আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+3 votes
668 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (22 points)
closed by
১)মিলাদ কিয়াম, নবিজি নূরের তৈরী, নবিজি বেচেঁ আছেন সেজন্য নবিজি মিলাদে আসেন তাই দাঁড়িয়ে সালাম দেওয়া  , ঈদ এ মিলাদুন্নবী পালন এবং সেদিন অনেক অনেক মিষ্টিমুখ করা, শব এ মেরাজ এর ইবাদত বা বানোয়াট ফলিযত আমল,নবিজির নাম শুনলে আঙুলে চুমু খেয়ে চোখে দেওয়া,

এগুলো যে বিদ'আত সেটা কি কোরআন হাদিস বা মাযহাবের দৃষ্টিতে বলতে পারবেন?
২) মহররম এর ১০ তারিখের আমল কি কি?  এই দিনে বা মহররমে কি ভালো খারাব খাওয়ার কোনো ফযিলত আছে স্পেশালি বা যেকোনো ধর্মীয় দিনে?
৩) এইসব সুন্নী আকিদার উৎপত্তি কিভাবে হলো? উপমহাদেশের বাইরে আর কোথায় আছে এইসব?  আমাদের দেশে কিভাবে এত শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে এরা? আমরা কিছু করছি না কেন? ঢাকাতেও তো এইসব মসজিদ দেখছি।সাধারণ মানুষদের আকিদা তো ধ্বংস করে দিচ্ছে এরা। নাউযুবিল্লাহ।
৪) এগুলো যে সাহাবি বা চার মাযহাবের ইমাম রা করেন নি সেটা নিয়ে কিছু বলেন।
closed

