জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১) কলেজ - ভার্সিটি (বিশেষভাবে মেডিকেল কলেজ) পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রজীবন গঠন, পড়ালেখার কলাকৌশল, ছাত্রজীবনে দ্বীন চর্চার - দ্বীনী মেহনতের রূপরেখা, সময়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে সবিস্তারে গঠনমূলক আলোচনা থাকবে,এমন কোনো বই সুবিন্যস্ত আকারে পাইনি।
তাই এ সংক্রান্ত কওমীর শিক্ষার্থীদের জন্য যেসব কিতাব লেখা হয়েছে,যেমন মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব হাফিজাহুল্লাহ এর 'তালিবানে ইলম : পথ ও পাথেয়'
মাওলানা ছফিউল্লাহ ফুয়াদ সাহেব দাঃবাঃ এর লেখা শিক্ষার্থীদের সফলতার রাজপথ সংগ্রহ করে রাখতে পারেন।
,
দ্বীনি বিষয় জানার জন্য মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন সাহেব দাঃবাঃ এর আহকামে জিন্দেগী পড়তে পারেন।
,
★ছাত্র জীবনে সফলতার জন্য নিচের বই গুলো থেকে সহায়তা নিতে পারেন।
আদর্শ ছাত্রের গুনাবলী নীতি ও নৈতিকতা।
(মুহাম্মদ আলি তালহা)
কেমন করে ভালো ছাত্র হওয়া যায়।
(প্রভেসর জাকিয়া শারমিন)
যদি সফলতা পেতে চাও
(মুহাম্মদ সুলাইমান সালমান মানছুর পুরী)
ছাত্র জীবন উন্নয়ন
(ঝংকার মাহবুব)
যেমন করে ভালো ছাত্র হওয়া যায়
(অধ্যাপক কফিল উদ্দিন)
লেখাপড়া শেখার সহজ কৌশল
(ড,আব্দুর রহমান রাফাত পাশা রহঃ)
ভালো ছাত্র হওয়ার উপায়।
(মোখলেছুর রহমান।)
(০২)
দাড়ি রাখতে রাসূল সাঃ আদেশ দিয়েছেন। আর পবিত্র কুরআনে রাসূল সাঃ এর অনুসরণ মানেই আল্লাহর অনুসরণ বলে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিয়েছেন। তাই নবীর নির্দেশ অমান্য করা মানে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা। সুতরাং রাসূল সাঃ এর নির্দেশ দাড়ি রাখার বিধান লঙ্ঘণ করা মানে আল্লাহর বিধানকে লঙ্ঘণ করা।
দাড়ি রাখার নির্দেশ
★রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজ উম্মতের জন্য আদর্শ। তবে কতিপয় সুনির্দিশ বৈশিষ্ট রাসূল সাঃ এর ছিল যা অন্য কারো জন্য জায়েজ নয়। যেমন চারের অধিক বিয়ে করা ইত্যাদি। এটা রাসূল সাঃ এর বৈশিষ্ট। এমন কতিপয় সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট ছাড়া রাসূল সাঃ এর প্রতিটি আমল, প্রতিটি চাল-চলন একজন নবী প্রেমিক উম্মতের কাছে আদর্শ ও পালনীয়। রাসূল সাঃ এর সকল আমলকে আদর্শ সাব্যস্ত করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا [٣٣:٢١
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে,তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। {সূরা আহযাব-২৩}
কে কী করেছে? সেটা কোন মুসলমান বিবেচনা করতে পারে না। একজন মুসলমান দেখবে আমাদের আদর্শ,আমাদের পথিকৃত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কী করেছেন? রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজের শর্তহীন ও যুক্তিহীনভাবে অনুসরণের নাম দ্বীন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ [٣:٣١
বলুন,যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। {সূলা আলে ইমরান-৩১}
সর্বক্ষেত্রে নবীজীর অনুসরণকে আল্লাহ প্রেমের নিদর্শন বলা হয়েছে। আর হাদীসে কাফেরদের অনুসরণকে জাহান্নামী হওয়ার নিদর্শন বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم– « مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ».
