বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
(০১)
সাধারণ হালতে নাক এবং মূখে কোনো প্রকার কাপড় ইত্যাদি দ্বারা ঢেকে নামায পড়া মাকরুহ।হাদীসে এর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، وَإِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، عَنِ ابْنِ الْمُبَارَكِ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ ذَكْوَانَ، عَنْ سُلَيْمَانَ الأَحْوَلِ، عَنْ عَطَاءٍ، - قَالَ إِبْرَاهِيمُ - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ السَّدْلِ فِي الصَّلَاةِ وَأَنْ يُغَطِّيَ الرَّجُلُ فَاهُ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতের সময় কাপড় উপর থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিতে ও মুখ ঢেকে রাখতে নিষেধ করেছেন।
তিরমিযী (অধ্যায়ঃ সালাত, অনুঃ সালাতের সময় লম্বা কাপড় পরা অপছন্দনীয়), ইবনু মাজাহ (অধ্যায়ঃ সালাত, অনুঃ সালাতের মাকরূহসমূহ, হাঃ ৯৬৬), দারিমী (১৩৭৯), আহমাদ (২/২৯৫, ৩৪১, ৩৪৫, ৩৪৮), ইবনু খুযাইমাহ (৭৭২),
★তবে করোনাভাইরাসের কারনে ওযর বশত ইসলামী স্কলারগন নামাজে মাস্ক পড়ার অনুমতি প্রদান করেছেন।
,
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত কারনটি শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে ওযর নয়,তাই এ ছুরতে মাস্ক পড়ে নামাজ আদায় করা উক্ত ব্যাক্তির জন্য মাকরুহ হবে।
,
তবে তার নামাজ হয়ে যাবে।
,
(০২)
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
ভোত বেলার বাতাস অবশ্যই শরীরের জন্য ভালো।
তবে হাদীস শরীফে এ সংক্রান্ত হাদীস খুজে পাইনি।
এ সময় যেকোনো কাজে বরকত হয়,মর্মে হাদীস এসেছে।
হজরত সখর গামেদি (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এ দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরুকে বরকতময় করুন।’ এ জন্যই রাসুল (সা.) কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। বর্ণনাকারী বলেন, হজরত সখর (রা.)-ও তাঁর ব্যবসায়ী কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয়। তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৬০৬)
(০৩)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:مَا مِنْ وَلَدٍ بَارٍّ يَنْظُرُ إِلٰى وَالِدَيْهِ نَظْرَةَ رَحْمَةٍ إِلَّا كَتَبَ اللهُ لَه بِكُلِّ نَظْرَةٍ حَجَّةً مَبْرُوْرَةً. قَالُوا: وَإِنْ نَظَرَ كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ؟ قَالَ:نَعَمَ اللهُ أَكْبَرُ وَأَطْيَبُ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মাতা-পিতার ভক্ত সন্তান নিজের মাতা-পিতাকে অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার ‘আমলনামায় একটি নফল হজ্জ-এর সাওয়াব লিখে দেন। সহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! যদি দৈনিক একশ’বার দৃষ্টিপাত করে? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, তাও। আল্লাহ মহান ও পবিত্র।
(বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান ৭৮৫৮,মিশকাতুল মাসাবিহ ৪৯৪৪)
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
যদিও উল্লেখিত হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসিনে কেরামগন অনেক রকম প্রশ্ন তুলেছেন,তারপরেও মা-বাবার দিকে
অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখা যে ছওয়াব,এ ব্যপারে কোনো সন্দেহ নেই।
(০৪)
হারাম জিনিস বিশেষ প্রয়োজন বশত শরীয়ত অনুমতি প্রদান করেছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা মাফ করবেন।
,