1 Answer

+4 votes
by (574,260 points)
edited by
 
Best answer
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১) 
মিলাদ-কিয়াম বিদআত। কেননা আল্লাহর কিতাব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত, সাহাবাদের আমল এবং সম্মানিত তিন যুগের কোন যুগে এর কোন অস্তিত্ব ছিলনা। তাই আমরা এটাকে বিদআত বলি। কারণ যে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হবে, কোরআন বা সুন্নাহয় অবশ্যই তার পক্ষে দলীল থাকতে হবে। আর মিলাদ-কিয়ামের পক্ষে এরকম কোন দলীল নেই বলেই এটি একটি বিদআতী ইবাদত। মূলতঃ হিজরী ৬ষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত এ ধরনের মিলাদ কোথাও অনুষ্ঠিত হয়নি। ৬ষ্ঠ হিজরী শতাব্দীর পর বাদশা মুজাফফররুদ্দীন আবু সাঈদ কৌকরী বিন আরবাল তিনি আমোদ-প্রমোদের জন্য এ বিদাতের সর্বপ্রথম উদ্ভোধন করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ১৩/১৫৯) যার প্রকৃত ইতিহাস এই–
মিলাদের ইতিহাস
বাদশা মুজাফফর ছিলেন একজন অপব্যয়ী শাসক। রাষ্ট্রীয় অর্থ তিনি সীমাহীনভাবে খরচ করতেন। মিলাদ-অনুষ্ঠানের প্রসার ও প্রচলনে অঢেল অর্থ খরচ করতেন। ইতিহাসবেত্তা ইমাম যাহাবী রহ. বলেন, তার মিলাদ মাহফিল-কাহিনী ভাষায় ব্যক্ত করার মত নয়। মিলাদ অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য ইরাকের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে এমনকি আলজেরিয়া হতেও মানুষের সমাগম ঘটত । মিলাদের দিন তার ও তার স্ত্রীর জন্য সুরম্য কাঠের গম্বুজাকৃতির তাঁবু তৈরী করা হত। সেখানে গান বাজনা ও খেলাধুলার আসর জমত। মুজাফফর প্রত্যহ আসরের পরে সেখানে আসত এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করত। অনুষ্ঠান কয়েক দিন যাবত চলত। অসংখ্য পশু জবাই করে আগত ব্যক্তিদের জন্য ভোজসভার আয়োজন করা হত।  এ উপলক্ষে সে তিন লাখ দিনার বাজেট পেশ করত। ফকির-দরবেশদের জন্য দু’ লাখ এবং অতিথিদের জন্য এক লাখ দিনার। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বর্ণনা করেন, আমি দস্তরখানায় বিশেষ প্রজাতির একশত ঘোড়া, পাঁচ হাজার বকরীর মাথা, দশ হাজার মুরগি, এক লাখ গামলা, এবং তিন হাজার হালুয়ার পাত্র গণনা করেছি। (আল মিনহাজুল ওয়াজিহ ১৬২)
অন্যদিকে যে আলেম প্রচলিত মিলাদ প্রবর্তনে সাহায্য করেন তার নাম মাজদুদ্দিন আবুল খাত্তাব উমার বিন হাসান বিন আলী বিন জমায়েল। তিনি নিজেকে সাহাবী দাহেয়াতুল কালবি রাযি. এর বংশধর বলে দাবি করেন। অথচ তা ছিল মিথ্যা দাবি। কারণ দাহেয়াতুল কালবি রাযি. কোনো উত্তরসূরী ছিল না। তাছাড়া তার বংশধারায় মধ্যস্তন পূর্বপুরুষরা ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত হয়েছিল। উপরন্তু উক্ত আলেমের পেশকৃত বংশধারায় অনেক পুরুষের উল্লেখ নাই। (মিজানুল ইতিদাল ১/১৮৬) উক্ত সরকারি দরবারী আলেম একটি পুস্তকও রচনা করেছিলেন। যে পুস্তকে মিলাদের রূপরেখা বর্ণনা করা হয়েছিল। ৬০৪ হিজরীতে শাসক মুজাফ্ফারকে পুস্তকটি উপহার দেন। এতে সে খুশি হয়ে তাকে দশ হাজার দিনার বখশিশ দেয়। এভাবে এখান থেকেই মিলাদুন্নবী উদযাপনের সূচনা হয়। (টিকা সিয়ারু আলামিন্নুবালা ১৫/২৭৪)
মিলাদপ্রথা আবিস্কারের পরে সে সময়ের মানুষ বছরে একটি দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) তা উদযাপন করত এবং কয়েকদিন ধরে চলত। পরবর্তীতে কিছু মানুষ এটাকে সওয়াবের কাজ মনে করে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে উদযাপন করতে শুরু করে। আগে বড় ধরনের মাহফিলের আয়জন করা হত। বর্তমানে মনগড়া কিছু দুরুদ ও গজল গেয়ে শেষ করা হয়।
কিয়ামের ইতিহাস
প্রচলিত মিলাদের সাথে আরেকটি প্রথা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে  জুড়ে দেয়া হয়েছে। যার নাম দেয়া হয়েছে কিয়াম। এটি মিলাদের পরে আবিষ্কৃত হয়েছে।
৭৫১ হিজরির কথা। খাজা তকিউদ্দিন ছিলেন একজন ভাব কবি ও মাজযুব  ব্যক্তি। নবীজীর শানে তিনি কিছু কাসিদা (কবিতা) রচনা করেন। বরাবরের ন্যায় একদিন তিনি কাসিদা পাঠ করছিলেন এবং ভাবাবেগে হঠাৎ তিনি দাঁড়িয়ে কাসিদা পাঠ করতে লাগলেন। ভক্তরাও তাঁর দেখাদেখি দাঁড়িয়ে গেল। ঘটনা এখানেই শেষ। তিনি আর কখনো এমনটি করেন নি।
এখানে একটা বিষয় লক্ষনীয় যে, খাজা তকিউদ্দিন কবিতা পাঠ করতে করতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। এটি কোন মিলাদের অনুষ্ঠান ছিল না। তিনি অনিচ্ছাকৃত দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মিলাদের জন্মের একশত বছর পরে বিদআতপন্থীরা এটিকে মিলাদের সাথে জুড়ে দেয়। ফলে কিয়ামজাত মিলাদ বিদআত হওয়ার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে।
