আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
283 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (61 points)
১) "যারা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার কার্য পরিচালিত করে না, তারা কাফির, জালিম, ফাসিক" এখানে কার ক্ষেত্রে কোনটি প্রযোজ্য হবে?

কেউ একজন চুরি করলো। বিচার দেওয়া হলো গ্রামের মুরব্বিকে। এমতাবস্থায় তিনি পণ্য ফেরত বা অন্য কোনোভাবে বিষয়টা মিটমাট করে দিলেন; চোরের হাত কর্তন করার বিধান প্রয়োগ করলেন না। এক্ষেত্রে তিনি কাফির, নাকি জালিম, নাকি ফাসিক?

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার সময় বিভিন্ন জালিয়াতিতে জেল জরিমানা করেন। এসব ক্ষেত্রে যদি ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধান থাকে, কিন্তু রাষ্ট্রের চলমান আইনে তা প্রয়োগের সুযোগ উনি না পান। তাহলে কি তিনি কাফির হবেন? নাকি জালিম বা (ও) ফাসিক হবেন?

২) চলমান দেশীয় আইনে পুলিশ, আনসার, ইউএনও এসব সেক্টরে মুসলিমদের যাওয়া উচিত কি, যেখানে আল্লাহর আইনের বিচার ব্যবস্থা নেই? (উল্লেখ্য, এসব সেক্টরে দ্বীনদার মুসলিমরা না গেলে দিনদিন হয়তো জুলুম দুর্নীতি বাড়তে থাকবে)

1 Answer

0 votes
by (588,600 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
ইসলামী র্রাষ্টে না কোনো কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী পাশ করা যাবে না,না বাকি রাখা যাবে, না বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া যাবে, বরং সমস্ত মুসলমানের জন্য ফরয উক্ত আইনকে বাতিল করা ও বাতিল করার জন্য আন্দোলন করা জরুরী।এ সম্পর্কে দু-একটি আয়াত লক্ষণীয় যেমনঃ-
ﻭَﻣَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻓَﺄُﻭْﻟَـﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥ
যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের।(সূরা মায়েদাঃআয়াতঃ৪৪)

ﻭَﻣَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻓَﺄُﻭْﻟَـﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤُﻮﻥَ
যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।(সূরা মায়েদাঃআয়াতঃ৪৫)

ﻭَﺃَﻥِ ﺍﺣْﻜُﻢ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢ ﺑِﻤَﺂ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻭَﻻَ ﺗَﺘَّﺒِﻊْ ﺃَﻫْﻮَﺍﺀﻫُﻢْ ﻭَﺍﺣْﺬَﺭْﻫُﻢْ ﺃَﻥ ﻳَﻔْﺘِﻨُﻮﻙَ ﻋَﻦ ﺑَﻌْﺾِ ﻣَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ
আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন-যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন।(সূরা মায়েদাঃআয়াতঃ৪৯)

 ﻭَﻣَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻓَﺄُﻭْﻟَـﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ
যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী।(সূরা মায়েদাঃআয়াতঃ৪

ﺃَﻓَﺤُﻜْﻢَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺴَﻦُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺣُﻜْﻤًﺎ ﻟِّﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﻮﻗِﻨُﻮﻥَ
তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে?(৫সূরা মায়েদাঃআয়াতঃ৫০)

ﻓَﻼَ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻻَ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰَ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺛُﻢَّ ﻻَ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍْ ﻓِﻲ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢْ ﺣَﺮَﺟًﺎ ﻣِّﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍْ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤًﺎ
অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।(৪সূরা নিসা-৬৫)

উপরুক্ত আয়াত সমূহে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী ফয়সালা করবে সে অবশ্যই কাফির ও ফাসিক এবং যালিম হবে।লক্ষণীয় দিক হচ্ছে,অত্র আয়াতে এটা বলা হয়নি যে,আল্লাহ তা'আলা যে সমস্ত বিধি-বিধান অবতীর্ণ করেননি সে অনুযায়ী ফায়সালাকারী কাফির, ফাসিক, যালিম হবে।তাই সাধারণত বুঝা যায় এতে এ হেকমত নিহিত রয়েছে যে, যে হুকুম আল্লাহ পাক সরাসরি অবতীর্ণ করেননি বা নবী কারীম সাঃ এর মাধমে বাস্তবায়ন ও করাননি যাতে করে পরবর্তী মানুষদের জন্য আইন প্রনয়নের অবকাশ থাকে।অর্থাৎ যে বিষয় সমূহে আল্লাহ তা'আলা বা তাঁর রাসুল সাঃ কোনো হুকুম করেননি সে বিষয় সমূহে স্থান-কাল-পাত্র বেধে পরামর্শ বিত্তিক যা ইচ্ছা তা পরবর্তীগণ আইন করতে পারবেন,তবে শর্ত হচ্ছে কোরআন-সুন্নাহের মূলনীতি বা লক্ষ্য  বিরোধী হতে পারবেনা।(জাওয়াহিরুল ফিকহ ৫/১৪-১৪-১৫;)

পাকিস্তান সরকারের গ্রান্ড মুফতী-
মুফতী শফী রহ সুরা নিসার ৫৯ নং আয়াতের তাফসীর করতে যেয়ে বলেনঃঐ সমস্ত হুকুম যা কোরআন-সুন্নাহে বর্ণিত নেই তাতে দু-রকম বিধি-বিধান রয়েছে (এক)যার সম্পর্ক  দ্বীন-ইসলামের সাথে তথা শরয়ী হুকুম-আহকামের সাথে।(দুই)যার সম্পর্ক সামাজিক নিয়ম শৃংখলার সাথে।
যেই সমস্ত বিধি-বিধানের সম্পর্ক সামাজিক নিয়ম-শৃংখলার সাথে তা বাস্তবায়ন করতে কোরঅান-সুন্নাহর আলোকে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বরং যার যেটা ভালো লাগবে সে সে অনুযায়ী আমল করতে পারবে বা ফায়সালা করতে পারবে।সুতরাং এক্ষেত্রে আইনপ্রনেতা ও বিচারকগণ সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্থান-কাল বিবেচনা করে তারা যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।
তাফসীরে মা'রিফুল কোরআন (উর্দু ভার্সন)-২/৪৫১

যেভাবে একজন বিচারক কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারেন না, ঠিক সেভাবে কোনো উকিলও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো বিচার/শাস্তির দাবীও করতে পারবেন না।করলে সেটা জায়েয হবে না। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- 623

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১)
দারুল ইসলাম বা  ইসলামী রাষ্ট্রে শরঈ আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিকট দাবী তোলা সবার দায়িত্ব।তবে দারুল ইসলাম নয় এমন দেশে ইসলামি আইন বাস্তবায়ন করা জনসাধারণের জন্য কখনো জায়েয হবে না।ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করা সরকারের দায়িত্ব।জনগণের হস্তক্ষেপ এক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য।তাই কোনো মুরব্বি যদি পণ্য ফেরত বা অন্য কোনোভাবে চুরির বিচার করলে,সেটা কুরআন সুন্নাহর খেলাপ হবে না।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অন্যায়ভাবে কিছূ করলে. এর জবাবদিহিতা উনাকে করতেই হবে।

(২)
পুলিশ, আনসার, ইউএনও এসব সেক্টরে দ্বীনদার মুসলিমরা না গেলে দিনদিন হয়তো জুলুম দুর্নীতি বাড়তে থাকবে,সে জন্য এসব সেক্টরে দ্বীনদার মুসলিমদের জন্য যাওয়া উচিৎ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...