আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
2,612 views
in সালাত(Prayer) by (47 points)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, 

মুহতারাম, 185 এবং 2665 নং প্রশ্নোত্তরের প্রেক্ষিতে কিছু সংশয়, কিছু প্রশ্ন এবং কিছু বিষয় পরিষ্কার হওয়ার জন্য পেশ করছি-

  1. ফরজ এবং নফল নামাজের রুকু,সিজদাহ,১ম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদি সকল স্থানে কুরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত দোয়া সমূহ ব্যতীত ওলামায়ে কেরামের রচিত বিভিন্ন দোয়া কিংবা আরবি ভাষায় ভিন্ন যেকোন দোয়া করা যাবে কিনা?
  2. যে কোন নামাজে বাংলা ভাষায় দোয়া করা যাবে কি?
  3. নামাজ ব্যতীত, কেবল দোয়ার উদ্দেশ্যে সিজদাহ করা হলে সেই সিজদায় বাংলায় দোয়া করা এবং ওলামায়ে কেরামের রচিত বিভিন্ন দোয়া কিংবা আরবি ভাষায় ভিন্ন কোন দোয়া করা যাবে কিনা?
  4. জানামতে, নামাজের মধ্যে দুনিয়াবী কোন দুআ কিংবা এমন কোন আকাঙ্ক্ষা যা মানুষের কাছ থেকে চেয়ে পাওয়া যায় - করা হলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। এই বক্তব্যটির বিশ্লেষণ জানতে চাই। কারণ সাধারণত মানুষ যখন কোন মুসীবতের মধ্যে পড়ে তখন সেই মুসিবত থেকে মুক্তি লাভের জন্য কিংবা দৈনন্দিন জীবনের কোন হাজত পূরণের লক্ষ্যে ইবাদতের মধ্যে 'মনে মনে' আকাঙ্ক্ষা করে থাকে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা, সম্পদ লাভ, বিয়ে করা, সম্মান লাভ, জ্ঞানার্জন, বিপদ থেকে মুক্তি ইত্যাদি বিবিধ বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত থাকে। জানামতে কোন হাজত-মুসিবত দেখা দিলে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করতে বলা হয়। তাহলে এভাবে 'মনে-মনে আকাঙ্ক্ষার' বিষয়টি কি বৈধ? আর জানামতে এমন নির্দিষ্ট বিভিন্ন হাজত লাভ এবং মুসিবত থেকে মুক্তি লাভের জন্য কোরআন-সুন্নাহয়‌ও বিভিন্ন দোয়া বর্ণিত আছে। তাহলে 'মৌখিকভাবেও' নামাজের মধ্যে এসকল দোয়া এমন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে করা কি বৈধ হবে?

1 Answer

0 votes
by (657,800 points)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله 
بسم الله الرحمن الرحيم


(১.২)শরীয়তের বিধান অনুযায়ী  নফল নামাজের সেজদা আখেরী বৈঠকে কুরআন সুন্নাহর বর্ণিত দোয়া ব্যাতিত যেকোনো দোয়া,ওলামায়ে কেরামের রচিত বিভিন্ন দোয়া করা যাবে,  সমস্যা নেই। 
কিন্তু দুনিয়াবি দুআ করা যাবেনা,এবং আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় দুআ করা যাবে না।
ফরজ নামাজে নির্দিষ্ট দোয়া ব্যাতিত অন্যান্য দোয়া করা ঠিক নয়। 
উলামায়ে কেরামগন নিষেধ করেছেন।
 
তবে কিছু ইসলামী স্কলারদের মতে ফরজ নামাজে 
কুরআন সুন্নাহর বর্ণিত দোয়া ব্যাতিত যেকোনো দোয়া,ওলামায়ে কেরামের রচিত বিভিন্ন দোয়া
পড়া জায়েয আছে। 
তবে তারা ফরজ নামাজে কুরআন সুন্নাহে বর্ণিত দূআ ব্যাতিত অন্যান্য দুআ  করা থেকে অনুৎসাহিত করেছেন।

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يَقُولُ فِى سُجُودِهِ « اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِى ذَنْبِى كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ সেজদায় পড়তেন আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি’ কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু”। {তাহাবী শরীফ, হাদিস নং-১৩০৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৮৭৮, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-১১১২, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং-৬৭২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-১৯৩১}

۔

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ  
فى الدر المختار– ( ودعا ) بالعربية ، وحرم بغيرها، (كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة، مطلب فى الدعاء بغير العربية، 2/233-234)
যার সারমর্ম হলোঃ নামাজে আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় দোয়া পড়া নাজায়েজ।  

★তবে আহলে হাদীসদের উলামায়ে কেরামদের মত হলো নামাজে আরবী ছাড়া মাতৃভাষাতেও দোয়া করা জায়েজ আছে।
তাদের মতানুসারীরা এই মতটি অবলম্বন করতে পারেন।
 
,
(০৩) নামাজ ব্যতীত, কেবল দোয়ার উদ্দেশ্যে সিজদাহ করা হলে সেই সিজদায় বাংলায় দোয়া করা এবং ওলামায়ে কেরামের রচিত বিভিন্ন দোয়া কিংবা আরবি ভাষায় ভিন্ন কোন দোয়া করা যাবে।
কোনো সমস্যা নেই।  
.

