আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
11 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (19 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ।
প্রশ্ন ১ঃ وَالْعَزْمُ هُوَ النِّيَّةُ এটা কি নিয়ত এর সংজ্ঞা? হেদায়া কিতাবে কি উক্ত সংজ্ঞাটি রয়েছে? আর কোন কোন ফিক্হ এর কিতাবে রয়েছে?

প্রশ্ন ২ঃ ইসলামী শরীয়ত কি কখনো কোন পরিস্থিতিতে একজন স্বামীকে তার স্ত্রীকে ইখতেয়ার প্রদান করতে বা নিজে ***** দিতে বাধ্য করে? যেমন ভরন পোষন সঠিকভাবে আদায় করতে না পারলে, লম্বা সময় শারীরিক বা মানসিকভাবে অসুস্থ্য থাকলে ইত্যাদি কোন কারণে? না স্বামী চাইলে যেকোন অবস্থায় বা পরিস্থিতিতে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে?

1 Answer

0 votes
ago by (705,630 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ «إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوٰى فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهٗ إِلَى اللهِ وَرَسُوْلِه فَهِجْرَتُهٗ إِلَى اللهِ وَرَسُولِه وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهٗ اِلٰى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهٗ إِلٰى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ 

‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিয়্যাতের উপরই কাজের ফলাফল নির্ভরশীল। মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী ফল পাবে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্যই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থপ্রাপ্তির জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিবাহের জন্য হিজরত করবে সে হিজরত তার নিয়্যাত অনুসারেই হবে যে নিয়্যাতে সে হিজরত করেছে।

(বুখারী ১, মুসলিম ১৯০৭, তিরমিযী ১৬৩৭, নাসায়ী ৭৫, আবূ দাঊদ ২২০১, ইবনু মাজাহ্ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২।)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
 ১. “وَالْعَزْمُ هُوَ النِّيَّةُ” — এটি নিয়তের সংজ্ঞা।


কেহ কেহ বলেন যে এটি “নিয়তের সম্পূর্ণ সংজ্ঞা নয়”, বরং নিয়তের একটি অংশ বা ব্যাখ্যা।

ফুকাহায়ে কেরামগন সাধারণত নিয়তের সংজ্ঞা এভাবে দেনঃ
“قصد الشيء مقترنًا بفعله”
অর্থ: কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত ইচ্ছা/উদ্দেশ্য করা।

“العزم” (দৃঢ় সংকল্প) নিয়তের একটি উপাদান, তবে নিয়ত = কেবল সংকল্প নয়।

তবে কিছু ফুকাহা ব্যাখ্যার সময় বলেন:
“العزم هو النية”
অর্থ: “সংকল্পই নিয়ত”—এটি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা, পূর্ণ সংজ্ঞা নয়।
---

হেদায়ার মূল কিতাবে (মতনে) একদম হুবহু বাক্যঃ
“وَالْعَزْمُ هُوَ النِّيَّةُ”
এইভাবে খুজে পাইনি।।

হেদায়ায় নিয়তের আলোচনা আছে, কিন্তু এই নির্দিষ্ট বাক্য নেই।

★নীচে কিছু কিতাবে এই অর্থবোধক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়—যেখানে নিয়ত = সংকল্প হিসেবে ব্যাখ্যা এসেছে।

(১) بدائع الصنائع – 

নিয়তের আলোচনায় “العزم” কে নিয়তের ব্যাখ্যার অংশ বলে উল্লেখ আছে।

(২) حاشية ابن عابدين – رد المحتار 

নিয়তের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে “عزم القلب” বলা হয়েছে—অর্থাৎ হৃদয়ের সংকল্পই নিয়ত।

(৩) التوضيح على التنقيح (উসূলুল ফিকহ)

এখানে বলা হয়েছে:
“النية هي العزم على الفعل”
= নিয়ত হলো কাজ করার সংকল্প।

 (৪) جمع الجوامع (তাজউদ্দিন সুবকি) ও তার শروح

এখানেও একই অর্থ পাওয়া যায়।

(৫) البرهان – امام الحرمین (উসূল)

এখানেও নিয়তকে “عزم” (সংকল্প) দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

(৬) القواعد – ابن رجب

নিয়তকে “قصد وعزم” বলা হয়েছে।

(০২)
শরীয়ত কিছু পরিস্থিতিতে শারঈভাবে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে।

ইসলামী ফিকহে এটি পরিচিত:
الطلاق الواجب (ওয়াজিব তালাক) — বাধ্যতামূলক তালাক

চারটি মাযহাবই এ রায় স্বীকার করে—যদিও ব্যাখ্যা ভিন্ন হতে পারে।
---

★কোন কোন পরিস্থিতিতে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করা হয়?

