ﺣﺎﻣﺪﺍ ﻭ ﻣﺼﻠﻴﺎ ﻭﻣﺴﻠﻤﺎ
ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻻَ ﻋِﻠْﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻋَﻠَّﻤْﺘَﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ
আপনি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে আপনি আমাদিগকে যা শিখিয়েছন (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় আপনি-ই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।
গোঁফ কাটার পদ্ধতি নিয়ে হানাফি ফুকাহায়ে কেরামদের কিতাবে বিরোধপূর্ণ বক্তব্য অনুধাবন করা যাচ্ছে ।
মৌলিকভাবে বিষয়টা বুঝতে হলে আমাদেরকে তা জানতে হবে,
যেজন্য তা নিম্নে উল্লেখ করা হল।
★আল্লামা আলাউদ্দীন হাসক্বফী রাহ বলেনঃ-
حَلْقُ الشَّارِبِ بِدْعَةٌ وَقِيلَ سُنَّةٌ وَلَا بَأْسَ بِنَتْفِ الشَّيْبِ،
ভাবার্থঃ-
গোঁফ মুন্ডানো বেদ'আত।
তবে কেউ কেউ সুন্নাত ও বলে থাকেন।
সাদা গোঁফ উফড়ানোতে কোনো সমস্যা নেই।
-আদ্দুরুল মুখতার-৬/৪০৭;
(দারুল ফিকর বাইরুত, মাকতাবা থেকে ৬ খন্ডে প্রকাশিত,
১৪১২হিঃ-১৯৯২ইং।)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ الأَنْبَارِيُّ- الْمَعْنَى - قَالَا حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ مِسْعَرٍ، عَنْ أَبِي صَخْرَةَ، جَامِعِ بْنِ شَدَّادٍ عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، قَالَ ضِفْتُ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم ذَاتَ لَيْلَةٍ فَأَمَرَ بِجَنْبٍ فَشُوِيَ وَأَخَذَ الشَّفْرَةَ فَجَعَلَ يَحُزُّ لِي بِهَا مِنْهُ - قَالَ - فَجَاءَ بِلَالٌ فَآذَنَهُ بِالصَّلَاةِ - قَالَ - فَأَلْقَى الشَّفْرَةَ وَقَالَ " مَا لَهُ تَرِبَتْ يَدَاهُ " . وَقَامَ يُصَلِّي . زَادَ الأَنْبَارِيُّ وَكَانَ شَارِبِي وَفَى فَقَصَّهُ لِي عَلَى سِوَاكٍ . أَوْ قَالَ أَقُصُّهُ لَكَ عَلَى سِوَاكٍ
মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেহমান হলাম। তিনি আমার জন্য একটি বকরীর রান আনার নির্দেশ দিলেন। রান ভাজি করা হলে তিনি ছুরি নিয়ে আমার জন্য গোশত কাটতে লাগলেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ এমতাবস্থায় বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে সলাতের কথা অবহিত করেন। ফলে তিনি ছুরি ফেলে দিয়ে বললেনঃ তার কি হয়েছে! তার হাত ধুলায় ধুসরিত হোক! অতঃপর সলাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন।
বর্ণনাকারী আনবারীর বর্ণনায় আরো আছেঃ আমার (মুগীরাহর) গোঁফ কিছুটা বড় হয়ে গিয়েছিল বিধায় তিনি আমার গোফের নীচে মিসওয়াক রেখে তা ছেঁটে ছোট করে দিলেন। অথবা বললেনঃ আমি তোমার গোঁফ মিসওয়াকের উপর রেখে ছোট করে কেটে দিব।
(আবু দাউদ ১৮৮.আহমাদ (৪/২৫২, ২৫৫), তিরমিযী ‘শামায়িলি মাহমুদিয়্যাহ (হাঃ ১৫৯), নাসায়ী, ‘সুনানুল কুবরা’ (৪/১৫৩))
★
মুহাম্মদ আমীন ইবনে উমর ইবনে আব্দুল আজীজ আবেদীন(ইবনে আবেদীন) শামী রাহ লিখেনঃ
وَاخْتُلِفَ فِي الْمَسْنُونِ فِي الشَّارِبِ هَلْ هُوَ الْقَصُّ أَوْ الْحَلْقُ؟ وَالْمَذْهَبُ عِنْدَ بَعْضِ الْمُتَأَخِّرِينَ مِنْ مَشَايِخِنَا أَنَّهُ الْقَصُّ. قَالَ فِي الْبَدَائِعِ: وَهُوَ الصَّحِيحُ. وَقَالَ الطَّحَاوِيُّ: الْقَصُّ حَسَنٌ وَالْحَلْقُ أَحْسَنُ، وَهُوَ قَوْلُ عُلَمَائِنَا الثَّلَاثَةِ نَهْرٌ.
