আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
1,008 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
edited by
আমি আমার সীমিত জ্ঞান অনুযায়ি আমার পরিবার কে হানাফি হিসেবে জানি।

আসসালামু আলাইকুম,আমার পরিবারগত ভাবে পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ের কথা ঠিক করা হয়েছে,কিন্তু ছেলে সরকারি চাকুরিজিবি ও চাকুরী ক্ষেত্রে বিয়ের ব্যপারে কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকায় ২০২২ এর আগে বিয়ে করানো সম্ভব হচ্ছেনা,এমতাবস্থায় আমি ও ছেলে মিলে গোপনে কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম,কিন্তু বর্তমান করনা পরিস্থিতিতে তার ছুটি ও দেয়া হচ্ছেনা।সে ক্ষেত্রে আমি আমার গ্রামের মাওলানা কে জিজ্ঞেস করে ফোনে বিয়ের ব্যপারে জানি,তিনি বলেছেন,এটি জায়েয।এবং সেকথা মত ভিডিও কল এ সাক্ষীর উপস্থিতিতে আমরা বিয়ে করি,বাড়ির মাওলানা সাহেব ই আমদের বিয়ে পড়ান।উল্লেখ্য যে,ছেলের পরিবার ও চাকুরির ক্ষেত্রে রিস্ক নিতে রাজি নয়,তাই তারা বিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না,তাই আমিও আমার বাসায় আমার বাবা কে জানাই নি,তবে আমার মা জানেন,এবং বিয়ের আগে ও জানতেন।আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই ক্ষেত্রে আমার বিয়ে কি হালাল হয়নি?কারন এই করনার মদ্ধে আমি চাইলেও বের হয়ে বিয়ে করতে পারব না,এবং সে ও ছুটি পাবে না,আমি আমার পাপের বোঝা আর না বাড়ানোর জন্য আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে কাজ টি করেছি।এখন এরকম মহামারিতে কি এভাবে বিয়ে আমার জন্য হালাল হয়নি?উল্লেখ্য যে আমরা শুধু মৌখিক ভাবে বিয়ে করেছি,কাগজ পত্রে নয়।এবং দুইজন ছেলে এবং একজন মেয়ে ছিল সাক্ষী হিসেবে,যার মদ্ধে একজন আমার ওলি হিসেবে আমার সামনে হুজুর এর কথা উত্থাপন করেন।ওইদিকে হুজুর এর সাথে আমার এক মামা ও ছিলেন,কিন্তু লজ্জাবশত তাকে আমি আমাকে ওলির করা প্রশ্নগুলো করতে দেইনি।এবং শেষে ১ লাখ টাকা মহরে বিয়ে পড়ান হয়।আমি আশা করি আমাকে সহিহ পথ দেখাবেন এবং আমার কি করনিয় তা বলবেন।ধন্যবাদ

1 Answer

0 votes
by (697,760 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ


আজকাল মুবাইলের মাধ্যমে অনেক ভাবেই কথা বলা যায়, অডিও কলে কথা যায় ঠিকতেনিভাবে ভিডিও কলেও কথা বলা যায়।

সর্বমোট তিনটি পদ্ধতিতেই অধিকাংশ মানুষকে কথা বলতে দেখা যায়।
  1. (১)ঐ পদ্ধতি যা দ্বারা শুধুমাত্র একজন মানুষ কথা বলে ও শুনে।আর অন্য কেউ বলতেও পারে না এবং শুনতেও না।
  2. (২)ঐ পদ্ধতি যা দ্বারা একজন কথা বললেও অন্য সবাই শুনতে পারে।
  3. (৩) ভিডিও কল(স্কাইফ,ওয়াটসাফ,ইমু ইত্যাদি)
যার দ্বারা লাউড স্পিকারের মাধ্যমে সবাই কথা শুনতেও পারে এবং দেখতেও পাওয়া যায় এবং ইচ্ছা করলে কথাও বলা যায়।

প্রথম প্রকার তথা মুবাইল কলের মাধ্যমে বিবাহ সংগঠিত হবে না। কেননা শরীয়তে যেসব ক্ষেত্রে লেনদেন বৈধ হওয়ার জন্য সাক্ষ্যকে শর্ত করা হয়েছে,সেক্ষেত্রে সাক্ষীগণের শোনা শর্ত। কিন্তু এখানে সাক্ষীদয়ের শ্রবণ পাওয়া যাচ্ছে না,বিধায় সর্বসম্মতিক্রমে বিবাহ সংগঠিত হবে না।
আল্লামা হাসক্বফী রা বলেনঃ 
(وَ) شُرِطَ (حُضُورُ) شَاهِدَيْنِ(حُرَّيْنِ) أَوْ حُرٌّ وَحُرَّتَيْن (مُكَلَّفَيْنِ سَامِعَيْنِ قَوْلَهُمَا مَعًا)
দুজন স্বাধীন পুরুষ অথবা একজন স্বাধীন পুরুষ ও দুজন স্বাধীন মহিলা সাক্ষী হিসেবে  উপস্থিত থাকতে হবে,যারা শরীয়তের বিধি-বিধান পালনে দায়বদ্ধ থাকবে,এবং একসাথে উভয় (স্বামী-স্ত্রী) র ইজাব-কবুল শ্রবণ করবে।(আদ্দুরুল মুখতার-৩/২২)