তার দলিলঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
حُرِّمَتۡ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃُ وَ الدَّمُ وَ لَحۡمُ الۡخِنۡزِیۡرِ وَ مَاۤ اُہِلَّ لِغَیۡرِ اللّٰہِ بِہٖ وَ الۡمُنۡخَنِقَۃُ وَ الۡمَوۡقُوۡذَۃُ وَ الۡمُتَرَدِّیَۃُ وَ النَّطِیۡحَۃُ وَ مَاۤ اَکَلَ السَّبُعُ اِلَّا مَا ذَکَّیۡتُمۡ ۟ وَ مَا ذُبِحَ عَلَی النُّصُبِ وَ اَنۡ تَسۡتَقۡسِمُوۡا بِالۡاَزۡلَامِ ؕ ذٰلِکُمۡ فِسۡقٌ ؕ اَلۡیَوۡمَ یَئِسَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ دِیۡنِکُمۡ فَلَا تَخۡشَوۡہُمۡ وَ اخۡشَوۡنِ ؕ اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا ؕ فَمَنِ اضۡطُرَّ فِیۡ مَخۡمَصَۃٍ غَیۡرَ مُتَجَانِفٍ لِّاِثۡمٍ ۙ فَاِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۳﴾
তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোস্ত, আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা পশু, গলা চিপে মারা যাওয়া জন্তু, প্রহারে মারা যাওয়া জন্তু, উপর থেকে পড়ে মারা যাওয়া জন্তু, অন্যপ্রাণীর শিং এর আঘাতে মারা যাওয়া জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু; তবে যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা ছাড়া, আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলী দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দিয়ে ভাগ নির্ণয় করা, এসব পাপ কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে; কাজেই তাদেরকে করো না এবং আমাকেই ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতঃপর কেউ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সুরা আল মায়েদা ০৩)
(০৫)
জোলাপ সম্পর্কে জানতে প্রথমেই আমরা এ সংক্রান্ত হাদীস জেনে নেইঃ
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عن عبد الله ابن قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يَكْتَحِلُ قَبْلَ أَنْ يَنَامَ بِالْإِثْمِدِ ثَلَاثًا فِي كُلِّ عَيْنٍ . قَالَ : وَقَالَ : " إِنَّ خَيْرَ مَا تَدَاوَيْتُمْ بِهِ : اللَّدُودُ ، وَالسَّعُوطُ ، وَالْحِجَامَةُ ، وَالْمَشِيُّ . وَخَيْرَ مَا اكْتَحَلْتُمْ بِهِ الْإِثْمِدُ ، فَإِنَّهُ يَجْلُو الْبَصَرَ ، وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ ، وَإِنَّ خَيْرَ مَا تَحْتَجِمُونَ فِيهِ يَوْمُ سَبْعَ عَشْرَةَ ، وَيَوْمُ تِسْعَ عَشْرَةَ ، وَيَوْمُ إِحْدَى وَعِشْرِينَ " وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - حَيْثُ عُرِجَ بِهِ ، مَا مَرَّ عَلَى مَلَأٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا : عَلَيْكَ بِالْحِجَامَةِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
[‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে শোয়ার পূর্বে প্রত্যেক চোখে তিন তিন শলাকা ইসমিদ সুরমা লাগাতেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেনঃ যে সব জিনিস দ্বারা তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম-লাদূদ, সাঊত, শিঙ্গা লাগানো এবং জোলাপ নেয়া। যে সব সুরমা তোমরা ব্যবহার করো তার মধ্যে ইসমিদ সর্বোত্তম। তাতে চোখের দৃষ্টিশক্তি সতেজ হয় এবং চোখের পলকের চুল অধিক জন্মায়। আর শিঙ্গা লাগানোর জন্য উত্তম দিন হলো চাঁদের সতের, ঊনিশ ও একুশ তারিখ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যখন মি‘রাজ হয়েছিল, তখন তিনি মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) যে দলের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বলেছিলেন যে, আপনি অবশ্যই শিঙ্গা লাগাবেন।
