আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
243 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)


আসসালামু আলাইকুম। 
আমাদের বর্তমান প্রজন্মের যারা নতুন নতুন দ্বীনের পথে চলার চেষ্টা করছি,আমাদের মধ্যে অনেকেই আগে ফাসিক্ব ছিলাম এবং আমাদের বন্ধুবান্ধবরাও ফাসিক্ব ছিলো।কিন্তু যখন আমরা দ্বীনের পথে চলা শুরু করলাম তখন সেই বন্ধুবান্ধবদের সাথে অনেকটা নিজে থেকেই দুরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়।আর এটাই স্বাভাবিক।কেননা বর্তমান প্রজন্মের একটা বড় অংশই মিউজিক, হারাম প্রেম,গেইমস, ফুর্তি,সিনেমা  এসব ত্যাগ কর‍তে পারেনি।

এখন প্রশ্ন হলো,আমাদের যেসব বন্ধুবান্ধবদের সাথে আগে ভালো বন্ধুত্ব ছিলো কিন্তু দ্বীনের পথে আসার পরে দুরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেছে,তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে আমাদের কী মূলনীতি মাথায় রাখা উচিৎ? তাদের থেকে কি সবসময় কিছুটা দুরত্ব বজায় রাখতে হবে?নাকি দাওয়াহতে আন্তরিকতা আনার জন্য তাদের সাথে হালাল কাজের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা উচিৎ?

বনী ঈসরাইলীদের মধ্যে যারা শনিবার কৌশলে মাছ শিকার করে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হতো,তাদের উপর যেমন আযাব নাযিল হয়েছিলো তেমনি যারা মাছ শিকার করতোনা কিন্তু মাছশিকারীদের  সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছিলো তাদের উপরও আযাব নাযিল হয়েছিলো।বেচে গিয়েছিলো শুধু তারা যারা তাদেরকে নিষেধ করেছিলো এবং একই সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলো।এই ঘটনা থেকে কি আমাদের মূলনীতি গ্রহণ করতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (566,280 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


এক্ষেত্রে জরুরি হলো তাদের সাথে সম্পর্ক ঠিক রেখে  
হিকমত, সদুপদেশ ও নম্রতার সাথে দ্বীনের পথে আসার দাওয়াত দেওয়া।
তার সাথে যদি সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়,তাহলে তাকে কে দাওয়াত দিবে?
কে তাকে হাত ধরে দ্বীনের পথে আনার চেষ্টা করবে?
এটা উম্মতে মুহাম্মাদ হিসেবে নিজেরই দায়িত্ব। 
,
তাকে দূরে সড়িয়ে দিলে দাওয়াত দেওয়া সম্ভব নয়।
একজন মানুষ বড় হয়ে গেলে অনেকাংশেই  নিজ বাবা মা থেকে  নিজ বন্ধুদের কথা বেশি শুনে।
,
তাই যেই পদ্ধতিতে আপনি আল্লাহর রহমতে দ্বীনের পথে এসেছেন,সে পদ্ধতির দিকে ধীরে ধীরে তাকে আনার আপ্রান চেষ্টা করতে হবে।
,
ইনশাআল্লাহ তারাও একদিন পরিপূর্ণ  দ্বীনের পথে আসবে।     

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ
‘তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, মানব জাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, আর যদি গ্রন্থ প্রাপ্তরা বিশ্বাস স্থাপন করত তাহলে অবশ্যই তাদের জন্য মঙ্গল হত। তাদের মধ্যে কেহ কেহ মুমিন এবং তাদের অধিকাংশই দুষ্কার্যকারী’ (আলে ইমরান ৩/১১০)।

সুরা নাহল এর ১২৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

 اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ وَ جَادِلۡهُمۡ بِالَّتِیۡ هِیَ اَحۡسَنُ ؕ اِنَّ رَبَّکَ هُوَ اَعۡلَمُ بِمَنۡ ضَلَّ عَنۡ سَبِیۡلِهٖ وَ هُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُهۡتَدِیۡنَ ﴿۱۲۵﴾

তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন। 
এই আয়াতের ব্যাখ্যা মুফাসসিরিনে কেরামগন বলেছেন 
এখানে ইসলাম প্রচার ও তাবলীগের মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ, তা হবে হিকমত, সদুপদেশ ও নম্রতার উপর ভিত্তিশীল এবং আলোচনার সময় সদ্ভাব বজায় রাখা, কঠোরতা পরিহার করা ও নম্রতার পথ অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়।
দায়ীর কাজ উল্লিখিত নীতি অনুসারে উপদেশ ও প্রচার করা। হিদায়াতের রাস্তায় পরিচালিত করা আল্লাহর আয়ত্তাধীন। আর তিনিই জানেন যে, কে হিদায়াত গ্রহণকারী, আর কে তা গ্রহণকারী নয়।

অন্য আয়াতে আছে- 
(وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ)
 অর্থাৎ কথা-বার্তার দিক দিয়ে সে ব্যক্তির চাইতে উত্তম কে হবে, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়? [ফুসসিলাতঃ ৩৩]

আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا بَعَثَ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِهِ فِى بَعْضِ أَمْرِهِ قَالَ بَشِّرُوا وَلاَ تُنَفِّرُوا وَيَسِّرُوا وَلاَ تُعَسِّرُوا.
‘নবী করীম (ছাঃ) যখন কোন ছাহাবীকে কোন কাজে প্রেরণ করতেন তিনি বলতেন তোমরা সুসংবাদ দাও ভয় দেখিও না। সহজতা অবলম্বন কর, কঠিনতা নয়’ (মুসলিম হা/৪৬২২)।
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,
যদি তাদের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখতে গিয়ে নিজের ঈমান আমলের হুমকি বলে মনে হয়,তাহলে সেক্ষেত্রে  
তাদের সাথে আগের মতো আড্ডা,কথাবার্তা বলা কম করে দিবেন।
বন্ধ করে দিবেন।
আগের মত তাদের সাথে আড্ডা,কথাবার্তা না বললে গুনাহ হবেনা,তবে সালাম চালিয়েই যেতে হবে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
  
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ مَيْسَرَةَ، وَأَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ السَّرْخَسِيُّ، أَنَّ أَبَا عَامِرٍ، أَخْبَرَهُم حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ هِلَالٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا يَحِلُّ لِمُؤْمِنٍ أَنْ يَهْجُرَ مُؤْمِنًا فَوْقَ ثَلَاثٍ، فَإِنْ مَرَّتْ بِهِ ثَلَاثٌ، فَلْيَلْقَهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَإِنْ رَدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ فَقَدِ اشْتَرَكَا فِي الْأَجْرِ، وَإِنْ لَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ فَقَدْ بَاءَ بِالْإِثْمِ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ঈমানদারের জন্য বৈধ নয়, সে কোনো ঈমানদারের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রাখবে। অতঃপর তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর উভয়ে দেখা হলে একজন সালাম দিলে এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি তার সালামের উত্তর দিলে উভয়ই সালামের সাওয়াব পাবে। আর দ্বিতীয়জন সালামের উত্তর না দিলে গুনাহগার হবে। ইমাম আহমাদ এর বর্ণনায় রয়েছেঃ সালামদাতা সম্পর্কচ্ছেদের গুনাহ থেকে মুক্ত হবে।
(আবু দাউদ ৪৯১২)

আরো জানুনঃ 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...