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে (আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৪০৩৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৯৬৬, মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-২০৯০৮৬)
রাসূলে কারীম সাঃ এর প্রতিটি কর্মের অনুসরণকে রাসূল সাঃ এর সাথে জান্নাতে যাওয়ার পথ বলে ঘোষণা করে বলেন-
ومن أحيا سنتي فقد أحبني ومن أحبني كان معي في الجنة
যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত তথা পথ-পদ্ধতিকে জিন্দা করবে তথা পালন করবে, সে আমাকে ভালবাসল, আর যে, আমাকে ভালবাসল, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬৭৮}
★ইসলামে দাড়ির প্রমান
কোরআনের আলোকেঃ-
কোরআন শরীফে সরাসরি দাড়ি রাখার কথা বলা হয়নি তবে হারুন আঃ এর ঘটনায় দাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে । যথাঃ আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেনঃ- قَالَ يَا ابْنَ أُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِي
তথা হে আমার আপন ভাই! আপনি আমার দাড়ি ধরবেন না। {সূরা ত্বহা-৯৪}
এ আয়াত দ্বারা একথাও বুঝা যায় যে, হযরত হারুন আঃ এর দাড়ি এক মুষ্টির চেয়ে কম ছিল না। কারণ এক মুষ্টির চেয়ে কম দাড়িতে মুঠ করে ধরা যায় না।
হাদীসের আলোকেঃ-
عن ابن عمر : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( خالفوا المشركين وفروا اللحى وأحفوا الشوارب . وكان ابن عمر إذا حج أو اعتمر قبض على لحيته فما فضل أخذه
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর।
আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩}
★দাড়ি লম্বা রাখার ব্যাপারে হাদীসে বিভিন্ন শব্দ এসেছে। যেমন-
১-إعفاء اللحى [ইফা] সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৪৭৫
২- وأعفوا اللحى [উফু] সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৪
৩-وَأَرْخُوا اللِّحَى [আরখু] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৬
৪-وَأَوْفُوا اللِّحَى [আওফু] সহীহ মুসলিম হাদীস নং-৬২৫
৫- وَفِّرُوا اللِّحَى [ওয়াফফিরু] সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩
দাড়ি কেটে ফেলার নির্দেশ কোন হাদীসে নেই। তাই যেসব লোক বলেন যে, এক মুষ্টি রাখতে হবে একথা দলিল চায়, তাদের বলুন যে, দাড়ি যে তারা কেটে ফেলেন একথা তারা পেলেন কোত্থেকে? হাদীস অনুযায়ী যদি তারা দাড়ি রেখে থাকেন, তাহলে দাড়ি কোনদিনও কাটতে পারবেন না। কারণ দাড়ি কাটার কোন বর্ণনা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত নেই।
তাই এখানে লক্ষণীয় হল এ হাদীসের মর্মার্থ সাহাবায়ে কেরাম কী বুঝেছেন? মনগড়া বুঝলে হবে না। কারণ সাহাবারা হলেন রাসূল সাঃ এর হাদীসের আমলী নমুনা। আমরা বুখারীর হাদীসটির দিকে তাকালেই এ ব্যাপারে সমাধান পেয়ে যাই-
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর।
আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩}
এখানে যদিও হজ্ব ও উমরার সময়ের কথা বলা হয়েছে ,কিন্তু মুহাদ্দিসীনরা বলেন তিনি তা সব সময়ই করতেন । এ ছাড়াও আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনায় ইবনে উমরের (রাঃ) হজ্ব ও উমরা ছাড়া অন্য সময়েও দাড়ি এক মুঠের বেশীটুকু কেটে ফেলার কথা রয়েছে।
(ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০ পৃঃ ৩৬২)
কোন হাদীসেই সরাসরি দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখার কথা উল্লেখ নেই , শুধুমাত্র লম্বা করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা প্রামাণিত আছে । দাড়ি সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী আবু হুরাইরা ইবনে উমর (রাঃ) প্রমুখ গণ দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখতেন । তাই এ ব্যাপারে তাঁদের আমল আমাদের জন্য দলীল । এর কারণ হল – যে বিষয়ে হাদীসে সরাসরি পাওয়া যায় না সে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের আমল শরীয়তের প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। কেননা তারা হলেন হাদীসে রাসূলের (সাঃ) আমলী নমুনা।