ভাবার্থঃ-
গোঁফ কাটার মাসনুন পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।কেচি দিয়ে কাটা মাসনুন?
নাকি মুন্ডিয়ে ফেলা মাসনুন?এ সম্পর্কে
মুতা'আখ্খীরিন(পরবর্তী) উলামায়ে কেরামদের সিদ্ধান্ত হল,
কেচি দিয়ে কাটা মাসনুন।
বাদায়ে সানায়ে নামক কিতাবে এঅভিমতকেই বিশুদ্ধ বলা হয়েছে।
ইমাম ত্বাহাবী রাহ, বলেনঃ
কেছি দিয়ে কাটা উত্তম।এবং মুন্ডিয়ে ফেলা অতি উত্তম।
তিনি বলেনঃ এটাই আমাদের সম্মানিত ইমামগণের মত।
(নাহরুল ফায়েক)
অতঃপর ইবনে আবেদীন শামী রাহ,আরোও লিখেনঃ
قَالَ فِي الْفَتْحِ: وَتَفْسِيرُ الْقَصِّ أَنْ يَنْقُصَ حَتَّى يَنْتَقِصَ عَنْ الْإِطَارِ، وَهُوَ بِكَسْرِ الْهَمْزَةِ: مُلْتَقَى الْجِلْدَةِ وَاللَّحْمِ مِنْ الشَّفَةِ، وَكَلَامُ صَاحِبِ الْهِدَايَةِ عَلَى أَنْ يُحَاذِيَهُ. اهـ. وَأَمَّا طَرَفَا الشَّارِبِ وَهُمَا السِّبَالَانِ، فَقِيلَ هُمَا مِنْهُ، وَقِيلَ مِنْ اللِّحْيَةِ، وَعَلَيْهِ فَقِيلَ لَا بَأْسَ بِتَرْكِهِمَا، وَقِيلَ يُكْرَهُ لِمَا فِيهِ مِنْ التَّشَبُّهِ بِالْأَعَاجِمِ وَأَهْلِ الْكِتَابِ، وَهَذَا أَوْلَى بِالصَّوَابِ، وَتَمَامُهُ فِي حَاشِيَةِ نُوحٍ. وَرَجَّحَ فِي الْبَحْرِ مَا قَالَهُ الطَّحَاوِيُّ،(ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ - ﻛِﺘَﺎﺏُ ﺍﻟْﺤَﺞِّ ﺑَﺎﺏُ ﺍﻟْﺠِﻨَﺎﻳَﺎﺕِ ﺍﻟْﺠِﻨَﺎﻳَﺔُ)
ভাবার্থঃ-
কেচি দিয়ে কাটার পদ্ধতি হচ্ছে,
গোফকে ছেঁচে ছোট করা হবে,যতক্ষণ না ইত্বার পরিমাণ হবে।
ইত্বার পরিমাণ হওয়া মানে ঠোটের গোস্ত ও তার উপরিভাগের চামড়ার সমপরিমাণ হওয়া।
হেদায়া গ্রন্থকারের বক্তব্যর সারমর্মই হচ্ছে তা যা উপরোল্লিখিত অর্থাৎ ঠোটের উপরিভাগের চামড়া সমান সমান হওয়া।
আর গোফের উভয় সাইট,যাকে পরিভাষায় সিবালান বলা হয়,কেউ কেউ বলেন তা গোফের অন্তর্ভুক্ত আর কেউ বলেনঃ তা দাড়ির অন্তর্ভুক্ত।
দাড়ির অন্তর্ভুক্ত হলে তা রেখে দিতে কোনো কোনো সমস্যা নেই।
তবে কেউ বলেনঃ তা রাখা দেওয়া মাকরুহ।
কেননা তাতে অনারবী ও আহলে কিতাবদের অনুসরণ হবে।আর এটাই বিশুদ্ধ কথা।