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, সুতরাং ইসলামের চার খলিফার যুগ শেষ হয়ে আরো ৫ পাচঁ শতাব্দী অতিবাহিত হওয়ার পর ৬০৪ হিজরী সনে ইরাকের মুসেল শহরের বিলাসপ্রিয় ও ধর্মদ্রোহী বাদশা মুজাফফররুদ্দীন আবু সাঈদ কৌকরী বিন আরবাল এর নির্দেশে এক স্বার্থবাদী আলেম আবুল খাত্তাব উমার বিন হাসান বিন আলী বিন জমায়েল কর্তৃক উদ্ভাবিত মিলাদ নামক এই বিদআত এবং তারও একশত বছরের পরে আবিস্কৃত কিয়াম নামক এই বিদআত  গ্রহন করার কোন অর্থই হতে পারে না। বরং কয়েকটি কারণে একে সাওয়াবের কাজ মনে করে করা হল বড় বিদআত।
প্রথম কারণ: আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-وَمَآ ءأتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا অর্থাৎ, রাসূল যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। (সূরা হাশর : ৭)
দ্বীতিয় কারণ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ  অর্থাৎ, যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করে যা এর অন্তর্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী ২৬৯৭; মুসলিম ১৭১৮)
তৃতীয় কারণ: অন্যত্র তিনি বলেছেন-
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
অর্থাৎ, তোমাদের জন্য আবশ্যক আমার ও আমার পরবর্তী হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরা যেভাবে দাঁত দিয়ে কোন জিনিস দৃঢ়ভাবে কামড়ে ধরা হয়। আর শরীয়তে নিত্য নতুন জিনিস আবিস্কার করা হতে বেঁচে থাক। কেননা সকল নবসৃষ্ট বস্তুই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। (আবু দাউদ ৪৬০৭)
আর আমরা জানি, আমাদের নবী সকল নবীদের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ। তিনি সবার চেয়ে অধিকতর পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের পয়গাম পৌঁছিয়েছেন। যদি মিলাদ-কিয়াম আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত দ্বীনের অংশ হত আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ হত, তাহলে অবশ্যই তিনি তা উম্মতের জন্য বর্ণনা করতেন বা তাঁর জীবনে একবার হলেও আমল করে দেখাতেন এবং তাঁর সাহাবীগণ বিশেষত খোলাফায়ে রাশেদা অবশ্যই তা করতেন। যেহেতু তাঁরা এমনটি করেছেন বলে বিদআতিদের কিছু মিথ্যা ও বানোয়াট কথা ছাড়া নির্ভরযোগ্য একটি বর্ণনাও পাওয়া যায় না, তাই প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের সাথে এই মিলাদ-কিয়ামের কোন সম্পর্ক নেই বরং এটা বিদআত, যা থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে সাবধান থাকতে বলেছেন।
চতুর্থ কারণ: মিলাদ মাহফিলের মত বিদআত আমলের আবিস্কারের মাধ্যমে এ কথা প্রতীয়মাণ হয় যে, আল্লাহ তা’আলা দ্বীনকে এ উম্মতের জন্য পরিপূর্ণ করেন নি, তাই দ্বীনের পরিপূরক কিছু আবিস্কারের প্রয়োজন হয়েছে। তেমনি একথাও বুঝা যায় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য কল্যাণকর সকল বিষয়ের তাবলীগ বা প্রচার করেন নি। যে কারণে পরবর্তীতে আল্লাহর অনুমোদন ব্যতিরেকে শরীয়তে নতুন কিছু আবিস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায়। এটা চুড়ান্ত পর্যায়ের অন্যায় ও ভুল। এটা আল্লাহর দুশমন ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান কর্তৃক তাদের ধর্মে নবপ্রথা সংযোজনের সাথে সামঞ্জস্য স্বরূপ এবং আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর একধরণের অভিযোগও বটে! অথচ আল্লাহ তা’আলা তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ ও বান্দাদের জন্য সকল নিয়ামত সস্পূর্ণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكَمْ نعْمَتِيْ وَ رَضِيْتُ لَكُم الإِسْلامَ دِيْنًا
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম ও আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা  মায়েদা: ৩)
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, আফসোস ও বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এরূপ বিদআতি অনুষ্ঠান এমন সব মুসলমান দ্বারাও সংঘটিত হচ্ছে, যারা নিজদেরকে সুন্নি দাবি করে। তাকে বলতে হবে, যদি তুমি সুন্নি ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর অনুসারী হওয়ার দাবী রাখ, তাহলে বল, তিনি স্বয়ং বা তাঁর কোন সাহাবী বা তাঁদের সঠিক অনুসারী কোন তাবেয়ী কি একাজটি করেছেন? না এটা ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান বা তাদের মত আল্লাহর অন্যান্য শত্রুদের অন্ধ অনুকরণ? এধরণের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর প্রতি ভালবাসা প্রতিফলিত হয়না। যা করলে ভালবাসা প্রতিফলিত হয়, তা হল তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করা, তাঁর শিক্ষা দেয়া দুরূদ পাঠ করা, তাঁর সুন্নাতের প্রতি যত্নবান হওয়া, তিনি যা বলেছেন, তা বিশ্বাস করা, যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা বর্জন করা। আল্লাহ যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, কেবল সেভাবেই তাঁর উপাসনা করা।
,
,
★রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরী না মাটির তৈরী?

