ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/14040/?show=14040#q14040 নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি
যে,
গোনাহের কাজ ব্যতীত
অন্যান্য সমস্ত কাজে মাতাপিতার বিধি-নিষেধের অনুসরণ করা ওয়াজিব।
কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু
আলাইহিসসালাম বলেছেন,
ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻟﻄﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻑ
গোনাহের কাজে কারো অনুসরণ
করা যাবে না,অনুসরণ একমাত্র নেককাজ সমূহেই করা যাবে। (সহীহ বুখারী-৭২৫৭,সহীহ মুসলিম-১৮৪০)
অন্যত্র বর্ণিত আছে
ﻟَﺎ ﻃَﺎﻋَﺔَ ﻟِﻤَﺨْﻠُﻮﻕٍ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ
আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা
যাবে না। (মুসনাদে আহমদ-১০৯৮)
যে সমস্ত বিষয় মাতাপিতার
ফায়দাদায়ক এবং সন্তানের জন্য ক্ষতিকর নয়,সে সমস্ত বিষয়ে মাতাপিতার
অনুসরণ ওয়াজিব।যদি মাতাপিতা জন্য ফায়দাদায়ক না হয় বা সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হয়,সে সমস্ত বিষয়ে মাতাপিতা আদেশ নিষেধের অনুসরণ ওয়াজিব নয়।
হাদীস শরীফে এসেছে-
حَدَّثَنَا حَجَّاجٌ قَالَ: حَدَّثَنَا حَمَّادٌ
هُوَ ابْنُ سَلَمَةَ، عَنْ سُلَيْمَانَ التَّيْمِيِّ، عَنْ سَعِيدٍ الْقَيْسِيِّ،
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: مَا مِنْ مُسْلِمٍ لَهُ وَالِدَانِ مُسْلِمَانِ
يُصْبِحُ إِلَيْهِمَا مُحْتَسِبًا، إِلَّا فَتْحَ لَهُ اللَّهُ بَابَيْنِ -
يَعْنِي: مِنَ الْجَنَّةِ - وَإِنْ كَانَ وَاحِدًا فَوَاحِدٌ، وَإِنْ أَغْضَبَ
أَحَدَهُمَا لَمْ يَرْضَ اللَّهُ عَنْهُ حَتَّى يَرْضَى عَنْهُ "، قِيلَ:
وَإِنْ ظَلَمَاهُ؟ قَالَ: «وَإِنْ ظَلَمَاهُ»
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ যে কোন মুসলমানের মুসলিম পিতা-মাতা জীবিত থাকলে এবং সে ভোরবেলা সওয়াবের
আশায় তাদের খোঁজ-খবর নিলে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য বেহেশতের দু’টি দরজা খুলে দেন
এবং তাদের একজন থাকলে একটি দরজা। সে তাদের কোন একজনকে অসন্তুষ্ট করলে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাকে
সন্তুষ্ট না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হন না। বলা হলো, তারা তার উপর যুলুম করে
থাকলে? তিনি বলেন, তারা তার উপর যুলুম করলেও (বাযযার)। (আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং-৭)
অন্য এক হাদীস শরীফে এসেছে-
حَدَّثَنَا قَبِيصَةُ قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ
أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَجْزِي وَلَدٌ وَالِدَهُ، إِلَّا أَنْ
يَجِدَهُ مَمْلُوكًا فَيَشْتَرِيَهُ فَيُعْتِقَهُ»
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেনঃ সন্তানের পক্ষে তার পিতার প্রতিদান শোধ করা সম্ভব নয়।
তবে সে তাকে দাসরূপে পেয়ে ক্রয় করে দাসত্বমুক্ত করে দিলে তার প্রতিদান হতে পারে
(মুসলিম, দারিমী, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, তাহাবী)। (আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং-১০) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ বলেন,
ﻭﻳﻠﺰﻡ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻃﺎﻋﺔ ﻭﺍﻟﺪﻳﻪ ﻓﻲ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻌﺼﻴﺔ ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻧﺎ ﻓﺎﺳﻘﻴﻦ ... ﻭﻫﺬﺍ ﻓﻴﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻣﻨﻔﻌﺔ ﻟﻬﻤﺎ ، ﻭﻻ ﺿﺮﺭ ﻋﻠﻴﻪ " ﺍﻧﺘﻬﻰ .
মাতাপিতা আদেশ নিষেধের অনুসরণ
সন্তানের জন্য তখনই ওয়াজিব যখন তা কোনো গোনাহের কাজ হবে না।যদি ও তারা ফাসিক হোক
না কেন? উপরোক্ত হুকুম তখনই যখন তা মাতাপিতার জন্য ফায়দাদায়ক হবে,এবং সন্তানের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হবে না। (সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হলে
শরীয়ত কর্তৃক বৈধ জিনিষেও মাতাপিতার অনুসরণ ওয়াজিব হবে না) (আল-ইখতিয়ারাত-১১৪)
চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব
বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ 'আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায়' রয়েছে,
" ﻃﺎﻋﺔ ﺍﻟﻤﺨﻠﻮﻗﻴﻦ - ﻣﻤّﻦ ﺗﺠﺐ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ – ﻛﺎﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ، ﻭﺍﻟﺰّﻭﺝ ، ﻭﻭﻻﺓ ﺍﻷﻣﺮ : ﻓﺈﻥّ ﻭﺟﻮﺏ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ ﻣﻘﻴّﺪ ﺑﺄﻥ ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ، ﺇﺫ ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻟﻤﺨﻠﻮﻕ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﺨﺎﻟﻖ " ﺍﻧﺘﻬﻰ
যাদের আদেশ-নিষেধ এর অনুসরণ
শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব। যেমন-মাতাপিতা,স্বামী,সরকারী বিধিনিষেধ,এর অনুসরণ ওয়াজিব। এ হুকুম ব্যাপক হারে প্রযোজ্য হবে না বরং
ঐ সময়-ই প্রযোজ্য হবে যখন তা গুনাহের কাজ হবে না। কেননা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে
আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না। (২৮/৩২৭)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী
ভাই/বোন!
১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও
আপনার উপর পিতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আর এই দায়িত্ব হলো তার খোঁজ খবর রাখা, তার সাথে যোগাযোগ রাখা।
কারণ, যদিও যাই হোক সে তো আপনার পিতা। আর পিতা মাতা কাফের
হলেও তাদের ভালো ব্যবহারের নির্দেশ হাদীস শরীফে এসেছে। আর সে যদি খারাপ হয় তাহলে
তাকে দাওয়াত দিয়ে ভালোর দিকে আনা এটাও
আপনার উপর দায়িত্ব।
২. আপনার বিয়েতে আপনার
পিতার উপস্থিতি থাকা আবশ্যক নয়। আবার আপনার পিতা আপনার বিয়েতে না থাকলে ভালো মনে
করলে তাকে নাও জানাতে পারেন। এতে কোন সমস্যা নেই।
৩. তার সাথে বেশী যোগাযোগ রাখা সম্ভব না হলেও কমপক্ষে মাঝে
মধ্যে তার সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করবেন। দুই তিন মাস পর পর এক দুই দিন
ফোন করে খোঁজ খবর নিবেন।