এ সম্পর্কে পরিপূর্ণ আলোচনা হাশিয়ায়ে নুহে বর্ণিত রয়েছে।
রাহরুর রায়েক কিতাবে ইমাম ত্বাহাবীর উপরোক্ত বক্তব্যকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
(রদ্দুল মুহতার-২/৫৫০;-দারুল ফিকর বাইরুত, মাকতাবা থেকে ৬ খন্ডে প্রকাশিত,১৪১২হিঃ-১৯৯২ইং।)
"গোঁফ মুন্ডানো জায়েয আছে,তবে কেচি দিয়ে কাটা উত্তম"
(কিফায়াতুল মুফতী-৯/১৭৮-দারুল এশায়াত উর্দু বাজার করাচি,থেকে ২০০১ ইং তে ৮খন্ডে প্রকাশিত)
"গোঁফ মুন্ডানো পরিত্যাগ করে কেচি দিয়ে কাটা উত্তম"
ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১৯/৪২৩;
(দারুল ইফতা," জামেয়া ফারুক্বিয়া করাচি" কর্তৃক সত্যায়িত ও সংশোধিত সংস্করণ-২৫ ভলিউমে প্রকাশিত)
"উভয়টাই জায়েয তবে কেচি দিয়ে কাটা উত্তম"
(আহসানুল ফাতাওয়া-৮/৪৫১;-এইচ.এম.সাঈদ কম্পানি, করাচি থেকে ১০খন্ডে প্রকাশিত-১৩৯৮হিজরী)
★★এ সম্পর্কে অন্যান্য মাযহাবের উলামায়ে কেরামদের মতামত ★★
والمختار في الشارب ترك الاستئصال والاقتصار على ما يبدو به طرف الشفة والله أعلم
গ্রহণযোগ্য অভিমত হচ্ছে, গোঁফকে একেবারে মুলুৎপাটন না করা,বরং গোফকে এমনভাবে ছেঁচে ফেলা যাতে ঠোটের উপরিভাগ প্রকাশিত হয়।
(শরহুল মুসলিম,নববী-৩/১৫১;)
ﻭﻗﺪ ﺍﺧﺘﺎﺭ ﺍﻟﻄﺒﺮﻱ ﻭﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻋﻴﺎﺽ ﺟﻮﺍﺯ ﺍﻷﻣﺮﻳﻦ : ﺍﻟﺤﻒ ﻭﺍﻟﻘﺺ ،
ইমাম ত্বাবারী এবং কাযী ইয়ায রাহ বলেনঃ দুটিই জায়েয। মুন্ডানো এবং কেচি দিয়ে কাটা।
ইবনে হাজর আসক্বালানী রাহ এর অভিমতও অনুরূপ।
পূর্ণ আলোচনা দেখুন-(ফাতহুল বারী-১০/৩৪৭)
আবুল ওয়ালিদ বাজী রাহ লিখেনঃ
ﻭﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻮﻟﻴﺪ ﺍﻟﺒﺎﺟﻲ
" ﺭﻭﻯ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺤﻜﻢ ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ : ﻟﻴﺲ ﺇﺣﻔﺎﺀ ﺍﻟﺸﺎﺭﺏ ﺣﻠﻘﻪ ، ﻭﺃﺭﻯ ﺃﻥ ﻳﺆﺩﺏ ﻣﻦ ﺣﻠﻖ ﺷﺎﺭﺑﻪ . ﻭﺭﻭﻯ ﺃﺷﻬﺐ ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ : ﺣﻠﻘُﻪُ ﻣِﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ
