আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
27 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
আমার নানি খুব খিটখিটে। একটা বিষয় সারাদিন ই জপে। সাধারণত বুড়ো মানুষ দের যেটা স্বভাব থাকে। কিন্তু নানির সমস্যা হচ্ছে সে খুব ই একরোখা মানুষ। আর কারো মন জুগিয়ে সে চলতে পারে না বা কোনোকিছু তে মানিয়ে নিতেও সে রাজি নয়! তার যেটা ইচ্ছা সে সেটাই করতে ব্যস্ত থাকে! আর কোনো কিছু সম্পর্কে না জেনেই অকারণে মন্তব্য করতে থাকে আর বার বার বলতে থাকে যা আমাকে বেশিরভাগ সময় খুব বিরক্ত করে। তার ভালোর জন্যেই রমাদানে খেদমতে আমাদের বাসায় নানিকে নিয়ে আসা। এর আগেও একবার ছিল কিন্তু তখন আমি রান্নাবান্না পারতাম না ফলে সেভাবে আমি বুঝতাম ও না নানির স্বভাব সম্পর্কে।
আমাদের বাসায় আলহামদুলিল্লাহ আমি রান্না করি (কিছু পারিবারিক কারণ আছে আলহামদুলিল্লাহ। ফলে আমি ছাড়া রান্নার কেউ নেই)। তো আমি একদম ই ঝাল খাইনা & খেতে পারিনা। সেই হিসেবে রান্না করতে গেলে আমার মরিচের আন্দাজ টা আমার খাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই হয়ে থাকে। দেখা যায় যে একটু বেশি মরিচ দিলেই মনে হয় এটুকু তে হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ নয়তো বেশি ঝাল হয়ে যাবে! কিন্তু দেখা যায় তেমন ঝাল হয়না। আমার নানি ঝাল খায়। কিন্তু রান্না করতে গেলে অনেক রকম ই হয় রান্না আর প্রত্যেকের ঘরের রান্না আমাদের স্বাদমতো হয়না কখনোই। কেউ বা লবণ বেশি দেয় কেউ বা ঝাল কম দেয় বা৷ বেশি দেয়। এই বিষয় গুলো নানি বুঝতে চায়না একদম। সে সরাসরি বলে দেয় আমি এই তরকারি খাবোনা, এটাতে ঝাল নেই। তারপর সে সারা রাত না খেয়ে থাকে! একবার এমন হইছিল যে আমি আমার জন্য আলাদা তরকারি রান্না করছি যেটা আমি ঝাল ই দেইনি। শুধুই আমি খাব তাই। কিন্তু নানি গিয়ে সেটাই নিছে! পরে ভাত ফেলে দিছে খায়নি। সাথে সাথে বলে আমি চলে যাব। এখানে থাকলে আমি না খেয়ে মরে যাব! সেদিন আমার খুব কষ্ট লাগছিল কারণ সেদিন আমি অনেক ক্লান্ত শরীরে অনেক কাজ সামলিয়ে রান্নাবান্না করেছি (আমার আম্মার পা ভেঙে গেছিল তাই আম্মাকে সামলানো + ঘরের সব করতে হয়েছে)। এরপর থেকে নানিরবাড়ির সবাই আমাকে নিয়ে মজা উড়ায়। কখনো হয়তো গায়ে লাগাইনা আবার কখনো লেগে যায়।
এই রমাদানে আমি তরকারি টা আন্দাজ করতে পারিনি কতটুকু সবজি আছে। তো মরিচ একটু কম হয়ে যায়। নানি কাহিনি শুরু করে দিছে! রাতে আমারও মনে ছিল না রান্নার কথা আর সারাদিন কাজ করে আমি নামায টা অনেক কষ্টে পড়েছি। শরীর একদম ই খারাপ যেটা বাহির থেকে বুঝার কথা না! তো নানি সাহরি খেলোই না! ভাত রেখে দিল। আমার খুব রাগ উঠছে। আমি বলচ্ছি যে আমার মামাতো বোনের রান্না খাও কিভাবে? তার রান্না কি আমি খাই নি? তাড়াহুড়ো করে রান্না করে রাখে। একদম পানসে খাবার। ঝাল মিষ্টি কিছুই তো বুঝা যায়না। ওইটা তো ঠিক ই খেতে পারো। এখানে এলেই তোমার সমস্যা! মানুষ বুঝে খালি ঝাল মিষ্টির তাল ধরো! বলতাছে যে ঝাল হলে আমি সব তরকারি ই খেতে পারি (এটা আমার মামাতো বোনের সাপোর্ট নেয়ার জন্য বলেছে)। পরে আবারও বললাম যে আমি তো তার রান্না খেয়েছি! বমি চলে আসার মতো রান্না। শুধু পানি আর পানি! না কষায় আর না জ্বাল দেয়!
এটা আসলেই সত্যি যে আমার কাজিন রান্না মনোযোগ দিয়ে করেনা। তার অনেক ফোনের আসক্তি যেটার জন্য আমি তার প্রতি খুব ই বিরক্ত। হারাম কাজে সে ব্যস্ত সবসময়! আমার উপদেশ ও শুনেনা! সব মিলিয়েই আরকি নানিকে এগুলো বলা। এখন তার খাবারের দোষ ধরা টা কি আমার জন্য গিবত হয়ে গেল? (বি. দ্র. আমি তার রান্নার দোষ ধরার জন্য বলিনি। কষ্ট থেকে বলেছি। কারণ নানি সবসময় তার ছেলের ঘরের মেয়ে টার প্রশংসা করে আর সে ভালো এসব ই বলবে। তার রান্না ভালো হেন তেন কিন্তু আমি তাকে কোনো সাহায্য করলেও কখনো বলবে না আর রান্নার দোষ ধরা তো আছেই! এগুলো চলমান থাকলে সয়ে নেওয়া টা খুব ই কষ্টকর)

