আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
273 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (6 points)
আমি হানাফি মাজহাব এর অনুসার।  আমার কিছু প্রশ্ন আছে।
১. ওয়াক্বফের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

 ২. ক্বিরাত কাকে বলে? ক্বিরাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

 ৩. তাজউইদ কাকে বলে? এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।   ৪. আমাদের ক্বিরাত কি আলাদা?
৫. টোটাল ১০ ক্বিরাতে মোটামুটি তিলাওয়াত প্রসিদ্ধ।
অনেক ইতিহাস আছে।
এগুলো ক্বিরাতের মাজহাব, যে দেশে যেটা প্রসিদ্ধ।

আমাদের দেশে কোন মাজহাব ফলো করা হয়?

এশিয়া ওয়ারশ, হাফস দুটোই ফলো করে।

এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

1 Answer

0 votes
by (707,840 points)

জবাবঃ-
(১)
ওয়ক্বফ অর্থ থেমে যাওয়া।পড়তে পড়তে যখন নিঃশ্বাস শেষ হয়ে য়ায়,তখন বিরতির প্রয়োজন পড়ে।এই বিরতিকেই ওয়াক্বফ বলা হয়।

আসবাকে তাজবীদ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে........
ওয়াকফ অর্থ কোনো শব্দের শেষের অক্ষর কে সাকিন করে থামা আর  দুই যবরযুক্ত শেষ অক্ষর  হলে এক যবর করে এক আলিফ লম্বা করে থামা।

তা অনেক প্রকার প্রসিদ্ধ কয়েকটি হচ্ছে এই-

(১) ওয়াকফে লাযেম: তা ওই স্থানে হয় যেখানে থামা আবশ্যক। না থামলে অনেক সময় অর্থ বিনষ্ট হওয়ার আশংকা হয়।

তার চিহ্ন হলো  م এর উপর থেমে পর থেকে শুরু করবে এবং পূনরাবৃত্তি করবে না।


 
(২) ওয়াকফে মুত্বলাক: এখানে থামা উচিৎ। তার চিহ্ন ط এর উপরও থেমে পর থেকে শুরু করবে এবং পূনরাবৃত্তি করবে না।


 
(৩) ওয়াকফে জায়িয: এখানে থামা না থামা উভয়টি জায়িয। তার চিহ্ন ج এর উপর থেমে গেলে পর থেকে শুরু করবে।

(৪) ওয়াকফে মুজাওয়ায: এখানে থামা তো জায়িয কিন্তু না থামা উত্তম। তার চিহ্ন ز এই চিহ্ন যদি আয়াতের মধ্যখানে হয়।

তবে এর উপর থামলে পূনরাবৃত্তি করা জরুরি। আর তা আয়াতের উপরে হলে এর উপর থামলে পূনরাবৃত্তি করবে না।

(৫) ওয়াকফে মুরাখখাস: তার চিহ্ন হলো ص আর এটা ওয়াকফে মুজাওয়াযের মতো।

প্রশ্ন: ز – ج – ط – م এবং ص ছাড়াও কোরআন মাজীদে আরো কয়েকটি চিহ্ন দেখা যায়। এগুলির মাঝে কি করতে হয়?

উত্তর: (১) قِ – قف এ দুটির মাঝে থামা উচিৎ।
(২) وقفة – سكته এগুলোতে শ্বাস না ছেড়ে একটু থেমে সামনের দিকে পড়া উচিৎ।

(৩) তিনটি তিনটি করে পাশাপাশি দুইটি চিহ্ন থাকে যেগুলিকে “মুআনাকা” বলা হয় এই দুটি থেকে কোনো একটির উপর থামা উচিৎ।


