আপনার কথাগুলো পড়ে বোঝা যায়—আপনি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ ও দাম্পত্য জীবনের অবমূল্যায়নের মধ্য দিয়ে চলছেন। আপনি যে কষ্ট পাচ্ছেন তা বাস্তব, এবং এটি কোনো “চাওয়া–চাওয়ি” বা বিলাসিতা নয়; বরং ন্যায্য হক—বিশেষ করে আপনি অসুস্থ, চিকিৎসাধীন এবং চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট খাদ্য প্রয়োজন।
ইসলাম অনুযায়ী স্বামীর উপর স্ত্রীর জন্য ন্যায্য ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করা ফরজ।
নবী (সা.) বলেছেনঃ
“তোমরা তাদের (স্ত্রীদের)কে তোমাদের সাধ্যের মধ্যে ভরণ-পোষণ দেবে।”
— সহিহ মুসলিম
অর্থাৎ স্বামী যতটুকু উপার্জন করেন, তার মধ্যে স্ত্রীর প্রয়োজনীয় খরচ প্রথম অগ্রাধিকার।
প্রয়োজনীয় ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
চিকিৎসা
ওষুধ
প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য
নিরাপদ জীবনযাত্রা
এগুলো ভরণ-পোষণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
কোরআনে বলা হয়েছে:
“তোমরা তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর।” (সুরা নিসা : ১৯)
স্ত্রীর প্রয়োজনীয় জিনিস চাইলে তাকে অপমান করা—এটি অবিচার (যুলুম)।
যুলুম সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন:
“আমি যুলুমকে নিজে হারাম করেছি এবং তোমাদের মাঝেও হারাম করেছি।”
স্বামীর পিতা-মাতাকে খরচ পাঠানোঃ
পিতা-মাতার খরচ দেওয়া নেক কাজ—কিন্তু:
স্ত্রী ও সন্তানের ভরণ-পোষণ পূরণ না করে, অন্যকে খরচ পাঠানো বৈধ নয়।
ফিকহ অনুযায়ী:
স্বামী যদি নিজের পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ অগ্রাহ্য করে অন্যকে টাকা দেয়, সে গুনাহগার হবে।
স্ত্রী তার ন্যায্য নফকা (খাবার/চিকিৎসা/প্রয়োজনীয় খরচ) পাওয়ার অধিকারী।
---
★আপনার করণীয় (শরীয়তের আলোকে ধাপে ধাপে)
শান্তভাবে আবারও আপনার স্বামীকে বুঝান (হিকমত সহকারে)
“এগুলো বিলাসিতা নয়, ডাক্তারি বাধ্যবাধকতা।”
“আমার প্রয়োজনীয় খাবার = আমার চিকিৎসা।”
“আমার জন্য খাবার আনা ফরজ; বিলাসিতা নয়।”
যদি চাইলে আমি আপনাকে কথাগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিতে পারি, যেন আপনি তাকে পাঠাতে পারেন বা বলতে পারেন।
★আপনার স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন
যদি তিনি যথেষ্ট খাবার না আনেন:
আপনি নিজের প্রয়োজনীয় খাবার নিজে কিনতে পারেন—এটি শরীয়তে বৈধ, কারণ এটি নাফকার অধিকার আদায়।
★যদি পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে অত্যাচারী হয়ে ওঠে
ইসলামে তিনটি পথ বৈধ:
ক. নাসিহা — পরামর্শ
স্বামীকে বুঝানো (যা আপনি করছেন)
খ. পরিবারের মুরব্বিদের মাধ্যমে স্বামীকে বুঝিয়ে সমাধান।
গ. এক্ষেত্রে আদালতে শরণাপন্ন হওয়া।
কিন্তু এটি শেষ ধাপ। আগে দু’জন মিলে বা কোনো আলেমের মাধ্যমে আলোচনা করা উচিত।
---
মানসিক দিক থেকে আপনাকে যা বলি
আপনি দুর্বল নন।
আপনি অন্যায় সহ্য করছেন—অভিযোগ করছেন না।
আপনার কথা বলার অধিকার আছে।
আপনি যে পরিস্থিতির কথা বলছেন, তা স্বাস্থ্যগত, আবেগগত এবং ধর্মীয় দিক থেকেও গুরুতর।
ধৈর্য আল্লাহ পছন্দ করেন—কিন্তু যুলুম চুপ করে সহ্য করা কখনোই নির্দেশ নয়।