1 Answer

0 votes
by (71,340 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/60624/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

হাদীস শরীফে এসেছে-

وَعَن أبي هُرَيْرَة قَالَ: مَا عَابَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا قَطُّ إِنِ اشْتَهَاهُ أَكَلَهُ وَإِنْ كرهه تَركه

আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন খাদ্যের দোষ প্রকাশ করেননি। অবশ্য মনে ধরলে খেয়েছেন। আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করেছেন। (সহীহ : বুখারী ৩৫৬৩, মুসলিম (২০৬৪)-১৮৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৪৩৭, আবূ দাঊদ ৩৭৬৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫০১৭, তিরমিযী ২০৩১, ইবনু মাজাহ ৩২৫৯, আহমাদ ১০৪২১।)

,

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ-

مَا عَابَ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا قَطُّ

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবারে দোষ ধরতেন না।’’ হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বৈধ খাবারের দোষ ধরেননি। তবে হারাম খাবারের দোষ ধরতেন এবং তা খেতে নিষেধ করতেন। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন- খাবার খাওয়ার আদব হলো তার দোষ ধরবে না। অর্থাৎ এরূপ বলবে না এটা টক, এটা সিদ্ধ হয়নি বা পাকেনি এটা পাতলা, এটা মোটা ইত্যাদি।

,

(إِنِ اشْتَهَاهُ أَكَلَهٗ وَإِنْ كَرِهَهٗ تَرَكَهٗ) ‘‘খাদ্যের প্রতি তার আগ্রহ থাকলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা খেতেন অন্যথায় তা পরিত্যাগ করতেন। যেমন দব্বের ব্যাপারে যা ঘটেছিল। এটা তার অপছন্দ ছিল তাই তিনি তা খাননি। এটা দোষ বর্ণনা নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫৪০৯; শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২০৬৪; ‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৫৯; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৩১)

,

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

,

খাবারের দোষ না ধরা রাসুলুল্লাহ সা. এর সুন্নাত। সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সুন্নাতের খেলাফ কাজ হয়েছে। তবে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে মাফ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।

আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নানীর জন্যও উচিত নয় যে, এভাবে আপনার খাবারের দোষ ধরা। এভাবে আপনাকে কষ্ট দেওয়া। তারপরও তিনি আপনার নানী। তাকে সর্বোচ্চ সম্মান করতে হবে। তিনি এখন আপনার বাড়ীর মেহমান। তার বয়স হয়েছে এবং দ্বীনের বুঝ না থাকার কারণে হয়তো এমন করছে। তাই তাকে মহব্বতের সাথে বুঝাবেন। আপনার অনেক অনেক সওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ। তাই একটু ধৈর্য ধারণ করবেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...