 
প্রথমটিতে থামা যায়, দ্বিতীয়টিতেও থামা যায়, তবে একসাথে উভয়টিতে থামা যাবে না।

(৪) لا, যেখানে لا লিখিত আছে সেখানে থামবে না, থেমে গেলে পূনরাবৃত্তি করতে হবে।

(৫) এসব চিহ্ন ছাড়া অন্যান্য চিহ্নগুলো যেখানে লাগানো হয়েছে صل – صلي ইত্যাদি।  সেগুলোতে ইচ্ছা করলে থামতে পারবে, নাও থামতে পারবে।

আর যেখানে উপরে নিচে দুটি চিহ্ন লিখিত থাকবে, সেখানে যেটি উপরে লিখিত সেটির উপর আমল করবে।

প্রশ্ন: কোরআন মাজীদে সাকতা কতটি? এগুলোতে কি করতে হয়?

উত্তর: কোরআন মাজীদে সাকতা চারটি:

(১) সূরা কাহফের শুরুতে -قيما সাকতা عوجاً

(২) সূরা ইয়াসিনে – هذا সাকতা من مر قدنا

(৩) সূরা ক্বিয়ামায় -راق সাকতা مَنْ

(৪) সূরা মুতাফফিফীনে-ران সাকতা كلا بَلْ

এই চার স্থানে শ্বাস ছাড়বে না; বরং একটু থেমে সামনের দিকে পড়তে থাকবে।

প্রশ্ন: ওয়াকফ কোথায় করতে হয়?

উত্তর: যে ব্যক্তি কোরআন শরীফের অর্থ জানে না সে যেন এমন সকল স্থানে ওয়াকফ করে যে সব স্থানে আলামত (চিহ্ন) লাগানো রয়েছে।

এ চিহ্ন সমূহ থেকে যার যে হুকুম রয়েছে, সে অনুযায়ী আমল করবে। প্রয়োজন ছাড়া এবং অস্থানে (স্থান ছাড়া) ওয়াকফ করবে না।

তবে আয়াতের মধ্যখানে শ্বাস শেষ হয়ে গেলে তা অপারগতা। অপারগতায় এমন হয়ে গেলে উচিৎ হলো,

যে শব্দে থেমেছে ওই শব্দ থেকে বা তার আগ থেকে পূনরাবৃত্তি করে পরের শব্দের সাথে মিলিয়ে পড়া উচিৎ।

এমন অপারগতার সময় খেয়াল রাখবে সে কোনো শব্দের মধ্যখানে যেন ওয়াকফ না হয়। বরং শব্দের শেষে যেন থামা হয়।

প্রশ্ন: হারাকাতযুক্ত হরফের উপর কিভাবে ওয়াক্বফ করা উচিত?

 
উত্তর: হারাকাতযুক্ত হরফে ওয়াকফ করার সময় তাকে সাকিন করতে হবে। কারণ হারাকাতের উপর ওয়াকফ করা ভুল।


 
যেমন- اياك نَعْبُدُ এর মাঝে যদি ওয়াকফ করার প্রয়োজন হয় তবে د কে সাকিন করতে হবে। د এর পেশ উচ্চারণ করে ওয়াকফ করবে না।

প্রশ্ন: শ্বাস না ছেড়ে শব্দের শেষে শুধু সাকিন করলেই কি ওয়াকফ হয়ে যায় এবং এরকম করা কি?

উত্তর: শ্বাস না ছেড়ে শব্দের শেষে শুধু সাকিন করলেই ওয়াকফ হয় না।

যেমন- اياك نستعينُ এর উপর ওয়াকফের সময় নুনকে সাকিন করে শ্বাস না ছেড়ে اهدنا الصراط المستقيم পড়া শুরু করে দিলে ওয়াকফ হয় না।

এরকম করা ভুল। এথেকে বেচে থাকা উচিৎ।

প্রশ্ন: যে শব্দের উপর ওয়াকফ করা হবে তার শেষে যদি যবরের তানভীন হয়। বা গোল তা (ة) হয়, তবে কিভাবে ওয়াকফ করতে হয়?