ইমাম মালিক রাহ থেকে বর্ণিত আছে যে,
ﺇﺣﻔﺎﺀ ﺍﻟﺸﺎﺭﺏ
(ইহফাউশ শারেব)এর অর্থ মুন্ডানো নয়।
তিনি বলেনঃআমি মনে করি যে ব্যক্তি গোঁফকে মুন্ডাবে তাকে শিষ্টাচার শিক্ষার নিমিত্তে প্রয়োজনে বেত্রাঘাত করা হবে।
ইমাম মালিক রাহ থেকে আরোও বর্ণিত আছে যে,গোফকে মুন্ডানো বেদ’আত।(মুনতাক্বা শরহে মুয়াত্বা-৭/২৬৬)
ইমাম মালিক রাহ,আরোও বলেনঃ
ﻗﺎﻝ ﻣﺎﻟﻚ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ : ﻭﺭﻭﻱ ﻋﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﺇﺫﺍ ﺃﺣﺰَﻧَﻪُ ﺃﻣﺮٌ ﻓَﺘَﻞ ﺷﺎﺭﺑﻪ . ﻭﻟﻮ ﻛﺎﻥ ﻣﺤﻠﻮﻗﺎ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻓﻴﻪ ﻣﺎ ﻳﻔﺘﻞ-
" ﺍﻟﺘﻤﻬﻴﺪ -ﻟﻤﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻮﻃﺄ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻲ ﻭﺍﻷﺳﺎﻧﻴﺪ"
হযরত উমর রাযি থেকে বর্ণিত আছে যে,
যখন হযরত উমর রাযি কে কোনো বিষয় চিন্তিত করত,তখন তিনি গোফ কে টেনে টেনে বাজ করতেন।যদি তিনি সাধারণত গোঁফকে মুন্ডািয়ে রাখতেন,তাহলে তিনি কখনো চিন্তিত অবস্থায় গোফকে টেনে বাজ করার প্রয়াস পেতেন না(আত-তামহীদ,আব্দুল বর-৬২/৬৮২১)
ইমাম নববী রাহ, বলেনঃ
" ﺛﻢ ﺿﺎﺑﻂ ﻗﺺ ﺍﻟﺸﺎﺭﺏ ﺃﻥ ﻳﻘﺺ ﺣﺘﻰ ﻳﺒﺪﻭ ﻃﺮﻑُ ﺍﻟﺸﻔﺔ ، ﻭﻻ ﻳﺤﻔّﻪ ﻣﻦ ﺃﺻﻠﻪ , ﻫﺬﺍ ﻣﺬﻫﺒﻨﺎ " ﺍﻧﺘﻬﻰ .
গোঁফ কাটার মূলনীতি হচ্ছে,গোঁফকে কেচি দিয়ে কাটা হবে যতক্ষণ না ঠোটের সাইট প্রকাশিত হবে।তবে গোঁফকে মুন্ডিয়ে মুলুৎপাটন করা যাবে না।
এটাই আমাদের মাযহাব।(আল-মাযমুউ-৩৪/৩৪১১)
আল্লামা রমলী রাহ লিখেনঃ
ﻭﻓﻲ " ﻧﻬﺎﻳﺔ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺝ " ﻟﻠﺮﻣﻠﻲ ( 8/148 ) ﻣﻦ ﺃﺋﻤﺔ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻴﺔ : " ﻭﻳﻜﺮﻩ ﺍﻹﺣﻔﺎﺀ " ﺍﻧﺘﻬﻰ . ﻳﻌﻨﻲ : ﺇﺣﻔﺎﺀ ﺍﻟﺸﺎﺭﺏ
গোঁফকে মুলুৎপাটন করা মাকরুহ।
(নেহাতুল মুহতাজ-আল্লামা রামলী,৮/১৪৮)
বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আল্লামা বায়হাক্বী রাহ লিখেনঃ