সুতরাং দাড়ি কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ হওয়া প্রত্যক্ষভাবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত হলেও পরোক্ষভাবে তা রাসূল (সাঃ) থেকেই প্রমাণিত ।
হযরত উমর (রাঃ) তো নিজেই এক ব্যক্তির দাড়ি ধরে এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু নিজেই কেটে দিয়েছিলেন । (ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০ পৃঃ ৩৬২)
ইবনে উমর (রাঃ) ছিলেন রাসূলের (সাঃ) আদর্শের পুঙ্খনুভাবে এবং পূর্ণ অনুসারী । তাই তিনি যা করেছেন তা রাসূল (সাঃ) থেকেই জেনে-শুনে করেছেন ।
উপরোক্ত দু’জন মহান সাহাবী ব্যতীত আবু হুরাইরা ,জাবির (রাঃ) প্রমুখ সাহাবী থেকে ও দাড়ির এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু কেটে ফেলার কথা পাওয়া যায় । এ থেকে দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
দাড়ি না রাখা , মুন্ডিয়ে ফেলা বা এক মুষ্ঠির কম রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে দাড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়েও ছোট করে ফেলে তার আমল নামায় পুনরায় দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গুনাহ লিখা হতে থাকে। কেননা শরীয়তের হুকুম হল-দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখা। তাই এর চেয়ে দাড়ি ছোট করে ফেললে বা মুন্ডিয়ে ফেললে যতক্ষন পর্যন্ত দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ না হবে ততক্ষন পর্যন্ত সে শরীয়তের হুকুম অমান্যকারী সাব্যস্ত হবে এবং তার নামে গুনাহ লিখা হতে থাকবে । অন্যান্য গুনাহ সাময়িক ও অস্থায়ী, কিন্তু দাড়ি ছোট করা বা মুন্ডানোর গুনাহ দীর্ঘস্থায়ী ,যে ব্যক্তি দাড়ি মুন্ডায় বা ছোট করে (এক মুঠের চেয়ে ) সে ফাসিক।
★★টুপি পরিধান করা সুন্নত। এটিকে প্রয়োজন নেই বলা অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়।
মাসিক আলকাউসারে ২০১৩ সালে প্রকাশিত টুপি সংক্রান্ত একটি তথ্যবহুল লেখার অংশ বিশেষ তুলে ধরছি। যা ভাল করে পড়লে আমা করি পরিস্কার হয়ে যাবে টুপি পরিধান করা সুন্নত। যারা এটিকে অপ্রয়োজনীয় বলেন, কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ ছাড়া আর কিছু নয়।
হাদীস-১
হাসান বিন মেহরান থেকে বর্ণিত-
عن رجل من الصحابة : قال : أكلت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم، ورأيت عليه قلنسوة بيضاء
একজন সাহাবী বলেছেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাঁর দস্তরখানে খেয়েছি এবং তাঁর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি’ (আল ইসাবাহ ৪/৩৩৯)
এ হাদীসটি ইমাম ইবনুস সাকান তার কিতাবুস সাহাবায় সনদসহ বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর এ বর্ণনায় সাহাবীর নাম আসেনি। তা এসেছে তাঁর অন্য বর্ণনায় এবং ইমাম বুখারী ও ইমাম আবু হাতেমের বর্ণনায়। তাঁর নাম ফারকাদ। (দ্র. আততারীখুল কাবীর ৭/১৩১; কিতাবুল জারহি ওয়াত তা’দীল ৭/৮১) উল্লেখ্য, ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. ইমাম ইবনুস সাকানের উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা আবু নুআইম আল আসবাহানী রহ.এর এ দাবি খন্ডন করেছেন যে, ফারকাদ সাহাবী আল্লাহর নবীর দস্তরখানে খাবার খাননি। বরং হাসান ইবনে মেহরান খাবার খেয়েছেন সাহাবী ফারকাদের সাথে। (মারিফাতুস সাহাবা ৪/১০৪)
হাফেজ ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ ক্ষেত্রে আবু নুআইমই ভুলের শিকার হয়েছেন। প্রমাণ হিসেবে তিনি ইমাম ইবনুস সাকানের উপরোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ করেন। এতে প্রমাণিত হয় এ বর্ণনা সহীহ। অন্যথায় প্রমাণ-গ্রহণ শুদ্ধ হতো না। এবং আবু নুআইম এর মত ইমাম এর কথাকে খন্ডন করা যেত না।
