ঘন্টা সম্বলিত হাদীস হচ্ছে নিম্নরূপ।
হযরত আবু-হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত,
ﺑﺎﺏ ﻛﺮﺍﻫﺔ ﺍﻟﻜﻠﺐ ﻭﺍﻟﺠﺮﺱ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻔﺮ
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺗﺼﺤﺐ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺭﻓﻘﺔ ﻓﻴﻬﺎ ﻛﻠﺐ ﻭﻻ ﺟﺮﺱ
তরজমাঃ নবীজী সাঃ বলেনঃ ঐ দলের সাথে (রহমতের)ফেরেস্তারা সহযাত্রী হন না, যাদের মধ্যে কুকুর বা ঘন্টা বা তার আওয়াজ রয়েছে।(সহীহ মুসলিম-২১১৩)
ইমাম নববী রাহ উক্ত হাদিসের আলোকে ফেকহী আলোচনার এক প্রর্যায়ে বলেনঃ
[ ﺹ : 278 ﺃﻣﺎ ﻓﻘﻪ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻓﻔﻴﻪ ﻛﺮﺍﻫﺔ ﺍﺳﺘﺼﺤﺎﺏ ﺍﻟﻜﻠﺐ ﻭﺍﻟﺠﺮﺱ ﻓﻲ ﺍﻷﺳﻔﺎﺭ ، ﻭﺃﻥ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻻ ﺗﺼﺤﺐ ﺭﻓﻘﺔ ﻓﻴﻬﺎ ﺃﺣﺪﻫﻤﺎ ، ﻭﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﺎﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻣﻼﺋﻜﺔ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻭﺍﻻﺳﺘﻐﻔﺎﺭ ، ﻻ ﺍﻟﺤﻔﻈﺔ ، ﻭﻗﺪ ﺳﺒﻖ ﺑﻴﺎﻥ ﻫﺬﺍ ﻗﺮﻳﺒﺎ ، ﻭﺳﺒﻖ ﺑﻴﺎﻥ ﺍﻟﺤﻜﻤﺔ ﻓﻲ ﻣﺠﺎﻧﺒﺔ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺑﻴﺘﺎ ﻓﻴﻪ ﻛﻠﺐ . ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﺠﺮﺱ ﻓﻘﻴﻞ : ﺳﺒﺐ ﻣﻨﺎﻓﺮﺓ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻟﻪ ﺃﻧﻪ ﺷﺒﻴﻪ ﺑﺎﻟﻨﻮﺍﻗﻴﺲ ، ﺃﻭ ﻷﻧﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻌﺎﻟﻴﻖ ﺍﻟﻤﻨﻬﻲ ﻋﻨﻬﺎ ، ﻭﻗﻴﻞ : ﺳﺒﺒﻪ ﻛﺮﺍﻫﺔ ﺻﻮﺗﻬﺎ ، ﻭﺗﺆﻳﺪﻩ ﺭﻭﺍﻳﺔ ( ﻣﺰﺍﻣﻴﺮ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ) ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﺬﻱ ﺫﻛﺮﻧﺎﻩ ﻣﻦ ﻛﺮﺍﻫﺔ ﺍﻟﺠﺮﺱ ﻋﻠﻰ ﺍﻹﻃﻼﻕ ﻫﻮ ﻣﺬﻫﺒﻨﺎ ، ﻭﻣﺬﻫﺐ ﻣﺎﻟﻚ ﻭﺁﺧﺮﻳﻦ ﻭﻫﻲ ﻛﺮﺍﻫﺔ ﺗﻨﺰﻳﻪ ، ﻭﻗﺎﻝ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻣﻦ ﻣﺘﻘﺪﻣﻲ ﻋﻠﻤﺎﺀ ﺍﻟﺸﺎﻡ : ﻳﻜﺮﻩ ﺍﻟﺠﺮﺱ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﺩﻭﻥ ﺍﻟﺼﻐﻴﺮ
তরজমাঃ
উক্ত হাদীস থেকে নিম্নোক্ত কথাগুলো অনায়াসেই বুঝা যায় যে,কুকুর(পাহারাদার বা শিকারি কুকুর ব্যতীত) বা ঘন্টাকে সফরে সাথে রাখা মাকরুহে তাহরীমি।এবং ফেরেস্তাগণ ঐ সব দলের সহযাত্রী হন না, যাদের সাথে এ দুয়ের যেকোনো একটি থাকে।
ফেরেস্তা দ্বারা উদ্দেশ্য হল,রহমত বা ইস্তেগফারের ফেরেস্তা,হেফাযতকারী ফেরেস্তাগণ নয়।এর আলোচনা ইতিপূর্বে হয়েছে,এবং ফেরেস্তাগণ কুকুর থেকে কেন দূরে থাকেন তারও বিশদ আলোচনা হয়েছে।
এখন ঘন্টা বাজনার বিষয়টি আলোচনা সাপেক্ষ।
এত্থেকে ফেরেস্তাগণ দূরে থাকার কারণ হল,ঘন্টার আওয়াজ ইহুদিদের নিষিদ্ধ শিংগার আওয়াজ সদৃশ।অথবা তা নিষিদ্ধ তাবিজ সদৃশ।
কেউ কেউ তা অপছন্দ হওয়ার কারণ শ্রুতিকটু আওয়াজ ও উল্লেখ করেছেন।এই ব্যখ্যাকে ঐ হাদীস সমর্থন প্রদান করে যেথায় নবীজী সাঃ ঘন্টাকে শয়তানের বাশী বলে উল্লেখ করেছেন।এই ব্যখ্যা অনুসারেই স্বাভাবিকত ঘন্টাকে মাকরুহে তাহরীমি হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়।এবং এটাই আমাদের শাফেয়ী মাযহাবের অভিমত।
