আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
17 views
ago in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
বিয়ের শুরু থেকে আমার স্বামী ওনার সল্প ইমকাম এর জন্য বাজার সদাই নিয়ে আমাকে খুব প্রেসার দিতো। কেন এই মাস খেতে হবে, কেন মাংস ২ দিন খেতে হবে। পুষ্টিকড় খাবার নিয়েও আমাকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। অল্প বাজার করে দিতো, শেষ হয়ে গেলে বলতো এতো জলদি কিভাবে শেষ হলো।
এখন বিয়ের ২ বছর পার। আমার ওভারি তে সিস্ট আছে, তাই আমার সব ধরণের কেমিকাল মেশানো খাবার মানা। আমার ওজোন ও কম। আবার সব ধরণের খাবার খেতে পারি না। যে গুলো খেতে পারি, সেগুলি নাকি অনেক দাম। আমার স্বামী তাই মনে করে। আমাকে প্রায় এমন খোঁটা দেই। এখন টার ইমকাম মোটামুটি ভালো

আমি একবারে ভাত বেশি খেতে পারি না। যদি কম ভাত প্লেট এ দেখতো রাগ করতো। আবার আমি যদি বলি আমার একটু কলা, বা পেয়ারা বা ভালো কোনো ফল মাঝে মাঝে খেতে হবে। সে চাওয়া গুলি আমার স্বামী বিলাসিতা মনে করে। গত মাসে ডাক্তার পর্যন্ত আমার স্বামীর সামনে বলছে, ওনাকে একটু ভালো ফলমুল, খেজুর, ভালো ghee, খাওয়াবেন। ফার্ম এর মুরগি, ডিম, খাওয়াবেন না। এইটা নিয়ে আমার স্বামী মজা করে, আবার রাগ করে হউক আমাকে খোঁটা দিতে থাকে। আমাকে বলে ফার্ম মুরগি খেয়ে কী মানুষের বাচ্চা হচ্ছে না। আসলে আমার বাচ্চা হয়ের জন্য যে আমি এসব খেতে চাচ্ছি এমন নয়, আমার ব্লিডিং এর প্রবলেম আছে। আমার পিরিয়ড এর ব্লিডিং অনেক দিন করে থাকে। যাতে করে শরীর দুর্বল সহ অন্যান্য কষ্ট পেতে হয়।আমি যখন ই, আমার স্বামী কে বোঝানোর চেষ্টা করি যে, আমার এইটা লাইফস্টাইল disorder, ওনি বেশির ভাগ সময় ই, আমাকে খোঁটা দেই। তারপরও আমি তাকে কিছুটা বোঝাতে পারলে ওনি পরিমান এ এমন নিয়ে আসবে যে, দুই দিন পরেই শেষ হয়ে যাই। আমি যদি বলি আবার আনার কথা, আমাকে অপমান করে। আমি কেন আনতে বলবো।
আমি ধনী পরিবারের মেয়ে ছিলাম। কিন্তু বিলাসিতা আমার কখনোই পছন্দ ছিল না। তাই সাধারণ জীবন যাপনের ইচ্ছে থেকে, দীন দার ছেলে বিয়ে করি। শুধু আমার ওষুখ এর কারণে খাবার দাবার এর প্রয়োজন যখন আমার বর কে বলি, আমার অপমান এর শিকার হতে হয়।
আমাকে বলে, আমি অকৃতজ্ঞ। আমি শুধু চায় চায় করি। বিশ্বাস করুন, আমার এই অসুখ না থাকলে আমি আমার বর কে কখনোই বলতাম না যে, আমাকে একটু ভালো খাবার provide করো।
আমি জানি আমার ধর্য্য ধরতে হবে। কিন্তু দিন এর পর দিন এসব অপমান সহ্য করে ধর্য্য ধরা যায়?

আমার বর, টার বাবা মা কে টাকা পাঠাই, এমন কোনো মাস বাদ রাখে না, যে পাঠাই না। অন্যদিকে আমার ট্রিটমেন্ট এরজন্য টাকা কম পড়লেও, এক দিন ও বাসায় বলবে না যে এইমাসে একটু পাঠাতে পারবো না। আমার বৌ এর ট্রিটমেন্ট এর জন্য লাগবে।
আমাকে একটু বলবেন, এ কেমন ভরণ পোষণ একজন স্বামীর?

1 Answer

0 votes
ago by (705,630 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا… أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .

সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ
বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপনার কথাগুলো পড়ে বোঝা যায়—আপনি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ ও দাম্পত্য জীবনের অবমূল্যায়নের মধ্য দিয়ে চলছেন। আপনি যে কষ্ট পাচ্ছেন তা বাস্তব, এবং এটি কোনো “চাওয়া–চাওয়ি” বা বিলাসিতা নয়; বরং ন্যায্য হক—বিশেষ করে আপনি অসুস্থ, চিকিৎসাধীন এবং চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট খাদ্য প্রয়োজন।

ইসলাম অনুযায়ী স্বামীর উপর স্ত্রীর জন্য ন্যায্য ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করা ফরজ।

নবী (সা.) বলেছেনঃ
“তোমরা তাদের (স্ত্রীদের)কে তোমাদের সাধ্যের মধ্যে ভরণ-পোষণ দেবে।”
— সহিহ মুসলিম

অর্থাৎ স্বামী যতটুকু উপার্জন করেন, তার মধ্যে স্ত্রীর প্রয়োজনীয় খরচ প্রথম অগ্রাধিকার।

প্রয়োজনীয় ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
চিকিৎসা
ওষুধ
প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য
নিরাপদ জীবনযাত্রা

এগুলো ভরণ-পোষণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

কোরআনে বলা হয়েছে:
“তোমরা তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর।” (সুরা নিসা : ১৯)

স্ত্রীর প্রয়োজনীয় জিনিস চাইলে তাকে অপমান করা—এটি অবিচার (যুলুম)।
যুলুম সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন:
“আমি যুলুমকে নিজে হারাম করেছি এবং তোমাদের মাঝেও হারাম করেছি।”

স্বামীর পিতা-মাতাকে খরচ পাঠানোঃ

পিতা-মাতার খরচ দেওয়া নেক কাজ—কিন্তু:
স্ত্রী ও সন্তানের ভরণ-পোষণ পূরণ না করে, অন্যকে খরচ পাঠানো বৈধ নয়।

ফিকহ অনুযায়ী:

স্বামী যদি নিজের পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ অগ্রাহ্য করে অন্যকে টাকা দেয়, সে গুনাহগার হবে।

স্ত্রী তার ন্যায্য নফকা (খাবার/চিকিৎসা/প্রয়োজনীয় খরচ) পাওয়ার অধিকারী।
---

★আপনার করণীয় (শরীয়তের আলোকে ধাপে ধাপে)

শান্তভাবে আবারও আপনার স্বামীকে বুঝান (হিকমত সহকারে)

“এগুলো বিলাসিতা নয়, ডাক্তারি বাধ্যবাধকতা।”

“আমার প্রয়োজনীয় খাবার = আমার চিকিৎসা।”

“আমার জন্য খাবার আনা ফরজ; বিলাসিতা নয়।”

যদি চাইলে আমি আপনাকে কথাগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিতে পারি, যেন আপনি তাকে পাঠাতে পারেন বা বলতে পারেন।

★আপনার স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন

যদি তিনি যথেষ্ট খাবার না আনেন:

আপনি নিজের প্রয়োজনীয় খাবার নিজে কিনতে পারেন—এটি শরীয়তে বৈধ, কারণ এটি নাফকার অধিকার আদায়।

★যদি পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে অত্যাচারী হয়ে ওঠে

ইসলামে তিনটি পথ বৈধ:

ক. নাসিহা — পরামর্শ
স্বামীকে বুঝানো (যা আপনি করছেন)

খ. পরিবারের মুরব্বিদের মাধ্যমে স্বামীকে বুঝিয়ে সমাধান।

গ. এক্ষেত্রে আদালতে শরণাপন্ন হওয়া। 

কিন্তু এটি শেষ ধাপ। আগে দু’জন মিলে বা কোনো আলেমের মাধ্যমে আলোচনা করা উচিত।
---
 মানসিক দিক থেকে আপনাকে যা বলি

আপনি দুর্বল নন।
আপনি অন্যায় সহ্য করছেন—অভিযোগ করছেন না।
আপনার কথা বলার অধিকার আছে।
আপনি যে পরিস্থিতির কথা বলছেন, তা স্বাস্থ্যগত, আবেগগত এবং ধর্মীয় দিক থেকেও গুরুতর।

ধৈর্য আল্লাহ পছন্দ করেন—কিন্তু যুলুম চুপ করে সহ্য করা কখনোই নির্দেশ নয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...