আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
36 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আমার এক আত্মীয়া কয়েক বছর আগে পরিবারকে না জানিয়ে নিজ পছন্দে বিয়ে করেন। কিছুদিন আগে পরিবারকে ছেলেটির কথা জানায়, তবে বিয়ে করেছে এটা জানায়নি, বলেছে পছন্দ।

জানানোর পর মেয়েটির মা-বাবা বেঁকে বসেন এবং মেয়েটির উপর নানারকম চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। এই শুক্রবার(২২ তারিখ) মেয়েটিকে অন্য পাত্র দেখতে আসার কথা এবং পছন্দ হলে বিয়ে পড়িয়ে ফেলার একটা সম্ভাবনা আছে। যদিও মেয়েটি রাজি না তবে পারিবারিক চাপের মুখে হয়তো কিছু করতে পারবে না। আমি মেয়েটিকে বুঝিয়েছি আগের বিয়ে তালাক এবং ইদ্দত পালন না হলে এই বিয়ে বৈধ হবে না। তবে সে বিষয়টা ওভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

আমার খুব অস্থির লাগছে বিয়ের মত ব্যাপারকে কেন এত হালকা ভাবে নিচ্ছে। তার আগের বিয়ের সময় আমার বয়স অনেক কম ছিল, তার সিদ্ধান্তের গুরুত্ব আর কমপ্লেক্সিটি না বুঝেই আমি তাকে সাপোর্ট করেছিলাম। এই ব্যাপারেও আমি অপরাধবোধে ভুগছি।

আমার জানার বিষয়টি হলো আমি যেহেতু আগের বিয়ের ব্যাপারে জানি, আমি তাকে ওয়াদা করেছিলাম কাউকে জানাব না, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কি আমার জন্য সেই ওয়াদা রক্ষা করার চেয়ে পরিবারের মুরুব্বি কাউকে আগের বিয়ের ব্যাপারটা জানানো-ই উচিত না? নাকি তার সিদ্ধান্ত ভেবে আমি বিষয়টা যেতে দেব? সেক্ষেত্রে আমি আগের বিয়ের ব্যাপারে জানা সত্ত্বেও কিছু করিনি বলে কি তার নতুন বিয়ে বৈধ না হওয়ার গুনাহ আমার ভাগেও আসবে?

1 Answer

0 votes
ago by (58,830 points)
edited ago by

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 

জবাব,

https://ifatwa.info/7324/?show=7324#q7324   নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, 

ইদ্দত একটি ওয়াজিব বিধান। এটি লঙ্ঘন করা কবিরা গুনাহ। 

স্বামী যেখানেই থাক, যদি সে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর জন্য ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। (ফাতাওয়া উসমানী ২/৪৫১)


ইদ্দত শুরু হয়, তালাক সম্পন্ন হওয়ার পরবর্তী সময় থেকে তিন হায়েয পরিমাণ। তিন হায়েয শেষ হওয়ার আগে অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয হবে না। 

আল্লাহ তাআলা বলেন,


وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ


আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। (সূরা বাকারা-২২৮)


وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ۖ فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ [٢:٢٣٤] 


আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে।


وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُم بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنتُمْ فِي أَنفُسِكُمْ ۚ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَٰكِن لَّا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّا أَن تَقُولُوا قَوْلًا مَّعْرُوفًا ۚ وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ [٢:٢٣٥] 


আর যদি তোমরা আকার ইঙ্গিতে সে নারীর বিয়ের পয়গাম দাও, কিংবা নিজেদের মনে গোপন রাখ, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই, আল্লাহ জানেন যে, তোমরা অবশ্যই সে নারীদের কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু তাদের সাথে বিয়ে করার গোপন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখো না। অবশ্য শরীয়তের নির্ধারিত প্রথা অনুযায়ী কোন কথা সাব্যস্ত করে নেবে। আর নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্তি পর্যায়ে না যাওয়া অবধি বিয়ে করার কোন ইচ্ছা করো না। আর একথা জেনে রেখো যে, তোমাদের মনে যে কথা রয়েছে, আল্লাহর তা জানা আছে। কাজেই তাঁকে ভয় করতে থাক। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ ক্ষমাকারী ও ধৈর্য্যশীল। {সূরা বাকারা-২৩৪-২৩৫}

তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবা মহিলার জন্য স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। বিশেষ ওজর ব্যতীত স্বামীর বাড়ি ছাড়া বাবার বাড়িতে কিংবা অন্য কোথাও গিয়ে ইদ্দত পালন করা জায়েয নেই।

 আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তাদেরকে (ইদ্দতরত মহিলাকে) তাদের ঘর থেকে বের করে দিও না। আর তারা নিজেরাও যেন বের না হয়। যদি না তারা কোনো প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়।

 (সূরা তালাক : ১


অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) তোমরা ঐ (তালাক প্রদত্ত) স্ত্রীদেরকে তোমাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা অনুপাতে থাকার ঘর দাও যেখানে তোমরা বসবাস কর। আর তাদেরকে সঙ্কটে ফেলার জন্য (বাসস্থান সম্বন্ধে) কষ্ট দিও না।

  (সূরা তালাক : ৬)


উল্লেখ্য যে, তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দতের সময় তার স্বামী ভিন্ন ঘরে বসবাস করবে। মহিলার ঘরে নয়।

আরো উল্লেখ্য যে, স্বামীর বাড়িতে যদি পর্দার সাথে থাকার ব্যবস্থা না হয় কিংবা তার জন্য সেখানে থাকা বেশি কষ্টকর বা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সে বাড়ি ত্যাগ করে বাবার বাড়ি কিংবা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে ইদ্দত পালন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে যেখানে যাবে সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করবে। ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে বিনা জরুরতে সেখান থেকে অন্যত্র থাকা জায়েয হবে না।

হযরত ফাতেমা বিনতে কায়স রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছি, আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিয়েছে এখন আমি আমার সাথে ব্যভিচারের ভয় করছি। তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে স্থানান্তর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৮২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৯১৬৮)


একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে যে, এক মহিলার স্বামী ইন্তেকাল করলে সে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট নিজের পিত্রালয়ে চলে যাওয়ার অনুমতি চায়। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকেও অনুমতি দেন নি; বরং তাকে বলেছিলেন, امْكُثِي فِي بَيْتِكِ حَتَّى يَبْلُغَ الكِتَابُ أَجَلَهُ তুমি ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত তোমার (স্বামীর) ঘরেই অবস্থান কর। ( তিরমিযী ১২০৪)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন/ভাই!


 প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে উক্ত মেয়ে তালাকপ্রাপ্তা হওয়ার পর ইদ্দতকাল (তিন হায়েজ) অতিক্রম করার আগ পর্যন্ত অন্য কোথাও বিবাহ বসতে পারবেনা। যদি তা না করে তাহলে  এই ২য় বিবাহ ছহীহ হবেনা। এমতাবস্থায় কেহ ঘর সংসারে করলে সেটি যেনা হবে।   

ইদ্দত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ

https://ifatwa.info/104/?show=104#q104

 সুতরাং এমতাবস্থায় আপনি সেই মেয়েকে আরো ভালোভাবে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করুন। যদি সে বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে যায়, তাহলে বিনয়ের সাথে তার পরিবারের মুরব্বিদের কে হেকমতপূর্ণ ভাবে অবগত করুন। এরপরেও যদি তারা সেই মেয়েকে হারাম পদ্ধতিতে ২য় বিয়ে দেয় তাহলে সেই মেয়ে ও পরিবার গুনাহগার হবে। আপনার গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...