তাছাড়া সাহাবী ফারকাদ রা.এর আল্লাহর নবীর দস্তরখানে খাবার খাওয়ার কথা ইমাম বুখারী, ইমাম আবু হাতেম ও ইবনু আবদিল বারও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।
হাদীস-২
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন
أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يلبس من القلانس في السفر ذوات الآذان، وفي الحضر المشمرة يعني الشامية.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় কান বিশিষ্ট টুপি পরতেন আর আবাসে শামী টুপি পরতেন। (আখলাকুন নুবুওয়্যাহ, আল জামে লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে পৃ. ২০২)
এ হাদীসের সকল রাবী ‘‘ছিকা’’। উরওয়া ও হিশাম তো প্রসিদ্ধ ইমাম। আর মুফাদদাল ইবনে ফাদালা নামে দুইজন রাবী আছেন। একজন মিসরী, তিনি অনেক বড় ইমাম ছিলেন। মিসরের কাযী ছিলেন। সর্বসম্মতিক্রমে তিনি ‘‘ছিকা’’। আসমাউর রিজালের কিতাবাদি থেকে প্রতীয়মান হয় সনদে উল্লেখিত ব্যক্তি ইনিই। কারণ তিনিই হিশাম ইবনে উরওয়া ও ইবনে জুরাইজ থেকে রেওয়ায়েত করেন যা আল্লামা ইবনে আদী ও আল্লামা মুহাম্মাদ বিন হাসান বিন কুতায়বা তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। (আল-কামিল ৭/৪০৯ ইকমালু তাহযীবিল কামাল ১১/৩৩৮)
অপর জন বসরী। তাঁর স্মৃতিশক্তির বিষয়ে কিছু আপত্তি থাকলেও ইবনে হিববান তাকে ছিকা রাবীদের মধ্যে গণ্য করেছেন।
আবু হাতেম বলেছেন يكتب حديثه
আর ইমাম ইবনে আদী তার একটি বর্ণনাকে ‘মুনকার’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাকিগুলো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন-
‘তার অন্য বর্ণনাগুলো সঠিক।’ সুতরাং সনদে উল্লেখিত রাবী যদি বসরীও হন তবুও তার এ বর্ণনা সঠিক।
হাদীস-৩
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসা ছিলাম। ইতিমধ্যে একজন আনসারী সাহাবী তাঁর কাছে এলেন। এবং তাঁকে সালাম দিলেন। তিনি ফিরে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আনসারী! আমার ভাই সাদ ইবনে উবাদাহ কেমন আছে? আনসারী বললেন, ভাল আছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কে কে তাকে দেখতে যাবে? অতপর তিনি দাঁড়ালেন আমরাও দাঁড়ালাম। আমরা সংখ্যায় দশের অধিক হব। আমাদের পায়ে মোজাও ছিল না। চপ্পলও না। গায়ে জামাও ছিল না, টুপিও না। ঐ কংকরময় ভূমিতে আমরা চলছিলাম। অবশেষে আমরা সাদ এর নিকট পৌঁছলাম তখন তার পাশ থেকে মানুষজন সরে গেল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীরা প্রবেশ করলেন।
এখানে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এর বাক্য ‘‘আমাদের পায়ে মোজাও ছিল না, চপ্পলও না। গায়ে জামাও ছিল না টুপিও না’’ থেকে বোঝা যায়, ঐ যুগে টুপিও ছিল লিবাসের অংশ এবং কোথাও যাওয়ার জন্য সেগুলো রীতিমত আবশ্যকীয় এর ন্যয় ছিল। তাই এখানে এগুলো না থাকায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর তা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
বিষয়টি ঠিক এরকম যেমন ইমাম বুখারী রহ. সহীহ বুখারীতে বুরনুস প্রমাণ করেছেন। সহীহ বুখারীতে কিতাবুল লিবাসে باب البرانس নামে শিরোনাম দাঁড় করেছেন আর দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন হজের একটি হাদীস।
لا يلبس المحرم القميص ولا العمائم ولا البرانس
‘‘ইহরাম গ্রহণকারী জামাও পরবে না, পাগড়ীও না, বুরনুস (এক প্রকার টুপি)ও না।’’
আল্লামা আবু বকর ইবনুল আরাবী এ হাদীস থেকে পাগড়ী প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেন, এ হাদীস প্রমাণ করে যে, তৎকালে পাগড়ী পরিধানের রীতি ছিল। এ কারণে ইহরাম অবস্থায় তা পরিধান করা নিষেধ করেছেন।
একইভাবে আলোচিত হাদীস দ্বারাও টুপি ও তার প্রচলন প্রমাণে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়।
হাদীস -৪
উমর ইবনে খাত্তাব রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
الشهداء ثلاثة : رجل مؤمن … ورفع رسول الله صلى الله عليه وسلم رأسه حتى وقعت قلنسوته أو قلنسوة عمر.