ﻋﻦ ﺷﺮﺣﺒﻴﻞ ﺑﻦ ﻣﺴﻠﻢ ﺍﻟﺨﻮﻻﻧﻲ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ ﺧﻤﺴﺔ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﺼﻮﻥ ﺷﻮﺍﺭﺑﻬﻢ ﻭﻳﻌﻔﻮﻥ ﻟﺤﺎﻫﻢ ﻭﻳﺼﻔﺮﻭﻧﻬﺎ : ﺃﺑﻮ ﺃﻣﺎﻣﺔ ﺍﻟﺒﺎﻫﻠﻲ ، ﻭﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺑﺴﺮ ، ﻭﻋﺘﺒﺔ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺴﻠﻤﻲ ، ﻭﺍﻟﺤﺠﺎﺝ ﺑﻦ ﻋﺎﻣﺮ ﺍﻟﺜﻤﺎﻟﻲ ، ﻭﺍﻟﻤﻘﺪﺍﻡ ﺑﻦ ﻣﻌﺪ ﻳﻜﺮﺏ ﺍﻟﻜﻨﺪﻱ ، ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻘﺼﻮﻥ ﺷﻮﺍﺭﺑﻬﻢ ﻣﻊ ﻃﺮﻑ ﺍﻟﺸﻔﺔ
শুরাহবিল ইবনে মুসলিম আল-খাওলানী রাহ,' থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ
আমি পাঁচজন সাহাবীকে দেখেছি যারা গোফকে মুন্ডিয়েছেন,এবং দাড়ীকে (একমুষ্টি পরামাণ)ছেটেছেন,ও তাতে হলুদ রং মেখেছেন।
তারা হলেন,
আবু উমামা আল-বাহেলী রাযি,
আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর রাযি,
উতবাহ ইবনে আব্দুস সুলামা রাযি,
হাজ্জাজ ইবনে আমির আস-সুমালী রাযি,
মিক্বদাম ইবনে মা'দিকারুবা আল-কিন্দি রাযি।
তারা সবাই গোফকে কেচি দিয়ে ছেঁচে ছোট করতেন।(সুনানে কুবরা-ইমাম বায়হাক্বী-১/১৫১)
ইমাম শাওকানী রাহ লিখেনঃ
ﻭﺍﻹﺣﻔﺎﺀ ﻟﻴﺲ ﻛﻤﺎ ﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﻨﻮﻭﻱ ﻣﻦ ﺃﻥ ﻣﻌﻨﺎﻩ ﺍﺣﻔﻮﺍ ﻣﺎ ﻃﺎﻝ ﻋﻦ ﺍﻟﺸﻔﺘﻴﻦ ﺑﻞ ﺍﻹﺣﻔﺎﺀ ﺍﻻﺳﺘﺌﺼﺎﻝ ﻛﻤﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﺤﺎﺡ ﻭﺍﻟﻘﺎﻣﻮﺱ ﻭﺍﻟﻜﺸﺎﻑ ﻭﺳﺎﺋﺮ ﻛﺘﺐ ﺍﻟﻠﻐﺔ
ইহফা শব্দের অর্থ তা নয় যা ইমাম নববী রাহ ব্যখ্যা করেছেন।অর্থ্যাৎ ইমাম নববীর ব্যখ্যা ছিলো,ইহফা মানে ঠোটের উপরিভাগের অতিরিক্ত কেটে ফেলা।বরং ইহফার অর্থ হল,মুন্ডিয়ে মুলৎপাটন করা।যেমন সিহাহ এবং ক্বামূস এবং কাশ্শাফ নামীয় বিভিন্ন রকম কিতাবে বর্ণিত আছে।
(নাইলুল আওতার)
★★সিদ্ধান্তমূলক গ্রহণযোগ্য আলোচনা★★
এখন আমাদেরকে কোন পদ্ধতিকে গ্রহণ করতে হবে?
এ সম্পর্কে জানতে প্রথমে আমাদেরকে নবীজী সাঃ এর দুটি হাদীসের দিকে লক্ষ্য করতে হবে।
যেমনঃ
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : " ﺟﺰﻭﺍ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ، ﻭﺃﺭﺧﻮﺍ ﺍﻟﻠِّﺤﻰ، ﺧﺎﻟﻔﻮﺍ ﺍﻟﻤﺠﻮﺱ ."