উত্তর: যদি যবরের তানভীন হয় তবে ওয়াকফের অবস্থায় ওই তানভীনের জায়গায় আলিফে মাদ্দাহ পড়তে হয়।

যেমন- افوجاً এর উপর ওয়াকফ করলে افوجاَ পড়তে হবে। আর فان كن نساءً এর উপর ওয়াকফ করলে نساءَا পড়তে হবে।

যে শব্দের শেষে গোল তা হবে, ওয়াকফের সময় তাকে “হা” সাকিন পড়তে হবে। যেমন- اقيمو الصلوةَ কে ওয়াকফের সময় اقيمو الصلوةْ পড়তে হবে।

প্রশ্ন: কোরআন মাজীদের কোনো কোনো শব্দের শেষে যে আলিফ লিখিত রয়েছে। এ সকল আলিফকে কি পড়তে হয়?

উত্তর: কোরআনের শব্দ সমূহের শেষে লিখিত আলিফকে অধিকাংশ শব্দে পড়তে হয়।

কিন্তু কয়েকটি শব্দ এমন আছে যে, এগুলোর আলিফ মিলিয়ে পড়াবস্থায় পড়তে হয় না। শুধু ওয়াকফের অবস্থায় পড়তে হয়।

যেমন- الظنونا এবং انا এর মাঝে। আর কোনো কোনো শব্দ এমনও রয়েছে যে, এগুলোর আলিফ কোনো অবস্থায়ও পড়া হয় না।

যেমন- لَاْ الي الجحيم- لَاْ الي الله – لَاْ اذبحنه অধিকাংশ কোরআন মাজীদে এ জাতীয় আলিফের উপর গোল চিহ্ন দেয়া হয়েছে।

তিলাওয়াতের সময় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী।

(সূত্র: আসবাকে তাজবীদ- ২৬,২৭,২৮,২৯,৩০)


(২)
কেরাত হল,কোনো এক ক্বারী সাহেব কুরআনে কারীমকে যে শব্দে যে হরকতে তেলাওয়াত করেছেন।তাকেই মূলত কেরাত বলে।


(৩)
তাজবিদ শিক্ষাঃ
তাজবিদের যে কায়দা সমূহ আদায় না করিলে অর্থের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি হতে পারে সে সমস্ত কায়দাকে শিক্ষা করা ও সেই কায়দা অনুযায়ী কুরআন তেলাওয়া  করা ফরয।অন্যদিকে যে সমস্ত কায়দা-কে ফলো না করলে অর্থের মধ্যে কোনো পরিবর্তন নিয়ে আসবে না সেগুলোকে শিক্ষা করা ও সে অনুযায়ী কুরআন তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব।
এ কায়দা সমূহকে ফলো না করলে তেলাওয়াত কারী গোনাহগার হবে না।

তাজবিদ এর অর্থঃ
তাজবিদের শাব্দিক অর্থ,সুন্দর্য্য।
পরিভাষায় মাখরাজঃ
সিফাত আদায় পূর্বক মাখরাজ হতে হরফের উচ্ছারণকে তাজবিদ বলে।(অর্থাৎ-পরিভাষায় তাজবিদ বলা হয়,মাখরাজ হতে হরফ সমূহের উচ্ছারণ ও চিকন-গাড় স্বরের সিফাত সমূহের আদায় করণ এবং কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি ব্যতীত আওয়াজকে লম্বা করে উচ্ছারণ করণ কে)

তাজবিদ বিষয়ে পূর্ণ পাণ্ডিত্য অর্জন করা ফরযে কেফায়াহ।তথা একশ্রেণী লোক তাজবিদের বিশেষজ্ঞ হয়ে গেলে অবশিষ্ট উম্মতের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।বিস্তারিত জানুন-https://www.ifatwa.info/1126

(৪)
আমাদের কেরাত হাফস রাহ এর কেরাত।

(৫)
আমরা ইমাম হাফস রাহ এর কেরাতকে ফলো করি।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...