আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
134 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম
শায়ের আমার জানার বিষয় হল
স্ত্রীর মাসিক চলাকালীন অবস্থায় আপন স্বামী যদি তার সাথে সহবাস করে  এবং স্ত্রী যদি এতে গর্ভবতী হয় তাহলে সন্তানটি হিজড়া হয়  এ কথাটি কতটুকু সঠিক ?
আরেকটি বিষয় হলো  স্বামী এবং স্ত্রী  উভয় যদি একেবারে  উলঙ্গ হয়ে সহবাস করে  তাহলে নাকি  সন্তানটি  নির্লজ্জ হয়  এ কথাটি সঠিক কিনা?
এবং কোন পন্থায়  সহবাস করা উত্তম

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
এ সংক্রান্ত বর্ণনাটি নিম্নে উল্লেখ করা হল।
 
قال الطرطوسي في كتاب تحريم الفواحش باب من أي شيء يكون المخنث حدثنا أحمد بن محمد حدثنا أحمد بن محمد القاضي حدثنا ابن أخي ابن وهب حدثني عمي عن يحيى عن ابن جريج عن عطاء عن ابن عباس قال المخنثون أولاد الجن قيل لابن عباس كيف ذلك قال ان الله عز وجل ورسوله - صلى الله عليه وسلم - نهيا أن يأتي الرجل امرأته وهي حائض فإذا أتاها سبقه إليها الشيطان فحملت فجاءت بالمخنث والله أعلم

অর্থঃ তারতুসী তাঁর ‘তাহরীমুল ফাওয়াহিশ’ গ্রন্থে বলেন, ‘হিজড়া সন্তান কীসের থেকে হয়?’ আমাদেরকে আহমদ ইবন মুহাম্মাদ বলেন, আহমদ ইবন মুহাম্মাদ আল-কাদ্বী বলেন, আমার ভাইপো ইবন ওয়াহাব বলেন, আমার চাচা বর্ণনা করেন, ইয়াহইয়া বর্ণনা করেন, ইবনু জুরাইজ বর্ণনা করেন, আত্বা বর্ণনা করেন,  ইবন আব্বাস(রা.) বলেন, “হিজড়ারা জীনদের সন্তান”।
ইবন আব্বাস(রা.)কে জিজ্ঞাসা করা হলো ”তা কিভাবে হয়?”
 তিনি বললেন, আল্লাহ আয্যা ওয়াজাল্লা এবং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) পুরুষের জন্য তার স্ত্রীর মাসিক চলাকালে সহবাস করতে নিষেধ করেছেন। যদি এ সময় সে সহবাস করে, তাহলে শয়তান তার আগে সহবাস করে ফেলে স্ত্রীর সাথে। এতে স্ত্রী গর্ভবতী হয় এবং হিজড়া সন্তান জন্ম নেয়। আল্লাহই সর্বোত্তম জানেন।”
(আকামুল মারজান ফী আহকামিল জান্ন’ - বদরুদ্দীন শিবলী  ১/৯৩)

আলোচ্য বর্ণনার বর্ণনানাকারীদের মধ্যে ইয়াহইয়া ইবন আইয়ূব আল-গাফিক্বী নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন। মুহাদ্দিসদের মতেঃ তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তি, দুর্বল। 
(মীযানুল ই’তিদাল: ৪/৩৬৩, আল-কামিল ফিদ দুআফা: ৭/২১৬)
অতএব এই বর্ণনা মোটেও বিশুদ্ধ নয়।
 
ইসলামি আকিদা আসে শুধুমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদিস থেকে। এখানে আলোচ্য বর্ণনাটি সাহাবী থেকেও বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়। কাজেই আমরা বলতে পারি, “হিজড়ারা জিন শয়তানের সন্তান” এমন কথাকে ইসলামী বিশ্বাস বলে অভিহীত করা সঠিক নয়। 
ইসলাম হিজড়াদেরকে ঘৃণা করতে শেখায় না। অন্য সকল মানুষের মতো হিজড়ারাও তার পিতার সন্তান। তারাও আদম সন্তান।   
(সংগৃহীত)