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত আছে....
(ومنها) سماع الشاهدين كلامهما معا هكذا في فتح القدير فلا ينعقد بشهادة نائمين إذا لم يسمعا كلام العاقدين، 
দুনু সাক্ষীকে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ইজাব-কবুল শুনতে হবে,(ফাতহুল ক্বাদীর)সুতরাং না শুনার ধরুণ ঘুমন্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য দ্বারা বিবাহ সংগঠিত হবে না।(১/২৬৮)

দ্বিতীয় প্রকার ও তৃতীয় প্রকারে ও অধিকাংশ উলামায়ে কেরামদের মতে বিবাহ সংগঠিত হবে না।কেননা বিবাহের জন্য মজলিসে সাক্ষী উপস্থিত হওয়া শর্ত।

যেমন ইবনে আবেদীন শামী রাহ এ সম্পর্কে বলেনঃ 
(قَوْلُهُ: وَشُرِطَ حُضُورُ شَاهِدَيْنِ) أَيْ يَشْهَدَانِ عَلَى الْعَقْدِ، أَمَّا الشَّهَادَةُ عَلَى التَّوْكِيلِ بِالنِّكَاحِ فَلَيْسَتْ بِشَرْطٍ لِصِحَّتِهِ كَمَا قَدَّمْنَاهُ عَنْ الْبَحْرِ،
দুজন সাক্ষী মজলিসে উপস্থিত থাকা শর্ত।অর্থাৎ যারা মজলিসে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করবে।বিবাহের উকিল নিযুক্ত করণের সময় সাক্ষী উপস্থিত থাকা শর্ত নয়।রদ্দুল মুহতার-৩/২১;

এবং স্বামী-স্ত্রী এর মজলিস ও এক নয়।কেননা তারা দুজন দু-স্থানে।যদিও দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র দেখা গেলে হবে না বরং স্থিরভাবে একস্থানে বসে আলাপ করতে হবে।যেমন ইবনে আবেদীন শামী রাহ বলেনঃ
وَلَوْ عَقَدَا وَهُمَا يَمْشِيَانِ أَوْ يَسِيرَانِ عَلَى الدَّابَّةِ لَا يَجُوزُ،
যদি দু-জন অাকদ-অনুষ্টান সম্পন্ন করে এমতাবস্থায় যে,তারা দুজন হাটছে বা যানবাহনের উপর সওয়ার অবস্থায় চলছে(অবশ্য দু-জন সাক্ষীর বিদ্যমানে তা হচ্ছে)তাহলে এমতাবস্থায় বিবাহ সংগঠিত হবে রদ্দুল মুহতার৩/১৪;(দারুল ফিকর বাইরুত, মাকতাবা থেকে ৬ খন্ডে প্রকাশিত,১৪১২হিঃ-১৯৯২ইং।)

কিন্তু ভিডিওকল  বা অডিওকলে সাক্ষীগণ সরাসরি উপস্থিত থাকেন না। এমনি স্বামী-স্ত্রীর মজলিসও এক নয় বিধায় বিবাহ সংগঠিত হবে না।এবং ক্রয়-বিক্রয় ও সংগঠিত হবে না কেননা ক্রয়-বিক্রয়ে ও মজলিস এক হওয়া শর্ত।

তবে হ্যা যদি উপরোক্ত পদ্ধতিতে কাউকে উকিল বানানো হয় এবং উকিল মুওয়াক্কেলকে পূর্ব থেকে চিনে থাকেন,তাহলে এ পদ্ধতিতে উকিল বানানো বৈধ আছে।
এবং উকিল মুওয়াক্কিলের নাম দুজনমগ সাক্ষী রেখে অন্যর(ভাবি স্বামী-স্ত্রী যে কারো) কাছে প্রস্তাব করবে।
এভাবে হলে বিয়ে সংগঠিত হবে।কেননা উকিল বানানোর জন্য মজলিশ শর্ত নয়।(যেমন উপরে বর্ণিত রয়েছে)
নয়া মাসাঈল আউর উলামায়ে হিন্দ কে ফয়সালে-৯১-(গবেষণা সংগঠন প্রধান- মুফতী মুজাহিদুল ইসলাম ক্বাসেমী-ইফা পাবলিকেশন্স, দিল্লি)

অডিও কল ভিডিও কল এর মাধ্যমে বিবাহ সংগঠিত হবে না।বিস্তারিত জানতে..........চন্দ আহম আচরী মাসাঈল-২৩০;(দারুল উলূম দেওবন্দের ইফতা বিভাগ কর্তৃক ১৪৩৩হিঃ মোতাঃ২০১২ ইং তে প্রকাশিত)