নবীজী সাঃ বলেছেনঃ
গোঁফকে ছোট করো।এবং দাড়ীকে লম্বা করো।আর মাজুসদের বিরোধিতা করো।
সহীহ মুসলিম-২৬০;
হযরত ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত,
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : " ﺍﻧﻬﻜﻮﺍ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ، ﻭﺃﻋﻔﻮﺍ ﺍﻟﻠﺤﻰ "
নবীজী সাঃ বলেছেনঃ
গোঁফকে ছোট করো।দাড়ীকে লম্বা করো।
(সহীহ বুখারী-৫৫৫৪;)
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
বিরোধমূলক মতামত উপরোক্ত হাদীস সমূহকে ঘিরেই সৃষ্টি হয়েছে।
যারা বলেনঃগোফকে কেচি দিয়ে ছেঁচে ছোট করতে হবে,তাদের বক্তব্য হচ্ছে,ﺟﺰﻭﺍ এবং ﺍﻧﻬﻜﻮﺍ এর অর্থ গোফকে ছেঁচে ছোট করা।
আর যারা বলেনঃ গোফকে মুন্ডিয়ে মুলুৎপাটন করতে হবে, তাদের বক্তব্য হচ্ছে,ﺟﺰﻭﺍ এবং ﺍﻧﻬﻜﻮﺍ এর অর্থ গোফকে মুন্ডিয়ে মুলুৎপাটন করা।
যেমনঃ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যা সম্পর্কে
হানাফী বিশিষ্ট গবেষক ফকীহ আল্লাম যায়লায়ী রাহ বলেনঃ
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺰﻳﻠﻌﻲ ﻓﻲ ( ﺗﺒﻴﻴﻦ ﺍﻟﺤﻘﺎﺋﻖ ) :
" ﻗﺎﻝ ﻓﺨﺮ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺍﻟﺒﺰﺩﻭﻱ : ﻭﺍﺣﺘﺞ ﺃﺻﺤﺎﺑﻨﺎ - ﺭﺣﻤﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ - ﺑﺤﺪﻳﺚ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻭﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ : " ﺃﺣﻔﻮﺍ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ، ﻭﺃﻋﻔﻮﺍ ﺍﻟﻠﺤﻰ " .
ﻭﺍﻹﺣﻔﺎﺀ: ﺍﻻﺳﺘﺌﺼﺎﻝ ، ﻭﺍﻟﻘﺺ ﻣﺤﺘﻤﻞ، ﻓﻴُﺤﻤﻞ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﺭﻭﻳﻨﺎ ﻷﻧﻪ ﻣُﺤﻜﻢ . "
বিশিষ্ট হানাফী ফেকাহ উসুলবিদ আল্লাম ফখরুল ইসলাম বযদাবী রাহ বলেছেনঃ আমাদের হানাফী উলামায়ে কেরামগণ নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে থাকেন।
হযরত আবু হুরায়রা ও ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত,
নবীজী সাঃ বলেনঃতোমরা গোফকে ছোট করো।এবং দাড়ীকে লম্বা করো।
আরবী ﻭﺍﻹﺣﻔﺎﺀ এর অর্থ হচ্ছে দাড়ীকে মুলুৎপাটন করা।এবং দাড়ীকে ছেঁচে ছোট করার অর্থকে গ্রহণ করার সম্ভাবনা ও রয়েছে।
তবে পূর্ববর্তী বর্ণনা যাতে স্পষ্ট মুলুৎপাটনের কথা বর্ণিত রয়েছে,সে অর্থকে(মুলুৎপাটনের অর্থকে) গ্রহণ করা উত্তম হবে।
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হলো,
গোঁফ কাটর পদ্ধতি নিয়ে অনেক শক্ত মতবেদ রয়েছে।
যে জন্য কেউ কেউ যেমনঃ আল্লামা ইরাক্বী কাযী ইয়ায থেকে দুটিরই বৈধতা প্রদান করে বলেন যেকোনো পদ্ধতিকে নি:সন্দেহে গ্রহণ করা যাবে।
(তরহুস তাছরীব)
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
তবে উপরোক্ত আংষিক আলোচনা ও উপরোক্ত কিতাব সমূহ পূর্ণভাবে অনুধাবন করার পর আমরা কেচি দিয়ে ছেঁচে ছোট করার পদ্ধতিকে উত্তম বলে ঘোষণা দিতে পারি।
কেননা সুনানে নাসাঈ এর এক বর্ণনায় এসেছে,
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত আছে,
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : " ﺧﻤﺲ ﻣﻦ ﺍﻟﻔﻄﺮﺓ : ﺍﻟﺨﺘﺎﻥ، ﻭﺣﻠﻖ ﺍﻟﻌﺎﻧﺔ، ﻭﻧﺘﻒ ﺍﻹﺑﻂ، ﻭﺗﻘﻠﻴﻢ ﺍﻟﻈﻔﺮ، ﻭﺗﻘﺼﻴﺮ ﺍﻟﺸﺎﺭﺏ ."