প্রথমেই বুঝতে হবে মানুষ কিসের তৈরী? কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াত এবং সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানুষ মাটির তৈরী। নূর বা অগ্নির তৈরী নয়। কয়েকটি আয়াতের দিকে লক্ষ্য করুন-

إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِن طِينٍ (71

অনুবাদ-যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেস্তাদের বললেন-আমি মাটির তৈরী মানুষ সৃষ্টি করব। {সূরা সোয়াদ-৭১}

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ (26
অনুবাদ-নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি পঁচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা। {সূরা হিজর-২৮}

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে-
خَلَقَ الإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ (14) وَخَلَقَ الْجَانَّ مِن مَّارِجٍ مِّن نَّارٍ (15)
অনুবাদ-তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুস্ক মৃত্তিকা থেকে এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে। {সূরা আর রাহমান-১৪,১৫}

আরো ইরশাদ হয়েছে-
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ
অনুবাদ-তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা। {সূরা মুমিন-৬৭}

আরো ইরশাদ হয়েছে-
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن سُلالَةٍ مِّن طِينٍ (12
অনুবাদ-আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। {সূরা মুমিনুন-১২}

উপরোক্ত বক্তব্য থেকে মানব সৃষ্টির পদ্ধতি ও মূল উপাদান সম্পর্কে আশা করি সুষ্পষ্ট ধারণা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার বাণী দ্বারা একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানুষ নূর বা আগুনের তৈরী নয়। বরং মাটির তৈরী।
এবার বুঝতে হবে নবীজী সাঃ কি ছিলেন? মানুষ? না জিন? না ফেরেস্তা?
রাসূল সাঃ জিন নন, এ ব্যাপারে সকলে একমত। তাই এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই। কথা হচ্ছে নবীজী সাঃ নূরের তৈরী ফেরেস্তা কি না? নাকি মাটির তৈরী মানুষ?

রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন? নাকি ফেরেস্তা?

যদি বলেন ফেরেস্তা তাহলে আরবের মুশরিকদের অভিযোগ করার কি কারণ? পবিত্র কুরআনে যা বিধৃত হয়েছে এরকম শব্দে-

قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنتُ إَلاَّ بَشَرًا رَّسُولاً (93) وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُؤْمِنُواْ إِذْ جَاءهُمُ الْهُدَى إِلاَّ أَن قَالُواْ أَبَعَثَ اللَّهُ بَشَرًا رَّسُولاً (94) قُل لَّوْ كَانَ فِي الأَرْضِ مَلآئِكَةٌ يَمْشُونَ مُطْمَئِنِّينَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِم مِّنَ السَّمَاء مَلَكًا رَّسُولاً (95

অনুবাদ-বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম। {সূরা বনী ইসরাঈল-৯৩, ৯৪, ৯৫}

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وَقَالُواْ لَوْلا أُنزِلَ عَلَيْهِ مَلَكٌ وَلَوْ أَنزَلْنَا مَلَكًا لَّقُضِيَ الأمْرُ ثُمَّ لاَ يُنظَرُونَ (8) وَلَوْ جَعَلْنَاهُ مَلَكًا لَّجَعَلْنَاهُ رَجُلاً وَلَلَبَسْنَا عَلَيْهِم مَّا يَلْبِسُونَ (9
অনুবাদ-তারা আরো বলে যে, তাঁর কাছে কোন ফেরেস্তা কেন প্রেরণ করা হল না? যদি আমি কোন ফেরেস্তা প্রেরণ করতাম, তবে গোটা ব্যাপারটি খতম হয়ে যেত। এরপর তাদেররকে সামান্য অবকাশও দেয়া হত না। যদি আমি কোন ফেরেস্তাকে রাসূল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের রূপেই হত। এতেও সে সন্দেহই করত, যা এখন করছে। {সূরা আনআম-৮,৯}

রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন এ ব্যাপারে কোন কাফেরেরও সন্দেহ ছিল না। মক্কার কাফেরদের আশ্চর্যের এটাইতো কারণ ছিল যে, আল্লাহ তাআলা কেন ফেরেস্তা ছাড়া মানুষকে রাসূল বানিয়ে পাঠালেন?
এর জবাব আল্লাহ তাআলা কি সুন্দর শব্দে বলে দিলেন। যদি দুনিয়াতে মানুষের বদলে ফেরেস্তারা থাকতো তাহলে আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাই পাঠাতেন রাসূলরূপে। কিন্তু যেহেতু দুনিয়াতে মানুষ বাস করে তাই মানুষকেই পাঠানো হয়েছে রাসূল হিসেবে।
এ সহজ কথাটি মক্কার কাফেররা বুঝতো না বলেই আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করে বুঝালেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল মুসলমান নামধারী কিছু বেদআতীরাও মক্কার কাফেরদের মতই অভিযোগ করে নবীজী সাঃ মানুষ নন। ফেরেস্তাদের মত নূরের তৈরী। যদি নবীজী সাঃ কে মানুষ বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে পূর্বোক্ত আয়াতের কারীমা অনুযায়ী বিশ্বাস করতে হবে মানুষ মাটির তৈরী, তাই নবীজী সাঃ ও মানুষ তাই তিনিও মাটির তৈরী।
আর যদি বলা হয় রাসূল সাঃ মানুষ নন, ফেরেস্তা, তাহলে মক্কার কাফেররা ফেরেস্তা কেন নবীরূপে পাঠানো হলো না এ অভিযোগ কেন করল? নবীজী সাঃ মানুষ না হয়ে ফেরেস্তা হলে কাফেরদের প্রশ্ন করার কি প্রয়োজন ছিল যে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে কেন পাঠালেন নবী করে ফেরেস্তার বদলে?
সুতরাং বুঝা গেল নবীজী সাঃ মানুষ ফেরেস্তা নয়। আর মানুষ কিসের তৈরী? তা সুষ্পষ্টই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের উল্লেখ করেছেন।

রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন
قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنتُ إَلاَّ بَشَرًا رَّسُولاً (93) وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُؤْمِنُواْ إِذْ جَاءهُمُ الْهُدَى إِلاَّ أَن قَالُواْ أَبَعَثَ اللَّهُ بَشَرًا رَّسُولاً (94) قُل لَّوْ كَانَ فِي الأَرْضِ مَلآئِكَةٌ يَمْشُونَ مُطْمَئِنِّينَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِم مِّنَ السَّمَاء مَلَكًا رَّسُولاً (95

অনুবাদ-বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম। {সূরা বনী ইসরাঈল-৯৩, ৯৪, ৯৫}

আরো ইরশাদ হয়েছে-

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحًا وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا (110

অনুবাদ-বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। {সূরা কাহাফ-১১০}

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে-
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِينَ (6
অনুবাদ-বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ। আমার প্রতি অহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব তারই প্রতি একাগ্র হও, এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরেকদের জন্য রয়েছে। দুর্ভোগ। {সূরা হা-মীম সাজদা-৬}

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে-
وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّن قَبْلِكَ الْخُلْدَ أَفَإِن مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ (34
অনুবাদ-আপনার পূর্বেও আমি কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে? {সূরা আম্বিয়া-৩৪}

রাসূল সাঃ মানব ছিলেন এর বহু প্রমাণ হাদীসেও পাওয়া যায়। নিম্ন ৩ টি হাদীস উদ্ধৃত করা হল-

عن أمها أم سلمة قالت سمع النبي صلى الله عليه و سلم جلبة خصام عند بابه فخرج عليهم فقال ( إنما أنا بشر وإنه يأتيني الخصم فلعل بعضا أن يكون أبلغ من بعض أقضي له بذلك وأحسب أنه صادق فمن قضيت له بحق مسلم فإنما هي قطعة من النار فليأخذها أو ليدعها (صحيح البخارى-كتاب الأحكام، باب القضاء في كثير المال وقليله، رقم الحديث-6762

অনুবাদ-হযরত উম্মে সালমা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নিজের দরজার কাছে বিবাদ-বিতর্ক শুনতে পেয়ে তাদের নিকট এসে বললেন-আমিতো একজন মানুষ মাত্র। আমার কাছে বাদী বিবাদীরা এসে থাকে। কেউ হয়ত অধিক বাকপটু হয়, ফলে আমি তাকে সত্য মনে করে তার পক্ষে রায় দিয়ে দেই। যদি আমি কারো পক্ষে অন্য কোন মুসলমানের হকের ব্যাপারে ফয়সালা দিয়ে থাকি, তাহলে তা জাহান্নামের টুকরো হিসেবে বিবেচিত হবে। সে তা গ্রহণ করতেও পারে, অথবা বর্জনও করতে পারে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৭৬২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৭২, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৫৬৮০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-৩১১৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২০৩২১}

ولكن إنما أنا بشر مثلكم أنسى كما تنسون فإذا نسيت فذكروني (صحيح البخارى، كتاب الصلاة، باب التوجه نحو القبلة حيث كان، رقم الحديث-392

অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন-আমিতো তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। তাই আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্বরণ করিয়ে দিও। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৬৬২, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৫২৪২, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২৭১}

جابر بن عبد الله يقول سمعت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يقول « إنما أنا بشر وإنى اشترطت على ربى عز وجل أى عبد من المسلمين سببته أو شتمته أن يكون ذلك له زكاة وأجرا (صحيح مسلم، كتاب البر والصلة والآدب، باب من لعنه النبى -صلى الله عليه وسلم- أو سبه أو دعا عليه وليس هو أهلا لذلك كان له زكاة وأجرا ورحمة، رقم الحديث-6790

অনুবাদ-হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ করেছেন-আমি তো একজন মানুষমাত্র। আমি আপন প্রতিপালকের নিকট বলে রেখেছি যে, আমি যদি কোন মুসলমানকে মন্দ বলি, তাহলে সেটি যেন তার জন্যে পবিত্রতা ও সওয়াবের কারণ হয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৭৯০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৩১৬০}

উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস একথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছে যে, রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন। ফেরেস্তা বা জিন নয়। আর মানুষ মাটির তৈরী হয় একথা মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে একাধিক স্থানে স্পষ্টই বলেছেন। যা ইতোপূর্বে উদ্ধৃত হয়েছে।

রাসূল সাঃ নূরের তৈরী হলে রাসূল সাঃ এর পূর্বসূরী ও উত্তরসূরীরা কিসের তৈরী?

قال العباس بلغه صلى الله عليه وسلم بعض ما يقول الناس قال فصعد المنبر فقال من أنا قالوا أنت رسول الله فقال أنا محمد بن عبد الله بن عبد المطلب إن الله خلق الخلق فجعلني في خير خلقه وجعلهم فرقتين فجعلني في خير فرقة وخلق القبائل فجعلني في خير قبيلة وجعلهم بيوتا فجعلني في خيرهم بيتا فأنا خيركم بيتا وخيركم نفسا-1/169، رقم الحديث-3532

অনুবাদ-হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ [একবার কোন কারণে] মিম্বরে দাঁড়িয়ে [সমবেত লোকদেরকে] জিজ্ঞেস করলেন-আমি কে? সাহাবীগণ বললেন-আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তখন তিনি বললেন-আমি আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে মুহাম্মদ। আল্লাহ তাআলা তামাম মাখলূক সৃষ্টি করে আমাকে সর্বোত্তম সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত করেছেন [অর্থাৎ মানুষ বানিয়েছেন]। এরপর তাদেরকে দু’ভাগে [আরব ও অনারব] বিভক্ত করে আমাকে উত্তম ভাগে [আরবে] রেখেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্রে পাঠিয়েছেন। এরপর সে গোত্রকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে সর্বোত্তম পরিবারে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং আমি ব্যক্তি ও বংশ সর্বদিক থেকে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৫৩২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৮৮, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৭৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩২২৯৬}

এ প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক যে, রাসূল সাঃ যদি মাটির তৈরী না হয়ে নূরের তৈরী হয়ে থাকেন। তাহলে রাসূল সাঃ এর সম্মানিত আম্মাজান আমিনা ও সম্মানিত আব্বাজান আব্দুল্লাহ যাদের ঔরসে তিনি জন্ম নিলেন তারা কিসের তৈরী? সেই সাথে নবীজী সাঃ এর সন্তানরা কিসের তৈরী? মাটির না নূরের? মাটির তৈরী থেকেতো মাটিই হবে। আর নূর থেকেতো নূরই হবে, তাই নয়কি? সুতরাং চিন্তা ভাবনা করে এসব উদ্ভট দাবি তোলা উচিত যে, রাসূল সাঃ নূরের তৈরী। যেখানে এ ব্যাপারে কোন সুষ্পষ্ট দলিলই নেই। সেখানে শুধুমাত্র নিজের আবেগ আর অন্ধতাকে পূজি করে রাসূল সাঃ কে মাটির থেকে নূরের তৈরী বানিয়ে ফেলাটা বোকামী ছাড়া কিছু নয়।

নূরের তৈরী হওয়াই কি শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণবাহী?