শহীদ হল তিন শ্রেণীর লোক : এমন মুমিন … এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা তুললেন। তখন তাঁর টুপি পড়ে গেল। অথবা বলেছেন উমরের টুপি পড়ে গেল। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৬ জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৬৪৪ ইত্যাদি)
হাদীসটির ক্ষেত্রে ইমাম তিরমিযী বলেছেন, ‘হাসানুন গারীবুন।’
হাদীসটির সনদ এই,
عن عبد الله بن لهيعة عن عطاء بن دينار أبي يزيد الخولاني عن فضالة بن عبيد عن عمر بن الخطاب رضي الله عنهم
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে লাহিয়া এর ক্ষেত্রে যদিও মুহাদ্দিসীনদের বিভিন্ন রকম বক্তব্য আছে, কিন্তু এ হাদীসটি তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক। আর এক্ষেত্রে ইমামগণ এক মত যে ইবনে লাহিয়া থেকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক কর্তৃক বর্ণনাকৃত হাদীসগুলো সঠিক।
উপরন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে লাহিয়ার একজন ‘মুতাবি’ও আছেন সায়ীদ ইবনে আবী আইয়ূব। যা ইমাম বুখারী ও ইমাম আবু হাতিম এর কথায় পাওয়া যায়।
قال الترمذي : سمعت محمدا يقول : قد روى سعيد بن أبي أيوب هذا الحديث عن عطاء بن دينار عن أشياخ من خولان، ولم يذكر فيه عن أبي زيد.
وقال أبو حاتم : وروى سعيد بن أبي أيوب عن عطاء بن دينار عن أشياخ من خولان عن فضالة عن عمر.
আর এ সনদের আরেকজন রাবি, আবু ইয়াযিদ আল খাওলানী। মুতাআখখিরীনদের মাঝে কেউ কেউ তাকে মাজহুল বলেছেন।
এক্ষেত্রে প্রথম কথা এই যে, হাদীসটি শুধু তিনিই বর্ণনা করেননি; বরং খাওলান শহরের আরো অনেক মুহাদ্দিস তা বর্ণনা করেন, যা ইমাম বুখারী ও ইমাম আবু হাতেম এর উপরোক্ত কথায় পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় কথা এই যে, ইমাম বুখারী, ইমাম আবু হাতেম, ইমাম তিরমিযীসহ মুতাকাদ্দিমীন ইমামগণের কেউ তাকে মাজহুল বলেন নি; বরং সকলে তাঁর জীবনীতে তাঁর নাম উল্লেখ করে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। কেউ তাঁর সম্পর্কে ভালোও বলেননি মন্দও বলেননি। এটাকে হাদীস শাস্ত্রের পরিভাষায় বলা হয় سكوت المتكلمين في الرجال অর্থাৎ ইমামগণের নীরব থাকা। এই কারণে রাবী মাজহুল হওয়া আবশ্যক নয় বরং এটাকে এক প্রকার তা’দীল হিসেবে ধরা হয়। বিশেষত রাবী যদি তাবেয়ী স্তরের হন। আর এখানেও তা ঘটেছে। সম্ভবত এ নিশ্চুপ থাকাকেই পরবর্তীদের কেউ মাজহুল বলে দিয়েছেন, যা ঠিক নয়।
থাকল এ বিষয় যে, উপরোক্ত হাদীসে কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর টুপি সম্পর্কে বলা হয়েছে না ওমর রা.এর টুপি সম্পর্কে? যদি ধরেও নেয়া হয় যে, ওমর রা. এর টুপি সম্পর্কে তাহলেও তো একজন খলীফায়ে রাশেদের টুপি পরা প্রমাণিত হচ্ছে। আর খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ্রই অংশ, বিশেষত যখন একাধিক হাদীসে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরও টুপি পরা প্রমাণিত হচ্ছে।
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. এর বক্তব্য তুলে ধরছি। তিনি তাঁর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘‘যাদুল মাআদে’’লেখেন, তাঁর একটি পাগড়ি ছিল, যা তিনি আলী রা. কে পরিয়েছিলেন। তিনি পাগড়ি পরতেন এবং পাগড়ির নিচে টুপি পরতেন। তিনি কখনো পাগড়ি ছাড়া টুপি পরতেন। কখনো টুপি ছাড়াও পাগড়ি পরতেন। (যাদুল মাআদ ১/১৩৫)
★সাহাবায়ে কেরামের টুপি