নবীজী সাঃ বলেনঃ
পাঁচটি জিনিষ (স্বভাবত) সুন্নাত।
(১)খৎনা করা,
(২)নাভির নীচ পরিস্কার করা,
(৩)বগলের রোম পরিস্কার করা,
(৪)নক কাটা,
(৫)গোফ ছেঁচে ছোট করা।
সুতরাং অন্যান্য রেওয়াতকে উপরোক্ত রেওয়াতের উপর মাহমুল করা হবে।
যেমন শা'ফী মাযহাবের গবেষক ও বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম নববী রাহ লিখেনঃ
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﻮﻭﻱ ﻓﻲ " ﺍﻟﻤﺠﻤﻮﻉ " ( 1/340 ) :
" ﻭﻫﺬﻩ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺎﺕ – ﻳﻌﻨﻲ ﺭﻭﺍﻳﺎﺕ ( ﺃﺣﻔﻮﺍ .. ﺃﻧﻬﻜﻮﺍ .. ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ ) - ﻣﺤﻤﻮﻟﺔٌ ﻋﻨﺪﻧﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺤﻒ ﻣﻦ ﻃﺮﻑ ﺍﻟﺸﻔﺔ ، ﻻ ﻣِﻦ ﺃﺻﻞ ﺍﻟﺸﻌﺮ " ﺍﻧﺘﻬﻰ .
যে সমস্ত রেওয়াতে গোঁফ কর্তনের জন্য "আহফু"বা "আনহিকু"শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা দ্বারা উদ্দেশ্য হল,গোঁফকে কেচি দিয়ে ছেঁচে ঠোটের উপরিভাগ পর্যন্ত কর্তন করা।মুলুৎপাটন নয়।
এবং ইমাম আবুল ওয়ালিদ আল-বাজি রাহ বলেনঃ
ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻮﻟﻴﺪ ﺍﻟﺒﺎﺟﻲ ﻓﻲ " ﺍﻟﻤﻨﺘﻘﻰ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻤﻮﻃﺄ " ( 7/266 ) :
" ﺇﻧﻬﺎﻙ ﺍﻟﺸﻲﺀ ﻻ ﻳﻘﺘﻀﻲ ﺇﺯﺍﻟﺔ ﺟﻤﻴﻌﻪ ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻳﻘﺘﻀﻲ ﺇﺯﺍﻟﺔ ﺑﻌﻀﻪ . ﻗﺎﻝ ﺻﺎﺣﺐ " ﺍﻷﻓﻌﺎﻝ " : ﻧﻬﻜﺘﻪ ﺍﻟﺤﻤﻰ ﻧﻬﻜﺎ : ﺃﺛﺮﺕ ﻓﻴﻪ " ﺍﻧﺘﻬﻰ .
ইনহাক শব্দ দ্বারা গোঁফকে মুলুৎপাটন বুঝায় না,বরং তা গোফের কিছু অংশকে কর্তন করা বুঝায়।
মুনতাকা শরহে মুয়াত্বা ৭/২৬৬।
মোটকথা:
গোঁফ চেঁছে ফেলা এবং কেচি দিয়ে ছেঁচে ছোট করে রাখা উভয়ই জায়েজ এবং সুন্নাত।
তবে কোনটি উত্তম এ ব্যপারে সিদ্ধান্ত হচ্ছে,
যেমন বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত আছে,
""গোফ মুন্ডানো জায়েয আছে,তবে কেচি দিয়ে কাটা উত্তম""
কিফায়াতুল মুফতী-৯/১৭৮;
(দারুল এশায়াত উর্দু বাজার করাচি,থেকে ২০০১ ইং তে ৮খন্ডে প্রকাশিত)
""গোফ মুন্ডানো পরিত্যাগ করে কেচি দিয়ে কাটা উত্তম""
ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১৯/৪২৩;
(দারুল ইফতা," জামেয়া ফারুক্বিয়া করাচি" কর্তৃক সত্যায়িত ও সংশোধিত সংস্করণ-২৫ ভলিউমে প্রকাশিত)
""উভয়টাই জায়েয তবে কেচি দিয়ে কাটা উত্তম""
আহসানুল ফাতাওয়া-৮/৪৫১;
(এইচ.এম.সাঈদ কম্পানি, করাচি থেকে ১০খন্ডে প্রকাশিত-১৩৯৮হিজরী)
هذا ما وجدت والله أعلم بحقيقة الحال-
بقلم إمداد الحق ،
عضو المدرسة قاسم العلوم جلال بور،سنام غنج بنغلاديش ،