তিরমিযী ২০৫৩, ২০৪৮; ইবনু মাজাহ ৩৪৯৫, ৩৪৯৭, ৩৪৯৯; য‘ঈফুল জামি‘ ১৮৫৫,মিশকাতুল মাসাবিহ ৪৪৭৩)
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ-
(اللَّدُودُ) মুখের পার্শ্ব দিয়ে যে ঔষধ সেবন করানো হয় তাকে ‘লাদূদ’ বলা হয়। সম্ভবত এটি সে সময়কার বিশেষ এক প্রকার উত্তম ঔষধ, যা ঐভাবে (ফোঁটা ফোঁটা করে মুখের ঔষধ) সেবন করানো হত।
(السَّعُوطُ) ড্রপ দিয়ে (ফোঁটা ফোঁটা করে নাকের ঔষধ) নাকে ব্যবহারের ঔষধ। সে সময়কার উত্তম ঔষধের মাঝে এটিকে গণ্য করা হয়েছে।
(الْحِجَامَةُ) রক্তমোক্ষণ চিকিৎসা। শিঙ্গা ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত রক্ত উঠানোর মাধ্যমে এই চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আধুনিক কালে এর নতুন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে।
★★(الْمَشِيُّ) শব্দটির ‘মীম’ হরফে যবর, ‘শিন’ অক্ষরে যের এবং পরবর্তীতে ‘ইয়া’ তাশদীদযুক্ত। পেট নামানোর কাজে ব্যবহৃত যে কোন ঔষধকেই ‘মাশিয়্যু’ . জোলাপ বলা হয়। শব্দটি (الْمَشِيُّ) থেকে উদগত। যার অর্থ চলাফেরা। তুরিবিশতী বলেনঃ পেট নামানোর কাজে ব্যবহৃত ঔষধকে ‘মাশিয়্যু’ জোলাপ বলার কারণ হলো, এই ঔষধ সেবনকারী বাথরুমে যাওয়া আসা বেড়ে যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
এই চারটি চিকিৎসাকে সর্বোত্তম চিকিৎসা বলে আখ্যায়িত করেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এগুলোই হয়ত সে সময়কার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা ছিল।
(وَإِنَّ خَيْرَ مَا تَحْتَجِمُونَ فِيهِ يَوْمُ سَبْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ تِسْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ إِحْدٰى وَعِشْرِينَ) শিঙ্গা লাগিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন কোন হাদীসে কিছু তারিখকে উত্তম বলা হয়েছে। যেমন বর্ণিত হাদীসে চান্দ্র মাসের ১৭, ১৯, ২১ তারিখে হিজামাহ্ উত্তম বলা হয়েছে। কোন হাদীসে সপ্তাহের কিছু দিনে শিঙ্গা লাগাতে উৎসাহিত করা হয়েছে আবার কিছু দিনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন সোমবার ও মঙ্গলবারে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং অন্যদিন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
তবে নির্ধারিত তারিখ বা নির্ধারিত দিনে হিজামাহ্ সম্পর্কে যত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তার সবই দুর্বল বলে মত দিয়েছেন মুহাদ্দিসীনে কিরাম। মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেনঃ নির্ধারিত দিনে হিজামার প্রতি উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিতের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ কিছু নেই।
(حَيْثُ عُرِجَ بِه) অর্থাৎ মি‘রাজ রজনীতে যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আকাশে চড়ানো হচ্ছিল, তখন যখনই তিনি মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) দল অতিক্রম করেছেন, মালায়িকাহ্ তাকে বলেছে- (عَلَيْكَ بِالْحِجَامَةِ) তোমার জন্য হিজামা জরুরী বা তুমি হিজামাকে আঁকড়ে ধরো। হাদীসটি সহীহ হলে হিজামার গুরুত্ব আরো অনেক বেশি বেড়ে যেত। তবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজামাহ্ দ্বারা চিকিৎসা করেছেন তা বিভিন্ন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত এবং উপকার ও গুরুত্বও প্রমাণিত।
★★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
পেট নামানোর কাজে ব্যবহৃত যে কোন ঔষধকেই ‘মাশিয়্যু’ . জোলাপ বলা হয়।