একথা সম্পূর্ণ ভুল যে, কোন কিছু নূরের তৈরী হলেই তা শ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে। বরং শ্রেষ্ঠত্বের মূল বিষয় হল তার অভ্যান্তরীণ গুণ শ্রেষ্ঠ হওয়া।

মাটির তৈরী মানুষ নূরের তৈরী ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ!
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ
অনুবাদ-নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। {সূরা বনী ইসরাঈল-৭০}

আগুনের তৈরী জিন বা নূরের তৈরী ফেরেস্তাকে মর্যাদা দান করার কথা বলা হয়নি কুরআনের কোথাও। কিন্তু মাটির তৈরী মানুষকে মর্যাদা দান করার কথা আল্লাহ তায়ালা সুষ্পষ্টই ঘোষণা করেছেন। যা স্পষ্টই প্রমাণ করে নূরের তৈরী হওয়াই কেবল শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ নয়?
তাছাড়া আগুনের তৈরী জিন আর নূরের তৈরী ফেরেস্তাদের দিয়ে মাটির তৈরী মানুষ হযরত আদম আঃ কে আল্লাহ তায়ালা সেজদা করিয়ে বুঝিয়ে দিলেন আগুনের তৈরী বা নূরের তৈরী হওয়া কোন শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ নয়। শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণবাহী হল- ভিতরগত গুন যার শ্রেষ্ঠ সেই প্রকৃত শ্রেষ্ঠ। চাই সে মাটির তৈরী হোক, চাই নূরের তৈরী হোক চাই আগুনের তৈরী হোক।

فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُواْ لَهُ سَاجِدِينَ (29) فَسَجَدَ الْمَلآئِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ (30

অনুবাদ-যখন আমি তাকে পূর্ণতা দিলাম এবং তাতে আত্মা ফুকে দিলাম, তখন সবাই তাকে সেজদা করল। সকল ফেরেস্তারাই একসাথে তাকে সেজদা করল। {সূরা হিজর-২৯,৩০}

সুতরাং মাটির তৈরী সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল সাঃ কে নূরের তৈরী বলে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করাটা একটি অহেতুক চেষ্টা। তিনি মাটির তৈরী একজন মানব। তবে তিনি মহামানব। আল্লাহ তাআলার পর তিনিই শ্রেষ্ঠ। তার মত আর কেউ নেই। তিনি সকল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মাটির তৈরী সকল মানুষ, আগুনের তৈরী সকল জিন, নূরের তৈরী সকল ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ মাটির তৈরী এ মহামানব রাসূল সাঃ।
যেমন সকল নূরের তৈরী ফেরেস্তার মাঝে হযরত জিবরাঈল আঃ শ্রেষ্ঠ। তেমনি মাটির তৈরী এ মহামানব রাসূল সাঃ সকল মাটির তৈরী পয়গম্বর আঃ ও সকল মানুষ ও সকল জিনও ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। তার মত উত্তম ও শ্রেষ্ঠ কোন সৃষ্টি আল্লাহ তাআলা কখনো সৃজন করেন নি, কখনো করবেন ও না।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক থেকে বিরত থেকে আখেরাতের পূজি সংগ্রহ করার তৌফিক দান করুন।


★তারা বলেন যে নবীজী গায়েব জানেন।
নবী বেঁচে আছেন,এটা বলেননা।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জানি আকীদা হলো নবিজি গায়েব জানেননা।
গায়েব শুধু মাত্র আল্লাহই জানেন।

 আয়াতঃ
قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ

অর্থ: (হে নবী) আপনি বলুন! আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আসমান-যমীনে অন্য কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেনা। এবং তারা জানে না কখন তারা উত্থিত হবে। (সূরা নামল, আয়াত-৬৫)


আয়াতঃ 

قُلْ لَا أَقُولُ لَكُمْ عِنْدِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ

অর্থ: (হে নবী) আপনি বলুন! আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধন-ভান্ডার রয়েছে। এবং আমি গায়েব জানি না, এবং আমি তোমাদের এটাও বলিনা যে, আমি একজন ফেরেশতা। আমার নিকট যা প্রত্যাদেশ হয় আমি কেবল তারই অনুসরন করি। (সুরা আন‘আম, আয়াত- ৫০)


আয়াতঃ

إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

অর্থ: কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহরই রয়েছে। তিনি বারি বর্ষণ করেন, এবং তিনি জানেন জরায়ুতে কী রয়েছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে। এবং কেউ জানে না কোন স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবগত । (সুরা আন‘আম, আয়াত- ৩৪)
,
হাদীস নং ১:

عن عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ يَعْلَمُ الغَيْبَ، فَقَدْ كَذَبَ، وَهُوَ يَقُولُ: لاَ يَعْلَمُ الغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ»

