আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
371 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (37 points)
  1. অনেক সময় আমরা নিজের অগোচরে অনিচ্ছাকৃতভাবে ওম শান্তি বলে থাকি এই জিনিসটা বলা কি শিরক হবে এই জিনিস  বললে আমাদের কোনো অসুবিধা  হবে না ?

  2. আমাকে ছোটবেলায় শেখানো হতো যে অপচয়কারী শয়তানের ভাই  কিন্তু আল্লাহ কোরআনে এইভাবে কি কিছু বলেছেন তিনি শুধুমাত্র বলেছেন যে অপচয় করিও না এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি ? এবং অপচয় করা কি শুধু খাবারের সীমাবদ্ধ নাকি যে কোনকিছু অপচয় ক্ষেত্রে  নিষেধ করা আছে ?

  3. বর্তমানে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের গজল গেয়ে থাকেন নবীজি তাবেঈন তাবে তাবেঈন অথবা সাহাবাদের যুগে কি গজল  ছিল ? নাকি এটা বেদাত হবে ?

  4. যতগুলো শিশু পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে আসছে প্রত্যেকেই কি মুসলিম হয়ে জন্মগ্রহণ করে যদিও সে একজন মুসলমানের ঘরে জন্ম গ্রহণ করুক অথবা কোন হিন্দু খ্রিস্টান বা অন্য কোন ধর্মের ?

  5. কোন শিশু যখন মারা যায় জন্মের সময় অথবা জন্মের কিছু বছর পর অথবা বালেগ হওয়ার পূর্বে যদি মারা যায় তাহলে সে কি ইমানদার মুসলিম হয়ে মারা যাবে ?

1 Answer

0 votes
by (657,800 points)
edited by
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
অনিচ্ছাকৃত ভাবে মুখ দিয়ে বের হলে গুনাহ হবেনা।
তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বলা যাবেনা।

(০২)

সুরা বনী ইসরাইলের ২৭ নং আয়াতে  মহান আল্লাহ  তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

اِنَّ الۡمُبَذِّرِیۡنَ کَانُوۡۤا اِخۡوَانَ الشَّیٰطِیۡنِ ؕ وَ کَانَ الشَّیۡطٰنُ لِرَبِّهٖ کَفُوۡرًا ﴿۲۷﴾

নিশ্চয়ই যারা অপব্যয় (অপচয়) করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার রবের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।

ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কৃপনতাও করে না, আর তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।” [সূরা আল-ফুরকান: ৬৭]

ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, অপচয় হচ্ছে, অন্যায় পথে ব্যয় করা। মুজাহিদ বলেন, যদি কোন লোক তার সমস্ত সম্পত্তি হক পথে ব্যয় করে তারপরও সেটা অপচয় হবে না। আর যদি অন্যায়ভাবে এক মুদ পরিমাণও ব্যয় করে তবুও সেটা অপচয় হবে। কাতাদাহ বলেন, অপচয় হচ্ছে আল্লাহর অবাধ্যতা, অন্যায় ও ফাসাদ-সৃষ্টিতে ব্যয় করা। [ইবন কাসীর]

★অপচয় করা শুধু খাবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এটি নিষেধ।
,
(০৩)

নবীজি তাবেঈন তাবে তাবেঈন, সাহাবাদের যুগেও গজল  ছিল।
সুতরাং তাহা বিদ'আত নয়। 

হযরত হাসসান বিন ছাবিত রাযি, হযরত আকওয়া বিন আমির রাযি এবং আনজাশাহ রাযি এর একক কন্ঠে নাশিদ প্রমাণিত রয়েছে। সম্মিলিত কন্ঠেও প্রমানীত আছে।
,
যেমন হযরত আনাস রাযি এর হাদীসে খন্দকের যুদ্ধ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,
যখন রাসূলুল্লাহ সাঃ সাহাবায়ে কেরামদের ক্ষিদামন্দা দেখলেন,এবং ক্লান্তিকে অনুভব করলেন,তখন তিনি নিম্নোক্ত শে'র আবৃত্তি করলেন,

" اللهم لا عيش إلا عيش الآخرة * فاغفر للأنصار والمهاجرة "

অর্থ-হে অাল্লাহ! আখেরাতের জীবন ব্যতীত অন্য সকল জীবন তুচ্ছ। সুতরাং আনসার এবং মুহাজিরদের তুমি ক্ষমা করে দাও।