জানা কথা যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টুপি পরেছেন তখন সাহাবায়ে কেরামও পরবেন। বরং কোনো হাদীসে আল্লাহর নবীর টুপির উল্লেখ না এলেও যদি সাহাবায়ে কেরামের টুপি পরা প্রমাণিত হয় তাহলে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর টুপি পরিধানেরই প্রমাণ বহন করবে। হাদীস ও আছারের কিতাবে সাহাবায়ে কেরামের টুপি পরার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে একটি পুস্তিকা হয়ে যাবে। এখানে সামান্য কিছু বর্ণনা উল্লেখ করা হল।
হাসান বসরী রাহ. বলেন,
وكان القوم يسجدون على العمامة والقلنسوة
তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম গরমের দিনে) পাগড়ি বা টুপির উপর সিজদা করতেন।-সহীহ বুখারী, কিতাবুস সালাত ‘প্রচন্ড গরমের কারণে কাপরের উপর সিজদা করা’ অধ্যায়।
উল্লেখ্য, হাসান বসরী রাহ. অনেক বড় মনীষী তাবেয়ী, যিনি অনেক সাহাবীকে দেখেছেন এবং তাদের সাহচর্য গ্রহণ করেছেন।
সুলাইমান ইবনে আবি আবদিল্লাহ বলেন,
أدركت المهاجرين الأولين يعتمون بعمائم كرابيس سود وبيض وحمر وخضر وصفر، يضع أحدهم العمامة على رأسه ويضع القلنسوة فوقها، ثم يدير العمائم هكذا على كوره لا يخرجها من ذقنه
আমি প্রথম সারির মুহাজিরগণকে দেখেছি তাঁরা সুতির পাগড়ি পরিধান করতেন। কালো, সাদা, লাল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি রংয়ের। তারা পাগড়ির কাপড় মাথায় রেখে তার উপর টুপি রাখতেন। অতপর তার উপর পাগড়ি ঘুরিয়ে পরতেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১২/৫৪৫
হেলাল ইবনে ইয়াসাফ বলেন,
قدمت الرقة فقال لي بعض أصحابي : هل لك في رجل من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم؟ فقلت : غنيمة. فدفعنا إلى وابصة، فقلت لصاحبي : نبدأ فننظر إلى دله فإذا عليه قلنسوة لا طية ذات أذنين.
আমি রাক্কায় গিয়েছিলাম তখন আমার এক সাথী আমাকে বললেন, তুমি কি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম-এর একজন সাহাবীর নিকট যেতে ইচ্ছুক? আমি বললাম, ‘এ তো গনীমত।’ তারপর আমরা ওয়াবেছা রা.-এর নিকট গেলাম। আমি আমার সাথীকে বললাম, দাঁড়াও, প্রথমে আমরা তাঁর আচার-আখলাক দেখব। তাঁর মাথায় দুই কান বিশিষ্ট টুপি ছিল, যা মাথার সঙ্গে মিশে ছিল।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৯৪৯
হিশাম বলেন,
رأيت على ابن الزبير قلنسوة
আমি ইবনে যুবায়ের রা.-এর মাথায় টুপি দেখেছি।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫৩৫৩
আশআছ রাহ. তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন-
أن أبا موسى خرج من الخلاء وعليه قلنسوة،
আবু মুসা আশআরী রা. হাম্মাম থেকে বের হলেন। তার মাথায় টুপি ছিল।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১০/৫১০
আববাদ ইবনে আবী সুলাইমান বলেন,
رأيت على أنس بن مالك قلنسوة بيضاء
আমি আনাস ইবনে মালেক রা.-এর মাথায় একটি সাদা টুপি দেখেছি।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৫/১২১
আবু হাইয়ান বলেন,
كانت قلنسوة علي لطيفة
হযরত আলী রা.-এর টুপি ছিল পাতলা।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৩/২৩
ইবনে সাদ আলী রা.-এর জীবনীতে তাঁর পোশাকের আলোচনায় তার টুপি সম্পর্কে আলাদা শিরোনাম এনেছেন।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. মাথা মাসাহর সময় টুপি উঠিয়ে নিতেন এবং অগ্রভাগ মাসাহ করতেন।-সুনানে দারা কুতনী, হাদীস : ৫৫; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস : ২৮৮
