আমি একটি সরকারী চাকরি করি যেটাতে ঢোকার পর প্রভিডেন্ট ফান্ড খোলার আগে আমি ফোনে মুফতি দেলোয়ার হোসেন (আকবর কমপ্লেক্স) এর সাথে কথা বলে এর মাসলা জেনেছিলাম। যদি আমার শুনতে ভুল না হয় তাহলে তিনি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাকে 'সুদ নয়' বলেছিলেন। এরপর আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, সরকার যেটা কেটে রাখে (৫%) তার বাইরেও সর্বোচ্চ ২৫% পর্যন্ত কাটানো যায়, এটা করলে সুদ হবে কিনা। আমার ভুল না হয়ে থাকলে তিনি বলেছিলেন যে এটাও জায়েজ। তার যুক্তি ছিল এরকম যে-যেহেতু বেতন থেকে কেটে নেওয়া টাকাটা আমার হাতে আসছে না, বা আমার একাউন্টে লাগছে না, তার আগেই সরকার নিজের মালিকানায় নিয়ে নিচ্ছে, কাজেই এটা আমার জন্য সুদ না। কারণ আমি মালিক হচ্ছি না। কিন্তু যদি টাকাটা আমার মালিকানায় আসার পরে আমি সুদী ব্যাংকে জমা দিই, তারমানে আমি মালিক হওয়ার পরে জমা দিলাম, কাজেই এর দায় দায়িত্ব আমার উপর বর্তাবে। অর্থাৎ, ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, আমার মালিক আমাকে বেতন দেওয়ার আগেই আমার কাছ থেকে কিছু টাকা বাধ্যতামূলকভাবে কেটে রাখবে, আমি তাকে বললাম, আপনি আরো বেশি করে কেটে রাখুন। এরপর তিনি তা দিয়ে নিজ মনমতো ব্যবসা করে অথবা সুদ খেয়ে লাভ করে নিজেও নিলেন আমাকে দিলেন রিওয়ার্ড হিসেবে। এখন তিনি সুদ খেলে এই দায় তার, আমি তো তাকে সুদ খেতে বলিনি। আমি তাকে শুধু আমাকে টাকা দেওয়ার আগেই কিছু টাকা বেশি করে কেটে রাখতে বলেছি এবং যখন বলেছি তখন আমি ওই টাকাটার মালিক হইনি, এবং যখন তিনি কেটেছেন তখনও মালিক হইনি। কাজেই এটা সুদ না, বাধ্যতামূলকভাবে কাটলে যেমন জায়েজ, তেমনি এটাও জায়েজ-কারণ উভয় ক্ষেত্রেই মূলকথা হলো বেতনের টাকাটা আমাকে পরিশোধের আগেই কেটে রেখেছে (যদিও এক্ষেত্রে আমার অনুমতি দেওয়ার কারণেই কেটেছে, কিন্তু শরিয়ত হিসেবে মালিকানা তো আমি বুঝে পাইনি)। কিন্তু আইওএম এর ক্লাস থেকে জানতে পারলাম যে ঐচ্ছিকভাবে অনুমতি দিলে সেটার অতিরিক্তটুকু সুদ। এক্ষেত্রে আমার জিজ্ঞাসা হলো কার কথাটি সঠিক। বাধ্যতামূলক কর্তন থেকে লাভটি যে লজিকের কারণে জায়েজ (অর্থাৎ, মালিকানা বুঝে না পাওয়া), ঐচ্ছিক কর্তনের ক্ষেত্রেও একই লজিকের কারণে জায়েজ হবে কিনা।
(বোঝার সুবিধার জন্য আমি প্রশ্নটা আরেকটু ক্লিয়ার করছিঃ যদি প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য যে ৫% টাকা জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক সেটা সরকার নিজে থেকে কর্তন না করত, পুরো বেতন হাতে দেওয়ার পর বাধ্য করত ৫% জমা দিতে (অর্থাৎ, আমার মালিকানায় টাকাটা চলে আসার পর), তাহলে কি এই টাকার উপর যে বর্ধিত দিত সেটা সুদ হত না? যদি উত্তর হয়, হ্যাঁ তখন সুদ হত, কারণ টাকাটা আপনি মালিকানায় পেয়ে গেছেন, তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে এখানে বাধ্যতামূলক কিংবা ঐচ্ছিকতা কোনো বিষয় না, কাউকে সুদ খেতে বাধ্য করলেও তা হারামই থাকে, আসল বিষয় হলো মালিকানা। সরকার মালিকানা বুঝে দেওয়ার আগেই কেটে নিলে তার দায় সরকারের (তাতে আমার ইচ্ছা থাকলেও), আর মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়ার পর আমি কাটালে তার দায় আমার (তাতে আমার অনিচ্ছা থাকলেও)। তাই নয় কি?