ইমাম মালিক সহ অন্যান্যদের মন্তব্য হল ঘন্টার আওয়াজ মাকরুহে তানযিহি।
শামের প্রাচীন উলামায়ে কেরামদের বক্তব্য হল,বড় ঘন্টার আওয়াজ মাকরুহ, ছোট ঘন্টার আওয়াজ মাকরুহ নয়।
মোল্লা আলী কারী হানাফী রাহ এ আলোচনাকে বর্ধিতাকারে উল্লেখ করে বলেনঃ
ﻭﻗﺎﻝ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ : ﺟﺮﺱ ﺍﻟﺪﻭﺍﺏ ﻣﻨﻬﻲ ﻋﻨﻪ ﺇﺫﺍ ﺍﺗﺨﺬ ﻟﻠﻬﻮ ، ﻭﺃﻣﺎ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻓﻴﻪ ﻣﻨﻔﻌﺔ ﻓﻼ ﺑﺄﺱ
ﻣﺮﻗﺎﺓ ﺍﻟﻤﻔﺎﺗﻴﺢ ﺷﺮﺡ ﻣﺸﻜﺎﺓ ﺍﻟﻤﺼﺎﺑﻴﺢ;٣٨٩٤?
পশুর সাথে বেহুদা রং-তামাশার জন্য বাধা ঘন্টা নিষিদ্ধ-হারাম।
কিন্তু যদি তাতে কোনো প্রকার ফায়দা থাকে তাহলে তা নিষিদ্ধতার আওতাধীন হবে না।(মিরক্বাতুল মাফাতিহ-৩৮৯৪হাদীসের আলোচনা দ্রষ্টব্য)
ইবনে হাজর আসক্বালানী রাহ বলেনঃ
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ : ﻭَﺍﻟْﺤَﺎﺻِﻞ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﺼَّﻮْﺕ ﻟَﻪُ ﺟِﻬَﺘَﺎﻥِ : ﺟِﻬَﺔ ﻗُﻮَّﺓ ﻭَﺟِﻬَﺔ ﻃَﻨِﻴﻦ , ... ﻭَﻣِﻦْ ﺣَﻴْﺚُ ﺍﻟﻄَّﺮَﺏ ﻭَﻗَﻊَ ﺍﻟﺘَّﻨْﻔِﻴﺮ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﻋُﻠِّﻞَ ﺑِﻜَﻮْﻧِﻪِ ﻣِﺰْﻣَﺎﺭ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥ . ﺍﻧﺘﻬﻰ
তরজমাঃ
মোটকথাঃআওয়াজের দু'টি দিক রয়েছে,একটির হচ্ছে শক্তির দিক,অন্যটি সিংগা সদৃশ আওয়াজের দিক।ঘন্টার আওয়াজে চিত্তবিনোদনের দিককে লক্ষ্য করে নিষিদ্ধর আওতাধীন করা হয়েছে।এবং কারণ হিসেবে অন্যান্য হাদীসে তাকে শয়তানের বাশী সাব্যস্ত করা হয়েছে।(ফাতহুল বারী-২নং হাদীসের আলোচনা দ্রষ্টব্য)
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে,ঘন্টা হারাম হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে তা মিউজিক সাদৃশ হওয়া যার থেকে মানুষ চিত্তবিনোদিত হয়,বা তাদের ধারণা অনুযায়ী ঐ তাবিজ সাদৃশ হওয়া যেটা পশুকে সমস্ত বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে।অথচ এরকম আক্বিদা-বিশ্বাস ইসলামে নিষিদ্ধ।কেননা সমস্ত কিছুর দানকারী ও মালিক একমাত্র আল্লাহ তা'আলা।
তাই আমরা এ কথা বলতে পারবো যে,
কলিংবেল বা ডোরবেল বা রিংটোন সাধরণত উক্ত নিষিদ্ধতার আওতাধীন হবে না।
তবে যদি তাতে মিউজিক বা শ্রুতিকঠোর আওয়াজ থাকে তবে তা নিষিদ্ধতার আওতাধীন হয়ে হারাম হবে।
এ জন্য নিষিদ্ধতার ছায়া থেকে বাছতে সতর্কতামূলক এমন আওয়াজ সম্পন্ন বেল ক্রয় করাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ ও কর্তব্য, যাতে কোনোপ্রকার মিউজিক বা শ্রুতিকঠোর আওয়াজ কিংবা কোরআনের আয়াত হবে না।
কোরআনের আয়াত থাকলে কোরআনের অসম্মান প্রশ্নে তাও হারামের আওতাধীন হবে।
বাংলা কোনো কথা বা লাগাতার নয় এমন কোনো শ্রুতিমধুর ওয়ান্স রিং সম্বলিত ডোরবেল বা এলারম ঘড়ি বা মোবাইল রিং ব্যবহার করা যাবে।তা হারাম হবে না।