ফাযারী রাহ. বলেন,
رأيت على علي قلنسوة بيضاء مصري
আমি আলী রা.-এর মাথায় সাদা মিসরী টুপি দেখেছি।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৩/২৩
সায়ীদ ইবনে আবদুল্লাহ বলেন,
رأيت أنس بن مالك أتى الخلاء، ثم خرج وعليه قلنسوة بيضاء مزرورة
আমি আনাস ইবনে মালেক রা. কে দেখেছি, তিনি হাম্মাম থেকে বের হলেন। তার মাথায় বোতাম বিশিষ্ট সাদা টুপি ছিল।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/১৯০
আবদুল হামীদ বিন জাফর তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. ইয়ারমূক যুদ্ধের দিন তার একটি টুপি হারিয়ে ফেললেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তা পাওয়া গেল। তা ছিল একটি পুরানো টুপি। খালেদ রা. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরারপর মাথা মুন্ডন করলেন। সাহাবীগণ তাঁর চুল নেওয়ার জন্য ছুটতে লাগলেন। আমি গিয়ে তাঁর মাথার অগ্রভাগের চুলগুলি পেলাম। তা এ টুপিতে লাগিয়ে রেখেছি। যে যুদ্ধেই এ টুপি আমার সাথে ছিল তাতেই আল্লাহর সাহায্য পেয়েছি।-দালাইলুন নুবুওয়াহ ৬/২৪৯
সাহাবায়ে কেরামের টুপি ব্যবহারের প্রমাণ স্বরূপ আপাতত এ কয়টি আছার উল্লেখ করা হল। প্রথম দুই বর্ণনা ব্যাপকভাবে সাহাবায়ে কেরামের টুপি ব্যবহারের প্রমাণ বহন করছে। আর পরবর্তী বর্ণনাগুলোতে অনেক সাহাবীর টুপি ব্যবহার উল্লেখিত হয়েছে। টুপির শুধু ব্যবহার নয়, ব্যাপক প্রচলন এ বর্ণনাগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয়। এ প্রসঙ্গে আরেকটি বর্ণনা উল্লেখ করে তাবেয়ী-যুগের বর্ণনায় যাব, যার পর অতি সংশয়গ্রস্ত লোকেরও সংশয় থাকা উচিত নয়।
দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর রা.-এর যুগে যখন ‘নাজরান’ শহরের খৃস্টানরা সন্ধিতে রাজি হল এবং কর দিতে সম্মত হল তখন তারা হযরত উমর রা.-এর সাথে একটি চুক্তিনামা করেছিল। সেই চুক্তির অংশবিশেষ এই-
بسم الله الرحمن الرحيم، هذا كتاب لعبد الله عمر أمير المؤمنين من نصارى مدينة كذا كذا، لما قدمتم سألناكم الأمان لأنفسنا وذرارينا وأهل ملتنا وشرطنا لكم على أنفسنا أن لا نحدث في مدينتنا ولا فيما حولها ديرا ولا كنيسة … ولا نتشبه بهم (المسلمين) في شيء من لباسهم من قلنسوة ولا عمامة.
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
এ অমুক শহরের নাসারাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন উমরের সাথে লিখিত চুক্তি। যখন আপনারা (মুসলমানগণ) আমাদের শহরে এলেন তখন আমরা আপনাদের নিকট আমাদের, আমাদের সন্তান-সন্ততি ও স্বধর্মের লোকদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করেছি। আমরা নিজেদের উপর এ শর্ত গ্রহণ করছি যে, এ শহরে এবং এর আশপাশে আমরা কোনো গির্জা তৈরি করব না … এবং আমরা মুসলমানদের পোশাক-টুপি, পাগড়ি ইত্যাদিতে সাদৃশ্য গ্রহণ করব না …।-সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস : ১৯১৮৬
চুক্তিনামার এ অংশে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় :
এক. টুপিকে মুসলমানদের পোশাক বলা হয়েছে। যেমন পাগড়িকে বলা হয়েছে। একটি বস্ত্তর কতটুকু প্রচলন হলে তা একটি দল বা গোষ্ঠীর সাথে সম্বন্ধ করা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দুই. টুপিকে একটি রাষ্ট্রীয় চুক্তিনামায় উল্লেখ করা দ্বারা সহজেই অনুমান করা যায়, সে যুগে মুসলমানদের নিকট টুপির গুরুত্ব কেমন ছিল এবং তার প্রচলন কত ব্যাপক ছিল।