(০৪) নামাজের মধ্যে দুনিয়াবী কোন দুআ কিংবা এমন কোন আকাঙ্ক্ষা যা মানুষের কাছ থেকে চেয়ে পাওয়া যায় - করা হলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। এই বক্তব্যটির বিশ্লেষণঃ

নফল নামাযে চাই তা তাহাজ্জুদ হোক বা অন্য নামায হোক সিজদায় গিয়ে কুরআন-সুন্নাহে বর্ণিত দুআ করা যাবে। বা কুরআনে বা হাদীসে আছে এমন দুআর সমার্থক শব্দের দুআ করা যাবে। বা আখেরাতের জন্য দুআ করা যাবে। কিন্তু দুনিয়াবী দুআ করা যাবে না। 

দুনিয়াবী দুআ করলে নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।

দুনিয়াবী দুআ-যেমন হে আল্লাহ! আমাকে এক লাখ টাকা দান করেন।

আখেরাতের জন্য দুআ-যেমন-হে আল্লাহ আমাকে জান্নাত দান করেন।

فى مراقى الفلاح-ويفسد الدعاء بما يشابه كلامنا الخ (طحطاوى على مراقى الفلاح-261، وكذا فى الفتاوى الهندية-2/3)
যার সারমর্ম হলোঃ আমাদের পরস্পরে  কথার সাথে সাদৃশ্যতা রাখে,এমন দুআ  করলে নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ২/৩ মারাকিল ফালাহ ২৬১)  
   
বাহরুর রায়েক গ্রন্থে আছেঃ 
وفى البحر الرائق- قوله ( ودعا بما يشبه ألفاظ القرآن والسنة لا كلام الناس ) أي بالدعاء الموجود في القرآن ولم يرد حقيقة المشابهة إذ القرآن معجز لا يشابهه شيء ولكن أطلقها لإرادته نفس الدعاء لا قراءة القرآن مثل { ربنا لا تؤاخذنا } البقرة 286 { ربنا لا تزغ قلوبنا } آل عمران 8 { رب اغفر لي ولوالدي } نوح 28 { ربنا آتنا في الدنيا حسنة } البقرة 201 إلى آخر كل من الآيات 

وقوله والسنة يجوز نصبه عطفا على ألفاظ أي دعا بما يشبه ألفاظ السنة وهي الأدعية المأثورة ومن أحسنها ما في صحيح مسلم اللهم إني أعوذ بك من عذاب جهنم ومن عذاب القبر ومن فتنة المحيا والممات ومن فتنة المسيح الدجال 

ويجوز جره عطفا على القرآن أو ما أي دعا بما يشبه ألفاظ السنة أو دعا بالسنة (البحر الرائق، كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة، فصل هو في اللغة فرق ما بين الشيئين، 
যার সারমর্ম হলো কুরআন হাদিসে বর্ণিত দোয়ার সাথে সাদৃশ্য রাখে, এমন দোয়া করা যাবে, দুনিয়াবি দোয়া করা যাবেনা।
,
সাধারণত মানুষ যখন কোন মুসীবতের মধ্যে পড়ে তখন সেই মুসিবত থেকে মুক্তি লাভের জন্য কিংবা দৈনন্দিন জীবনের কোন হাজত পূরণের লক্ষ্যে ইবাদতের মধ্যে 'মনে মনে' আকাঙ্ক্ষা করে থাকে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা, সম্পদ লাভ, বিয়ে করা, সম্মান লাভ, জ্ঞানার্জন, বিপদ থেকে মুক্তি ইত্যাদি বিবিধ বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত থাকে।
কোন হাজত-মুসিবত দেখা দিলে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করতে বলা হয়।  এভাবে 'মনে-মনে আকাঙ্ক্ষার' বিষয়টি জায়েজ আছে, তবে মুখে উচ্চারণ করা যাবেনা।

,
বিভিন্ন হাজত লাভ এবং মুসিবত থেকে মুক্তি লাভের জন্য কোরআন-সুন্নাহয় বিভিন্ন দোয়া বর্ণিত আছে। নফল নামাজের মধ্যে 'মৌখিকভাবেও'  এসকল দোয়া পড়া যাবে,কোনো সমস্যা নেই।
তবে উলামায়ে কেরাম ফরজ নামাজে এসকল দুআ  করা থেকে অনুৎসাহিত করেছেন।
তবে মনে মনে করা যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 214 views
...