্তব্য। এ আয়াত প্রমাণ করেস্ত্রীর নাফাকা ও খোরপোষ স্বামীর উপর ফরয। -তাফসীর ইবনে কাছীর ১/৪৯২আহকামুল কুরআনজাসসাস ২/১৮৮

 

 হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .

 

সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ

বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেনতিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যেতোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)

 

ইসলামের দিক-নিদের্শনা হচ্ছে বিবাহের পরে স্বামীর প্রথম কতর্ব্য হলো স্ত্রীর জন্য এমন একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেখানে স্ত্রী মানুষের দৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকবে। কেননা পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। আর এই বিধান পালন করার জন্য স্বামীর কতর্ব্য স্ত্রীকে সাহায্য করা। সেই সাথে অন্যান্য সকল কষ্ট থেকে স্ত্রীর আরামের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে স্ত্রীকে শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথেই থাকতে হবে এমন বাধ্যও করা যাবে না। কেননা এমন কোন অধিকার স্বামীর নেই। তবে এই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কে সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করেও কিছু কাজ করতে হবে।

যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বামীর পরিবারের সাথে অথবা অন্য আত্মীয়ের সাথে থাকার কথা বলে কিন্তু স্ত্রী কারো সাথে থাকার কথা রাজি না হয় তাহলে স্ত্রীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা স্বামীর কতর্ব্য। কেননা স্ত্রীর সকল কিছু রক্ষা করা ও নিরাপদে বসবাস করার দায়িত্ব স্বামীর।

 

 ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে রয়েছে-

تجب السكني لها عليه في بيت خال

মর্থার্থ: স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াত১/৬০৪)

 আরো জানুন- https://ifatwa.info/10894/ 

 

 সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

 

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্বামীর সামর্থ্য থাকলে আপনার জন্য আলাদা বাসস্থান ব্যবস্থা করা আপনার স্বামীর উপর আবশ্যক এবং আলাদা বাসস্থানে থাকা আপনার জন্য জরুরী হয়ে পড়েছে। তাই আপনি ও আপনার স্বামী আলাদা বাসস্থানে থাকাতে আপনাদের কোনো গোনাহ হবে না। তবে তবুও তাদের সাথে একটু যোগাযোগ ও ভালো ব্যবহার করবেন এবং তাদের একটু খোজ খবর নিবেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...