★★ইসলাম বলেছে যে হায়েজ অবস্থায় সহবাস হারাম। 
তবে এ অবস্থায় সহবাস করা হলে হিজড়া সন্তান হবে,এমন কোনো কথা ইসলামে নেই।
,
কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ

যে ব্যাক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলো অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করলো অথবা গণকের নিকট গেলো এবং সে যা বললো তা বিশ্বাস করলো, সে অবশ্যই মুহাম্মাদ ﷺ -এর উপর নাযিলকৃত জিনিসের (আল্লাহর কিতাবের) বিরুদ্ধাচরণ করলো। (তিরমিযী ১৩৫ আবূ দাঊদ ৩৯০৪)

(০২)
এরকম কথা কুরআন হাদীসে নেই।
তবে কিছু বুযুর্গানে দ্বীন এমন কথা বলে থাকেন।
,
উলঙ্গ হয়ে স্ত্রী সহবাস জায়েজ আছে। তবে হাদীসে এভাবে পূর্ণ উলঙ্গ থাকতে অনুৎসাহিত করা হয়েছে।

عَنْ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِيَّاكُمْ وَالتَّعَرِّيَ فَإِنَّ مَعَكُمْ مَنْ لَا يُفَارِقُكُمْ إِلَّا عِنْدَ الغَائِطِ وَحِينَ يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى أَهْلِهِ، فَاسْتَحْيُوهُمْ وَأَكْرِمُوهُمْ»

ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা নগ্নতা হতে বেঁচে থাক। কেননা তোমাদের এমন সঙ্গী আছেন (কিরামান-কাতিবীন) যারা পেশাব-পায়খানা ও স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের সময় ছাড়া অন্য কোন সময় তোমাদের হতে আলাদা হন না। সুতরাং তাদের লজ্জা কর এবং সম্মান কর। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৮০০]

(০৩)
হাদীস শরীফে যেই পন্থায় সহবাসের ইশারা পাওয়া যায় সেটিই উত্তম তরীকা।
,
আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

قَعَدَ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ وَأَلْزَقَ الْخِتَانَ بِالْخِتَانِ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ

“তার (স্ত্রী) চার অঙ্গ (দু হাত ও দু পা অথবা দু রান ও দু পা) এর মাঝখানে বসলে এবং এক যৌনাঙ্গ অপর যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দিলেই গোসল আবশ্যক হবে।” অন্য বর্ণনায় আছে, و إن لم ينزل “বীর্য নির্গত না হলেও।” অন্য বর্ণনায় আছে, বীর্যপাত হোক অথবা না হোক।

(সহিহ বুখারী ও মুসলিম। সহীহ বুখারী গোসল অধ্যায়। অনুচ্ছেদ: যখন দুটি বিপরীত লিঙ্গ মিলিত হবে।)

আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِذَا جَلَسَ الرَّجُلُ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ

“যখন কোন ব্যক্তি তার (স্ত্রীর) চার অঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানে উপবিষ্ট হয় এবং তার সাথে সঙ্গম করে, তখন গোসল ওয়াজিব হয়।” [সুনানে ইবনে মাজাহ, পবিত্রতা ও তার সুন্নতসমূহ অধ্যায়, মুসনাদ আহমাদ ৬৬৩২  আবু দাউদ ২০৯, ইরওয়াহ ১২২।]

এর মানে স্ত্রীর দুই পায়ের মাঝে স্বামী বসবে, স্বামীর দুই পা স্ত্রীর দুই পায়ের মাঝে থাকবে।
এভাবে বসে বা শুয়ে সহবাস এখান থেকে বুঝা যায়।
সুতরাং এটিই উত্তম। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...