জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
না, ফল পচে গেলে নাপাক হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাতে কোনো নাপাক বস্তু (যেমন পেশাব, মল, রক্ত ইত্যাদি) মিশে না যায়।
ইসলামী ফিকহে কোনো জিনিসকে নাপাক (نجس) বলা হয় তখনই, যখন তা নিজে নাপাক হয় (যেমন মল, পেশাব, রক্ত ইত্যাদি) অথবা নাপাক বস্তুর সংস্পর্শে এসে পরিবর্তিত হয় (রং, গন্ধ বা স্বাদ বদলে যায়)।
আল-ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
"كل طاهرٍ إذا تغير بنفسه أو بطول مكثه لا ينجس"
অর্থাৎ — “যে জিনিস মূলত পবিত্র, যদি তা নিজে থেকেই বা দীর্ঘ সময় থাকার কারণে পরিবর্তিত হয়, তাহলে তা নাপাক হয় না।”
(আল-মাজমু’ ২/৫৬৮)
সুতরাং, ফল শুধু পচে গেলে তা “নাপাক” হয় না; শুধু “অখাদ্য” বা “বিবর্জনীয়” হয়ে যায়।
(০২)
না, শাকসবজিও নাপাক হয় না।
যদি কোনো নাপাক বস্তুর সংস্পর্শে না আসে, তবে তা শুধু নষ্ট বা দুর্গন্ধযুক্ত হয় — কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিতে পবিত্রই থাকে।
ইবনে হুমাম (রহ.) বলেন:
"ما كان طاهرا في أصله لا ينجس بتغيره بنفسه"
“যে বস্তু মূলত পবিত্র, তা নিজে নিজে পরিবর্তিত হয়ে নাপাক হয় না।”
(فتح القدير 1/226)
(০৩)
না, কানের খৈল নাপাক নয়।
এটি শরীর থেকে নিঃসৃত এমন কিছু, যা পেশাব, মল, বীর্য, মযী, রক্ত ইত্যাদির মতো নয়, বরং ঘামের মতোই পবিত্র।
ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
"وكل ما خرج من البدن من نحو العرق والدمع والمخاط والريق والوسخ فطاهر"
অর্থাৎ — “ঘাম, অশ্রু, নাকের পানি, লালা, শরীরের ময়লা— এগুলো সবই পবিত্র।”
(شرح النووي على مسلم, 3/186)
কানের খৈলও “وسخ” (শরীরের ময়লা)-এর অন্তর্ভুক্ত। তাই এটি পবিত্র।
(০৪)
না, চোখের ময়লাও নাপাক নয়।
এটি শরীরের প্রাকৃতিক নিঃসরণ, ঘাম বা নাকের পানির মতোই পবিত্র।
ইমাম কাসানী (রহ.) বলেন:
"العين وما يخرج منها طاهر"
“চোখ ও চোখ থেকে যা বের হয়, তা পবিত্র।”
(بدائع الصنائع 1/64)
এছাড়া হাদীসে বা সাহাবিদের আমলে চোখের ময়লাকে নাপাক বলা হয়নি — বরং ওযু বা নামাজের জন্য এটি কোনো বাধা নয়।
৫.
এতে ফরজ গোসল আদায় হয়ে যাবে।
৬.
অমেরুদণ্ডী কিটপতঙ্গ (যেমন: মশা, মাছি, পিপড়া, তেলাপোকা, উকুন, ছারপোকা ইত্যাদি) যদি মারা যায়, এবং তার ভেতরের রস বা রক্ত শরীরে বা কাপড়ে লাগে, তাহলে তা নাপাক হবে কিনা,এই ব্যপারে শরীয়তের মূলনীতি (قاعده):
যেসব প্রাণীর রক্ত প্রবাহিত হয় না (لا نفس له سائلة) — অর্থাৎ, যাদের শরীরে রক্ত থাকে না বা রক্ত প্রবাহিত হয় না —
তাদের মৃত্যু বা রস লাগা নাপাক নয়।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ:
«إِذَا وَقَعَ الذُّبَابُ فِي شَرَابِ أَحَدِكُمْ فَلْيَغْمِسْهُ كُلَّهُ ثُمَّ لِيَنْزِعْهُ، فَإِنَّ فِي أَحَدِ جَنَاحَيْهِ دَاءً، وَفِي الْآخَرِ شِفَاءً»
অর্থ:
“তোমাদের কারও পানীয়তে যদি মাছি পড়ে, তবে তা সম্পূর্ণ ডুবিয়ে তুলে ফেলবে; কারণ এর এক ডানায় রোগ এবং অন্যটিতে তার প্রতিষেধক আছে।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: 3320)
রাসুল ﷺ মাছি পানীয়তে পড়লে তা ফেলে দিতে বলেননি। অর্থাৎ মাছি মরলে ও পানীয় নাপাক হয় না।
তাই বোঝা যায় — মাছি (এবং এ-ধরনের প্রাণী) নাপাক নয়।
“ما لا يسيل دمه إذا مات لا ينجس الماء ولا الثوب ولا البدن”
অর্থ: “যে প্রাণীর রক্ত প্রবাহিত হয় না, তার মৃত্যুতে পানি, কাপড় বা দেহ নাপাক হয় না।”
(الدر المختار، رد المحتار 1/333)
অর্থাৎ — মশা, মাছি, পিপড়া, উকুন, তেলাপোকা ইত্যাদির ভেতরের রস বা রক্ত লাগলে নাপাক হয় না।
৭.
এটা বললে মান্নত হয়ে যাবেনা।
এমতাবস্থায় মিষ্টি খাওয়ানো আবশ্যক হয়ে যাবেনা।
৮.
এটা বললে মান্নত হয়ে যাবেনা।
এমতাবস্থায় কাউকে ভাত খাওয়ানো আবশ্যক হয়ে যাবেনা।
৯.
এটা বললে মান্নত হয়ে যাবেনা।
এমতাবস্থায় মিষ্টি খাওয়ানো আবশ্যক হয়ে যাবেনা।
১০.
এটা বললে মান্নত হয়ে যাবেনা।
এমতাবস্থায় কাউকে ভাত খাওয়ানো আবশ্যক হয়ে যাবেনা।
১১.
এক্ষেত্রে মান্নত হয়ে যাবেনা।
এমতাবস্থায় মিষ্টি খাওয়ানো আবশ্যক হয়ে যাবেনা।
১২.
এক্ষেত্রেও ফরজ গোসল আদায় হবে ও সহিহ হবে।