সাহাবায়ে কেরাম জবাবে বললেন,

نحن الذين بايعوا محمدا  *  على الجهاد ما بقينا أبدا

আমরা তারাই, যারা মুহাম্মদ সাঃ এর হাতে আমৃত্যু জীহাদের জন্য বায়আত গ্রহণে করেছি।
(সহীহ বোখারী-৩/১০৪৩)

বিস্তারিত জানুনঃ 

(০৪)
এই ব্যাপারে উলামায়ে কেরামদের বিভিন্ন রকমের ব্যখ্যা রয়েছে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
 


حديث أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلاَّ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ كَمَا تنْتَجُ الْبَهِيمَةُ بَهِيمَةً جَمْعَاءَ هَلْ تُحِسُّونَ فِيهَا مِنْ جَدْعَاءَ ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيرَةَ رضي الله عنه: (فِطْرَةَ اللهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللهِ، ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ)

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রত্যেক নবজাতকই ফিতরাতের উপর জন্মলাভ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী, নাসারা বা মাজুসী (অগ্নিপূজারী) রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে কোন (জন্মগত) কানকাটা দেখতে পাও? অতঃপর আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিলাওয়াত করলেনঃ (যার অর্থ “আল্লাহর দেয়া ফিতরাতের অনুসরণ কর, যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এটাই সরল সুদৃঢ় দীন”- (সূরাহ আর রুমঃ ৩০/৩০)।
সহীহুল বুখারী, পৰ্ব ২৩: জানাযা, অধ্যায় ৭৯, হাঃ ১৩৫৯; মুসলিম, পর্ব ৪৬: কাদর বা ভাগ্য, অধ্যায় ৬, হাঃ ২৬৫৮ 

حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ وَيُنَصِّرَانِهِ كَمَا تَنَاتَجُ الإِبِلُ مِنْ بَهِيمَةٍ جَمْعَاءَ هَلْ تُحِسُّ مِنْ جَدْعَاءَ "

কা'নাবী (রহঃ) ........... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক মানব শিশু ফিতরাতের (স্বভাব ধর্ম ইসলামের) উপর জন্মগ্রহণ করে। পরে তার মাতা-পিতার প্রভাবে সে ইয়াহূদী এবং নাসারা হয়। যেমন, কোন উটের বাচ্চা যখন প্রসব হয়, তখন তার কান কাটা থাকে না।
(আবু দাউদ ৪৬৪০)
,

★এই হাদীস গুলোর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে আল্লাহ তায়ালা আদম সন্তানদের সৃষ্টি করে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের উপযোগী করেছেন এবং তার দিকে তাদেরকে ঝুকিয়ে দিয়েছেন এবং ক্ষমতা দ্বারা তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের জন্য প্রস্ত্তত করেছেন
,
কেহ কেহ এই হাদীস গুলোর আলোকে বলেছেনঃঃ সকলেই ইসলামের উপরেই জন্ম গ্রহন করেন।

(০৫)
যদি সে মুসলিমের সন্তান হয়,তাহলে দুনিয়া এবং আখেরাতে উভয়টিতেই সে মুসলমানের হুকুমে হবে।
,
যদি কাফেরের সন্তান মারা যায়,তাহলে শরীয়তের বিধান মতে দুনিয়াবী হুকুমে তারা কাফের এর হুকুমেই হবে। তথা মিরাছ বিবাহ কিসাস দিয়ত ইত্যাদি ব্যাপারে তাদের কাফের ধরা হবে।
,
তবে আখেরাতের হুকুমে তারা কি হবে,এই ব্যপারে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। 

ইমাম আবু হানিফা রহঃ এক্ষেত্রে তাওক্কুফ করেছেন,জান্নাত জাহান্নাম নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
,           
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى الْقُطَعِيُّ الْبَصْرِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ رَبِيعَةَ الْبُنَانِيُّ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْمِلَّةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُشَرِّكَانِهِ " . قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَمَنْ هَلَكَ قَبْلَ ذَلِكَ قَالَ " اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ بِهِ "

মুহাম্মদ ইবন ইয়াহইয়া কুতাঈ (রহঃ) ...... আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক সন্তান মিল্লাতে ইসলামিয়ার উপর জন্ম গ্রহণ করে। এরপর তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদী, নাসারা এবং মুশরিক বানায়। বলা হয়, ইয়া রাসূলাল্লাহ, এর পূর্বেই যদি কেউ মারা যায়? তিনি বললেনঃ তারা কি আমল করত সে বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা সবিশেষ অবহিত আছে। সহীহ, (তিরমিজি ২১৪১. ইরওয়া ১২২০, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১৩৮ [আল মাদানী প্রকাশনী]

বিস্তারিত জানুনঃ   


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...