জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠]
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
উপরোক্ত আয়াত সমূহে পরিস্কার ভাষায় মেয়েদের অন্যের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে, অপ্রয়োজনে কথা বলতে, আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। যা পরিস্কার ভাষায় জানাচ্ছে যে, প্রয়োজন ছাড়া মেয়েদের সাথে কথা বলা জায়েজ নয়।
দ্বীনী বা বৈধ কোন জরুরী বিষয় থাকলে পর্দার আড়ালে থেকে কম কথায় শেষ করে নিবে। অযথা কথা বলা হারাম।
নন মাহরামদের সাথে পর্দা করা ফরজ।
এক্ষেত্রে কণ্ঠের পর্দাও রক্ষা করে চলতে হবে।
নারীদের জন্য গায়রে মাহরামের সাথে কথা বলতে গিয়ে কর্কশ ভাষায়/বা কন্ঠকে বিকৃত করে কথা বলা সবচেয়ে ভালো।
সুমিষ্ট মোলায়েম স্বরে নয়।
তবে এক্ষেত্রে কর্কশ ভাষায়/বা কন্ঠকে বিকৃত করে কথা বলা সমস্যাকর বা বিরক্তিকর মনে হলে বা এভাবে কথা বলতে না পারলে সেক্ষেত্রে মুখের ওপর হাত রেখে কণ্ঠ বিকৃত করে পর্দার আড়ালে থেকে কথা বলবে।
অপ্রয়োজনীয় কোন কথা বলা যাবে না,জীবন ঘনিষ্ঠ কোনো কথা বলা যাবেনা এবং হাসাহাসি করা যাবে না।
(০২)
বিয়ের পরে অন্য নারী/পুরুষের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনকেই শুধু পরকিয়া বলেনা।
বরং বিয়ের পরে অন্য নারী/পুরুষের সাথে প্রেম করা,সেই প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে মোবাইলে কথা বলা, ম্যাসেঞ্জারে আপত্তিকর কথা বার্তা বলা এসব কেও পরকিয়া বলে।
(০৩)
এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ-
মাহরাম ছাড়া বিদেশে যাওয়া কোনোক্রমেই জায়েজ নেই।
(০৪)
ইসলাম নারীর ক্যারিয়ারকে অনুমতি দেয়।
নবী ﷺ–এর যুগে নারীরা ছিলেন—
ব্যবসায়ী
শিক্ষক
চিকিৎসক
যোদ্ধাদের সেবা প্রদানকারী
ধাত্রী
কৃষিকাজে সহযোগী
সেলাই/হস্তশিল্প কর্মী
হাদীস ও সীরাহতে অসংখ্য প্রমাণ আছে।
কিন্তু কাজ করার শর্তাবলী আছে — এগুলো মানলে কাজ করা বৈধ ও ইবাদত হয়ে যায়।
---
★দ্বীনদার নারীর ক্যারিয়ারের জন্য শরীয়তের বেশ কিছু শর্ত রয়েছেঃ-
(ক) পর্দা ও শালীনতা বজায় রাখা
কুরআন:
“আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে…”
(নুর ২৪:৩১)
অতএব—
শালীন পোশাক
চোখ-নজর সংযম
অহেতুক সাজসজ্জা না করা
এগুলো বজায় রাখতে হবে।
---
(খ) কাজ এমন হতে হবে যাতে ফিতনার আশঙ্কা কম থাকে
ফিতনা সৃষ্টিকারী পরিবেশে কাজ নিষেধ—
এটা পুরুষ–নারী উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।
কোন কাজগুলোতে বেশি ফিতনা?
মিক্সড জেন্ডার ঘনিষ্ঠ পরিবেশ
একা-একা মেলামেশা
হারাম সম্পর্কের ঝুঁকি
রাতের সময় নাজুক পরিবেশ (নাইট শিফট ইত্যাদি)
এসব এড়িয়ে চলা আবশ্যক। ।
---
(গ) মাহরাম ছাড়া দীর্ঘ ভ্রমণ নয়।
হাদীস:
“নবী ﷺ বলেছেন, কোনো নারী যেন মাহরাম ছাড়া দীর্ঘ ভ্রমণে না যায়।”
(বুখারি)
কাজের প্রয়োজনে নিয়মিত দূর–দূরান্ত ভ্রমণ হলে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।
---
(ঘ) স্বামী/অভিভাবকের অধিকার ক্ষুণ্ণ না হওয়া।
ইসলাম পরিবারকে গুরুত্ব দেয়।
যদি—
স্বামীর হক মার খায়
সন্তান লালন-পালন নষ্ট হয়
ঘর–সংসারের মৌলিক দায়িত্ব ভেঙে পড়ে
তাহলে কাজটি অনুচিত।
তবে স্বামী সহযোগী হলে কাজ করা জায়েজ।
--
(ঙ) কাজ অবশ্যই হালাল হতে হবেঃ-
হারাম সেক্টর কখনো বৈধ নয়, যেমন—
সুদভিত্তিক ব্যাংক (যেখানে সুদের লেনদেন অপরিহার্য)
মদ/জুয়া/অশ্লীলতা সম্পর্কিত কাজ
হারাম প্রচারণামূলক মিডিয়া
সঙ্গীত-নৃত্য ক্লাব/ডান্স/গায়িকা
শরীয়ত-বিরোধী আইন প্রয়োগে চাকরি
এগুলো হারাম।
মহিলাদের চাকুরী সংক্রান্ত বিস্তারিত শর্তাবলী জানুনঃ
---
দ্বীনদার নারীর জন্য ইসলামে সবচেয়ে পছন্দনীয় (হালাল ও নিরাপদ) ক্যারিয়ারসমূহ
নিচের ক্ষেত্রগুলো ইসলামে সর্বাধিক নিরাপদ, উপকারী ও সম্মানজনক ধরা হয়:
★শিক্ষা খাত।
মহিলা শিক্ষক
কুরআন/হিফজ শিক্ষিকা
অনলাইন/হোম টিউটরিং
এগুলো নারীদের জন্য সবচেয়ে উত্তম সেক্টর।
★স্বাস্থ্যসেবা
মহিলা ডাক্তার
ডেন্টিস্ট
নার্স / মিডওয়াইফ
ল্যাব টেকনিশিয়ান
ফার্মাসিস্ট
কারণ নারীদের জন্য মহিলা চিকিৎসক অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
★উদ্যোক্তা / হোম-বেইজড ব্যবসা
পোশাক ও হিজাব ব্র্যান্ড
হস্তশিল্প
বেকারি/ফুড ব্যবসা
হোম সেলাই
অনলাইন মার্কেটিং
কসমেটিক্স (হালাল)
নিয়ত ঠিক হলে যেকোনো হালাল কাজই ইবাদত হয়ে যায়:
পরিবারকে সহায়তা করা,নিজের হালাল উপার্জন,সমাজে উপকারী কাজ করা, অন্য নারীদের সেবা দেওয়া, শরীয়তের নিয়ম মানা।
“ইহ্তিসাব” (আল্লাহর জন্য কাজ করা) — এটা যেকোনো হালাল কাজকে ইবাদত করে দেয়।