অর্থ: হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তোমাকে বলে নবীজি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়েব জানেন, সে মিথ্যাবাদী। কারণ নবীজি (স.) নিজেই বলতেন, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কেউ গায়েব জানে না। (সহীহ বুখারী-৭৩৮০)
,
★★ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে,,,,, 
  মীলাদ শব্দটি আরবী। যার অর্থ হল জন্ম। সুতরাং মীলাদুন্নবী মানে হল নবীর জন্ম।

একজন সাধারণ মুসলমানও বুঝবেন জন্মদিন উদযাপনের কোন বিষয় নয়। এটি কেবলি আলোচনার বিষয় হতে পারে। এটি পালনীয় বিষয় হলে রাসূল সাঃ নিজেই তা পালন করে দেখাতেন। সাহাবাগণ যারা সবচে’ বেশি আশেকে রাসূল ছিলেন। নবীজী সাঃ এর প্রতি মুহাব্বাতের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে যারা অকাতরে জীবন বিলিয়েছেন। সন্তান এতিম করেছেন। স্ত্রী বিধবা করেছেন। পরিবার, সমাজ, অর্থ, বিত্তবৈভব সবই বিসর্জন করেছেন নবীজী সাঃ এর মোহাব্বতে। কিন্তু সেসব সাহাবাগণ কেন নবীজী সাঃ এর জন্মদিন পালন করেননি? কেন, আবু বকর রাঃ, ওমর রাঃ, উসমান রাঃ ও হযরত আলী রাঃ এরম ত খুলাফায়ে রাশেদীনের জমানায় এ ঈদ উদযাপিত হয়নি?

এসব কি প্রমাণ করে? এটি উদযাপনের বিষয়? যদি এটি সওয়াবের বিষয় হতো, তাহলে সাহাবায়ে কেরামগণ কেন এটি পালন করেননি? কেন তাবেয়ীগণ পালন করেননি? কেন তাবে তাবেয়ীগণ পালন করেননি?

কেন এ ঈদের কথা কুরআন, হাদীস এবং ফিক্বহের কিতাবে লিখা হয়নি?
যা পরিস্কার প্রমাণ করে এটি একটি পরিস্কার বিদআত।
,
★রাসুল সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমা দেওয়া বিদআত। 
আঙ্গুলে চুমা দেওয়া বিদয়াত সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ   
,
★শবে মিরাজে যেই আমল করা হয়,এগুলো সবই বিদয়াত। 
কারন রাসুল সাঃ এবং ছাহাবায়ে কেরামগনের কেহই এমন আমল করেননি।
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ.


অর্থাৎ যে কেউ দ্বীন নয় এমন কিছুকে আমাদের এই দ্বীনে অন্তর্ভুক্ত করলে তা পরিত্যাজ্য। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭১৮
,


(০২) 
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী আশুরার দিনে শুধু ২ টি আমলের কথা পাওয়া যায়।

১. রোযা রাখা

২. পরিবারর উত্তম খানার ব্যবস্থা করা। 

(যদিও উত্তম খানা সংক্রান্ত হাদীসটি যয়ীফ। 

তবে যখন এই হাদীসকে অন্যান্য হাদীসের সাথে মিলানো হবে,তখন এর শক্তি বেড়ে যায়,তাই এটা আমলযোগ্য।
শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাকী ৩৭৯৫.মাকাসেদে হাসানাহ ৪২৭) 

এ দিনে রোযা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমযানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা হল সর্বশ্রেষ্ঠ।’

أفضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم

-সহীহ মুসলিম ২/৩৬৮; জামে তিরমিযী ১/১৫৭

আশুরার আমল সম্পর্কে  বিস্তারিত জানুনঃ
,
(০৩)
সুন্নি আকীদার যারা আমাদের দেশে আছে,এদের উৎপত্তি ইংরেজদের আমল থেকে হয়েছে।
এরা সকলেই আহমদ রেজা খান সাহেবের অনুসারী । 
আমাদের উপমহাদেশ ব্যাতিত অন্য কোথাও এদেরকে তেমন একটা দেখা যায়না।
,  
সুন্নি সম্পর্কে  বিস্তারিত জানুন
,
আহমদ রেজা খানের ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন   
,
(০৪) কুরআন হাদীস,ছাহাবায়ে কেরামদের আমল,তাবেয়ীন তাবে তাবেয়ীনদের আমল,চার মাযহাবের সমস্ত কিতাবাদী   দেখলে স্পষ্ট আকারে এটা প্রতিয়মান  হয় যে এসব আমল ছাহাবায়ে কেরামগন, চার মাযহাবের ইমামগন কেহই করেননি।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...