নীচের পরিস্থিতিগুলোতে স্বামী তালাক দিতে বাধ্য, আর না দিলে শরঈ আদালত বা আলেম-মুহতারামরা ফাসখ (বিচ্ছেদ) করে দিতে পারেন।

---
স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণ-পোষণ (নফকা) প্রদান করতে না পারে বা ইচ্ছাকৃতভাবে না দেয়
এটি সব মাযহাবে বড় কারণ।

ফুকাহারা বলেনঃ
যদি স্বামী নফকা দিতে অস্বীকার করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে না দেয়, স্ত্রী ফাসখ চাইলে বিচারপতি তাকে তালাক দিতে বাধ্য করবে।

★স্বামীর দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা, যা দাম্পত্য অধিকার নষ্ট করে

যেমন—
গুরুতর মানসিক রোগ
ক্ষতিকর আচরণ
দাম্পত্য অধিকার সম্পূর্ণ পালন অক্ষমতা

এক্ষেত্রে স্ত্রী কষ্টে থাকলে বিচারক স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন।

★স্বামীর গুরুতর ক্ষতি বা নির্যাতন (ضرر)

যেমন—
নিয়মিত অপমান
মানসিক অত্যাচার
শারীরিক নির্যাতন
স্ত্রীকে নিরাপত্তাহীন করা
তার অধিকার নষ্ট করা।

স্ত্রী ক্রমাগত ক্ষতির মধ্যে থাকলে আদালত স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করতে পারে।

এটি মালিকি মাযহাবে খুব শক্তভাবে প্রযোজ্য।

★ স্বামীর দীর্ঘ অনুপস্থিতি বা দায়িত্বত্যাগ

যদি স্বামী—
বাড়ি ফেলে রাখে
দায়িত্ব না নেয়
স্ত্রীকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয়

স্ত্রী ফাসখ চাইলে বিচারক স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে।
---
★গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়ে স্ত্রী ক্ষতির সম্মুখীন হলে

যেমন—
সংক্রামক বিপদজনক রোগ
দাম্পত্য সম্পর্ক অসম্ভব হওয়া
স্ত্রী স্বাস্থ্যগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া

তখন বিচারক বা শরীয়ত স্বামীকে বিচ্ছেদে বাধ্য করতে পারে।
--
★স্বামী কি যেকোন অবস্থায় দাম্পত্য সম্পর্ক জোর করে বজায় রাখতে পারে?

 না, ইসলাম স্বামীকে এই স্বাধীনতা দেয় না।

নিম্নলিখিত অবস্থায় স্বামীর “ইচ্ছামতো বিয়ের বন্ধন ধরে রাখা” আল্লাহর নিকট হারাম এবং যুলুম।

যখন স্ত্রী ভরণ-পোষণ পায় না
যখন স্ত্রী শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির মধ্যে থাকে
যখন সংসার তাকে অসুস্থ করে তুলছে
যখন স্বামী জীবনের প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করছে না
যখন স্ত্রী নাফকা/চিকিৎসা/নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত
যখন স্বামী জোর করে স্ত্রীকে কষ্টে রেখে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে চায়

ইসলামে এটি বলা হয়:

إضرار بالمرأة (স্ত্রীর প্রতি অন্যায় ক্ষতি করা)

যা কোরআনে নিষিদ্ধ।


★স্ত্রী সরাসরি ফাসখ (বিচ্ছেদ) চাইতে পারে?

হ্যাঁ।
বিশেষ করে তিন ক্ষেত্রে:

1. নফকা না পাওয়া

2. ক্ষতি (ضرر)

3. অসুস্থতা/দাম্পত্য অধিকার নষ্ট হওয়া

তখন আলেম, স্থানীয় শরীয়ত কাউন্সিল, বা আদালত শুনে সিদ্ধান্ত দেয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

ago by
edited ago
মুহতারাম, কোন স্বামী যদি জ্বীনগত সমস্যা (স্ত্রীর উসিলাহতেই) ও কঠিন ওয়াসওয়াসা রোগের কারনে আয় রোজগার বেশ একটা না করতে পারার কারণে ভরন পোষন মান সম্মত না দিতে পারে, ওয়াসওয়াসার কারণে বলতে গেলে পুরোপুরি নিশ্চুপ জীবন যাপন করার কারণে (প্রায় ৮/৯ মাস)  স্ত্রীর সাথে প্রয়োজনীয় দাম্পত্য আলাপ আলোচনাও করতে না পারলে এবং সম্পর্ক ও সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে ওয়াসওয়াসার কারণে  সন্দেহতে থাকার করণে স্ত্রী যদি মানসিকভাবে অসুস্থ্য অনুভব করে কষ্টে থাকে; কিন্তু স্বামী ভরনপোষন দেওয়ার চেষ্টায় সচেষ্ট থাকে, স্ত্রীর সাথে কথা বলার ও সম্পর্ক যাতে সারাজীবন বজায় থাকে পূর্ণ ইচ্ছা রাখে এবং সুস্থ্য হবার জন্য চিন্তা চেষ্টা ফিকিরে থাকে এমতাবস্থায় তার জন্য বিবাহ সম্পর্ক বজায় রাখার অথিকার কি শরীয়ত দেয়? ( স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের বিশেষ হক আদায় হচ্ছে )

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...