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রাহ বলেনঃ
(قَوْلُهُ: اتِّحَادُ الْمَجْلِسِ) قَالَ فِي الْبَحْرِ: فَلَوْ اخْتَلَفَ الْمَجْلِسُ لَمْ يَنْعَقِدْ، ----إلي ان قال-----
وَلَوْ عَقَدَا وَهُمَا يَمْشِيَانِ أَوْ يَسِيرَانِ عَلَى الدَّابَّةِ لَا يَجُوزُ،
স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ইজাব-কবুলের মজলিস এক হতে হবে।যদি মজলিস ভিন্ন হয় তাহলে বিবাহ সংগঠিত হবে না। প্রসঙ্গক্রমে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেনঃ স্বামী-স্ত্রী দু-জন যদি হাটতে হাটতে ইজাব-কবুল করেন,অথবা সওয়ারীর উপর সওয়ার হয়ে চলতে চলতে ইজাব-কবুল বলেনঃ তাহলেও বিবাহ সংগঠিত হবে না।(রদ্দুল মুহতার-৩/১৪)

সাক্ষী উপস্থিত না থাকার ধরুণ বিবাহ সংগঠিত হবে না।ফাতাওয়ায়ে উসমানী-মুফতী তাক্বী উসমানী-২/৩০৫;("মাকতাবাতু মা'রিফুল কোরআন" করাচী, কর্তৃক ১৪৩৩হিঃ-২০১২ইংরেজীে প্রকাশিত)

  • সুওয়াল ও জওয়াব-৪/৭৯ক্বারী আব্দুল বাসিত-দারুল এশা'আত-পাকিস্তান,কর্তৃক ৪ খন্ডে ২০০৬সালে প্রকাশিত।

  • জাদীদ ফেকহী মাসাঈল-১/১৯২(জমজম পাবলিশার কর্তৃক ২০১০সালে প্রকাশিত) 

তবে আরব দেশের কেউ কেউ যেমন বিন বায বিয়ে সহীহ হওয়ার কথাও বলে থাকেন। কিন্তু সতর্কতামূলক তাদের কথাকে গ্রাহ্য করা যাবে না।কেননা বিয়েতে আসল হচ্ছে হারাম অর্থাৎ মহিলার  বুজা বা স্ত্রী লিংগ পুরুষদের জন্য হারাম কিন্তু পরবর্তীতে অনেক শর্তাদির মাধ্যমে বিয়ে নামক পদ্ধতি দিয়ে  তা পুরুষদের জন্য হালাল করা হয়েছে।
যেমন বিশিষ্ট উসুলবিদ আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহ বলেনঃ-
الأصل في الأبضاع التحريم 
স্ত্রীলিঙ্গ সমূহে মূল হুকুম হচ্ছে হারাম হওয়া।আল-আশবাহ ওয়ান নাযাইর১/৫৭(দারুল কুতুব আল আলামিয়্যাহ)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার বিয়ে শুদ্ধ হয়নি।তাই আপনার প্রতি নসিহা হল,আপনি পারিবারিক ভাবেই বিয়ে সম্পন্ন করবেন।এবং হেকমতে  সাথে আপনি আপনার ফ্যমিলিকে বুঝাবেন।এবং ঐ ছেলে তার পরিবারকে বুঝাবে।পারিবারিক ভাবে বিয়ে পাক্কা রয়েছে।তবে তারিখ অনেক দূর।সেজন্য আপনারা গোনাহ থেকে বাচতে গোপনে বিয়ে করতে চান।মূলত বর্তমান সামাজিক ব্যবস্থা আপনাদে কে এই গোপন বিয়ের দিকে অগ্রসর হতে বাধ্য করছে।এ দায়ভার সমস্ত মুসলমানের কেন তারা ইসলামী শাসনব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে ইসলামি সমাজ ব্যবস্থা গড়ছেন না।তাই নিতান্তই যদি আপনারা গোপনে বিয়ে করতে চান,তাহলে আপনি অথবা সে উকিল মারফত বিয়ে করতে পারবেন।আপনি একজন উকিল নিযুক্ত করে তার নিকট পাঠিয়ে দিবেন।ঐ উকিল দুইজন সাক্ষীর সম্মতিতে ইজাব কবুল করে বিয়েকে সম্পন্ন  করে আসবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (31 points)
আসসালামু আলাইকুম, আমার বিয়ে হয়েছিলো মোবাইলে।
ছেলে একজন উকিল এবং একজন সাক্ষি পাঠিয়েছিলেন। 
আমার কাছে এবং আমার পক্ষ হতে আমার ভাই উকিল নিযুক্ত হয়েছিলো।
দু পরিবারের ই সন্মতি ছিলো।
আমার বিয়ে কি হালাল হয়ছে

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...