তিন. এ চুক্তিনামা যখন লেখা হয় তখন বহু সাহাবী জীবিত ছিলেন। ইতিহাসে এমন একটি বর্ণনাও নেই যে, তাদের কেউ এ বিষয়ে আপত্তি করেছেন; বরং পরবর্তী খলীফাগণও এ চুক্তি বলবৎ রেখেছেন। এমনকি হযরত আলী রা.-এর যুগে এ নাসারারা এ চুক্তির কোনো একটি বিষয়ে কথা বলতে এসেছিল। তখন তিনি তাদেরকে সাফ বলে দেন-
إن عمر كان رشيد الأمر، لن أغير شيئا صنعه عمر
নিশ্চয়ই উমর সঠিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি যা করেছেন আমি তার কিছুই কোনোরূপ পরিবর্তন করতে পারব না।
হযরত উমর রা.-এর এ চুক্তিনামাটিকে যিম্মীদের ক্ষেত্রে শরীয়তের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উসূল বা মানদন্ড হিসেবে ধরা হয়। পরবর্তী যুগের আলিম-মনীষী ও মুসলিম খলীফাগণ যিম্মিদের সাথে কোনো চুক্তিনামা করলে এর শর্তগুলোকে মানদন্ড হিসেবে সামনে রাখতেন।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন, এ শর্তগুলো এতই প্রসিদ্ধ যে, এগুলোর সনদ উল্লেখের প্রয়োজন নেই। কেননা ইমামগণ তা সাদরে গ্রহণ করেছেন এবং তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন ও এগুলো দ্বারা প্রমাণ গ্রহণ করেছেন। আর হযরত উমর রা.-এর এসব শর্ত ছিল তাঁদের কিতাবে ও মুখে মুখে। পরবর্তী খলীফাগণ তা বলবৎ রেখেছেন এবং এর অনুসরণ করেছেন। -আহকামু আহলিয যিম্মাহ, পৃষ্ঠা : ৪৫৪
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. এ কিতাবটি শুধু হযরত উমর রা.-এর এ চুক্তিনামার শরহ বা ব্যাখ্যাতেই প্রণয়ন করেছেন।
যাহোক, উপরোক্ত উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যায়, সকল যুগেই টুপি মুসলমানদের পোশাক ছিল। আশা করি, খিলাফতে রাশিদা-যুগের এ চুক্তিনামা দেখার পর কারো কোনো সংশয় থাকবে না। কোনো হাদীস বা আছারে টুপির কথা উল্লেখিত না হলেও এ দলীলটি আলোচ্য বিষয়ে যথেষ্ট হত।
তাবেয়ীগণের টুপি
যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টুপি পরেছেন, সাহাবায়ে কেরাম পরেছেন এবং তা ছিল মুসলিমদের পোশাকের অংশ তখন জানা কথা, তাবেয়ীগণও তা পরেছেন। উপরের আলোচনা থেকেই তাবেয়ীন-যুগও পরবর্তী যুগেও মুসলিম-সমাজে টুপির সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত থাকা প্রমাণিত হয়। তাই আলাদাভাবে তাবেয়ীদের টুপি প্রমাণের আর প্রয়োজন থাকে না। এরপরও কিছু নমুনা পেশ করছি।
আবদুল্লাহ ইবনে আবি হিন্দ রাহ. বলেন,
رأيت على علي بن الحسين قلنسوة بيضاء لاطئة
আমি আলী ইবনে হুসাইন রাহ.-এর মাথায় একটি সাদা টুপি দেখেছি, যা মাথার সাথে মিলিত ছিল।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৩/২৪৩
আবুল গুছ্ন বলেন-
رأيت نافع بن زبير يلبس قلنسوة سماطا وعمامة بيضاء
আমি নাফে ইবনে জুবাইরকে পুঁতিবিশিষ্ট টুপি ও সাদা পাগড়ি পরতে দেখেছি।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৫/২০৬ (শামেলা)
খালেদ ইবনে বকর বলেন,
رأيت على سالم قلنسوة بيضاء
আমি সালেম রাহ.-এর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি। (সালেম হলেন সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পুত্র)।-তবাকাতে ইবনে সাআদ ৫/১৯৭; সিয়ারু আলামিন নুবালা ৪/৪৬৪ (শামেলা)
আইয়ূব বলেন,
رأيت على القاسم بن محمد قلنسوة من خز
আমি কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ রাহ.-এর মাথায় পশমের টুপি দেখেছি।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৫/১৮৯; হিলইয়াতুল আওলিয়া ২/১৮৫ (শামেলা)