আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
2,582 views
in সালাত(Prayer) by (29 points)
আসসালামু আলাইকুম,

সালাতের সময় দৃষ্টি কোথায় থাকবে?

আমি কিছু কিছু জায়গায় দেখেছি যে, দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদাহর জায়গায়, রূকুর সময় দুই পায়ের মাঝখানে, সিজদাহর সময় নাকের দিকে, বসা অবস্থায় কোলের দিকে। কিন্তু কোনো হাদিস পেশ করেনি।

আমি এ বিষয়ে হাদিস পড়েছিলাম এবং শুনেছিলাম যে, "নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাসুল (সাঃ) এর দৃষ্টি ছিল সিজদাহর দিকে এবং তাশাহুদ পড়ার সময় তাঁর দৃষ্টি শাহাদত আংগুল অতিক্রম করেনি!"

আমাকে এ বিষয়ে সঠিক সুন্নাহ জানিয়ে বাধিত করবেন!

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


হাদীস শরীফে এসেছে,
 আয়েশা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করেছি যে, নামাজে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন,
 هو اختلاس يختلسه الشيطان من صلاة العبد 
এটা হলো শয়তানের ছোঁ মারা, যা দ্বারা শয়তান আল্লাহর বান্দাদেরকে নামাজ থেকে গাফেল ও উদাসীন করে ফেলে। (সহিহ বোখারি ৭১৮)

প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই, বুঝা গেলো যে এখানে  মূল বিষয় হল, নামাজে এদিক-সেদিক না তাকানো। কেননা এটি নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার । 

হানাফি মাযহাব মতে নামাযে দাড়ানো অবস্থায় সেজদার দিকে আর বসা অবস্থায় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা মুস্তাহাব।

وإلى حجره جالسا- (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح، كتاب الصلاة، فصل من آدبها-277، مكتبة شيخ الهند ديوبند
সারমর্মঃ বসা অবস্থায় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা।
 
প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই,
এ বিষয়ে মুজতাহিদ ইমামরা একাধিক অভিমত দিয়েছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, নামাজের সময় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার দিকে থাকবে, রুকু অবস্থায় থাকবে দুই পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় থাকবে কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় থাকবে নাকের দিকে। (কিতাবুল মাবসুত : ১/২৮)

পক্ষান্তরে কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, পুরো নামাজের সময় দৃষ্টি থাকবে সিজদার দিকে। 

হানাফী-মাযহাবে এটাকে মুসতাহাব বলা হয়েছে। ফরজ-ওয়াজিব বলা হয় নি। সুতরাং এটি আবশ্যকীয় কোনো বিধান নয়।

قال الحصکفی : ( لھا آداب ) ۔۔۔(نظرہ إلی موضع سجودہ حال قیامہ ۔۔۔۔وإلی حجرہ حال قعودہ۔ قال ابن عابدین : (قولہ ولہا آداب) جمع أدب، وہو فی الصلاة ما فعلہ رسول اللہ - صلی اللہ علیہ وسلم - مرة أو مرتین ولم یواظب علیہ کالزیادة علی الثلاث فی تسبیحات الرکوع والسجود کذا فی غایة البیان والعنایة وغیرہما. وعرفہ فی أول الحلیة بتعاریف متعددة، وقال: والظاہر مساواتہ للمندوب (قولہ وإلی حجرہ) بکسر الحاء والجیم والراء المہملة: ما بین یدیک من ثوبک قاموس۔( الدر المختار مع رد المحتار : ۱۷۵/۲، ط: زکریا، دیوبند )
সারমর্মঃ
নামাজের কিছু আদব,মুস্তাহাব রয়েছে।
তার মধ্যে অন্যতম হলোঃ  নামাযে দাড়ানো অবস্থায় সেজদার দিকে আর বসা অবস্থায় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা।

শায়েখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল হাফিঃ অন্য মতটি বিশদ ভাবে বর্ণনা করেছেনঃ

সালাতে কেবল তাশাহুদের বৈঠক ছাড়া অন্য সকল অবস্থায় সেজদার স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা সুন্নত। কেবল তাশাহুদের বৈঠকে দৃষ্টি থাকবে ডান হাতের শাহাদাত (তর্জনী) অঙ্গুলীর দিকে।

নিম্নে এ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো পেশ করা হল:

 আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
إنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه و سلم كانَ إِذَا صَلَّى، طَأْطَأَ رَأْسَهُ وَرَمَى بِبَصَرِهِ نَحْوَ الأَرْضِ

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন মাথাটা নিচু করে ঝুঁকিয়ে রাখতেন এবং দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন জমিনের দিকে”।
[মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস নং ১/৪৭৯। তিনি বলেন, হাদিসটি শাইখাইনের শর্ত অনুযায়ী বিশুদ্ধ। আল্লামা আলবানী রহ. হাদিসটির বিশুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সহমত পোষণ করেন। পৃ: ৮৯।]

অপর এক হাদিসে বর্ণিত,
دَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْكَعْبَةَ مَا خَلَفَ بَصَرُهُ مَوْضِعَ سُجُودِهِ حَتَّى خَرَجَ مِنْهَا

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কা‘বা ঘরে প্রবেশ করেন, বের না হওয়া পর্যন্ত তার দৃষ্টি সেজদার স্থান হতে অন্য দিকে ফেরান নি”।
[এ ইমাম হাকেম মুস্তাদরাকে বর্ণনা করেন, হাদিসটি শাইখাইনের শর্ত অনুযায়ী বিশুদ্ধ। দেখুন: ১/৪৭৯- আল্লামা যাহাবী রহ. হাদিসটি বিশুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সহমত পোষণ করেন। আল্লামা আলবানী রহ. তাদের উভয়ের সাথে একমত পোষণ করেন; দেখুন, এরওয়াল গালিল: ২/৭৩।]

তাশাহুদে বসে তাশাহুদ আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করা এবং সে দিকে নিদৃষ্টি নিবন্ধ রাখা সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত,
أنه كان إذا جلس للتشهد يشير بأصبعه التي تلي الإبهام إلى القبلة ويرمي ببصره إليها
“যখন তিনি তাশাহ্হুদের জন্য বসতেন, তখন তিনি তার বৃদ্ধাঙ্গুলের পাশে যে আঙ্গুলটি আছে (অর্থাৎ শাহাদাত বা তর্জনী আঙ্গুল) দ্বারা কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং তার দিকে দিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন”।
[ইবনু খুযাইমা: ১/৩৫৫; হাদিস: ৭১৯। আর মুহাক্কিক বলেন, হাদিসটির সনদ বিশুদ্ধ। দেখুন, সালাতের পদ্ধতি, পৃ: ১৩৯। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, (وأشار بالسبابة ولم يجاوز بصره إشارته) মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৪/৩, আবু দাউদ, হাদিস: ৯৯০]

 আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র রা. থেকে বর্ণিত যে,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا قَعَدَ فِي التَّشَهُّدِ وَضَعَ كَفَّهُ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ لاَ يُجَاوِزُ بَصَرُهُ إِشَارَتَهُ

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহুদ আদায় করতে বসতেন তখন তার বাম হাত তাঁর বাম উরুর উপর রাখতেন এবং তর্জনি দ্বারা ইশারা করতেন। আর দৃষ্টি তাঁর ইশারা অতিক্রম করত না।
,
★সুতরাং এই মতটির উপরেও আমল করা যাবে।
কোনো সমস্যা নেই। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...